জানার কোন শেষ নাই। জানার চেষ্টা বৃথা তাই। নৈতিকতার উৎস আসলে কি?? আপনার আশে পাশের মানুষের কাছে এই কথা জিজ্ঞেস করলে তারা আপনার দিকে এমনভাবে তাকাবে যেন আপনি বিশাল বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের কোন মিটিঙ্গে লুংগি পড়ে হাজির হয়েছেন?
নৈতিকতা আসলে কি? ইহা কিসের দ্বারা পরিমাপ করা হয়? এর কোন মানদন্ড আছে কিনা? এলাকার ভিত্তিতে, সংস্কৃতির ভিত্তিতে নৈতিকতার পরিবর্তন হয় কেন? ভাল খারাপের সঙগা আসলে কি?
অনেকে তাদের ধর্মের বরাত দিয়ে বলবে অমুক ধর্মে যা আছে তাই নৈতিকতা, এইটা ভাল কারন পবিত্র গ্রন্থে লেখা আছে ভাল। ব্যাপারটা অনেকটা সেই নির্দিষ্ট ধর্ম আসার আগে যেন নৈতিকতা জিনিসটাই মানুষের জানা ছিল না। মানুষ মনে হয় একে অপরের সাহায্য করত না।
কিন্তু আসলেই কি তাই? ধর্মই কি সকল নৈতিকতার উৎস? সব নাস্তিকেরাই কি খারাপ? তাদের কি নীতিবোধ নাই? নাস্তিক হবার কারণে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। আমি মোটামুটিভাবে মেনে নিয়েছি যে এসব কথা আমাকে শুনতে হবে। কিন্তু আমি একজন নীতিহীন সুবিধাবাদী ব্যক্তি এটা মেনে নিতে আমার কষ্ট হয়।
ধর্ম ও নৈতিকতার সম্পর্কঃ
এই ব্লগের নাস্তিকদের নাস্তিকদের ধর্ম সম্পর্কে হয়তোবা অনেক নীচ ধারণা কিন্তু আমার তা নাই। আমি সামাজিক বিবর্তনে বিশ্বাসী।
আমি মনে করি সমাজের প্রয়োজনেই সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকে। সব কিছুরই অবশ্য একটা মেয়াদ আছে । প্রাচীনকালে মানুষের নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই উদ্ভব হয় নৈতিকতার এবং সেই নৈতিকতাকে জিইয়ে রাখতে উদ্ভব হয় ধর্ম। সমাজের সকল মানুষের নৈতিকতার ভিত মজবুত হবে, তাদের নিজেদের বিবেক থাকবে এটা আশা করার কোন মানেই নাই। সংঘব্দধভাবে মানুষকে নৈতিকতার দীক্ষা দেবার জন্যই আসলো ধর্ম।
মানুষকে সমষ্টিগত একটি শক্তি হিসেবে আতপ্রকাশের পিছনে মানুষের অজান্তেই কাজ করে গেল ধর্ম। ভয় দেখিয়ে, লোভ দেখিয়ে একটা শৃংখলার মাঝে তাদের চালিত করার জন্য যা দরকার ধর্মের তা ছিল। অবস্য তৎকালীন ধর্মীয় নৈতিকতা আসলেই কতটা নৈতিক তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। কারণে অকারণে মানুষ বলি দেয়া থেকে শুরু করে মোটামুটি এখনকার যুগে যা যা অসীকৃত তার সবই ধর্মের দোহাই দিয়ে করা হত। তথাপি স্বররগীয় আশীর্বাদপুষ্ট গোত্র সর্দারের অধীনে সংঘবদ্ধ থাকার ও নৈতিকতার সামান্য চর্চাটি অনেকাংশে পালন করা হত ধর্মের কারনেই।
এভাবে নৈতিকতার উদ্ভবই ধর্মের সূচনা করে
ধর্ম নৈতিকতা সৃষ্টি করেনি, নৈতিকতাই সৃষ্টি করেছে ধর্মের।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যেই ধর্ম যত নতুন সেই ধর্ম ততই নৈতিক। আর ধর্মগুলোর নৈতিকতাও তাদের উৎপত্তি কালীন সময়ের পারিপার্শিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত।
বর্তমান সময়ে যেইসব ধর্ম টিকে আছে তাদের মাঝে সম্ভবত হিন্দু সনাতন ধর্মই সবচেয়ে প্রাচীণ, তাই এদের নৈতিকতার ধরণও অদ্ভুত। সতীদাহ প্রথা এই সেদিনও চালু ছিল।
