লেখক/কবি বন্ধুগণ ! শোন ! একটা কবিতা লিখেছি পাঠকরে শোনাবার আশারাখি সেটা তোমাদের সামনে কবিতার সেই বিবর্ণ পাণ্ডুলিপি পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে –এখানে সেখানে এধারে ওধারে ধানক্ষেতের সবুজ শ্যাওলা জুড়ে বর্ষার অথৈজলে সাদা,লাল শাপলার দোলায় আরও কিছুটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাতরঙা আকাশের ছিন্নভিন্ন মেঘে- তার সাথে স্বপ্ন ছড়িয়ে আছে কিছু স্বপ্ন শেখেনি যারা আজো- স্বপ্ন দেখেনি যারা আজো কিংবা যাদের স্বপ্ন দেখতে দেখতে কপালে পড়ে গেছে ভাজ কিংবা যারা আজো শুনতে পায়নি প্রেয়সীর সুমধুর গলার আওয়াজ কিঞ্চিৎ ভুলোমন যাদের আবার আর যারা ইচ্ছে করেই ভুলে যেতে থাকে অথবা যাদের কিছু মনে রাখার নেই অবসর চলতে চলতে কোন পথের পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনার মূল্য কী আছে মূল্যহীন সমাজে আজ এতসবের মাঝে দাম আছে কার ? কোন লোভে ফিরে আসা –পৃথিবীতে আবার আমার ? কিসের আশায় এই জন্ম; জন্মান্তর ধরে কেন এই ধেয়ে চলি পারাবার জুড়ে স্বপ্নহীন পৃথিবীতে জন্মটাই সার স্বপ্নময় হতে তবু জন্মে ভয় কার যতবার মরে যাবো, এই শুধু জেনে নিব জন্মনিব পৃথিবীতে –আবার –আবার- বন্ধুগণ একটা কবিতা লিখেছি -ভালবাসাকে খুব কাছ থেকে দেখে -ঘৃণাময়তাকে খুব কাছ থেকে দেখে -দুঃখ অবসাদ খুব কাছ থেকে দেখে -জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখে -জন্ম আর মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে এমনই একটা কবিতা লিখেছি বন্ধুগণ তোমাদের সামনাসামনি পাঠকরে শোনাবার আশারাখি-অমোঘ আবৃত্তির ঢঙ্গে -স্বপ্ন মাখা আটপৌরে রঙে কবিতাটা ফিরছে ঘুরে এখানে ওখানে -এই হাত থেকে ওই হাতে -এই চোখ থেকে ওই চোখে -শূন্য থেকে মাটিতে দশদিকে- দেশদেশান্তরে কাগজহীন পাণ্ডুলিপির শূন্য সত্তাতে কোথায় পৌঁছে গেল সে মনের দরজা ভেঙ্গে চেতনার আতাতে আমাকে যেন সে দিয়ে গেলো অস্তিত্বহীন প্রাণ এক- মনের প্রাণের পাতাতে ভ্রমর এসে কবে যেন গেয়ে গেছে তার সেই গান ফুল আজো ফুটছে জেনো সেই ঋণ সুধেদিতে তবে তার জানানেই কবে আর আসবে এমন দিন (ফুল আর রাখবেনা একটুও ভ্রমরের ঋণ) সময় সে অবিরাম গতিময়-বয়ে চলে আপন খেয়ালে শুণ্যতায় বাধা পড়ে বোধের প্রলেপ তখনই নিজেকে মনে হয় পাপ পুণ্য-ভেদ বুদ্ধিহীন পুণ্য যা ছিল এই স্বচ্ছ মনের ভেতরে সময়ের ব্যবধানে তারাও তো পাপ হয়ে যায় মনে হয় একসময় যেভাবে আসতো মনের সজীবতা এখনতা পুরোপুরিই লাগছে যে বাজে মনে হয় দেহে আর সেই প্রাণ নেই সেই সব প্রেম অপ্রেম অকালে মরেছে কিংবা জীবিত তাকেও- এইসব সময়ের প্রয়োজনে হয়েছে চলেযেতে আলপথ পেরিয়ে সোদাগন্ধ ঘাস আর