শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... কাজের সূত্র ধরে তার সাথে আমার পরিচয়। নাম মোহাম্মদ মুসলিম মিঞা। বুঝতেই পারছেন আপাদ-মস্তক মুসলমান। জামাতি ইসলামীদের নিয়মিত চাঁদা দেন। দৈনিক সাত বেলা মসজিদে যায় কারন তিনি মসজীদ কমিটির মেম্বার।
কাজের জন্য তাকে আমার প্রায়ই ফোন দিতে হয় এবং প্রতিবারই একটা জগন্য ভাষার টুন শুনতে হয়। তার মোবাইলের ওয়েল কাম টুন একটি সূরা এবং তর্জমা। আমি বাধ্য হয়ে সপ্তাহে কয়েক বার শুনতে হয়। তিনি আবার মসজীদে থাকা কালীন সময় ফোন রিসিপ করেন না। তাই প্রয়োজনেরও বেশি সময় তাকে ফোন দিতে হয়।
একদিন কাজের ফাঁকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি ফোন করছি। কোন উত্তর নেই। আমি তার রুমে গেলাম দেখি মোবাইল তার ড্রয়ারে রিং হচ্ছে। প্রথম বার বুঝতে পারিনাই।
আবার রিং দিলাম এবারও বাজছে। হিন্দি একটি গান। শীলাকি যৌয়ানী। আমিতো অবাক। কি ব্যপার? আবার ট্রাই করলাম।
এবার কানে লাগিয়ে দেখলাম কূরানের সূরা ঠিকই বাজছে নিশ্চিত হলাম। যারা ফোন করে তাদের শোনায় কূরানের আয়াত আর তিনি রিং টোন হিসেবে বাজায় শীলি কি যৌওয়ানী। এটা কি হিপোক্রেসি নয়?
কলেজে পড়ার সময় আমার এক দাঁড়ি ওয়ালা বন্ধু ছিল। সময় পেলেই তাবলীগে যায়। আর সারিদিন কথায় কথা বলে আল্লা মাফ করুক, আল্লা মাফ করুক।
হোস্টেলের সীমানায় যাতে মেয়েরা আসতে না পারে। এবং মসজীদের কাছে যাতে ছেলে মেয়ে এক সাথে না বসে,এই ধরনের আন্দোলনে সে সবার আগেই থাকে। এসব আল্লা কুরানে নিষেদ করেছেন। হুজুর মানুষ আমরাও কিছু বলতে পারিনা।
আমাদের সময় ব্যবহারীক পরীক্ষার আগের দিন স্যারের বাসায় দেখা করতে যেতে হতো।
বিষেশ করে হোস্টেলের ছেলেরা দেখা করে রোল নাম্বার দিয়ে আসা একটা রীতিতে পরিনত করেছে। আমি এই ব্যপারটা আগে জানতাম না। সেই সূত্র ধরে রসায়ন পরীক্ষার আগের দিন, কয়েক জন মিলে স্যারের বাসায় যাওয়ার কথা। কয়েক জন মিলে আমার রুমে আসলো। ব্যাপারটা গোপনে আমাকে জানিয়ে দেয়া হলো।
এটার যে উপকরীতা আছে তারও দু একটি উদাহরণ দেয়া হলো।
হুজুর আমাকে বল্ল। চলো যাই। দেখাটা করে আসি।
আমি সবিনয়ে জানতে চাইলাম।
হুজুর আপনি আল্লার কাছে না চেয়ে স্যারের বাসায় কেন যাবেন? আপনার দেখি আল্লার উপর ভরসা কম। আপনি কি আল্লার চেয়ে স্যারের ক্ষমতা কি বেশি? আমাদের সাক্ষাতের জন্য যদি আমরা বেশি নাম্বার পেয়ে যাই তবে বাকিরা কষ্ট পাবে না? এই কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
এবার আমাদের অন্য বন্ধুরা হাসা হাসি শুরো করেছে। একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। তাদেরও যে স্যারে বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে নাই তখন বুঝতে পারলাম। সবাই সবার কাজে চলে গেল।
আমরা আর কেউ স্যারের বাসায় যাই নাই। তবে শুনেছি ঐ রাতে একা একাই হুজুর স্যারের সাথে দেখা করে এসেছে।
প্রতি মঙ্গল বার আসরের নামাজের পরে। মসজীদের ইমাম সহ কয়েক জন প্রতি রুমে রুমে আসে। তারা ইসলামের দাওয়াত দেয়।
এটাকে বলে গাস্ত। এই গাস্থের কারনে প্রতি মঙ্গল বার আমাদের বিকালের ঘুমে ঝামেলা হতো। প্রতি মঙ্গল বারেই আমরা দরজায় তাদের খটখট শুনলেই চরম বিরক্ত হতাম। আমাদের রুমে চারজনের মধ্যে কেউ নিয়মিত মসজীদের দিকে যেতাম না। তবু আমাদের দাওয়াত থেকে নিস্তার মিলতো না।