আর আলৌকিক ঘটণার বর্ণনাও এই ধর্মেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, ধর্ষনের রগরগে কাহিনীও বাদ যায়নি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনে আঘাত আসতে পারে কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি এই ধর্ম নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার কোন মানেই নাই।
এরপর আছে বৌদ্ধ ধর্ম। ধারণা করা হয় গৌতম বুদ্ধ এই উপমহাদেশের প্রথম নাস্তিক, এই ধর্মে সৃষ্টিকর্তার কোন ধারণা দেয়া নাই। এটা ধর্মের চেয়ে দর্শনই বেশি।
তাই ধর্মের সাথে নৈতিকতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি বৌদ্ধ ধর্মকে এড়িয়েই যাবো।
বাকি থাকে আব্রাহামিক ধর্মগুলো এবং এগুলোর মাঝে সবচাইতে নতুন ইসলাম আবার পাপ পুণ্যের হিসেবই দেয়নাই রাষ্ট্রব্যবস্থা, সামজিক ব্যবস্থা এসবের জন্যও দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
তাই ইসলাম ধর্মই সবচেয়ে বেশি আলোচনার দাবী রাখে। ইসলাম সবচেয়ে নতুন আর বাস্তবসম্মত ধর্ম আর নৈতিকতার পরিমাণও অন্য ধর্মের চেয়ে বেশি যদিও তা অধিকাংশই পুরোপুরি তৎকালীন আরব সমাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং অন্যান্য সমাজের সাথে অনেকাংশেই অসামঞ্জস্য। ৫৭০ খৃষ্টাব্দে আরব সমাজে কি হত আমি হয়ত জানি না, কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে বা অন্যান্য জায়গায় মানুষ এত বর্বর ছিল না।
আমাদের দেশে কখনো কন্যা শিশুর জীবন্ত কবর দেয়ার প্রচলন ছিল বলে আমার জানা নাই উৎসাহীরা গবেষনা করে দেখতে পারেন।
এখন প্রশ্ন,
# ধর্মের মূল নৈতিকতা এমন যুগে যুগে কালের আবর্তনে পরিমার্জিত রুপে দেখা যায় কেন?
#ধর্মের অনেক বৈধ সংস্কৃতিও আমাদের বর্তমান সমাজ নৈতিকতার দোহাই দিয়ে অনৈতিক ঘোষনা করেছে কেন? এখনকার যুগে কেউ ১০ বছরের কোন বালিকাকে বিয়ে করলে নৈতিকতার কোন স্কেলেই তাকে গ্রহণযোগ্য বলা হবে না। কিন্তু ধর্মগুলাতে কিন্তু কোন বাধা নাই। আবার চাইলেই আমি এই সমাজে বহুবিবাহ করতে পারবো না। কোন ধর্মেই কিন্তু বহুবিবাহে মানা নাই হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইসলাম কোন ধর্মেই না।
মুহম্মদ তার পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করলেও আমাদের সমাজ এই কাজকে নৈতিক সমর্থন দিবে না। তাহলে এই ধরণের নৈতিকতার উৎস কি?
#কয়জন ধার্মিক মানুষ তার কাছের প্রিয়জনের উপকার মৃত্যুপ্পরবর্তী জীবনে সুফল লাভের আশায় করে? আমি আজকে কোন বিপদে পড়লে আমার আস্তিক বন্ধুরা নিজস্ব নৈতিকতার জোরেই সাহায্য করতে আসবে। পরকালে সুখের লোভে কেউ আসবে না।
# ধর্মের ঐশ্বরিক নৈতকতার মধ্যে নতুন কি আছে যা কিনা পূর্বে কখনো কোন কালে কোন সমাজে প্রচলিত ছিল না? মিথ্যা বলা যাবে না, চুরি করা যাবে না, ধর্ষন করা যাবে না, হত্যা করা মহাপাপ এগুলোতো অনেক আগে থেকেই বহু সমাজে প্রচলিত। এমন কোন নৈতিকতার সংজ্ঞা কি কোন ধর্ম দিতে পেরেছে যা কিনা মানুষের পক্ষে দেওয়া একেবারেই অসম্ভব?
বিচারের ভার পাঠকের উপরেই থাকলো, শেষে খালি আইন্সটাইনের একটা উক্তি দিব
মানুষের নৈতিকতার জন্যে ধর্মের তো কোন দরকারই নেই; দরকার মানবিকতা, সহমর্মিতা,শিক্ষা আর সামাজিকতার।
মানুষ যদি পরকালের দোজখের কথা ভেবে নৈতিক হয় ,তাহলে সেই নৈতিকতায় মহত্ত্ব কোথায় থাকে ??
-আলবার্ট আইন্সটাইন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।