আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ : ভাড়াটিয়া : এক উš§ুল উদ্বাস্তু অস্তিত্ব

সাইফ শাহজাহান শুচি সৈয়দ ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই মা-গো আমার শোলোক বলা কাজলা দিদি কই?’ বাংলা ভাষার এই জনপ্রিয়তম কবিতাটিকে যিনি তার সুকণ্ঠে আরও অনেক জনপ্রিয় ও হƒদয়গ্রাহী করে তুলেছিলেন সেই গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম বছর দশেক আগে ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী গায়িকার শেষ ইচ্ছা পূরণের অন্তরায় তুলে ধরেছিলেন। সেই অন্তরায় তার ভাড়াটিয়া। গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছা তিনি তার বাড়িটিতে একটি সঙ্গীত বিদ্যালয় গড়ে তুলবেন যাতে পরবর্তী প্রজšে§র ছেলেমেয়েরা গান শিখে তার মত যশ্বস্বী হতে পারে। কিন্তু তার সেই শুভ ইচ্ছাটি পূরণ করতে পারছেন না তিনি।

কারণ তার বাসায় থাকা ভাড়াটিয়ারা বাসাটি ছাড়ছেন না। তারা ভাড়াটিয়ার অধিকার আইনের বলেই ভাড়াটিয়াত্ব বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। ভারাটিয়ার অধিকারের কাছে অসহায় গায়িকার সজল মুখচ্ছবি ক্যামেরায় দেখে বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠেছিল। ভাড়াটিয়াদের জবরদস্তির কাছে কলকাতার বাড়িওয়ালারা যে কতটা অসহায় সেটা সেদিন বুঝেছিলাম। গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায়ের বাসায় যে ভাড়াটিয়ারা ভাড়া থাকেন তাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের বাড়ি করে ফেলেছেন সে পাড়ারই দূরে অদূরে; তাসত্ত্বেও তার একটি মহৎ উদ্দেশ্যপূরণের জন্যও বাড়িটি ছাড়তে তারা নারাজ! অর্থাৎ ভাড়াটিয়ারা নিজে বাড়িওয়ালা হয়ে গিয়েও ভাড়াটিয়ার অধিকার চৌষট্টি আনা খাটাচ্ছেন অসহায় গায়িকার ওপর।

কলকাতার ভাড়াটিয়া আর ঢাকার ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে কি আকাশ-পাতাল পার্থক্য সেদিন সেটা উপলব্ধি করেছিলাম। যদি তুলনা করি কলকাতার সঙ্গে ঢাকার তবে দেখতে পাবো প্রতিদিন আমাদের ন্যূনতম মানবাধিকার পর্যন্ত পদদলিত করছেন ঢাকার বাড়িওয়ালারা। গত প্রায় ছাব্বিশ বছর যাবৎ এই ঢাকা শহরে আছি, বলাবাহুল্য ভাড়াটিয়া হিসেবেই। মানবাধিকারের এই লঙ্ঘনকে মেনে নিয়েই। এই লেখাটি লেখার সময়ই আমার স্ত্রী ট্যাপে পানি নেই দেখে গজগজ করছেন।

কয়েক দিন আগে নিচে দারোয়ানের জিম্মায় ময়লার ব্যাগ রাখতে গিয়ে কথা শুনতে হয়েছে তাকে অথচ প্রতি মাসে আমরা ময়লা চার্জ পে করছি তাকে ভাড়ার সঙ্গে। এমাসে ভাড়ার স্লিপ দেবার সময় মৌখিক নোটিশ দিয়ে গেছেন বাড়িওয়ালা যে, আগামী মাস থেকে ভাড়া এক হাজার টাকা বাড়বে। গত বছরই সে ভাড়া বাড়িয়েছে এক হাজার টাকা। ভাড়া দেবার সময় সে কথা তাকে স্মরণ করালে সোজাসাপ্টা তার জবাব হচ্ছেÑ না পোষালে বাড়ি ছাড়তে হবে। কেন এই বৃদ্ধি বছর না ঘুরতেই? তার কাছ থেকে পাওয়া ব্যাখ্যা এইÑ সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্স এসেসমেন্ট করে তার হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০ হাজার টাকা করায় তাকে ‘নিরুপায়’(!) হয়ে ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে! অথচ সিটি কর্পোরেশন কোনও ট্যাক্স বাড়াননি বলেই জানি।

