পঁচা মানুষ
গত ৩ ডিসেম্বর ২০১১ শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে ‘অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাতিল’-এর দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দলের এই অবস্থান সচেতন দেশবাসীর মনে বিস্ময় সৃষ্টি না করলেও, তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে সেটা বলাই বাহুল্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাদের বিচারের দাবি দীর্ঘদিনের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে এই কাজ শুরু হলেও আগস্ট ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে যে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসে তারা বিচার নয় বরং বিচারের সব পথ রুদ্ধ করতেই কৃতিত্ব দেখিয়েছে।
গোটা জাতির চাওয়া ও আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিক্রিয়ায় বর্তমান সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়। যা কিছু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ছাড়া সবাই সাদরে গ্রহণ করে। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বলে আসছে যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে নয়, কিন্তু বিচার হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের। এই বক্তব্য কতোটা আন্তরিক সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল শুরু থেকেইÑ কারণ এই দলটি জন্মলগ্নেই কুখ্যাত রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের উচ্চাসন দিয়েছে, সরকার ও রাষ্ট্রের উঁচু পদে পুনর্বাসন করেছে। দলটির বিগত সরকারেও মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে ছিলেন একাত্তরের কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধীরা।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের এ পর্যায়ে যখন বিএনপি ও তাদের মিত্র জামাতের এই চিহ্নিত কুখ্যাত ব্যক্তিরা বিচারাধীন তখন বিএনপি রাখঢাক না রেখেই চলমান বিচারের বিপক্ষে এবং চিহ্নিত অভিযুক্তদের পক্ষে মাঠে নেমেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সম্প্রতি তার দেশব্যাপী রোডমার্চে বলেছেন ‘এটা বিচার নয়, প্রহসন। ..নিজামী সাহেব, মুজাহিদ, সাঈদী ও সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ’ দলের আরেক নেতা জয়নাল আবদিন ফারুকও এই বিচারকে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, স্বজন হারিয়েছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করেন তাদের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার বহু আকাক্সিক্ষত।
দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেউই এই ট্রাইব্যুনালের গঠন, যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট আইন নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কাজেই এ বিচারকে ঢালাওভাবে প্রহসন বা হাস্যকর বলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তো বটেই, জাতির চেতনায় আঘাত হানার শামিল। যে দলটি নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার হাতে গড়া এবং স্বাধীনতার পক্ষের বলে দাবি করে আসছে তাদের এই ভূমিকা দেশবাসীর জন্য হতাশার অবশ্যই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জাতি যখন একাট্টা, তখন এ বিচারের কোনো অভিসন্ধিমূলক বিরোধিতা ও বিচার নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হালে পানি পাবে না। সবার চাওয়া সর্বোচ্চ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যথাগতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হোক।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে অনাকাক্সিক্ষত বাধা-বিভ্রান্তি সৃষ্টি নয়, একটি সার্থক বিচারে সর্বত সমর্থন ও সহায়তা করাই এখন প্রতিটি শুভবোধসম্পন্ন মানুষের দায়িত্ব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।