জটিলতার অবসানের বিষয়ে ২০ দিন আগে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি আরো সময়ের কথা বললেও এখন বলছেন, তিনি আশাবাদী। অর্থমন্ত্রীও আশা করছেন, জট খুলবে শিগগিরই। যোগাযোগমন্ত্রী পরিবর্তনের পর পদ্মা সেতুর জট খোলার বিষয়ে নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইনের কণ্ঠেও একই সুর।
নতুন যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার দিন বুধবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে বেশ কিছু সময় একান্তে কথা বলতে দেখা যায় দুজনকে।
এরপর বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধির কাছে পদ্মা সেতুর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী সপ্তাহে আমি ওয়াশিংটন যাচ্ছি। সেখানে শীর্ষ কর্মকর্তাদের আমি পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ অবস্থান ব্যাখ্যা করবো। ”
আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু আছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান হেসে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমার কাছে নতুন কিছু নেই। তবে আমি ওয়াশিংটনে যাওয়ার পর পজিটিভ (ইতিবাচক) কিছু ঘটতে পারে। ”
“উই আর হোপিং,” বলেন তিনি।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ঝুলে যাওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে অ্যালেন গোল্ডস্টেইন ২০ দিন আগেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “রাতারাতি এ সমস্যার সমাধান সম্ভবপর নয়। এ জন্য সময় প্রয়োজন। ”
“এটা একটি বড় প্রকল্প, অনেক অর্থের ব্যাপার। তাই বিশ্বব্যাংক চায়, এ অর্থ খরচে যেন স্বচ্ছতা থাকে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না,” গত ১৬ নভেম্বর বলেছিলেন তিনি।
অ্যালেন গোল্ডস্টেইন এর আগে বিকালে নতুন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার দপ্তরে গিয়ে আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন। এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও বৈঠকে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান গোল্ডস্টেইন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে অর্থায়ন স্থগিত করার প্রেক্ষাপটে দুদিন আগেই যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে কাদেরকে ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন মন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, তার কাজে অগ্রাধিকার পাবে পদ্মা সেতু।
সোনারগাঁও হোটেলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অনুষ্ঠানে অ্যালেন গোল্ডস্টেইনের সঙ্গে কথা বলার পর অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে।
এখন আমরা আশা করছি, অবশ্যই ইতিবাচক কিছু হবে। ”
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন স্থগিত করার পর মুহিত বার বার জটিলতার সমাধানের আশার কথা শোনালেও এবার তার কণ্ঠে দৃঢ়তা ছিলো বেশি।
বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী পদ্মা সেতু। সরকারের বর্তমান মেয়াদে এ সেতুর নির্মাণ শেষ করার কথা বলা বলা হয়েছিলো।
কিন্তু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর কয়েক মাস আগে অর্থায়ন স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক।
২৯০ কোটি ডলার ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণে এ সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা।
সেতু নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি কানাডীয় কোম্পানি নীতিবহির্ভূত কাজ করেছে বলে বিশ্বব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, যা কানাডা সরকার তদন্ত করছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে জটিলতা দেখা দিলে তা নিয়ে সরকারের উঁচু পর্যায় থেকে সমাধানের পথ খোঁজা শুরু হয়। গত ২০ অক্টোবর এক প্রেসনোটে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সরকার বলে, প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্বও দেওয়া হয়।
অর্থায়ন স্থগিতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্যও বিশ্বব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
গত ২০ অক্টোবরই অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠান। ৪ নভেম্বর বিশ্বব্যাংক সে চিঠির জবাব দিলেও তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু ছিলো না।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের মূল অর্থায়নের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থ দেবে সরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।