সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রন, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে হুমকির মুখে পাহাড়ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য। গ্রামবাসী ও অসেচতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কারণে প্রতিনিয়ত জীববৈচিত্র্য ঠিকে থাকার অনুকুল পরিবেশ বিনষ্ঠ হচ্ছে বলে জানা গেছে। আজ বিকেলে একটি সজারুকে ধরে পিঠিয়ে মেরে ফেলে গ্রামবাসীরা। এর আগেও বিভিন্ন সময় গ্রামবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাতে হরিন জবাই, পাখি ধরা, সজারু হত্যাসহ বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও উদাসীনতার কারণেও প্রাকৃতিক ভারসম্য নষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক প্রজাতির পাখি, প্রায় পচিশ প্রজাতির ব্যাঙ, হরিণ, বানর, হনুমান, সজারুসহ বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রায় জীববৈচিত্র্যও রয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, গতকাল বিকেল চারটার দিকে পাহাড়ের ক্ষেত থেকে এক চাষী সজারুটিকে ধরে এনে কলা অনুষদ ঝুপড়ির সামনে বেঁধে রাখেন। কিন্তু সজারুটি ফাঁদ ছিড়ে পালাতে চেষ্ঠা করলে উপস্থিত জনতা লাঠিপেঠা করে সজারুটি হত্যা করে।
এর আগে, ২০০৮ সালেও পাহাড় থেকে একটি সজারু ধরে একই স্থানে বেঁধে মারার চেষ্ঠা করলে কয়েকজন সচেতন শিক্ষার্থীর হস্তক্ষেপে সজারুটি রক্ষা পায়। ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়েল বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে একটি হরিণ শাবক ধরে জবাই করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষক।
অবশ্য, তার বিরুদ্ধে একাডেমিক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, হরিণ ও শুকরগুলো প্রায় প্রতিদিনই লোকালয়ে চলে আসাছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যক্তিবর্গের হাতে পড়ার আশঙ্কা। ইনস্টিটিউট অব মেরিন ফিশারিজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে হরিণ মাঝে-মধ্যে লোকালয়ে নেমে এলেও শিক্ষকদের জন্য নির্মিত ব্যাচেলরর ডরমেটরির ডাস্টবিনে প্রতিদিন রাতেই শুকরের পাল নামে। আমার বাসা পাশে হওয়ায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অন্তত সাত-আটবার শুকরের তাড়া খেয়েছি।
শাহ আমানত হলের এক প্রহরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়েল পাহাড়ে থাকা হরিণগুলো আগে খুব কমই লোকালয়ে দেখা দিত এবং মানুষ দেখলেই পালিয়ে যেত। কিন্তু এখন প্রায় সময়ই হলের বাগানে ঘাস খেতে চলে আসে। বেত দিয়ে তাড়া করলেও অনেকসময় যেতে চায়না। হরিণের প্রবেশ ঠেকাতে এখন চারপাশে জাল ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
হরিণ ও শুকরগুলোর লোকালয়ে চলে আসার কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বলেন, প্রাণীগুলো লোকালয়ে চলে আসার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
একটি কারণ হচ্ছে পাহাড়ে খাদ্য সংকট তৈরি হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়গুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিদেশী ইউক্লিপ্টাস গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হলেও মাটি থেকে অধিক পরিমাণে পানি শোষন করে। যার কারণে আশে-পাশের অন্যান্য গাছপালা বেড়ে উঠেনা। এসব গাছ পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য উপযোগী নয়।
একদিকে পাহাড়ে ফলজ গাছ কমছে অন্যদিকে পরিবেশ অনুপোযগী গাছ লাগিয়ে মাটির উর্বরতা নষ্ঠ করা হচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকটে পড়ে বাধ্য হয়েই তারা লোকালয়ে চলে আসতে পারে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখিদের অভায়রণ্য হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও তা এখন ম্লান হতে চলছে। ২০০১-২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক জরিপে ১১৩ প্রজাতির পাখি রেকর্ডভ’ক্ত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. ময়ূখ চৌধুরী জানান, একসময় কাটাপাহাড়ের দুই পাশ পাখির কলকাকলিতে মূখর ছিল।
বিশেষ করে পাহাড়ে ছোট ছোট খোপে বাস করা ‘সাদামাটনাকুটি’ খুব আকর্ষণ করতো। কিন্তু এখন তা দেখা যায়না। এছাড়াও আরো অনেক পাখিই হারিয়ে গেছে ক্যাম্পাস থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়গুলোতে জনসাধারণের অবাধে যাতায়াত, ক্যাম্পাসে গাড়ি চলাচল ও ইউক্লিপ্টাসের প্রভাবে পাখির সংখ্যা কমতে পারে বলে ধারণ করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।