... আমার কিছু কথা ছিল / তোমায় বলার কেবল তোমায় / যেই না আমি ঠোঁট নেড়েছি / সেই কথাটা তলিয়ে গেল / এই সময়ের শব্দতলায় .... ভাবনা ১ :
পরাগ অপহৃত হলো। মা এর বুকে গুলি চালিয়ে অপহরন্কারীরা পরাগ কে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। মানবিকতা ব্যাপার টা ক্রিমিনালদের কাছ থেকে আশা করা সত্যি হাস্যকর হয়ে যায়। তারপরো মাঝে সাঝে মনে হয় প্রত্যেকেই তো মা এর সন্তান। মা ছাড়া তো আর দুনিয়ায় কেউ আসেনা।
মা এর আদর কেউ পাক কিংবা না পাক, আমার মতে, প্রতিটা মানুষের মন ই মা এর ভালবাসা, আদর, মমতা, যত্ন বা খানিক স্পর্শের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। যে কোনো যন্ত্রনায় অনেকেই প্রথমে মা কে ডেকে উঠেন ... সে যে বয়সের ই হোক না কেন। আর শিশু প্রকৃতির এমন একটি বিষয় যা মানুষের মনকে কিঞ্চিত হলেও দুর্বল করে দেয়, আবেগায়িত করে দেয়, ভালো লাগায় পরিপূর্ণ করে দেয়। মানব শিশু তো সেখানে প্রকৃতির অন্য সব প্রাণী শিশুর চেয়ে বহু কোটি গুন উর্ধ্বে। তারপরো আমাদের সমাজে শিশু নির্যাতন চলে নানাভাবে।
ক্রিমিনালগুলো ক্রিমিনাল বলেই বোধহয় তাদের একটুও মন কাঁপেনা, একটুও মায়া হয়না এসব অবোধ, নিষ্পাপ শিশুগুলোকে কষ্ট দিতে। মা এর কোল খালি করে নিতে গিয়ে মা এর আহাজারি এদের কানে কি পৌছেনা? বাচ্চাগুলোর মা এর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য যে আকুল কান্না তা কি তারা দেখেনা? তাদের কি একটুও বুক কাঁপেনা? হাঃ, কি বলছি আমি এসব? বুক ই যদি বা কাঁপত, হৃদয় ই যদি বা আবেগে টালমাটাল হতো তবে কি তারা আর পরাগ কে অপহরণ করতে পারত? ডাকাতরা কি লুটের মাল এর সাথে সেই শিশুটিকে (দুর্ভাগ্যবশত তার নামটি আমি ভুলে গেছি। মায়িশা কি?) ডাকাতি করে নিয়ে যেতে পারত? পারতনা! কিন্তু তেমন টা তো আর হয়না! আমাদের এমন কত শিশু হারিয়ে যায়, চুরি হয়ে যায়, অ্যাসিড এ পুড়ে যায়, ধর্ষিত হয়, প্রতিহিংসার জেরে খুন পর্যন্ত হয়! মা যখন ঠেকাতে আসেন তখন তারা গুলিবিদ্ধ হন, ছুরিবিদ্ধ হন, অ্যাসিড দগ্ধ হন এবং আরো কত না ভাবে নির্যাতিত হন। কি মর্মান্তিক! আমার শুধু ক্রিমিনালদের মুখে এক দলা থুথু ছিটিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, "ওরে পাষন্ড, অভাগার দল, মা এর বুক তো এমনিতেই শত কোটি গুনে ঝাঁঝরা ঝাঁঝরা হয়ে যায় যখন তুই তার বুক খালি করে তার নয়নের মনি, কলিজার ধন কে ছিনিয়ে নিয়ে যাস! বুকে গুলি করে, ছুরি বসিয়ে সেই বাচ্চার ক্ষতি করা লাগেই লাগে? ছি!" আসলে কাকে এই ধিক্কার দিচ্ছি? ওদের মন মানসিকতা তো ধিক্কার পেয়ে লজ্জিত বা অনুতপ্ত্ হওয়ার ও নিচে! আমি ভাবছি আজ যদি পরাগ এর মা এর কিছু একটা খারাপ হয়ে যেত! কি বিপর্যয়ের মুখেই না সন্তানরা পরে যেত! সর্বশক্তিমানের কাছে অশেষ ধন্যবাদ পরাগ এর মা বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন।
কিন্তু এই ক্রিমিনাল্ গুলোর চাইতেও ক্রিমিনাল মনে হচ্ছে আমাদের সরকার কে।
