আশা নাই তাই মশারির ভেতর মশা ও নাই।
টুবলু ভাই এর ড্রইংরুম এ বেজায় ভিড়। দুটি ৩ সিটেড ও দুটি ১ সিটেড কাঠের গদিওয়ালা সোফা তে সিনিয়র ভাই, কাকা, চাচা রা বসে। তাও আবার ৩জনের সোফাতে ৭ জন করে (হাতলের ব্যাবহার সহ) আর একজনের সোফায় ২জন করে বসা। এ, ত গেল সোফার ব্যবহার।
ফ্লোর এ কার্পেটে জনগনের আধীক্ক সবচেয়ে বেশী। প্রায় ২০-৩০ জনের সমাবেশ। সবার চোখ ঘরের কোনে রাখা ২০" কালার টেলিভিষনের দিকে। ঘড়িতে প্রায় ১১টা ১৫মি: সবাই আমরা অপেক্ষা করছি। আর মাত্র কিছুক্ষনের অপেক্ষা।
হ্যা ঐ ত... ব্যাট হাতে দেখা যাচ্ছে... আমার দেশের, আমার বাংলাদেশের দুজন কে... ওপেন করতে যাচ্ছেন আতাহার আলী খান এবং জাবেদ ওমর বেলিম গোল্লা। আমার বয়স তখন কত আর হবে? কিন্তু সেদিন এর অনুভুতি আমার কাছে আজ ও সেদিনের মতই। ওয়াসিম আক্রাম, ওয়াকার দের মত বোলারদের ফেস করবে আমাদের আতাহার ভাই আর গোল্লা ভাই??.... এ যেন স্বপ্নের চেয়ে বেশি।
বলে রাখা ভাল আমাদের পাড়ায় তখন অনেক ক্রিকেটিয় বুদ্ধিজীবিদের বসবাস। সমস্ত মহল্লা ৩ ভাগে বিভক্ত।
ভারত, পাকিস্তান ছাড়া কিছু ভিন্ন ধারার বুদ্ধিজীবিও ছিলেন যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সাপোর্টার ছিলেন। বিভ রিচার্ডস কিভাবে ম্যচ উইনিং নক খেলে ব্যাট কাঁধে নিয়ে মাঠ ছাড়তেন সেই গল্প অনেকদিন শুনতে হয়েছে আমাদের। এমন একটা মহল্লায় সবার সাথে বসে খেলা দেখার আনন্দের সাথে যোগ হয়েছে ১ম বারের মত টিভি তে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খেলা দেখার আনন্দ। আমি ত রিতি মত আকাশে উড়ছি।
ব্যাট করছেন আতাহার আলী, বোলার কে ছিলেন ঠিক মনে নেই এখন।
আমাদের মনে একটাই সংকা। পারবেত ১০০+ করতে? গুড লেংথ থেকে একটু সামনে বল লম্বু আতাহার আলী কে আর পায় কে? সাথে সাথে ব্যাট লিফ্ট ফ্রন্ট ফুটে চমৎকার কাভার ড্রাইভ। চমৎকার ফলোআপ। এবং স্বপ্নের মত বল শারজাহর মাঠের বাইরে। চার রান।
টুবলু ভাইএর ড্ইংরুম বিস্ফোরিত। বাঘের বাচ্চা। মানে এও কি সম্ভব বাংলাদেশের আতাহার আলী এত চমৎকার মার তাও কোনও এক ধাসু ইন্টারনেসনাল বোলার কে!!!! এবং স্বপনের শুরু এখানেই.......
তারপর স্বপ্নের পথ চলা। একে একে আই সি সি চ্যামপিয়ন। "ব্যাট এ লাগুক আর পেড এ লাগুক রান প্রয়োজন রান আসছে" রেডিও তে সেই অসুস্থ লোকের মহান বাণী।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ। এখন আর আমাকে ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চার মত লাফাতে হবে না। "বিশ্বকাপে কোন দেশের সমর্থক?" মানে??? আমার দেশ। বাংলাদেশ.....
