সাদা-সিধে একজন মানুষ গাঁও-গেরামের মোহাম্মদ আবদুল বাতেন ঢাকা শহরে আসিয়াছিল ইন্টার পাশ করিবার পরে। চেয়ারম্যান বাপের অঢেল টাকা থাকিবার সুবাদে টানিয়া-টুনিয়া কোনক্রমে কানের উপর দিয়া পাশ করিয়া গেলেও উহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িবার খায়েশ অপূর্ণ থাকে নাই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের টাকা ঢালিয়া বাপে তাহাকে বিবিএ পড়াইতে লাগিল। আর সেই সঙ্গে আবদুল বাতেন ধীরে ধীরে ঢাকা শহরে চলিবার মত ইশমার্ট ও চ্যাংড়া হইয়া উঠিতে লাগিল। তাহার ঢোলা-ঢালা বেলবটম প্যান্ট সরু হইতে হইতে পাছা আকড়াইয়া ধরিল, জিন্স কোনক্রমে ঝুলিয়া রহিল পশ্চাদ্দেশের সীমানায়।
তেল দিয়া পরিপাটি করিয়া থ্যাবড়াইয়া আঁচড়ানো চুল ইস্পাইক নামক ফ্যাশনের বদৌলতে আসমানে উঠিয়া গেল। এবং উদারহস্তে অঢেল টাকা খরচের সুবাদে তাহার দুধের মক্ষিকার মত কিছু বন্ধুও জুটিয়া গেল যাহারা তাহার চারিদিকে সর্বদা ভোঁ ভোঁ করিয়া ঘুরিতে লাগিল। যাহাদের কাছে দুনিয়ার তাবৎ ভাল-মন্দ বিষয়ে আবদুল বাতেনের দীক্ষা হইতে লাগিল। গঞ্জিকা সেবন, সুরা পান, নীল ছবি কোনকিছুই বাদ পড়িল না।
ইতোমধ্যে খোমাবই নামে আধুনিক বিজ্ঞানের এক অপার বিস্ময় দুনিয়ার ছেলে-বুড়া সকলের মাথা খাইতে লাগিল।
নব্য পাঙ্কু আবদুল বাতেন উহার স্বাদ চাখিয়া না দেখিলে কি রূপে হয়! সুতরাং উপকারী বন্ধুদিগের সহায়তায় অচিরেই সে খোমাবইতে একখানা এ্যাকাউন্ট খুলিয়া ফেলিল। নিজের পিতৃ-প্রদত্ত নামখানা তাহার নিকট বড়ই ক্ষ্যাত ও বেমানান বোধ হয় বলিয়া সে উহাকে কিছু উলোট পালোট করিয়া নাম দিল "বাতেন আবদুল"।
দিন যাইতে লাগিল। বাতেন আবদুল খোমাবইয়ের নেশায় দুনিয়া-দারি ভুলিতে বসিল। দিন নাই-রাইত নাই তাহার সময় কাটিতে লাগিল কম্পিউটারের সামনে উপুড় হইয়া বসিয়া দেশ ও বিদেশের তাবৎ সুন্দরী ললনার সহিত চ্যাট করিয়া।
প্রায় সময়েই সে নিজের ব্যাপক ইশমার্ট ও ড্যাশিং বিভিন্ন ছবি আপলোডাইতে লাগিল এবং সুন্দরীদিগের প্রশংসাবাণে ভাসিয়া যাইতে লাগিল। ইহার মধ্যেই কোন এক অমাবস্যা রাইতে বান ভাঙিয়া পড়া জোছনার ন্যায় দ্যুতি ছড়াইয়া জরিনা বানু তাহার খোমাবইয়ের দরজায় নকনকাইতে লাগিল। জোছনার সেই প্রবল আহ্বান উপেক্ষা করিবার মত বল বাতেন আবদুলের কস্মিনকালেও ছিল না। কিংবা বলা যাইতে পারে সেই ইচ্ছাই সে পোষণ করিতে আগ্রহী ছিল না। সুতরাং...অত:পর... উহারা এই অন্তর্জালিক সম্পর্কে হাবু ডুবু খাইতে লাগিল।
