© ২০০৬ - ২০১১ ত্রিভুজ
নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, বস্তুবাদের পুজারী, কমিউনিষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের(সম্প্রদায় বলেছি কেন তা সম্পূর্ন লেখাটা পড়লে বুঝতে পারবেন) সাথে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক হয়ে থাকে। আমরা কিছু বিধান মেনে চলি, এবং তারাও কিছু বিধান(এখানে 'বিধান' শব্দটা অনেক ব্যাপক অর্থে ব্যাহৃত হচ্ছে। ) মেনে চলেন (যদিও তারা বলে থাকেন তারা সকল বিধানের বিরুদ্ধে)। আমাদের উচিত কোন বিধানটা মানব জাতির জন্য মঙ্গলদায়ক তা খুঁজে বের করার জন্যে দুই দলের বিধান নিয়েই আলোচনা করা। দু:খজনক হলেও সত্য তাদের অনেক এটা না করে প্রথমেই আমাদের সকল প্রস্তাব নাকচ করে দেন আমরা ধর্মের পুজারী বলে।
তারা ধর্মমুক্ত বিশ্ব গড়তে চান, যেখানে ভেদাভেদ থাকবে না। তারা নিজেদের মত ও জীবন দর্শন নিয়েই আলোচনায় উৎসাহী এবং অন্যের মত ও জীবন দর্শনকে ধর্মীয় মতাদর্শ বলে উড়িয়ে দিতে চান। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ধর্মকে তারা আক্ষরিক অর্থেই বেশী দেখে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ধর্মের আসল মানে কি সেটি সম্পর্কে তাদের বেশ একপেশে ধারনা পোষন করতে দেখা যায়। সেই ধারনা থেকে তাদের বের হয়ে আসতে সাহায্য করার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা...
আমরা যখন আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ বা বিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে যাই, তখন তারা আমাদের মূল কথা না শুনে আমাদেরকে কিছু দোষে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করে থাকেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো তারা আমাদেরকে যেসব দোষে(!) দুষ্ট ভাবেন, একই দোষ কিন্তু তাদের মাঝেও রয়েছে। কিভাবে তা নিচে অল্প কথায় প্রমাণ করার চেষ্টা করছি-
ক) বিশ্বাস / অবিশ্বাস
১) আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টি জগতের একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন
২) আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টি জগতের জন্য কোন সৃষ্টির্তার প্রয়োজন নেই/সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই
> কোন রকম মতের/ধর্মে বিশ্বাসী না হবার দাবী করলেও তারাও যে একটি মতের/ধর্মের বিশ্বাসী তা বুঝতে পারবেন উপরের দু'টো লাইন পড়লে
খ) ধর্ম / ধর্মহীনতা
১) আমি আমার চিন্তা চেতনায় ধারন করি আমার সৃষ্টিকর্তার পাঠানো বিধান । আমার সৃষ্টিকর্তার বলে দেয়া পথে আমি চলতে পছন্দ করি।
২) আমি আমার চিন্তা চেতনায় ধারন করি আমার প্রিয় মনিষী বা আমার নিজের চিন্তাধারার ফসল কিছু বিধান । আমি আমার নিজের পছন্দনীয় পথে চলতে পছন্দ করি
> ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেও যে তারা আসলে একটি ধর্মেরই প্রতিনিধিত্ব করছে তার স্বাক্ষর পাবেন এখানে।
(ধর্ম বলতে এখানে কি বুঝিয়েছি তা বুঝতে না পারলে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। )
গ) সম্প্রসারনবাদী চিন্তার উন্মাদনা(!)
১) আমি আমার সৃষ্টিকর্তার পাঠানো নির্দেশের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা চেতনা/বিধান পৃথিবীতে সম্প্রসারনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি
২) আমি আমার নিজের পছন্দনীয় ব্যাক্তির কথা ও বিষাবলীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা চেতনা/বিধান পৃথিবীতে পৃথিবীতে সম্প্রসারনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি
> ধর্মের সম্প্রসারনের লক্ষে নিয়োজিত ব্যাক্তিবর্গের সমালোচনা করে যে তারা নিজেদেরও সমালোচনা করছে তা আশা করি বুঝতে কষ্ট হবে না এবার...
