আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) ভূমিকা: আমার গল্প পড়ে কমন একটি অভিযোগ থাকে আরেকটু বড় কেন হলোনা, গল্প আরেকটু বড় হতে পারতো...ইত্যাদি। তাই এবারের গল্পটা একটু বড় করে লিখলাম।
পাঠক ধৈর্য্য হারা হয়ে গেলে লেখিকা কোন মতেই দায়ী নয়।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। ঘুম আসছেনা বলে নিজের প্রিয় বারান্দায় এসে দাড়ায় সাবাহ। বাসাটি করার সময় এই বারান্দা নিয়ে প্রথমে আমানের সাথে বিরোধ বেধেছিলো। আমানের কথা হাফ রেলিং সেফ নয়।
চোরের উপদ্রব ছাড়াও বাচ্চাদের জন্যে রিস্কি। কিন্তু সাবাহ'র কথা পুরো রেলিং থাকলে তা জেলখানার মত মনে হয়। শেষে সাবাহ্'র কথাই থাকে। বারান্দায় আসতেই মুগ্ধ হয়ে যায় পূর্ণিমার চাঁদ দেখে। আজ যে পূর্ণিমা মনেই ছিলোনা।
বারান্দায় নয় ছাদে বসে এ পূর্ণিমা উপভোগ করার জন্যে দোতলার ছাদে চলে আসে সাবাহ্। সামনের নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চলে যায় ৩৮ বছর পেছনের সময়ে।
বিয়ের এক সপ্তাহ পরেই ছিলো পূর্ণিমা। হানিমুন নিয়ে ওর কোন উচ্ছাস না থাকলেও আমানের ইচ্ছা আর শ্বশুড় বাড়ীর সবার পীড়াপীড়িতে ওর আপত্তি আর টেকেনা। হানিমুনে গিয়েছিলো সেন্ট মার্টিন।
ভরা পূর্ণিমার সে রাতে রাত তিনটে অবধি কটেজের বাইরে বসে দুজনে গল্প করেছিলো। দুজনেরই এমন কিছু ব্যাপার শেয়ার করেছিলো যা সেদিনই প্রথম এবং সেদিন-ই শেষ। এর পর আর কখনই তা সামনে আসেনি। যেনো সমুদ্রের গর্জনে চাপা পড়ে গিয়েছে অথবা উত্তাল ঢেউয়ের সাথে ভেসে গেছে দূর সমুদ্রে। অনিচ্ছার সেই মধুচন্দ্রিমা পরবর্তী সময়ের জন্যে যে মধুময় হয়েছে তা পরে বুঝতে পেরেছিলো সাবাহ।
হানিমুন থেকে ফিরে একেবারে সংসারে মনযোগী হয়ে পড়ে সে। শ্বশুড় বাড়ীর সবাই খুশী সাবাহ্কে বউ হিসেবে পেয়ে, কারন তার সমসাময়িক মেয়েদের মত সে চাকরী নিয়ে ভাবেনি বা ভাবেনি স্বামীকে নিয়ে আলাদা থাকার কথা, যা খুব স্বাভাবিক ছিলো।
টুকটাক মনোমালিন্য, মান-অভিমান আর একরাশ আনন্দের মাঝে
সংসারের পাঁচটি বছর কাটিয়ে ফেলে সাবাহ। এর মাঝে কোল জুড়ে আসে বড় মেয়ে ফারওয়াহ্। মেয়ের জন্মের সাত মাস আগে পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া যায় আমান।
বেচারার সেকি দুঃখ, মেয়েকে দেখতে পারছেনা বলে। সাবাহ্'র ও খুব ইচ্ছে ছিলো বাচ্চার জন্মের সময় আমান তার পাশে থাকবে। কিন্তু সব ইচ্ছেইতো আর পূরণ হয়না।
মেয়ের ছয় মাস বয়সে আমান মা-মেয়েকে তার কাছে নিয়ে যায়। বিদেশের জীবনটা ছিলো সাবাহ্'র কাছে স্বপ্নের মত।
অস্ট্রেলিয়া দুই বছর কাটিয়ে সেখান থেকে কানাডা, দুবাই এবং শেষে সুইজারল্যান্ড থাকে তারা । এর মাঝে পার হয়ে গেছে ১৫টি বছর। এত দিনে বিদেশে থাকার শখও শেষ সাবাহ্'র। এসবের মাঝেই ফারহান আর ফারিহার জন্ম এবং শ্বশুরের মৃত্যু। শ্বাশুড়ী একা হয়ে পড়েন ফলে কখনো বড় ছেলের কাছে কখনো আবার দুই মেয়ের কাছে থাকেন।
সাবাহ্ ভাবে বিদেশে আর নয় এবার দেশে ফিরে স্থায়ী বসবাস করবে এবং শ্বাশুড়ীকে সব সময়ের জন্যে তার কাছে রাখবে।