দড়জা খুললেই একজন পিছন সরে যেত। ইমাম সাব বলতে শুরো করতো। ভাই মোহাম্মদ ডাইনোসর। আমরা কেউ এই পৃথিবীতে আজীবন থাকবো না। আমাদের একদিন যেতে হবে।
আল্লা আমাদের দ্বীনের জন্য পাঠিয়েছেন। আজ সন্ধা মাগরিবের নামাজের পরে হালকা বয়ান হবে আপনি আসবেন।
আর যদি মসজীদে কোন তাবলীগ আসতো তবে তাদের নাম করে আরো কিছু ক্ষন বয়ান করতো। এবং প্রায় জোর করে সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করতো যাতে সন্ধায় মসজীদে বয়ানে অংশগ্রহণ করি।
প্রতি মঙ্গল বারের মতোই সেদিন তারা আসলো।
আমি আগের দিন রাতে তাস খেলে ঘুমাতে পারি নাই। সকালে ক্লাস ছিল। তাই বিকালে ঘুমানোর সাথে সাথেই দড়জায় কড়া নাড়লো। আমি দড়জা খুলেই তাদের মতো করে বলতে থাকলাম। ভাই সব।
আমরা কেউ দুনিয়াতে ছিলাম না। থাকবো না। ............................................আজ বাদ মাগরীবের সময় মসজীদে এই ব্যপারে বয়ান হবে আপনার থাকতে হবে। এই টুকো আমিও জানি। নতুন কিছু কি বলতে পারবেন? পারলে বলেন।
এই একই বালের কথা শুনতে আর ভাল লাগেনা। বলে ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দেই।
তার পরে যতদিন হোস্টেলে ছিলাম। আমার রুমে আর কোন দিন গাস্ত করতে আসে নাই।
আর এক খান তাবলীগিয়।
সম্ভবত ২য় বর্ষের পরীক্ষার পরে। দল বেঁধে ছেলেরা দশ দিনের জন্য তাবলীগে গেল। ফিরে এসে ধর্মের তোরজোর কয়েক গুন বাড়িয়ে দিল। তার গর্ব করে বলতো আমরা দশ দিন লাগিয়ে আসছি। (এই লাগিয়ে আসার ব্যপারটা আমরা ব্যঙ্গাত্বক ভাবে ব্যবহার করতাম।
তাই দেখা হলেই বলতাম আজ কেমন লাগালি। তারা কিছু বলতো না। )। মাসজীদে যায় দল বেঁধে সবার রুমে রুমে গিয়ে নামাজের জন্য বলে আসে। রাস্তায় পেলে হাত ধরে টানে।
নতুন দাওয়াতে দ্বায়িত্ব পেয়ে তারা এতই খুশি যে অন্যরা যে এতে বিরক্ত হয় এইটা বুঝার জ্ঞান লোপ পেয়েছে।
তোদের নামাজ পড়তে ইচ্ছা পড়। অন্যকে কেন বিরক্ত করা? নেকি পাওয়ার জন্য নামাজের দাওয়াত দেয়। এটাও মেনে নিলাম। তাই বলে ফজরের নামাজের সময়? সেই ভোর বেলা এসে ডাকতে থাকে যতক্ষন না কেউ উঠে দড়জা খুলে ততক্ষন কড়া নাড়তেই থাকে।
আমাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলেও কোন শব্দ করিনা। দেখি কতক্ষন করতে পারে। এমন ভাবে কয়েক দিন তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন নাই। বরং অত্যাচার বেড়েছে। এখন দড়জায় লাথিও মারে।
এমন দড়াম করে শব্দ হলে আর কত সহ্য করা যায়। আমিই হোস্টেলে এক মাত্র নাস্তিক। এবং এইটা হোস্টেলে সবাই জানে। আমি কয়েক দিন ধৈর্য থরে ব্যপারটা কোথায় যায় দেখার চেষ্টা করছি। কয়েক দিনের মাঝেই পাশের রুমে লাথি দিয়ে দরজার সিটকারি ভেঙ্গে ফেলে।
ঐটা আগে থেকেই ভাঙ্গা ছিল মেরামতের অপেক্ষায়।
ব্যপারটা নিয়ে আমি রাতেই একটা মিটিং ডেকে বসি। পাশের রুমের ছেলেরা জরিমানা আদায় করার জন্য ব্যস্থ হয়ে পরে। আমি সবাইকে সান্তনা দিয়ে একটা ঘোষনা পত্র জারি করি। এর পর থেকে কেউ যদি দড়জায় লাথি তো দূরের কথা ,সকাল বেলায় কড়াও নাড়ে তবে তার হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হবে।
অনেকই দেখি সমর্থন দেয়। অল্প কয়েক জন মিউমিউ করে কিন্তু সুবিধা করতে পারেনা। আমার কথার সাথে তাল দিয়ে কয়েক জনের নামও ঘোষনা হয়। এবং তাদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি জারি করা হয়। এই ঝামেলার সমাপ্তিও এভাবেই হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।