আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষেধ অমান্য করে লেখাপড়া করায় জুঁইয়ের কব্জি কেটেছি : স্বামী রফিকের স্বীকারোক্তি

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" কলেজ ছাত্রী হাওয়া আক্তার ওরফে জুঁইয়ের ডান হাতের কবজি কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে বিদেশ ফেরত স্বামী গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম। জানা গেছে, বিদেশ যাওয়ার আগে জুঁইকে স্বামী রফিক জানিয়ে দেয় যে, লেখাপড়া করলে হাত কেটে ফেলা হবে। জুঁই তার কথা অমান্য করে লেখাপড়া করায় রফিক কবজি কেটে তার ওয়াদা পূরণ করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। পুলিশের তদন্তে এবং রফিকের স্বীকারোক্তিতে প্রমাণিত হয় যে, শুধু স্বামীর নিষেধ উপেক্ষা করে লেখাপড়া করায় ডান হাতের কবজি হারাতে হয়েছে জুঁইকে। এছাড়া আর কোন কারণ নেই বলে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি জানান।

এদিকে জুঁইয়ের কবজি কাটা নিয়ে গতকাল বুধবার দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘চোখ বন্ধ কর গহনা পরাবো’ বলেই স্ত্রীর কবজি কেটে ফেলল স্বামী’ শীর্ষক স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানবাধিকার সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গতকাল বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ নানা পেশার শত শত নারী-পুরুষ নরসিংদীর ভেলানগরের বাসায় জুঁইকে একনজর দেখতে যান। জুঁইয়ের কবজি কাটা ব্যান্ডেজ করা ডান হাত দেখে অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সহজ সরল, নম্র ভদ্র ও নিরীহ জুঁই শুধু অসহায়ের মত তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে কাঁদতে থাকেন। আগত ছাত্র-ছাত্রীরা জুঁইয়ের এই নির্মম ঘটনায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

তারা পাষণ্ড রফিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। জুঁই নরসিংদী সরকারি কলেজের এইচএসসি মানবিক বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী। সহপাঠীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলে দলে এসে জুঁইয়ের শয্যাপাশে অবস্থান করেন। ঐ সময় জুঁই সহপাঠীদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন, ‘আমি পঙ্গু হয়ে গেলাম। ’ এ সময় সহপাঠীদের মর্মস্পর্শী কান্নায় এক হূদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

জুঁইয়ের পিতা তাঁত শ্রমিক ইউনুছ মিয়া ও মা পারভীন বেগম এ সময় কন্যা জুঁইকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দরিদ্র পিতামাতা কন্যাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,‘ মাগো আমরা গরীব, তারা তো হাতের কবজি কেটে, নিয়েছে, তোকে কেটে ফেললে আমরা পেতাম না। তোকে জীবিত পেয়েছি। এটাই আমাদের সান্ত্বনা’। গত ৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন জিয়া কলোনীতে রফিকের দুলা ভাই সেনাবাহিনীর কর্পোরাল শফিকুল ইসলামের বাসায় জুঁইয়ের ডান হাতের কবজি কাটা হয়।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গহনা পরানোর কথা বলে রফিক চোখ বেঁধে চাপাতি দিয়ে জুঁইয়ের ডান হাতের কবজি কেটে ফেলে। রফিকের বিরুদ্ধে ঐদিন রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ রফিককে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে একদিনের রিমান্ডে আনে। রফিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছে।

তার দেয়া তথ্য মতে জুঁইয়ের কবজি কাটায় ব্যবহূত চাপাতিটি উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচটি আঙ্গুলের মধ্যে চারটি পুলিশ জব্দ করেছে। বৃদ্ধ আঙ্গুলটি গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি জানিয়েছেন। সমবেদনা জানাতে লোকে লোকারণ্য আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, গতকাল জুঁইয়ের পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ভেলানগরস্থ মহল্লার মোঃ ইউনুছ মিয়ার বাড়িতে তার সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, এলাকার লোকজন, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের লোকজন তাকে এক নজর দেখতে এবং সমবেদনা জানাতে ভিড় জমায়। নারী উদ্যোগ কেন্দ ঢাকার লিলি বেগম, মাকসুদা বেগমসহ অন্যরাও তাকে দেখার জন্য নরসিংদীতে আসেন।

তবে সরকারি পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসনের কোন প্রতিনিধি তাকে দেখতে যাননি। ঢাকা থেকে জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম এবং বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জুঁইয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তারা জুঁইকে দেখার জন্য নরসিংদীতে আসবেন। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ কলেজ ছাত্রী জুঁইয়ের কবজি কাটার নির্মম ঘটনা অধিকতর তদন্তের জন্য গতকাল উইমেনস বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী গতকালই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.