মায়ের পরেই এই মানুষটিকেই বেশী ভালবাসে সে। শ্বাশুড়ী সম্পর্কে মেয়েদের মনে যে ধারনা থাকে সাবাহ্'র নিজের শ্বাশুড়ীকে দেখে সে ধারনা বদলে গেছে। বিবাহিত জীবনের প্রতিটি পদে পদে সে তার শ্বাশুড়ীর সাহায্য পেয়েছে, যে সাহায্য না পেলে হয়ত সব কিছু তার জন্যে খুব কঠিন হতো। তবে এসব কিছুই সাবাহ্ একেবারে এমনি এমনি পায়নি।
এর জন্যে তাকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে, অনেক ছাড় দিতে হয়েছে। সেসব নিয়ে সে খুব একটা ভাবেনা।
আমানকে নিয়ে সে অসম্ভব রকম সুখী। তার এই বিদেশে থাকা বা না থাকা নিয়ে সে কখনই সাবাহ্কে জোর করেনি। উন্নত দেশের উজ্জল ভবিষ্যত পেছনে ফেলে দেশে আসায় বাবার বাড়ী এবং শ্বশুর বাড়ীর সবাই খুব অবাক এবং একটু বিরক্ত হলেও আমান এর কোনটিই হয়নি।
কেননা তার চেয়ে ভাল সাবাহ্কে আর কে চেনে, তআর চেয়ে ভাল আর কে বাসে...(?) দেশে ফিরে পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সংসার ছেলে-মেয়ে নিয়ে। একে একে ছেলে-মেয়ে সবাই পড়ালেখা শেষ করে ফেলে। তিন ভাইবোন পিঠাপিঠি হওয়ায় দু'এক বছর আগ পিছ সবার পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।
ফারওয়াহ্'র বিয়ের দশদিন পরে শ্বাশুড়ী মারা যান। নিজের মা মারা যাওয়াতে এতটা ভেংগে পড়েনি যতটা ভেংগে পড়েছিলো শ্বাশুড়ী মারা যাওয়ার পর. শেষ দিকে তার খুব ইচ্ছে ছিলো বড় নাতনী জামাই দেখে যাওয়ার।
শ্বান্তনা এইটুকুই যে তার ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে।
কি ব্যাপার, তুমি এতরাতে ছাদে?
-- হ্যা...ওহ্ তুমি। একি এত রাতে চা! বিস্ময়ে বিমঢ় সাবাহ্ স্বামীর হাত থেকে চায়ের কাপ নিজের হাতে নেয়।
হ্যা, পাশ ফিরে দেখি তুমি নেই। ঘর ভরে গেছে পূর্ণিমার আলোতে।
বুজলাম যথারীতি ম্যাডাম স্মতির পাতা রিভাইজ দিতে ছাদে গেছেন, এ তো আর নতুন কিছু নয়। তাই ভাবলাম আমিও যাই। খালি হাতে কি করে আসি তাই চা বানিয়ে.....
--তুমি পারোও !
হুমম, বরটা কার দেখতে হবে না...
--আরে ধুর! আচ্ছা আমাদের হানিমুনের কথা মনে আছে তোমার?
মনে আবার থাকবেনা! যা করেছিলে তুমি কোন নতুন বউ এরকম করে!
--থাম তো! আমার লজ্জা লাগছিলো সে সময়। মনে হচ্ছিলো ঘটাও করে তোমার সাথে যাওয়া। সবাই কি ভাববে.....সেসময় আমাকে রাজী করাবার পেছনে মায়ের ভূমিকা ছিলো সব চেয়ে বেশী।
আজ খুব মনে পড়ছে মাকে। জানো সব সময় মায়ের শূণ্যতা খুব অনুভব করি। আমার জীবন অর্ধেকটাই স্বার্থক উনার মতন একজন শ্বাশুড়ী পেয়ে।
মা-ও কিন্তু একই কথা বলতেন। আমরা সব ভাইবোন কি আর এমনি এমনি তোমাকে হিংসে করি।
মায়ের ভালবাসার পাল্লাটা তোমার দিকেই বেশী ভারী ছিলো বলেই তো।
--আমি কি হতে পারবো মায়ের মতন একজন শ্বাশুড়ী? আমার বউ ও কি এভাবে মনে করবে কোন দিন আমাকে? আমার শূণ্যতা অনুভব করবে সব সময়?
সময়ের উপর ছেড়ে দাও। অনেক রাত হয়েছে, চলো ঘরে যাই।
--(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে).....হুমম চলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।