ইতিপূর্বে বিদ্যুতের নতুন মিটার বসানোর সময় ইলেক্ট্রিক বিল বাড়িয়ে নতুন মিটারের টাকা তুলেছেন তিনি ভাড়াটেদের কাছ থেকে। কয়েক মাস আগে ময়লা ফেলার জন্য দারোয়ানের বেতন ১শ’ থেকে বাড়িয়ে ২শ’ টাকা করে দিয়েছেন সরাসরি। আমি তার ভাড়ার স্লিপে বৃদ্ধির খাতটি গোল করে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দিলেও তার উত্তর দেবার গরজ বোধ করেননি। প্রায়সই আমাকে তার বিদ্যুৎ বিলের ঘরে জিজ্ঞাসা চিহ্ন বসাতে হয় এবং যথারীতি তিনি কোনও উত্তর দেন না। আমার দেড় রুমের বাসায় বিদ্যুৎ বিল আসে ৮শ’ ১ হাজার কখনো কখনো ১২/১৩শ’ পর্যন্ত এমনকি শীতকালেও! আর লোডশেডিঙের কথাতো বাদই দিলাম।

আমার কলিগ শিল্পী রাজিব রায়ের অবস্থা আরও করুণ। ওর বাড়িওয়ালা ওর তিন রুমের বাসার ভাড়া বাড়িয়েছে ২ হাজার টাকা। ও পরদিন থেকে বাড়ি খুঁজছে। একই অবস্থা অগ্রজপ্রতিম মোমিন ভাইয়ের। তার বাড়িওয়ালা প্রতি ছয় মাসে বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছেÑ এ এক অদ্ভূত নৈরাজ্য শুরু হয়েছে বর্তমান এই ঢাকা শহরে।

জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় এই শহরে কাটিয়ে ইদানিং নিজেকে উš§ুল উদ্বাস্তু বলে বোধ হচ্ছেÑ এই রকম অনুভূতি দুই তিন বছর আগে কখনো মনে উঁকিও দেয়নি! আমি জানি আমার চাইতেও অনেক অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা আছে আমার বন্ধু, কলিগদের। কিন্তু বিষয়টি যেন কেউই দেখেও দেখছিনাÑ বুঝেও বুঝছিলাÑ ভেবেও ভাবছিনাÑ শুনেও শুনছিনা। আর তাই Ñ ‘প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে/ বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’। নিজেকে খুবই অসহায় বোধ করি। আমি নিজে ‘ঢাকা মহানগরী ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংগঠনের সহসভাপতি।

আমাদের সমিতির সভাপতি একজন মুক্তিযোদ্ধাÑ নুরু মিয়া, বাড়িওয়ালাদের এই সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে খুবই সোচ্চার। তাদের অনেক অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ-প্রতিকারও করেছেন তিনি বিভিন্ন সময়ে। ভাড়াটেদের স্বার্থ রক্ষায় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটিয়েছেন তিনি। আমরা সব সময় তাকে আগলে রাখার জোর চেষ্টা চালাই। এই সমিতির বিভিন্ন সভায় সমিতির অন্যসব সম্মানিত সদস্যরা দেশ-বিদেশের তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

একজন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের উদাহরণ দিয়ে জানিয়ে ছিলেন, সেখানে সব বাড়ি ভাড়া ঠিক হয় সরকারের একটি বিভাগের মধ্যস্থতায়। ভাড়া জমা হয় ব্যাংকে। আমাদের সভাপতি নুরু ভাই ভাড়াটিয়াদের আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন জড়িত থাকার অভিজ্ঞতায় সরকার, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া বান্ধব একটি পদ্ধতির কথা বলেন, তার প্রস্তাব, সরকারের প্রণীত বাড়ি ভাড়া আইনের আলোকে নির্ধারিত ভাড়া ভাড়াটিয়ারা নিজ দায়িত্বে প্রতি মাসে নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দেবেন। ব্যাংকে জমাকৃত সেই ভাড়া থেকে সরকার তার বিভিন্ন সেবার বিপরীতে প্রাপ্য টাকা কেটে রেখে বাড়িওয়ালার প্রাপ্য অংশ বাড়িওয়ালাকে প্রদান করবেন। এতে করে তিন পক্ষই উপকৃত হবে।

বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতা দূর হবে, ভাড়াটেদের কষ্ট লাঘব হবে এবং সরকারও সরাসরি প্রকৃত প্রাপ্য যথাসময়ে পেয়ে তা যথাযথ ভাবে ব্যয়ের মাধ্যমে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেদের আরো উন্নত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে। পদ্ধতিটি খুবই স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক। এটা সহজেই বাস্তবায়ন সাধ্যÑ চাই শুধু সদিচ্ছা। এতে বাড়িওয়ালার অধিকার যেমন নিশ্চিত হবে তেমনই ভাড়াটেরাও অধিকার বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পাবেন। সময় এগিয়ে যাচ্ছে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উন্নততর কর্মপন্থার বিকল্প নেই।