নিজেকে ঝাঁটাপেটা করতে মন চাইছে। কি ভেবে, কি দেখে এদেরকে ভোট দিয়ে দেশের মাথা বানিয়েছিলাম! কি ভেবে, কি দেখে আমরা প্রতি নির্বাচনে এ দল, ও দল করে ভোট দিয়ে পালাক্রমে একে ওকে ক্ষমতায় বসাই? ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়না, আমরা ক্রমাগত প্রতারিত হই! একজন বলে মুজিব হত্যার বিচার হলো, আরেকজন বলে জিয়া হত্যার বিচার হবে , তাতে করে নাকি সঠিক আইনের শাসন চালু হচ্ছে! আরে! দেশের কোটি কোটি মানুষ সুবিচার পায়না! শত শত হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হয়না! শুধু ওই দুই জন মানুষের হত্যা মামলা নিষ্পত্তি করে কি করে বলে দেশে সুবিচার ব্যবস্থা চালু হয়েছে, হচ্ছে, বা হবে? কি করে বলে? আশ্চর্য! আমাদের মহান নেতারা যদি পরপার থেকে আমাদের দেখে থাকেন, তাহলে উনারা খুব লজ্জিত হচ্ছেন দেশের অবস্থা দেখে, আমি সুনিশ্চিত। এই পরাগ অপহরণ নিয়ে আমাদের পুলিশ এবং RAB দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। একপক্ষ বলছেন ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ নাকি দেয়াই হয়নি, আরেকপক্ষ বলছেন এই অংকের মুক্তিপণ দেয়া হয়েছে। জাতির নিরাপত্তার জন্য যারা নিয়োজিত তারা যদি এরকম পরস্পরবিরোধী তথ্য দেয় তবে কাকে বিশ্বাস করব? তাদের কাছে আর কি ই বা নিরাপত্তা আশা করব? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকেও নাকি বিবৃতি এসেছে যে মুক্তিপণ দেয়া হয়নি! কিন্তু দেশের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া জানাচ্ছে যে পরাগের দাদী জানিয়েছেন যে টাকা বড় কথা নয়, নাতি কে ফিরে পেয়েছেন সেই ঢের ! কি মহা মুশকিল এ পড়া গেল! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতি বলে কথা, আবার পরাগের দাদির বিবৃতি বলে কথা! কারটা বিশ্বাস করি বলুনতো?! পরাগের বৃদ্ধ দাদী কি তবে পরাগ কে ফিরে পাওয়ার আনন্দে ভুল বকেছেন? কিন্তু যদি ভুল না বকে থাকেন? তাহলে কি দাড়ায়!? একে তো সরকার বা প্রশাসন যাই বলিনা কেন আমাদের কোনরূপ নিরাপত্তা দিতে পারছেনা! তার উপরে যখন ঘটেই গেল ঘটনা, কোনরূপ সহায়তাও করতে পারছেনা! প্রশাসন থাকতে কেন একজন নাগরিক কে মুক্তিপণ দিয়ে তার সন্তান কে অপহরণ কারীদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতে হবে? উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আগেই নাগরিক কে এখন দেখি নিজের ব্যবস্থা নিজের ই করে নিতে হয়! যেখানে নিরাপদে থাকা, নিরাপত্তা পাওয়া একটা রাষ্ট্রের কাছে আমাদের জন্মগত অধিকার, সেখানে অধিকার তো লঙ্ঘিত হচ্ছেই, উল্টে সেই লঙ্ঘিত অধিকারের জন্য যে সুবিচার পাওয়া আমাদের আরো একটি অধিকার সেই অধিকারটিও লঙ্ঘিত হচ্ছে।
লঙ্ঘন এবং লঙ্ঘন এবং আরো লঙ্ঘন।
হায়রে অধিকার!
ভাবনা ২ :
স্কুল এ ভর্তি হতে গেলে লটারি হবে! ভালো স্কুল কম, প্রতিযোগী এবং প্রতিযোগিতা সেই অনুপাতে বেশি বলেই নাকি এই ব্যবস্থা! সাবাস! শিক্ষা এখন লটারির বিষয়!
