" আমি চিৎকার করিয়া কাদিতে চাহিয়া, করিতে পারিনা চিৎকার" শিক্ষা মানুষের অধিকার হলেও আর্থিক বাস্তবতায় সবার পক্ষে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদশ সরকারের বৃত্তি ছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও দাতব্য সংস্থার বৃত্তি রয়েছে। আবার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নও দেখেন অনেকে। কিন্তু বিদেশে পড়াশোনার যোগ্যতা অর্জন করলেও আর্থিক কারণে সবার পক্ষে বিদেশে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকার ও সংস্থা সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
এসব বৃত্তির আওতায় কেবল পড়াশোনার খরচ নয়, অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য খরচও দেয়া হয়। তবে শর্ত একটাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে এবং ন্যূনতম একটা ফলাফল অর্জন করতে হবে। ফলাফল আশানুরুপ না হলে মাঝপথে বৃত্তি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
এধরনের শিক্ষাবৃত্তির মধ্যে কমনওয়েলথ বৃত্তি এবং জাপান সরকারের মনবুকাগাকাশো বৃত্তির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশের সরকার এবং বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বৃত্তি রয়েছে।
প্রয়োজন শুধু নিজেকে প্রস্তুত করা এবং সময়মত আবেদন করা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বৃত্তি:
পিএইচডি/এমফিল ফেলোশিপ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যারয় এবং সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির সুবিধা পান। আবেদনকারীকে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে তালিকাভুক্ত হয়ে আবেদন করতে হয় এবং এটি একটি পূর্ণকালীন গবেষণা বৃত্তি। অর্থাৎ এ সময় আবেদনকারীকে শিক্ষাছুটি নিতে হবে। পিএইচডি ফেলোশিপের জন্য মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং এবং এমফিল ফেলোশিপের জন্য মাসে চার হাজার টাকা দেয়া হয়।
কোন কারণ ছাড়াই কেউ পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে বৃত্তির পুরো টাকা ফেরত দিতে হয়।
সর্বোচ্চ দু’বছরের জন্য ফেলোশীপ দেয়া হয়, সন্তোষজনক অগ্রগতি হলেই কেবল বছরান্তে তা নবায়ন করা হয়। বিভিন্ন খরচ বহনের জন্য প্রথম এবং দ্বিতীয় বছরে দেড় হাজার টাকা করে দেয় হয় এবং সুপারভাজর এর সুপারিশক্রমে থিসিস পেপার প্রস্তুত করার জন্য আর আট হাজার টাকা দেবার বিধান আছে।
ইউজিসি মেধাবৃত্তি:
বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের সব অনুষদ থেকে ১(এক) জন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য এ বৃত্তি দেয়া হয়। প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা ছাড়াও বই কেনার জন্য এককালীন দেড় হাজার টাকা দেয়া হয় এ বৃত্তির আওতায়।
সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এ বৃত্তি দেয়া হয়, তবে প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে শেষ বছরের ফলাফলের ভিত্তিতে এ বৃত্তি দেয়া হয়। কোন অনুষদে শিক্ষাবৃত্তি দেবার মত কাউকে না পাওয়া গেলে একই অনুষদে দু’জনকে এ বৃত্তি দেয়া হতে পারে। তবে একই বিভাগের দু’জন এ শিক্ষা বৃত্তি পায় না। তবে অন্য কোন বৃত্তি নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য বিবেচিত হবেন না। সকল পর্যায়ে প্রথমস শে্রণী থাকতে হবে এই বৃত্তি পেতে হলে।
এ বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়াশোনা করতে পারেন। শিক্ষা বিরতি গ্রহণযোগ্য নয়।
মনবুকাগাকাশো বৃত্তি
১৯৫৪ সালে জাপান সরকার এই বৃত্তি চালু করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশের ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী এই বৃত্তির আওতায় পড়াশোনা করেছে। এ বৃত্তির জন্য মনোনীত হতে হলে বেশ কয়েক ধাপের পরীক্ষা দিতে হয়।
