আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপজাতি আদিবাসী এক নয় প্রেক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম

my country creat me a ginipig উপজাতি আদিবাসী এক নয় প্রেক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জগলুল আহসান ১ সাম্প্রতিককালে আদিবাসী প্রসঙ্গটি আমাদের দেশে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত দশম আন্তর্জাতিক আদিবাসী ফোরামে ‘‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই’’ বিষয়টি উত্থাপনের ভিতর দিয়েই এ আলোচনার সূত্রপাত। ফোরাম পরবর্তীকালে এ প্রসঙ্গে বেশকিছু লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। লেখালেখির পাশাপাশি এ বিষয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা, মানববন্ধন কিংবা প্রতিবাদ সভাও হয়েছে কিছু কিছু এবং এখনও হচ্ছে। আর প্রসঙ্গটি যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পাহাড়ী জনগণ সম্পর্কিত তাই সংশ্লিষ্টতা থাকুক বা না থাকুক অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীকে জড়িয়েছেন।

সবার প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি গুরুত্বপূর্ণ কিংবা সংবেদনশীল জাতীয় ইস্যুতে কিছু লেখা কিংবা বলার আগে এ বিষয়ে আরো দায়িত্ববান ও তথ্যনির্ভর হওয়ার অবকাশ আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ইস্যুতে আবেগ নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক তথ্য বিবর্জিত আলোচনা সমস্যাকে আরো খারাপ পরিণতির দিকেই ঠেলে দেয়। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে কতগুলো মৌলিক বিষয়ের আইনগত এবং সাংবিধানিক অবস্থান সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিষ্কার হওয়া উচিত। প্রথমেই আসছি আদিবাসী প্রসঙ্গে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের মৌলিক পরিচয় কি হবে তা নির্ধারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই এবং ভূমিকা রাখার কোনো অবকাশও নেই যদি না সরকার কর্তৃক সেনাবাহিনীকে এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

তবে আন্তর্জাতিক আইন কানুনের প্রেক্ষাপটে কারা আদিবাসীর মর্যাদা পাবে সে বিষয়ে আমাদের ধারণা পরিষ্কার হওয়ার প্রয়োজন আছে। লেখিকা জোবায়দা নাসরীন তার একটি লেখার এক পর্যায়ে বলেছেন ‘‘আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী, আদিবাসী বলতে যা বোঝানো হয় তা হলো, যেসব জনগোষ্ঠী প্রাক-ঔপনিবেশিক সময় থেকে কোনো অঞ্চলে বসবাস করছে এবং তারা তাদের ভাষা, প্রথা ও আইন-কানুনসহ নিজস্ব সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন রেখেছে এবং যারা সে দেশের অধিপতিশীল জনগোষ্ঠীর অংশ নয় তারাই সে দেশের আদিবাসী বলে বিবেচিত হবে। ” সংস্থাটি উপজাতি এবং আদিবাসীদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছে। আইএলও কর্তৃক প্রণীত কনভেনশন-১৬৯ এ উপজাতি এবং আদিবাসীদের সম্পর্কে যে নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে তার মৌলিক নীতিটি আইএলওর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট থেকে হুবহু তুলে ধরছি ‘‘The Convention does not define who are indigenous and tribal peoples. It takes a practical approach and only provides criteria for describing the peoples it aims to protect...(সূত্রঃhttp://www.ilo.org/indigenous/Conventions/no169/lang-en/index.htm)। আর এই মৌলিক নীতির নিচের অংশেই উপজাতি এবং আদিবাসীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।

সে অনুযায়ী তারাই উপজাতি হিসেবে বিবেচিত হবে যারা নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রথাগত জীবন যাপন করে, যাদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা মূল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা এবং যাদের নিজস্ব সামাজিক প্রতিষ্ঠান, প্রথা ও আইন আছে। আর আদিবাসীদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ছাড়াও আরো একটি বাড়তি বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে তা হল ‘‘কোনো এলাকা অন্য কারো দ্বারা দখলকৃত হওয়ার আগে বা ওই এলাকায় অন্য কারো আগমনের আগ পর্যন্ত যাদের ঐ এলাকায় বসবাসের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা আছে’’ তারাই ওই এলাকার আদিবাসী। বস্তুত এই বৈশিষ্ট্যটিই আইএলও কনভেনশনে উপজাতি এবং আদিবাসীদের আলাদা করেছে। এ প্রেক্ষিতে আদিবাসী সংজ্ঞাটি মূলত কোনো জনগোষ্ঠীর নিজ মূল আবাসভূমিতেই প্রযোজ্য হবে যেখানে উক্ত গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে বসবাস করে আসছে। আইএলও কনভেনশনের আলোকে আমাদের পাহাড়ের অধিবাসীদের মৌলিক পরিচয় কি হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্যের আগে পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীসমূহের ইতিহাসে আলোকপাত করা দরকার।