শিক্ষা পাওয়া আমাদের অধিকার। প্রত্যেকটি শিশুর সমান অধিকার। প্রত্যেকটি শিশু একটি ভালো বিদ্যালয়, ভালো শ্রেণীকক্ষ, ভালো শিক্ষক, ভালো শিক্ষা মান পাওয়ার দাবি রাখে। যেসব শিশু একটু পরিশ্রম করে মেধাকে শানিত করতে আরো বেশি উদ্যোগী এবং উদ্যমী তারা যেন আরো একটু বেশি করে এই দাবি রাখে।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে যেসব শিক্ষার্থী একটু পিছিয়ে আছে তারা কোনো ভালো বিদ্যালয় পাওয়ার দাবিদার নয়। তারাও সমান দাবিদার। একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে হয়তো এই পিছিয়ে পরা শিক্ষার্থীরা একটু পিছিয়ে যায়! কিন্তু তাই বলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বাদ দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। তেমনি লটারি করে শিক্ষার সুযোগ পাওয়াও কোনো কাজের কথা নয়। আমার মতে তাতে বৈষম্য এবং হতাশা আরো বেশি।
কারণ দেখা যায় ভালো শিক্ষকরা ভালো স্কুল এ থাকতে চান অথবা ভালো স্কুল গুলো ভালো ভালো শিক্ষকদের রেখে দিতে চান। অথবা দেখা গেল কোনো একটি বিদ্যালয়ের মান সবসময় ভালো, আবার কোনো কোনো বিদ্যালয় এর শিক্ষা মান কোনো সময় ই তেমন ভালো নয়। ধরে নিলাম কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী এই শেষোক্ত তেমন ভালো নয় স্কুল এ ভর্তি হতে বাধ্য হলো। এমন তো নয় যে একজন শিক্ষার্থী শুধু তার মেধার জোরেই পুরো শিক্ষা বৈতরণী পার হতে পারে। তেমনটি হলে তো বিদ্যালয় বা শিক্ষক এসবের কোনো প্রয়োজন ই থাকতোনা।
কিন্তু তেমনটি তো নয়! সেই শিক্ষার্থীর কি হবে সে যদি উপযুক্ত বিদ্যালয় বা শিক্ষা মান এর অভাবে তার মেধায় শান না দিতে পারে, নিজেকে যাচাই করতে উপযুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ই যদি না পায়! আর আমার মতে নিজেকে যে কোনো বিষয়ে দক্ষ ও উপযুক্ত করতে চাইলে প্রতিযোগিতা আবশ্যক। প্রতিযোগিতা ছাড়া কি করে বুঝব আমার মান কোথায়? কতটুকু ভালো, কতটুকু খারাপ? প্রতিযোগিতা ছাড়া কি করে বুঝব যে এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমি কতটুকু যোগ্য? আর প্রতিযোগিতা ব্যাপারটাই এমন যে এটি যতক্ষণ আছে ততক্ষণ একজন মানুষের ভিতরে নিজেকে যোগ্যতর করে তোলার বাসনাও আছে। প্রতিযোগিতা নেই মানে নিজেকে উন্নত করার সবটুকু পথ বন্ধ। আমাদের যে দিকটি খেয়াল করা দরকার তা হলো এই প্রতিযোগিতা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতা না হয়। আমাদের দরকার ভালো শিক্ষক তৈরী করা।
সব ভালো শিক্ষকদের ভালো স্কুল গুলোতে কেন্দ্রীভূত না করে সব স্কুল এ ভাগ করে দেওয়া। এতে ভালো শিক্ষা মান সম্পন্ন বিদ্যালয় বাড়বে। শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত হতে পারবে যে তারা তাদের বুদ্ধি, মেধা এবং পরিশ্রম কে কাজে লাগাতে পারবে। কিন্তু এরপরো কোনভাবে লটারি নয়।
হ্যা, লটারি পদ্ধতি নয়।
এটি কোনো সমাধান হতে পারেনা। হতে পারত যদি আমার শতভাগ সমমান সম্পন্ন বিদ্যালয় থাকত! কিন্তু নেই যখন তখন লটারি পদ্ধতি ব্যতিরেকে শিক্ষামান বাড়িয়ে ভালো শিক্ষক তৈরী করে নিতে হবে। হয়ত সেটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আমার মতে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত জাতি গঠনে এটি একটি গঠনমূলক পদক্ষেপ হতে পারে। যেহেতু এখন আমাদের শতভাগ সমমান সম্পন্ন ভালো বিদ্যালয় নেই, একটি বিপদ থেকেই যায় যে লটারি পদ্ধতিতে মেধার উপযুক্ত বিকাশ না ঘটার সম্ভাবনা বেশি।
এতে মেধার অপচয়। আর এখন মেধার অপচয় মানে ভবিষ্যতে এই জাতি হয়ত মেধাশুন্য এবং শিক্ষা শূন্য হয়ে উঠবে, যা খুব ই ভয়ঙ্কর!
আর তার চাইতেও বড় কথা শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। এটি কোনো ভাগ্যের ব্যাপার নয় যে লটারি করে নিতে হবে। প্রতিটি শিশুর ই শিক্ষায় সমান অধিকার। ভাগ্য গুনে শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার আদায় করা দুর্ভাগ্যজনক নয় কি?
আবারো ... হায়রে অধিকার! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।