যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি বিডিনিউজ২৪ ডট কমের খবরে দেখলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ব্লগ মডারশনের জন্যে পরামর্শ দিয়েছেন। এই কথায় ফেসবুক আর ব্লগলোকতে একদল সুশীল ভন্ড হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। খুবই স্বাভাবিক - একদল সুশীলকে জ্ঞানী হওয়ার যে সুযোগ ব্লগগুলো দিয়েছে - তারা মডারেশনকে ভয় পাবেই। কে ভয় পাবে সেই কথায় আসার আগে বিডিনিউজে প্রকাশিত সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য নিয়ে কিছু কতা বলা যাক।
সৈয়দ আশরাফ বলেছেন -
"গণমাধ্যমে অনলাইনে ব্লগ প্রচলনের প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তবে তাতে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অশালীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয় মন্তব্য করে সেগুলো মডারেশন না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। "
সৈয়দ আশরাফ বলেন, “শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী), খালেদা জিয়া (বিরোধীদলীয় নেত্রী), আমি (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব)সহ অনককে নিয়ে ব্লগে অশালীন ও কুৎসিত কমেন্ট করা হয়। যার সঙ্গে বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই। দুয়েকটা পত্রিকা নীতিগত ও সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী অশালীন মন্তব্য ছাপে না। সবাইকে ব্লগ মডারেট করতে হবে।
”
ব্লগ এখন অনেকটা পর্নোগ্রাফিতে পরিণত হয়েছে, মন্তব্য করেন তিনি।
আশরাফ বলেন, “নিজেদের ক্রেডিবিলিটি ধরে রাখতে ব্লগগুলো মনিটর করুন। ”
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর একজন মুখপাত্র বলেন, “আমাদের ব্লগ ও মতামত বিভাগের মন্তব্যে মডারেশন ছাড়া একটি শব্দও প্রকাশ করা হয় না। ”
তিনি বলেন, “জনপ্রিয়তা পেতে বিভিন্ন ব্লগের মধ্যে একটি অশুভ প্রতিযোগিতা চলে। এ কারণেই প্রায় সব ব্লগে অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য প্রকাশ হতে দেখা যায়।
”
- উপরের বক্তব্যের মাধ্যমে একটা বিষয় প্রকাশ হয়েছে যে, বাংলাদেশের মেধাহীন রাজনীতিকদের মধ্যে কেউ কেউ তথ্য প্রযুক্তির নতুন এই মাধ্যমের বিষয়ে সজাগ রয়েছেন। এইটা সত্যই ইতিবাচক।
এবার দেখি সৈয়দ আশরাফ যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন -
১) অশালীন ও অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য
২) ব্লগ পর্নগ্রাফিতে পরিনত হয়েছে
৩) জাতীয় নেতৃবৃন্দের নামে কুৎসা
৪) জনপ্রিয়তা পেতে বিভিন্ন ব্লগের মধ্যে একটি অশুভ প্রতিযোগিতা
উপরের অভিযোগগুলো যে শতভাগ সত্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সৈয়দ আশরাফ কথাগুলো বলেছেন মুলত "গণমাধ্যমে অনলাইনে ব্লগ" অর্থাৎ সাম্প্রতিক কালে চালু হওয়া বাংলা পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্সানের যে কমেন্ট অপশনগুলো চালু করা হয়েছে তাকেই হয়তো বুঝিয়েছেন। শুরুর দিকে পত্রিকাগুলোর আনমডারেটের মন্তব্যগুলো পড়ল হতাশায় আচ্ছন্ন হত এহতো - এখন বিডিনিউজ২৪, প্রথম আলোসহ অনেকই মডারেশন চালুর পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