বলে রাখা ভালো, সামগ্রিকভাবে পার্বত্য এলাকার সব জনগোষ্ঠীর আলাদা ও সুনির্দিষ্ট ইতিহাস পাওয়া কষ্টকর হলেও এদের বৃহত্তর সম্প্রদায় চাকমাদের সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য-উপাত্ত বিদ্যমান। চাকমা আভিজাত্য ও কৌলিন্যের প্রথম প্রবক্তা রানী কালিন্দির মন্দির গাত্রের লেখা কিংবা পরবর্তী প্রবক্তা রাজা ভুবন মোহন রায় রচিত চাকমা রাজ পরিবারের ইতিহাসের কোথাও পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীন উপজাতি রাজ্যের কথা উল্লেখ নেই। তবে প্রথাগতভাবে তাদের প্রায় সব গোত্রেরই গ্রোত্র প্রধান, নেতা বা রাজা থাকত। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে তারা মঙ্গলয়ীড বংশোদ্ভূত এবং সিনো-টিবেটিয়ান ভাষা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত, যাদের আদি নিবাস উত্তর-পূর্ব, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে। বিভিন্ন সূত্র মতে চাকমা সম্প্রদায়ের মূল আবাস ছিল চাকোমা অথবা চম্পক নগর নামক এক জায়গায়।

অন্যদিকে স্টানলি ম্যারণের ‘‘Chittagong Hill Tribes in Pakistan Society and Culture’’ নামক গবেষণাপত্র এবং আরও বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী চকমারা মঙ্গলীয় জাতিসত্তার আরাকান গোত্র থেকে উদ্ভূত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চাকমা রাজা ভুবন মোহন রায় কর্তৃক রচিত চাকমা রাজ পরিবারের ইতিহাসেও উপরোক্ত দুই তথ্যের যোগসূত্র পাওয়া যায়। তার মতে সমুদ্রজিত্ নামে তাদের এক প্রাচীন রাজা আধ্যাত্মিকতায় মোহাবিষ্ট হয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন বেছে নেন। এ পরিস্থিতিতে তার মন্ত্রী শ্যামল ইরাবতী নদীর অববাহিকায় এক নতুন সাম্রাজ্য গড়ে তুলে নিজ পুত্র চম্পাকলির নামানুসারে এর নাম দেন চম্পা নগর। উল্লেখ্য, আরাকান অঞ্চল ইরাবতী নদীর অববাহিকাতেই অবস্থিত এবং ইতিহাসে বর্ণিত চম্পক নগরের অবস্থানও ওই একই এলাকায়।

বার্মার ইতিহাস ‘‘চুইজাং কিয়াথা’’তেও বর্ণিত আছে যে, প্রাচীন বার্মা সাম্রাজ্য তিনটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল এবং তার একটি ছিল চাকমা রাজার অধীনস্থ। বিভিন্ন ইতিহাস হতে এমন আরেকটি ঘটনাও জানা যায় যে, উত্তর আরাকানের চাকমা প্রধান মৈসাং বৌদ্ধধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের ফলে তথাকার মগ রাজা কর্তৃক আক্রান্ত ও বিতাড়িত হয়ে মুসলিম শাসনাধীন আলীকদম এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে আশ্রয় নেন। চাকমা সমাজে প্রচলিত নিম্নলিখিত গীতটি এখনও সেই ঘটনার সাক্ষ্য দিয়ে বেড়ায়ঃ বাঘে ন খেলে মগে পায় মগে ন পেলে বাঘে খায় চল ভেই লোগ চল যেই চম্পকনগর ফিরি যেই। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে আরো জানা যায় যে, বাংলা রাজশক্তির অধীনস্ত এই পার্বত্য এলাকা—এর উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত সংলগ্ন প্রাচীন রাজ্য ত্রিপুরা এবং আরাকান কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত ও দখলকৃত হলেও বাংলার রাজশক্তির কর্তৃক তা বারংবার পুনরুদ্ধার করা হয়। দখল পুনর্দখলের এ প্রক্রিয়ায় তারা এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