ধানমাটির ফাঁকে সেইসব ভালবাসা প্রেম আর মিছে অভিমান; মিছে স্বপ্ন সব বিলীন হয়েছে এমন মৃত্যু আর কে এক কাছে থেকে দেখতে পেরেছে ? বাকী সব মৃত্যুরা কত দূরে-এ দেখছি জীবন সোপান এক একটা ধাপ শেষ হয় -মৃত্যু মনে হয় এক একটা প্রেম শেষ হয়, ভেঙ্গে যায় -মৃত্যু মনে হয় এক একটা স্বপ্ন শেষ হয়; অন্ধকার ঘুমে -মৃত্যু মনে হয় এক একটা দিন শেষ হয়; অমাবস্যা রাত মনে হয় -মৃত্যু মনে হয় মৃত্যু তবু পারেনা আসতে খানিকটা খুব সহজে জীবন নামের ঐ সিঁড়ি নেমে গেছে কেবলই-জীবন-জীবন-আর জীবন লেখা আছে মৃত্যু নামের কবিতার; আগের পাতাতে একটা একটা করে পাতা শেষ হয় -মনেহয় এই এবার মৃত্যু এসেগেছে এক একটা ঘটনার শেষ হয় -মনে হয় এই এবার মৃত্যু এসেগেছে কেবলই মনে হয় জীবন সিঁড়ি বুঝি আজ এইখানে এসে থেমেগেছে -ওপাশে অপেক্ষায় আছে মৃত্যু; মৃত্যু নামের শেষ কবিতাতে মৃত্যু নামের সেই কবিতাটা ছিলো অনেক দীর্ঘ সবাই সেটা তাই, তার পুরোটা একবারই পড়ে সবাই যে মড়ার মতন একবারই মরে অথবা যারা জীবিত থেকেও মরে রয় জীবষ্মৃত তারে বলে মৃত্যু নামের কবিতাটা তারকাছে ধরাদেয় -খানিকটা নৈর্ব্যক্তিক আকারে; যেন যে যেমন মরতে চায়, ঠিক তেমনিই মরে। এইসব চেতনার বোধ চিন্তাতে অদ্ভুত মিশে গেলে ভেদজ্ঞান কী তারেই বলে ? তখনই কী সময় আসে এমন একটা কবিতা লেখার ? বন্ধুগণ ! একটা কবিতা লিখেছি পাঠ করে শোনাবার আশারাখি; সবার সামনে বসে; আমার অমোঘ আবৃত্তির ঢঙ্গে সবাইকে একটি করে জেরক্স কপি দেয়ারও ইচ্ছে আছে কেননা কবিতাটা বড়ই মর্মস্পর্শী (সাবধান করে দিচ্ছি) দেয়ার পর, কেউ যেন সেটা পকেটে না রাখে, তাই বলে আবার সেটা অতি যত্নে রাখার জন্যে ধারকরতে যেওনা কেউ অন্যের মানি ব্যাগ খেয়াল রেখ কেউযাতে আবার সেটা টেবিলের উপর ফেলে না রাখে সেখানে কুটি কুটি কাগজ, আধা ব্যবহৃত কলম, ভাঙ্গা পেন্সিলের পাঞ্চমেশিন আর স্টেপলারের ভিড়ে তাকে হয় তো চিরতরে ফেলবে হারিয়ে আমি জানি এখানের অনেকেই এ প্রশ্ন তুলবেন, কাগজহীন কবিতার এই অদৃশ্য পাণ্ডুলিপির করবে কীভাবে জেরক্স কপি এতসব শুনে আমি এই নির্বাক চাহনির অন্তরালে কেবলই হাসবো বলে দিচ্ছি তারপরও বলে রাখি, এই নিয়ে বেশী কেউ আবার ভেবে অযথা সময় যেন নষ্ট না করে শুধু এইটুকু ভাবলেই চলবে- “কী বলবেন তখন ? যদি আমি আপনাদের সামনে সেই কবিতাটা নিয়ে আসি।” (সেদিন আর এক চিলতেও দাম থাকবে না কারো এই বাসি হাসির, তাই যত ইচ্ছে হেসে নিন; এই ফাঁকে আমি একটু রয়ে সয়ে কাশি) বন্ধুগণ ! এবার আবার সবাইকে বলে রাখছি, এমন একটা কবিতা শোনাবার জন্যে, এই আর একটু অপেক্ষা করুন; আর একটু; আমি আসছি। ২৪.৮.১৯৯৭
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।