সাত ধরনর মনবুকাগাকাশো বৃত্তি রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের গবেষণা বৃত্তি: এক্ষেত্রে ডিগ্রী সমতুল্য ১৬ বছরের শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করতে হবে, আর বয়স ৩৫ এর মধ্যে হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতি পেলেই কেবল এ বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ: বয়স ৩৫ এর মধ্যে হতে হবে আর কলেজ গ্রাজুয়েট কিংবা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের গ্রাজুয়েট হতে হবে। এছাড়া নিজ দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে পাঁচ বছর শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ের বৃত্তি: বয়স ১৭ থেকে ২২ এর মধ্যে হতে হবে এবং স্কুলে ১২ বছরের শিক্ষাজীবন শেষ করলেই কেবল এ বৃত্তির জন্য আবেদন করা যাবে। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলতে চার বছর মেয়াদী আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্স শুরুর আগে এক বছর মেয়াদী একটি প্রস্তুতিমূলক কোর্স করতে হয়।
জাপানীজ স্টাডিজ: আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে হতে হবে। জাপানে আসার সময় এবং কোর্স শেষে যাওয়া সময় আবেদনকারীকে জাপানী ভাষা বা সংস্কৃতিসহ জাপানের বা্ইরের কোন স্কুলে অধ্যয়নরত থাকতে হবে। জাপানী ভাষা এবং সংস্কৃতি ছাড়া অন্য বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে JASSO (Japan Student Services Organization) বরাবর আবেদন করতে হবে।
কলেজ অব টেকনোলজি স্টুডেন্ট: বয়স ১৭ থেকে ২২ হতে হবে এবং অন্তত ১১ বছরের শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করতে হবে।
স্পেশাল ট্রেনিং কলেজ স্টুডেন্টস: বয়স ১৭ থেকে ২২ এর মধ্যে হতে হবে এবং জাপানের হাই স্কুলগুলোর সমমানের ১২ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে হবে।
ইয়াং লিডারস প্রোগ্রাম: ৩ থেকে ৫ বছর প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে এমন ব্যক্তিরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারে। বিভিন্ন দেশে দক্ষ তরুণ প্রশাসক তৈরির জন্য এ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়। যে প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী কর্মরত রয়েছে সে প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমে এ বৃত্তির জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়।
কমনওয়েলথ স্কলারশীপ
কমনওয়েলভুক্ত বিভিন্ন দেশ অন্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তি দেয়। পূর্বে মাস্টার্স এবং ডক্টরাল পর্যায়কে গুরুত্ব দেয়া হলেও বর্তমানে দূরশিক্ষণ, আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়সহ সংক্ষিপ্ত প্রফেশনাল কোর্সের জন্য কমনওয়েলথ বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। ওয়েবসাইট: http://www.csfp-online.org/index.html
প্রতিটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশেই বৃ্ত্তির বিষয়টি তদারক করার জন্য একটি সংস্থাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাজটি করে। বিভিন্ন সময়ে কমনওয়েল বৃত্তির তথ্য তারা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ:
সহকারী সচিব, শিক্ষামন্ত্রণালয়
ভবন নম্বর: ৬, আঠরো এবং উনিশতলা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
ফোন: +880 232356/404162
ফ্যাক্স: +880 27167577
ই-মেইল:
ওয়েবসাইট: http://www.moedu.gov.bd/
দেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলোর বৃ্ত্তি:
ব্যাংক এশিয়া, ডাচ বাংলা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের বিশেষ শিক্ষাবৃ্ত্তি রয়েছে। সাধারণত এসব বৃত্তি বাংলাদেশের অনগ্রসর জেলার শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়। এইচএসসি পাশের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে এমন শিক্ষার্থীদের এ বৃত্তি দেয়া হয়। মাসিক টাকা ছাড়াও এককালীন টাকা দেয়া হয় এ বৃত্তির আওতায়।
পুরো উচ্চশিক্ষাকালীন সময়টাতেই এই বৃত্তি দেয়া হয়।
সরকারী বৃত্তি
বাংলাদেশ সরকারও শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে এ বৃ্ত্তি দেয়। প্রাথমিক, জুনিয়র, এসএসসি এবং এইচএসি পর্যায়ে এ বৃত্তি দেয়া হয়। এইচএসসি পর্যায়ে যে বৃত্তি দেয়া হয় তা এইচএসসি পরবর্তী পুরো কোর্স জুড়ে দেয়া হয়। মেধা বৃত্তির ক্ষেত্রে ৫৫০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তির ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা দেয়া হয়।
এছাড়া মেধা বৃত্তিতে এককালীন ১২০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিতে এককালীন ৫০০ টাকা দেয়া হয়। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়া এবং পড়াশোনায় অগ্রগতি এই বৃত্তির পূর্বশর্ত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।