আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউসুফের যুদ্ধাপরাধের মামলার কী হবে?

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান থাকলেও বিচার চলাকালীন আসামির মৃত্যু হলে কী হবে- সেবিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

তাই জামায়াত নেতা ইউসুফের মামলার পরিণতি জানতে ট্রাইব্যুনালের আদেশ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

এক্ষেত্রে আসামির মৃত্যুর পর কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল মামলা শেষ ঘোষণা করতে পারেন বলে মত দিয়েছেন একজন প্রসিকিউটর।

তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী মনে করেন, আসামির মৃত্যু হওয়ায় এই মামলার এখানেই সমাপ্তি হবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচার চলাকালে আসামির মৃত্যু হলে তার বিরুদ্ধে মামলার কী হবে, তা ট্রাইব্যুনালের আইনে বলা নেই।

তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত যুগোস্লাভিয়া ও সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচও বিচার চলাকালে কারাগারে আটক অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর পরে ৪২ পৃষ্ঠার একটি পর‌্যবেক্ষণ দিয়েছিল আদালত।

“সেই পর‌্যবেক্ষণে মিলোসেভিচের মৃত্যুর কারণ ও কারা হেফাজতে থাকাকালে কর্তৃপক্ষের দেয়া চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করে তার ইচ্ছামতো ওষুধ সেবনের বিষয়ও উঠে আসে। ”

ইউসুফের মামলার ক্ষেত্রেও ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের একটি পর্যবেক্ষণ দিতে পারে বলে মনে করেন এই প্রসিকিউটর।

ইউসুফের মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেন, ফৌজদারি আইন অনুযায়ী কোনো মামলা চলাকালে আসামি মারা গেলে তার বিরুদ্ধে মামলা শেষ বলে ঘোষণা করা হয়।

“তবে এ মামলাটি যেহেতু সাধারণ ফৌজদারি মামলা নয়, এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই হবে। ”

আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামি মারা গেলে মামলা সমাপ্ত হবে এটাই উপমহাদেশের জেনারেল প্র্যাকটিস।

“বিচারটা হবে মানুষের। মানুষই নাই, কার বিচার হবে?”

রোববার সকালে ইউসুফ অসুস্থ হয়ে পড়লে বেলা ১১টার দিকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেয়ার পরে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহীনুর ইসলাম ময়না তদন্তের পর ইউসুফের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার আদেশ দেন। তবে আদেশে মামলার ব্যাপারে কোনোকিছু বলা হয়নি।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ১৩টি অভিযোগে গত বছর ১ অগাস্ট ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

গতবছর ১২ মে প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ওইদিনই তাকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশে পাকিস্তানিদের গঠন করা কথিত মালেক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ইউসুফ এক সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বও পালন করেছেন।

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হত্যা-লুণ্ঠনে সহায়তা দেয়ার জন্য গঠিত সশস্ত্র বাহিনীর ‘রাজাকার’ নামটিও তিনিই চালু করেন। ওই সময় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির নির্দেশে ইউসুফ নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে প্রথমে বৃহত্তর খুলনা জেলায় (খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট) শান্তি কমিটি গঠন করেন। পরে মহকুমা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াত ও মুসলিম লীগের সদস্যসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করেন তিনি।

বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৬ জনকে নিয়ে তিনি খুলনার আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্পে সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। ওই অঞ্চলের শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন।

জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের নেতা, বৃহত্তর খুলনার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও মন্ত্রী হিসেবে ইউসুফ পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে ইউসুফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আইনটি বাতিল হলে তিনি ছাড়া পান।

বর্তমানে একেএম ইউসুফের মামলাটিসহ মোট ছয়টি মামলা চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াত নেতা এটিএম আজহার, মাওলানা আব্দুস সুবহান ও বিএনপি নেতা ও ফরিদপুরের নগরকান্দা ইউনিয়নের মেয়র জাহিদ হোসেন খোকনের মামলা চলছে। ট্রাইব্যুনাল-২ এ চলছে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী, একেএম ইউসুফ এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সারের মামলা।

এ পর‌্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতজনের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- জামায়াতের বহিষ্কৃত নেতা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক আমির গোলাম আযম, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জিয়াউর রহমানের আমলের মন্ত্রী আব্দুল আলীম।

এদের মধ্যে বাচ্চু রাজাকার, আব্দুল কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।

গোলাম আযমকে সর্বমোট ৯০ বছরের কারাদণ্ড এবং আব্দুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.