কিন্তু ফেসবুকে আর ব্লগে কতিপয় সুশীল ব্লগার সৈয়দ আশরাফের কথাগুলোকে কমিউনিটি ব্লগের উপর টেনে এনেছেন। টানারই কথা। কারন প্রচলিত প্রবাদ "ঠাকুর ঘরে কে রে,আমি কলা খাই না" তো মিথ্যা হতে পারে না। চার বছরের কমিউনিটি ব্লগে ব্লগিএর অভিজ্ঞতা থেকে সৈয়দ আশরাফের কথাগুলোর প্রতি পূর্ন সমর্থন দিতে চাই। কারন কমিউনিটি ব্লগের সুশীল ব্লগারদের সাথে ব্লগিং থেকে দেখেছি - অশ্লীলতা আর গালাগালিকে এরা বাকস্বাধীনতা হিসাবে বিবেচনা করে।
আসলে একটা ইউজার আইডি দিয়ে ভাল ভাল কথা লিখে - ডজনখানেক আইডি দিয়ে গালিগালাজ করে তা প্রতিষ্ঠা করার প্রবনতা অনেক নামিদামী "পুরষ্কারপ্রাপ্ত" ব্লগারদের স্বাভাবিক স্বভাব। এখানে মডারেশন হলে তাদের মুখোশ খুলে যাবে -সেই ভয়েই তাদের আর্তনাদ।
এই প্রসংগে কিছু কথা বলা দরকার। বাংলা সোসাল ব্লগিং এর পাইওনিয়ার সামহোয়ার ইন শুরুর দিকে মডাররেশন ইস্যুতে প্রচুর চড়াই-উৎড়াই পারি দিতে হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ার সময় একদল ব্লগার বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ভিন্ন ব্লগ তৈরী করে - যা রবি ঠাকুরের অচলায়তন একটা বাস্তবরূপ হয়েছে - যেখানে সদস্য হতে হলে রীতিমতো ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়।
সেখানে বিশেষ বিষয়ে কথা বলা রীতিমতো অপরাধ। এরপর অনেক ব্লগ তৈরী হয়েছে - হয়েছে বাংলা ভাষায় মডারেশন ছাড়া যে ব্লগ দাবী করে - সেইটা হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌতুক। কতগুলো লোক নামধাম লুকিয়ে নিজেদের আদিম রিপুর চর্চার জায়গা হলো সেই ব্লগ। সেখানে মডারেশন হয় নিজেদের পছন্দের বাইরে কোন কথা হলেই।
আসলে মডারেশন কেন? একটু লক্ষ্য করলে দেখবো ব্যক্তিগত জীবনে আমরা সবাই আমাদের কথাগুলো মডারেশনের মধ্য দিয়েই প্রকাশ করি।
একজন বন্ধুর সাথে যে ভাষায় কথা বলি - সেই ভাষায় বসে সামনে বলি না। ঠিক তেমনি বিশ্বের এক নাম্বার সোসাল ব্লগ ফেসবুক মডারেশনে সবচেয়ে বড় উদাহরন - মডারেটর থাকার পরও সেখানে ইউজারকে মডারেশনে ক্ষমতা দেওয়া আছে। ওয়াশিংটন পোস্ট মডারেশন ছাড়া ব্লগ চালু চালাতে পারেনি। কানাডার সিবিসি নিজের ব্লগের মডারেশনের জন্যে থার্ট পার্টিকে দায়িত্ব দিয়েছে। কারন - মানুষের মতামতগুলো পাওয়া এবং প্রকাশ করা যেমন জরুরী - সেই সাইডের ক্রেডিবিলিটিও তেমনি গুরুত্বপূর্ন।
সবাই জানি - নানান মতের পথের মানুষ নিয়েই সমাজ। সবার মত প্রকাশের অধিকার আছে - আর তা হতে হবে তথ্যপূর্ন ও যৌক্তিক। শুধু মাত্র গালাগালি আরঘৃনা প্রকাশ কোন সুস্থ সমাজের জন্যে উপকারী হতে পারে না। চাই মেধা আর যুক্তির ব্যবহার - বিতর্কের মাধ্যমে নিজেদের মতাদর্শকে যাচাই করা যায় যদি তা হয় মননশীল ভাষায় আর তথ্য আর যুক্তির ভিত্তিতে।
সৈয়দ আশরাফকে ধন্যবাদ যে বাংলা ব্লগিং এর আসল রোগটা ধরতে পেরেছেন ।
মজার বিষয় হলো উনি প্রতিকার হিসাবে যা বলেছেন তাকে এড়িয়ে একদল ভন্ড সুশীল ব্লগে ব্লগে ব্লগের উপর সরকারের নিয়ণ্ত্রন আসছে বলে প্রপাগান্ডা করছে। এই সকল জ্ঞানপাপীরা মানুষকে যাতে বিভ্রান্ত না করতে পারে - এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সৈয়দ আশরাফ ব্লগের নোংরা প্রতিযোগীতা আর দৈনদশার প্রতিকার হিসাবে বললেন - “নিজেদের ক্রেডিবিলিটি ধরে রাখতে ব্লগগুলো মনিটর করুন। ”
এর চেয়ে ভাল সমাধান আর কি হতে পারে।
(একই সাথে সদালাপে প্রকাশিত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।