ঘ) শ্রেষ্ঠত্ব চিন্তা
১) আমি আমার সৃষ্টিকর্তাও বিধানকেই শ্রেষ্ঠ মনে করি এবং পৃথিবীতে এটি প্রচলন হলে শান্তি বজায় থাকবে বলে মনে করি
২) আমি আমার নিজের তৈরি বিধানকেই শ্রেষ্ঠ মনে করি এবং পৃথিবীতে এটি প্রচলন হলে শান্তি বজায় থাকবে বলে মনে করি
> ধর্মগুলোর পরস্পরের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনার যে সমালোচনা তারা করে থাকেন, তা যে তাদের মাঝেও রয়েছে তা বুঝানোর জন্য উপরের দু'লাইন
ঙ) চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব
১) আমি আমার সৃষ্টিকর্তার বিধান সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছি
২) আমি আমার নিজের তৈরি বিধান সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছি
> মতবাদ চাপিয়ে দেয়ার দোষ দিয়ে থাকেন তারা আমাদের। অথচ আমরা শুধুই সতর্ক করি.. আমাদের সতর্কবাণী কেউ না শুনলে তার উপর ব্যাক্তিগত আক্রমন বা খারাপ মনোভাব পোষন করি না। কিন্তু তারা এটা করে থাকে। তবুও চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব নাকি শুধু আমাদেরই রয়েছে।
চ) ব্যাক্তিগত চর্চা - সমাজগত চর্চা
১) আমি আমার জীবন দর্শনকে (যা আমার ধর্ম গ্রন্থ থেকে পেয়েছি) শুধু ব্যাক্তিগত চর্চার বিষয় মনে করি না। তাই এটি সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে থাকি কারন আমি জানি এটি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজে শান্তিবস্থা বিরাজ করবে।
২) আমি আমর জীবন দর্শনকে (যা আমার অর্জিত জ্ঞান ও চিন্তা ভাবনা করে বের করেছি বা কোন বইয়ে পেয়েছি) শুধু ব্যাক্তিগত চর্চার বিষয় মনে করি না। তাই এটি সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে থাকি কারন আমি জানি এটি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজে শান্তিবস্থা বিরাজ করবে।
> 'ধর্মকে শুধু ব্যাক্তিগত পর্যায়ে পালন করুন.. ধর্ম ব্যাক্তির গন্ডি থেকে সমাজের গন্ডিতে প্রবেশাধিকার রাখে না', এই ধারনার প্রেক্ষিতে...
ছ) মানুষের জন্য আইন
১) আমি আমার সৃষ্টিকর্তার বিধান থেকে বর্তমান সমাজের উপযোগী আইন তৈরি করে বিচার করাকে সুবিচার ও মানবিক মনে করি।
আমি মনে করি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এসব আইনকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
২) আমি আমার অর্জিত জ্ঞান ও আমার চিন্তা ধারা থেকে পাওয়া বিষয়গুলোকে থেকে আইন তৈরি করে বিচার করাকে সুবিচার ও মানবিক মনে করি। আমি মনে করি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এসব আইনকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
> আমরা উভয়েই নিজের মতবাদ ভিত্তিক আইন সমাজে প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করি। তবে আমাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের আইনগুলোর সাথে আমাদের আইনগুলোর কোন রকম তুলনাই করতে চান না, কারন তারা মনে করেন ধর্মের (আমাদের মতবাদের) আইন দিয়ে সমাজ চলতে পারে না।
অথচ তারা তাদের মতবাদ থেকে সৃষ্ট আইনগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আপাত দৃষ্টিতে যদিও দু'টোর মূল উদ্দেশ্য সমাজে শান্তি স্থাপন করা। আলোচনা হতে পারে কোনটি শান্তি স্থাপনে অধিক কার্যকর, তা নিয়ে।
এখানে প্রতিটি পয়েন্টে ১ হলো আমাদের (যারা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেন) বক্তব্য এবং ২ হলো তাদের বক্তব্য যারা আমাদের সকল বক্তব্যকে নাকচ করে দিতে চান আমরা ধর্মকে সব বিষয়ে টানছি এরকম অভিযোগ তুলে। এরকম অনেক পয়েন্ট তুলে ধরা যায়।
আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার জন্য আজকে বেশী পয়েন্ট তুলে ধরলাম না।
--
অনেকেই দেখলাম আমার এই লেখার মূল বক্তব্য ধরতে পারেননি... তাই এই লেখাটার পটভূমি'র একটু ক্ষুদ্র অংশ তুলে ধরা দরকার। এখানে ক্লিক করে মন্তব্যগুলো দেখুন। এই পোষ্টের মন্তব্যের ঘরে যেসব আলোচনায় হয়েছিল, এধরনের আলোচনা ইতিপূর্বেও অনেকবার হয়েছে। তাই এই পোষ্টের অবতারনা।
9:02 PM 2/26/2007 - 144368
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।