অদৃশ্য অন্তর্জালিক সম্পর্ক ক্রমে দৃশ্যমান হইতে লাগিল। ব্যাপক দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা শেষে উহারা দেখা করিতে সম্মত হইল। বলা বাহুল্য দেখা করিবামাত্র উহাদের প্রেমের পারদ উত্তোরত্তর আসমানে উঠিয়া যাইতে লাগিল। আরো দুই বছর চুটাইয়া প্রেম করিবার পরে দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে উহারা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হইল। আশার কথা এই যে দুই বছরে কড়া শাসন ও গভীর ভালবাসায় জরিনা বানু বাতেন আবদুলকে আমূল পরিবর্তন করিয়া ফেলিল।
সে পুনরায় তাহার পুরানা বেশভুসা ও স্বভাবে ফিরিয়া গেল। তাহার চারিপার্শ্বে ভোঁ ভোঁ করিতে থাকা মক্ষিকার দল খসিয়া পড়িল। পশ্চাদ্দেশ কামড়াইয়া থাকা প্যান্টের প্রস্থ যথেষ্টই বাড়িল। চুলের ইস্পাইক সমান হইয়া আসিল। এবং সবচাইতে বড় পরিবর্তন হইল বাতেন আবদুলের খোমাবই আসক্তি কমাইয়া দিতে হইল একশত ভাগ।
তা না হইলে জরিনা বানু সন্দেহে, ঈর্ষায় জর্জরিত হইয়া উহাকেও অতিষ্ট করিয়া ছাড়িতো। বর্তমানে তাহার বন্ধু তালিকায় অতি পরিচিত দুই একজন ছাড়া আর কোন তরুণী-যুবতীর সন্ধান মিলিবে না। ঘরের শান্তি বজায় রাখিতে এই আত্মত্যাগ বাতেন আবদুল খুশিমনেই করিয়াছে।
যাহা হউক যা বলিতে এই দীর্ঘ উপাখ্যানের অবতারণা করিয়াছি আপনাদিগের বিরক্তি আর না বাড়াইয়া তাহাই বিবৃত করি। ব্যবসার কাজে বাতেন আবদুল আজকাল যারপরনাই ব্যস্ত।
তাই পুরানা দিনের সুখময় বিভিন্ন অভ্যাস অনভ্যাসে ভুলিতে বসিয়াছে। স্ত্রী-পুত্রের মুখ চাহিয়া সে আর গঞ্জিকা সেবন, সুরা পানের মত হীন কাজ করে না। জরিনা বানুর মাথা ছুঁইয়া পরনারীর দিকে চোখ তুলিয়া চাহিবে না এই কসম করিয়াছে বিধায় নীল ছবি দেখাও বাদ দিতে হইয়াছে। অন্যদিকে জরিনা বানু তাহার বিশাল সংসার এবং তিন বছরের পুত্র সন্তান লইয়া পুরোদস্তুর গৃহিণী বনিয়া গিয়াছে। তাহার তন্বী তনু বাতেন আবদুলের ব্যবসার মতই ফুলিয়া ফাপিয়া ঢোলের আকার ধারণ করিয়াছে।
উহার দিকে চাইয়া দেখিলে পুরানা দিনের কথা স্মরণ করিয়া সময়ে অসময়ে বাতেন আবদুলের বুক চিরিয়া দীর্ঘশ্বাস বাহির হইয়া আসিলেও ধর্ম স্ত্রী ও সন্তানের মাতা বলিয়া সে বুকের দু:খ ধামাচাপা দিয়া রাখে।
ইহার মধ্যেই ব্যবসার কাজে বাতেন আবদুল কয়েক দিনের জন্য দেশের বাহিরে গেল। দীর্ঘদিনের পাশাপাশি থাকিবার অভ্যাসে স্বামী-স্ত্রী পুরানা হইয়া গেলেও এই আকস্মিক বিচ্ছেদ উহাদের মানিয়া নিতে যারপরনাই কষ্ট হইতে লাগিল। সুতরাং উহারা পুরানা দিনের মতন অনলাইন প্রেমে মাতিয়া উঠিল। সকালে বিকালে জরিনা বানু বিরহের টই-টুম্বুর স্ট্যাটাস দিতে লাগিল।
বাতেন আবদুল স্ত্রীর ওয়ালে গভীর প্রেমের গান পোস্ট করিতে লাগিল। একইসাথে বৈদেশে মুক্ত মানসিকতার মানুষ এবং উহাদের মনের মতই খোলামেলা পোশাক দেখিয়া বাতেন আবদুলের খবর হইয়া যাইতে লাগিল। সে তাহার ঢোলের মতন বিবিকেই চরমভাবে মিস করিতে লাগিল। সেই যাতনা মিটাইতেই সে বহুকাল পরে দ্বারস্ত হইল অন্তর্জালের মোহনীয় রমণীদিগের এবং উহাদের শৈল্পিক চৌষট্টি কলার।