তরুণ এবং সৃজনশীল আমলাতন্ত্রকে কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। দেরিতে হলেও বিষয়টি যে সরকারি মহলের ভাবনায় নাড়া দিচ্ছে তা বুঝতে পারলাম দৈনিক যুগান্তরের ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি সংবাদ সূত্রে। বিএম জাহাঙ্গীরের প্রতিবেদন ‘হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে শুভঙ্করের ফাঁকি’ সংবাদ থেকে জানতে পারছি যে, ‘‘হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের নামে শুভংকরের ফাঁকি আর দুর্নীতি বন্ধ করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি ভবন থেকে যথাযথভাবে প্রাপ্য হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আকস্মিক পরিদর্শন করবেন। একইভাবে সব ধরনের কর আদায়ে অনিয়ম-দুর্নীতিরোধে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শনিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে সিটি কর্পোরেশনগুলোর আয় বাড়ানোসহ নাগরিক সুবিধা বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে শিগগিরই প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিসিসির ওয়ার্ড অফিস ভাড়া নেয়াসহ সভা থেকে পাঁচটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মোঃ শহিদ খান যুগান্তরকে বলেন, যে কোন মূল্যে প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করা হবে। নগরে বসবাসরত মানুষ কর দেবে আর বিনিময়ে প্রাপ্য সেবা পাবে না, তা হবে না। তিনি বলেন, কর আদায়ে নানা অনিয়ম আর শুভংকরের ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয় মাথায় নিয়ে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে আয় বাড়ানোর জন্য সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। নতুন করে কর না বাড়িয়ে যা নির্ধারণ করা আছে তাই যথাযথভাবে আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে। কেননা, ভালো সেবা দিতে হলে অবশ্যই কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হতে হবে। ... সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান। বিস্তারিত আলোচনা শেষে সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছেÑ হোল্ডিং ট্যাক্সসহ সব ধরনের কর আদায় যথাযথভাবে নিশ্চিত করা, সময়মত ও ভালোভাবে বর্জ্য অপসারণ করে নগরকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, রাস্তা ও ফুটপাতকে সব ধরনের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা, সড়ক বাতি নিশ্চিত করা এবং মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্সের আওতায় (দক্ষিণ ও উত্তর) প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার বাড়ি/ভবন রয়েছে। এসব বাড়ি থেকে শিল্প, আবাসিকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স আদায় করা হয়। কিন্তু ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকেন। নিয়মানুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স যা আসার কথা তা নির্ধারণ না করে বাড়ির মালিকের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে কর কমিয়ে দেয়া হয়।

দেখা যায়, এভাবে বাড়িপ্রতি কমিশন গ্রহণ বা ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ডিসিসি প্রাপ্য করের অর্ধেক পাওয়া যায় না। চলতি অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। কিন্তু সঠিকভাবে কর আদায় করলে শুধু এ খাত থেকেই কমপক্ষে ৭শ’ কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা। এভাবে প্রতিটি সেক্টরের কর আদায়ে অনিয়মের অহরহ অভিযোগ রয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব অনিয়ম দূর করতে আকস্মিক পরিদর্শন করা হবে।

নমুনা হিসেবে সবক’টি জোনের কিছু বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের কাগজপত্র ও বাস্তবে কত টাকা ট্যাক্স হওয়ার কথা তা সরেজমিন গিয়ে যাচাই করে দেখা হবে। এক্ষেত্রে গরমিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ... সভায় কর্মকর্তারা বলেন, ভোট কমে যাবে বলে নির্বাচিত মেয়ররা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু বাড়ির মালিকরা বছর বছর ভাড়া বৃদ্ধি করে চলেছেন। এক্ষেত্রেও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

তারা বলেন, কর আদায় কম হয় বলে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে ঠিকমতো সেবা দেয়া যায় না। সভায় বলা হয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে মেয়রসহ কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকলেও নাগরিক সনদ ও লাইসেন্স প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা প্রদানে কোন সমস্যা হবে না। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা এসব সেবা নিশ্চিত করবেন। ... ’’ দুর্নীতির চোরাগুপ্ত পথগুলি বন্ধ হলে ভাড়াটিয়ারা হয়তো কিছুটা কষ্টমুক্ত হতেন। ২. এক গবেষণা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত ২২ বছরে ঢাকা মহানগরীর বাড়িভাড়া বেড়েছে ৩২৫ ভাগ।

