জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায় সদ্য গঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। নির্বাচনে বিরাট ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন আঠারো দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নান । প্রাথমিক হিসেবে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।
সিটির ৩৯২টি কেন্দ্রে ভোটগণনা শেষে জানা যায়, বিজয়ী এমএ মান্নান টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লাহ খান দোয়াত-কলম নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। উল্লেখ্য, নির্বাচন অনুষ্ঠান শুরুর বহু আগে থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে গাজীপুরের নির্বাচনী পরিবেশ। এটি একটি সাধারণ সিটি কর্পোরেশন অর্থাৎ স্থানীয় নির্বাচন হলেও জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে সর্বমহলে ধারণা করা হয়। বিশেষ করে কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল এবং খুলনা এই চারটি সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবির পর আওয়ামীলীগের প্রতি জনসমর্থন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বেরিয়ে আসে গাজীপুর নির্বাচনের মাধ্যমে।
এতদিন চারশুন্যতে ভরাডুবি হলেও এবার চার একে সমাধান হবে নাকি পাঁচ শুন্যতে হোয়াইট ওয়াশ হবে তা ছিলো আলোচ্য বিষয়। অতপর পাঁচ-শুন্যতে পরাজিত হলে এ যেন আওয়ামীলীগের উপর বজ্রপাত হওয়ার সামিল হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর কাছাকাছি হওয়াতে জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের অবস্থান কি তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অনেক এমপি মন্ত্রীও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থীর পরাজয় মেনে নিয়ে পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুল সংশোধনের কাজে লাগাতে চান বলে উল্লেখ করেছেন।
এটা আওয়ামীলীগের একটি প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিধায় তারা প্রচার প্রচারণার সময় বর্তমান হাই প্রোফাইল এমপি, মন্ত্রীসহ নেতাকর্মীরা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে প্রচারণায় লাগেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয় নি। ব্যাপক ব্যবধানে হার মানতে হয়েছে আঠারো দল সমর্থিত প্রার্থীর কাছে। এদিকে বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে ব্যতীত নির্বাচনে যাবে না বলে দাবী করছে। ‘‘সরকারকে জনগণ ‘না’ বলেছে’’ উল্লেখ করে গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ নির্বাচনে জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
তিনি এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ও পদত্যাগ করে মানে মানে বিদায় নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, “এখনো সময় আছে, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহাল করে জাতীয় নির্বাচন দিন। অবিলম্বে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল না করলে জনগণই তা আদায় করে নেবে। ” তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে হুলস্থুল কা-ের ইন্ধন দিয়েছে মুলত ইলেক্টনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলি। যার গুরুত্ব পায় প্রায় একটা জাতীয় নির্বাচনের সমান।
এসকল মিডিয়ার কর্মীরা প্রায় এক ধরণের নাওয়া- খাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে সামান্য একটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে নিয়ে। তাদের হুলস্থুল দেখে মনে হয়েছিল যেন প্রার্থীদের জয় পরাজয় নয়, এটা তাদেরই জয় পরাজয়। যা আপাতত দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়।
তবে হ্যাঁ, গাজীপুর নির্বাচন ভোটের রাজনীতি সাংঘাতিক প্রভাব পড়েছে এবং পড়বে বলে যে ধারণা করা হয় তা খুবই বাস্তবসম্মত। ভোটের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতাও একঘেয়েমীর যে জবাব এসেছে তাতে করে ক্ষমতাসীন দলকে যে চরম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সরকার কি আমলে নিবে, কিংবা সতর্ক হবে? কিংবা বিজয়ী দল যদি বিজয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্ষমতার আসনে বসতে পারে, তাহলে তারা কি শাসন ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তন আনবে বা আনতে পারবে? না কি তারা আবার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে তাদের পূর্বশাসনব্যবস্থায়? খুব সম্ভবত তাই হবে। কারণ নেতৃত্বে কোন পরিবর্তন আসে নি, চিন্তা চেতনায়ও কোন পরিবর্তন নেই, মানসিকতায় তো নয়ই। তাদের সামনে ইস্যু হয়ে আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে। অর্থাৎ শাসন ব্যবস্থা, দুর্নীতি, লুটপাট নিয়ে কোন কথা নেই। কে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে ক্ষমতায় আসতে পারবে তা নিয়ে বিবাদ।
শাসন ব্যবস্থা, দুর্নীতি, লুটপাট যেন স্বত:সিদ্ধ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। পালাক্রমে এই দল একবার তো ওই দল আরেকবার খাবে। পরের বার বঞ্চিত দল এসে তা তাদের পেটের ভেতর থেকে টেনে বের করবে।
বর্তমানে আমরা পদ্মাসেতু চোর পেয়েছি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর হোতা পীর দরবেশ পেয়েছি, আস্তিক নাস্তিকের সংঘাতে অরাজকতা পেয়েছি, হলমার্ক কেলেঙ্কারী পেয়েছি, চোরবাটপারে ভরা হায় হায় কোম্পানীসহ এমএলএম কোম্পানী পেয়েছি। অতীতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশে পাচার হয়েছে, কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, দুর্নীতিতে এদেশ বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় দু’দলেরই ব্যর্থতার কোন শেষ নেই। সরকার এবং বিরোধীদল মুখে মুখে দাবি করছে গাজীপুর নির্বাচনের মাধ্যমে জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জনতা এই ভোটের রাজনীতিতে কি পেলো? আসলে জনতা আবারো একটা ফাঁদে পড়েছে। কড়াই থেকে তারা বার বার চুলোয় পড়ছে। সুতরাং মানুষের উচিত এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার রাজনীতি আবিষ্কার করা, নপুংসক নেতৃত্ব এবং ভাঁড়ামোপূর্ণ ও গাঁ বাঁচানো দলকানা বুদ্ধিজীবিদের অবাঞ্চিত করা।
সেই সাথে জনগণের উচিত হবে এক শ্রেনীর তাবেদার মিডিয়ার খবর বিক্রির ফাঁদে না পড়ে সচেতন হওয়া। তাদের চটকদার কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রকৃত মুক্তির জন্য ভিন্ন পথ আবিষ্কার করা। না হলে আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই বার বার ঘটতে দেখব। আজ যারা জেলখানায় বন্দি আছেন, দুদিন পর তারা ক্ষমতায় গিয়ে বেরিয়ে এসে আজকের রাঘব বোয়ালদের খাঁচায় পুড়বেন। চোরকে ধরবে বাটপার, আবার বাটপারের ধন চুরি করবে চোর।
মধ্যখানে জনতার সম্পদহানি ঘটবে। তাই এখন এসব পাতানো আয়োজন, ভোটাধিকারের স্বর্গসুখের মুলা ত্যাগ করে এবং পরিবারতন্ত্র পরিত্যাগ করে মানুষের উচিৎ সঠিক নির্দেশনা গ্রহণ করা। অন্যথায় নেতৃত্বের এই ব্যর্থতার সুযোগে জাতির ঘাড়ে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ দুর্যোগ। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। প্রবল পরাক্রমশালী সা¤্রাজ্যও নিজেদের হানাহানি ও অনৈক্যের কারণে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়েছে।
অবস্থার পরিবর্তন না হলে অদুর ভবিষ্যতে আমাদেরও যে পতন আসন্ন- দৃষ্টি সম্পন্ন ও সচেতন ব্যক্তিমাত্রই তা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।