এক বিকালে খোমাবইয়ে পত্নীর অপেক্ষা করিতে করিতেই বাতেন আবদুল হোমপেজে এক লিংক দেখিতে পাইল।
টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দুর্ঘটনাবশত এক রমণীর আকস্মিক বক্ষ উন্মোচন হইয়াছে। সকলে সেই দৃশ্য দেখিয়া হতবাক হইয়া গিয়াছে। এই হৃদয়মর্মী বক্ষ উন্মোচন দেখিবার মতন বুকের পাটা বাতেন আবদুলের নাই বলিয়া ওপেন চ্যালেঞ্জও ছুঁড়িয়া দিয়াছে। এত বড় চ্যালেঞ্জ সে অগ্রাহ্য করিবে কি করিয়া? আর এই বিশাল বক্ষউন্মোচন দেখিবার লোভই বা সে কি করিয়া সংবরণ করিবে! সুতরাং বাতেন আবদুল আগু-পিছু চিন্তা না করিয়া কম্পিত হস্তে উক্ত লিংকে ক্লিক করিয়া বসিল।
বিদ্যুদ্বেগে সেই ভিডিও যে যার তার ওয়ালে ছড়াইয়া পড়িবে বাতেন আবদুল কি উহা ভুলেও কল্পনা করিয়াছিল! ছেলেকে ঘুম পাড়াইয়া রাখিয়া আসিয়া জরিনা বানু যখন খোমাবই খুলিয়া বসিল তখনতো তাহার চক্ষু চড়কগাছ।
তাহার স্বামী এই অশ্লীল ভিডিওখানা তাহার পরাণের সখি, তাহার ছোট বহিন এমন কি তাহার অফিসের সেক্রেটারির ওয়ালেও পোস্ট করিয়াছে। একেতো এইসব ভিডিও দেখিতে চাহিবার লোভ, অন্যদিকে তাহা আর সকলের ওয়ালে পোস্ট করিয়া সে কি ই্ঙ্গিত করিল? রাগে-দু:খে জরিনা বানুর চক্ষু বাহিয়া দরদর করিয়া পানি পড়িতে লাগিল, কান দিয়া ধোঁয়া বাহির হইতে লাগিল। ওই দন্ডেই সে বাতেন আবদুলকে লঙ ডিসট্যান্স কল করিয়া বাপের বাড়ি চলিয়া যাইবার এবং অবিলম্বে তালাকনামা প্রেরণের হুমকি প্রদান করিয়া টেলিফোনের তার গরম করিয়া ছাড়িল।
আহা! যে খোমাবই দুই কপোত-কপোতীকে এক করিয়াছিল উহার কল্যাণেই তাহাদের বিচ্ছেদ ঘটিতে চলিল! হায় বাতেন আবদুল কেন তুমি তোমার প্রবৃত্তিকে বশ করিতে পারিলে না? কেন প্রবৃত্তিই তোমাকে বশ করিয়া ফেলিল? হায়, কিছুটা সংযত হইলেতো আইজ আর এই অঘটনটা ঘটিতো না। হে বাতেন আবদুল, এখনো সময় আছে নিজেকে সংযত করিতে শিখো।
দুই-তিনদিন যাবৎ খোমাবইতে এই স্প্যামখানার যন্ত্রণায় যারপরনাই অতিষ্ঠ। আমার অতীব ভদ্র সুশীল বন্ধুগণ বক্ষ উন্মোচনের লোভনীয় শিরোনাম দেখিয়া কিছুতেই নিজেদের সংবরণ করিতে পারিতেছে না। ফলস্বরূপ ভাই-বন্ধু-বেরাদার সকলের ওয়ালে এই অশ্লীল ভিডিওখানা ছড়াইয়া পড়িতেছে এবং সৃষ্টি করিতেছে বিব্রতকর পরিস্থিতির। আর সহ্য করিতে না পারিয়া সামুর দ্বারস্থ হইলাম নিজের বিরক্তি উগরাইয়া দিতে। ওহে বন্ধুগণ, দয়া করিয়া নিজেদের প্রবৃত্তিকে সংযত কর এবং নিজেকে ও বাকি সকলকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়িবার হাত হইতে রক্ষা কর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।