.....পাকিস্তানের উইকেট পড়ছে একে একে। বিশ্বকাপে পাকিস্তান কে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
যেন আরেক ১৬ ডিসেম্বর। নিজে স্লোগান দিয়েছি
"পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা"। মিছিল, রঙের ছড়াছড়ি। নতুন নতুন স্বপ্নের পথ চলা... একে একে হারালাম জিম্বাবুয়ে, ভারত, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া.... আশরাফুলের সেই ইনিংসটি....ওফ অসাধারন। তারপর টেস্ট ক্রিকেট।
এবং প্রথম টেস্টেই ১ ইনিংসএ ৪০০+ রান। একে একে টেস্টেও জয়।
আমাদের এই স্বপ্নযাত্রায় দু:স্বপ্ন যে উকি দেয় নি তা কিন্তু নয়। আমাদের ব্যাট্সমানরা যখন তখন উদারতার পরিচয় দিতেন কথায় কথায় ক্যাচ উপহার দিয়ে। মাঝের একটা সময় ত এমন ছিল যে বাংলাদেশ মানে ৩৪ রানে ৫ উইকেট।
তার পর পাইলটের সাথে বাকিরা টেনেটুনে ১৫০-১৭০।
আল শাহরিয়ার রোকন নামের এক টেলেন্টেড ভদ্রলোক ছিলেন যাকে পিচ এ রেখে বাথরুম এ গেলে উনি রাগ করে চলে আসতেন। মানে উনি ছিলেন বিপক্ষ দলের প্রথম ওভারের নিয়মিত সাফল্য। বুলবুল, বেলিম, রাজিনদের মত ব্যাটসম্যান ছিলেন যারা মনে হত কাথা বালিশ নিয়ে পিচে ঘুমাতে এসেছেন। শান্ত, আনিসের মত বোলার ছিলেন যাদের বল অনেক সময় ৩ ড্রপে ব্যাটসম্যান এর কাছে গেছে।
কিন্তু ঐ সময়গুলো আমরা বোধহয় পেরিয়ে এসেছি। বোধহয় বলছি একারণে যে এখনও আমাদের মাঝে মাঝে আয়ারল্যান্ড এর সাথে হারতে হয়।
সামনে ২০১১ বিশ্বকাপ তাও যৌথ ভাবে আয়োজনে বাংলাদেশ। লড়ব আমরাও। তামিম, আশরাফল, ক্লিক করলে ত হলই না করলে আমাদের সাকিব, তারপর মুসফিক, আউট হলে রিয়াদ, ছক্কা নাইম।
এর মধ্যে যদি অলক, আফতাব টিমে ঢোকে তাহলে ত সোনায় সোহাগা। বোলিং এ মাশরাফি। রুবেল এর পেস বাড়ছেই। তার পর ঐতিহ্যবাহী বাঁ হাতি স্পিন। সাকিব, রাজ্জাক এর ব্লক।
আমি ত আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি আপনারা কি বলেন? পারিনা আমরা কাপ টা রাইখা দিতে?? দিলাম না কাপ। কি আছে জীবনে?
আজ আবার মনে পড়ে টুবলু ভাইএর সেই ড্রইংরুমএর কথা। যেখান থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে আমার স্বপ্ন দেখার শুরু। রাকিবুল হাসান সিনিয়র থেকে শুরু করে আক্রাম, নান্নুর সহ আপনারা যারা আমাদের এই সপ্নের দ্বারে নিয়ে এসেছেন তাদের জন্য আমার অন্তর থেকে ভালোবাসা ও দোয়া। বর্তমান ক্রিকেটারদের কাছে শুধু আমাদের একটাই চাওয়া আপনাদের খেলা দেখে যেন আমাদের মনে হয় আপনারা চেষ্টা করছেন।
কারণ আপনারা যখন খেলেন মনে রাখবেন ১৪ কোটি বাঙালীর স্বপ্ন নিয়ে খেলছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।