প্রশ্ন:
১৯৭১ সালে আপনারা কেন পাকিস্তানের পক্ষে অবস'ান নিয়েছিলেন?
অধ্যাপক গোলাম আযম :
আমরা ছিলাম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। দুনিয়ার কোথাও সাধারণত এমনটি হয়নি, মেজরিটি অংশ মাইনরিটি থেকে আলাদা হতে চায়। আলাদা তো হতে চায় যারা মাইনরিটি তারা। আমরা কোন দুঃখে আলাদা হতে যাবো? যেহেতু আমরা মেজরিটি তাই আমাদের দায়িত্ব ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পাকিস্তানে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করা। আমরাই পাকিস্তানের আসল শাসক হবো।
সে সুযোগ না নিয়ে আমরা কেন পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাবো? দ্বিতীয় কথা হলো, পশ্চিম পাকিস্তান ছিল ভারতের বাইরে। আর আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছিলাম ভারতের পেটের ভেতরে। আমরা তো আলাদা হয়ে ভারতের আধিপত্য থেকে বাঁচতে পারব না। কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের দু’বার যুদ্ধ হয়েছে। সেই যুদ্ধে ভারত কিছুই করতে পারেনি এবং দু’বারই তারা পাকিস্তানের সাথে পরাজিত হয়েছে।
কিন' ১৯৭১ সালে ভারত যখন যুদ্ধ লাগাল, তখন তারা জয়ী হলো এ জন্য যে, এখানে জনগণের কোনো সমর্থন পাকিস্তান পায়নি।
আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন করে যেত, তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারতাম। কিন' তারা ভারতে গিয়ে ইন্দিরার কাছে সাহায্য চাইল স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। ভারত তার কূটনৈতিক, সামরিক সব শক্তি ব্যবহার করল। এ পরিসি'তিতে আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারিনি যে, ভারতের সাহায্য নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারব।
ভারত আমাদেরকে স্বাধীন করার উদ্দেশে সাহায্য করেনি। তারা তাদের স্বার্থের কারণে আমাদের সাহায্য করেছে। তাদের স্বার্থ ছিল তিনটা : প্রথমত, পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা ভারতকে সুযোগ দিয়েছে পাকিস্তানকে ভাগ করে দুর্বল করার। চিরদুশমন পাকিস্তানকে দুর্বল করা গেল। দুইবার যুদ্ধ করে ভারত পরাজিত হয়েছে।
এবার তারা তৃতীয়বার সুযোগ পেয়েছে তার প্রতিশোধ নেয়ার এবং তাকে ভাগ করে দুর্বল করার। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, যেহেতু বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ভারতের পেটের ভেতরে সে জন্য তারা বাংলাদেশকে আলাদা করতে পারলে আমাদের ওপর তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। তৃতীয় স্বার্থ ছিল, তারা তাদের পণ্যের বাজারে পরিণত করবে এ অঞ্চলকে।
তাদের সেই তিনটা স্বার্থই উদ্ধার হয়েছে। তিনটা স্বার্থই পূরণ হয়েছে।
আমরা এই আশঙ্কা করেই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারলাম না। আমাদের সেই আশঙ্কা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্যে পরিণত হয়েছে। আমরা সর্বক্ষেত্রে স্বাধীন নেই। আমরা এখন অনেকটাই ভারতের কুক্ষিগত। ভারত যা চায় আমরা সব দিতে বাধ্য হচ্ছি।
আমাদের অধিকার কিছুই দিতে চায় না তারা। আর তাদের যা ইচ্ছা তা-ই তারা চায় এবং তা-ই তারা পায়। এ অবস'া কোনো স্বাধীন মর্যাদাশীল দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না। আমরা এই আশঙ্কা করেছিলাম এবং এই আশঙ্কার কারণেই ১৯৭১ সালে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান রাখার পক্ষে ছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।