এ সময়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ১১৭ ভাগ অর্থাৎ ভাড়া বৃদ্ধির হার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির তিন গুণের কাছাকাছি প্রায়। ঢাকার ভাড়াটিয়ারা তাদের আয়ের ৬০ ভাগ ব্যয় করেন বাড়িভাড়ার খাতে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে দেখলাম, কয়েক দিন আগে চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন এলাকার বাড়িওয়ালারা হুট করে বাড়ি এবং ঘর ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ফলে সমস্যায় পড়েছে ইপিজেডে কর্মরত নিরীহ শ্রমিকরা। কাঁচা বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর যেমন অজুহাত খোঁজে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তেমনই বাড়িওয়ালারা নানা অজুহাতে বাড়িভাড়া বাড়াতে শুরু করেছেন। বাড়িভাড়া সম্পর্কিত আইনের ধারে কাছে দিয়েও হাঁটছেন না তারা।

বাড়িওয়ালাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ অনেকেই ফ্ল্যাট কিনে আপাত মুক্তি প্রত্যাশী। কিন্তু সেখানেও পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক নয় বলেই বোধ করি। আমার ফুপাতো ভাই অনুপম কামাল বছরখানেক আগে দেশে এসেছিল। ও এখন মার্কিন নাগরিক। সম্প্রতি সেখানে একটি বাড়িও কিনেছে।

অনুর বউ বীথি ওদের বাড়ির একটি সুন্দর ভিডিও শ্যুট করে এনেছে যা ওর নিজের তোলা। আমরা সবাই আমেরিকায় ওদের বাড়ি না গিয়েও বুঝতে পারি অসম্ভব সুন্দর বাড়িটি। তিন বিঘার সেই বাড়িটির দাম ধানমণ্ডির ১ নম্বরের ওদের ফ্ল্যাটের দামের চেয়েও কম। অনু ওর মা-কে আমেরিকায় বাড়ি কিনতে বলে হাসছিল! ক’দিন আগে অনুর বাবা অর্থাৎ ফুপা আমেরিকা গিয়েছেনÑ ফুপুকে ফোনে জানিয়েছেন, এ তো একটা ছোট্ট রাজপ্রাসাদ! বাস্তবতা এমনই রূঢ়! আমরা যতই গাইনা কেন প্রাণ ঢেলেÑ ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা। ’ তার কিন্তু কোন উপায় থাকছে না।

মাথা তো দূরের কথা আঙুলও ঠাঁই খুঁজে পাচ্ছে নাÑ এমনকি ফ্লোরেও। একটি হাউজিং কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে খাঁটি সরিষার তেলের গুণকীর্তন গেয়ে দাবি করে তাদের কাছে প্লট কিনলে নাকে খাঁটি সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা যাবে নিশ্চিন্তেÑ সময় মতো প্লট বুঝিয়ে দেবেন তারা। যদিও সেই সর্ষের তেল নাকে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে এখনও অনেকে স্বপ্নেও তাদের সেই প্লট পাননিÑ উপরন্তু গত কয়েক দিন সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হয়েছে, তাদের প্রকল্প এলাকায় চলছে গোলাগুলি; তাতে হয়তো কেউ কেউ অনন্ত ঘুমের দেশে চলে যাচ্ছেনÑ সেটা শর্ষের তেলের গুণে নয়Ñ বারুদের গুণে। কিন্তু বাড়িভাড়া, প্লট ও ফ্ল্যাটের বিষয়ে দেশের আইন এবং মন্ত্রণালয় অনন্ত ঘুমের দেশে অবস্থান করছে বলেই মনে হয়! মানুষের মৌলিক অধিকার সমূহ হচ্ছেÑ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। যে অধিকার গুলো পূরণ ও রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

স্বাধীনতার ৪০ বছরে আমরা সে অধিকার গুলোর উন্নতির বদলে অবনতি দেখছি কেবলই যা কিনা জাতির জীবনী শক্তিকে ভেতর থেকে শুকিয়ে ফেলছে। নিষ্প্রাণ করে ফেলছে। গত পঁচিশ বছর ঢাকা বাসের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া বাড়াতেন সরকারি পে-স্কেল ঘোষণার সময়ে। যখন সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়তো তখন কিন্তু গত পাঁচ সাত বছর ধরে দেখছি বাড়িওয়ালারা বছরান্তে, মাসান্তে বাড়ি ভাড়া বাড়াবার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ। কোন নিয়ম, নীতি, নৈতিকতার ধার তার ধারছেন না।

ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালাদের আচরণ সামন্তবাদী জমিদারদের বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মানুষজন উদ্যোগ নিয়ে আমাদেরকে এই মহানগরীতে উš§ুল উদ্বাস্তু অস্তিত্বের বোধ থেকে মুক্ত করবেন। ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.