একজন চরম বোরিং মানুষ, কোন এক্সসাইটমেন্ট নাই আমার মাঝে। চিল্লাপাল্লা ভালো লাগেনা। সাবা মায়ের খুব আদরের মেয়ে। আদরের মেয়েদের যা হয় আর কী! ঘুমানোর বালিশ টাও খুব নরম হতে হবে। তার পছন্দের রঙ গোলাপী।
তার সারা ঘরময় তাই গোলাপী রঙের একটা সৌরভ মিশিয়ে থাকে। সাবা খুশি হলে কি হবে-রঙ্গের পরী কিন্তু সাবার উপর খুব রাগ করে বসে আছে। বাজারে গিয়ে সে গোলাপ ফুল গোলাপী কিনবে, লাল গোলাপ ফুল নাকি খারাপ। লাল রক্তের রঙ, লাল হিংস্রতার রঙ। গাদা ফুল তো আরো গাদু।
রজনীগন্ধার কথা নাই বললাম। এত সুন্দর গন্ধ হয়েও তা সাবার মন জয় করতে পারল না, শুধুমাত্র সাদা হবার কারনে। গোলাপী গোলাপ সাবার খুব ই পছন্দ-কারন সে জানে গোলাপ যখন গোলাপী হবে,তার প্রতিটা পাপড়িতে অনেক নতুন নতুন বন্ধুর নাম লেখা হয়ে যায়। টিউলিপ যখন গোলাপী হয় তখন তা তার সাথে যোগ করে দেয় যত্নশীলতা। সাবা চায় তার বন্ধুরা তাকে খুব খুব ভালোবাসুক।
কিন্তু বাগান পরী খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। সবাই যদি এখন সাবার মত ভাবে তাহলে বাকী ফুল গুলির কী হবে। আদুরে সুর্যমুখী, প্রেমের প্রতীক লাল গোলাপ তাহলে কী সাবার হাতের ছোয়া পাবে না। সাবাকে রংধনুর দেশে নিয়ে গেলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ। রাতের বেলা যখন সাবা গোলাপী চাদরে মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল-তখন ঘুম পরীকে ফাকি দিয়ে বাগান পরী, জল পরী, ঝরনা পরী, হাসির পরী, শোকের পরী-সবাই মিলে তাকে নিয়ে গেল রংধনু এর দেশে।
চোখ মেলেই দেখে ছোট্ট একটা ছেলে তার হাতে একগাছা ফুল দিয়ে আমন্ত্রন জানালো। হালকা সবুজ, হালকা নীল ফুল গুলি হাতে নিয়ে কেমন জানি শান্ত হয়ে এল মন। সামনে এক পা ফেলবার সাথে সাথেই চারদিক একটা নির্মল বরফ দিয়ে ঢেকে গেল। কেমন জানি একটা শান্তি, পবিত্রতা,সাম্য ভাব। মনে হচ্ছিল যেন একটা বিশাল দম নিয়ে আকাশে উড়ে যায়।
আস্তে আস্তে স্বপ্নের মত করে বরফের চারিধারে ডেফোডিল ফুল গুলো ছেয়ে গেল। আহ কী সুন্দর। বরফ পরী এসে বলল দেখেছ- আমি কত সুন্দর। সাবা অবাক না হয়ে পারেনা।
দুই পা আরো এগিয়ে যেতে পাহাড়ের শেষ কিনারা ঠিকরে সুর্যের রোদ এসে লাগলো গায়ে।
যেন বসন্ত এসে পড়ল পায়ে। গুটি গুটি পায়ে দুটো কাঠবেড়ালী এসে হালকা নীল, সাদা, নরম হলুদ, এবং ঘাসের সবুজ মিশিয়ে ফুলের তোড়া উপহার দিল। ইসস কত সুন্দর। কেমন একটা মুচকি হাসি হাসি ভাব। যেন এরা আমার জন্য সবকিছু করতে পারে।
সাথে সাথে ঝরনা পরী যেন দূর পাহাড়ের ঝর্নার ফোটা এনে সাবাকে জাগিয়ে তুললো। নীল স্নিগ্ধ ঝরনা পরী সাবার কানে কানে বলে চললঃ নীল হল আকাশের রং, নীল সত্য, জ্ঞান, স্বর্গের প্রতীক। তোমরা যাকে কষ্টের প্রতীক ভাব-সেই নীল আসলে গভীরতার প্রতীক। সমুদ্রের মত গভীরতায় সবার ই অনেক না বলা কষ্ট লুকিয়ে থাকে, তুমি যদি তা তোমার সেই বন্ধুকে বলে দিতে তবে দেখতে নীল অনেক সুন্দর।
বাগান পরী এসে ঝরনার ফোটা গুলি যেখানে ফুটেছে সেখানে ছোট্ট ম্যাগনোলিয়া, গ্লাডিওলাস রং করে দিল।
শক্ত চরিত্রের ম্যাগনোলিয়া আর গর্বের গ্লাডিওলাস যেন সাবাকে সামনে পা ফেলার সাহস দেয়। ফুড়ুত করে কোথা থেকে জানি দুটা প্রজাপতি সাবার কান ধরে টান দেয়। উজ্জ্বল রঙের প্রজাপতি দেখে সাবার মনে হল এরা যেন ছোট প্রজাপতি তার সাথেই যেন খেলতে চায়। ওমা একি, দূরে দেখি সুর্যমুখী, আর গাদা মারামারি করছে। সুর্যমুখী আদর চায়, আর গাদা আদর না দিয়ে বড় হতে চায়।
কিন্তু জিনিয়া ফুল কি তা মানবে!সে চায় তারা বন্ধু হয়ে যাক।
সবশেষে এল রুপালী বেশ ধরে পরীদের রানী, তার হাত ধরে সোনালী বেশে তার দুই মেয়ে। মায়ের গাউনের একদম শেষ মাথাটা ধরে। ইস কত কিউট। রানী তাকে গাড় লাল, গোলাপী, স্নিগ্ধ সবুজ আর কমলা রঙের এক গোছা ফুল উপহার দিল।
রানীর মতই রাজকীয় এই ফুল গুলো। সাবা যে কী বলে ধন্যবাদ দিবে রানীকে। তার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে, আবার আনন্দে কান্নাও পাচ্ছে। হঠাত করে শোকের রং, গর্বের রং কালো তার চোখ ছেয়ে দিল।
ফুটুস করে চোখ মেলবে এখনি সাবা।
আজ স্কুলে যাবার তাড়া দেবার আগেই সাবা ঘুম থেকে উঠবে। জানালা খুলে যখন সুর্য মামাকে সালাম জানাবে, তখন দেখবে তার জানালার সামনে একটা সুন্দর ফুলের গাছ। সবুজ পাতার আচলে সতেজ হয়ে তার দিন শুরু হবে,আর স্মিত হাসি দিয়ে জুই বলবে তুমি কত সুন্দর।
(একদম বাচ্চা ভিত্তিক হলেও চারপাশের এত রং, তাদের এত আনন্দ দেখে বাচ্চা হয়ে যেতে ইচ্ছা করে। মন খারাপ করে সাদা ম্যাড়মেড়ে বইয়ের পাতা উল্টাতে ইচ্ছা করেনা।
) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।