ইতিহাসের অন্যান্য সূত্রমতে জুমের মত প্রাচীন নোম্যাডিক (Nomadic) চাষাবাদ পদ্ধতি তাদের প্রধান জীবিকা হওয়ায় তারা বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করে জুম আবাদের পর আবার নিজ অঞ্চলে ফিরে যেত বা অন্য কোথাও নতুন অস্থায়ী আবাস স্থাপন করত। জুম চাষ উপযোগী পার্বত্য এলাকায় তাদের আগমন এ ধারারই অংশ। তবে ঔপনিবেশিক আমলে ইংরেজরা কার্পাস তুলা আবাদের জন্যও এ এলাকায় তাদের আগমনকে উত্সাহিত করে তাদের মাঝে খ্রীস্টান ধর্মের প্রবর্তনও ছিল ইংরেজদের আরো একটি বড় উদ্দেশ্য। বহিরাগত হওয়ার কারণেই ইংরেজ সরকার তাদেরকে নিজ শাসনাধীন মনে করতেন না। এ কারণেই চট্টগ্রামের কমিশনার মিঃ হলহেড ১৮২৯ সালে মন্তব্য করেন যে, ‘‘The hill tribes are not British subjects but merely tributaries and that we recognized no right on our part to interfere with their internal arrangement. ``(Ref: Statistical Account of Bengal vol VI page 22 by W W Hunter) পরবর্তীতে ১৯০০ সালের হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়ালের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক এবং ঔপনিবেশিক স্বার্থেই ইংরেজরা এ এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্ঠীসমূহের অবস্থানকে সুসংহত করে।

এর পরবর্তী ইতিহাস কমবেশী আমাদের সবারই জানা। তাই বক্তব্যের এ পর্যায়ে ইতিহাস নিয়ে আলোচনা আর দীর্ঘায়িত না করে আমাদের পাহাড় ওই এলাকার ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্ঠীসমূহের অভিবাসিত ভূমি, না মূল আবাসভূমি তা বিচারের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দেয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করছি। ২ লেখার ধারাবাহিকতায় এবার আসছি সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে। অনেকে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য রেখেছেন এবং প্রায় সবাই সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন।

তাই এ বিষয়ে আলোচনার প্রথমেই জাতিসংঘের আদিবাসী সম্পর্কিত আইন-কানুনের সাথে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী নিয়োগের কোন বিরোধ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজুল্যুশন নম্বর-৬১/২৯৫-এর মাধ্যমে আদিবাসীদের অধিকারসম্বলিত ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এতে মোট ৪৬টি ক্লজ রয়েছে যার মধ্য হতে ৩০ নম্বর ক্লজটি হুবহু তলে ধরছি-‘‘Military activities shall not take place in the lands or teritories of indigenous peoples, unless justified by a relevant public interest or otherwise freely agreed with or requested by the indigenous peoples concerned’’ ক্লজটিতে সাধারণভাবে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সেনাবাহিনীর নিয়োগ বা কার্যক্রমকে নিষেধ করা হলেও তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে: যেমন জনস্বার্থের প্রয়োজনে অথবা উভয় পক্ষের সম্মতিতে অথবা সংশ্লিষ্ট আদিবাসী সম্প্রদায় কর্তৃক অনুরোধের প্রেক্ষিতে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কাজেই জনস্বার্থের প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বা আদিবাসী অধিকার খর্বের অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক তোলার কোনো সুযোগ নেই। কোন্ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার এ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৯৭৩ সালে শান্তি বাহিনীর জন্ম ও হিংসাত্মক কার্যক্রমের ভিতর দেয়েই পাহাড়ে রক্তপাত আর সন্ত্রাসের সূত্রপাত হয়। শান্তিবাহিনীর চাঁদাবাজি থেকে উপজাতি, বাঙালী কিংবা বিদেশী কেউই রেহাই পায়নি। শান্তিবাহিনী কর্তৃক একের পর এক গণহত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে যায়, আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শান্তিবাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত হয় প্রায় ত্রিশ হাজার বাঙালী এবং ১২ হাজার উপজাতি (সূত্র Click This Link)। এহেন মানবেতর পরিস্থিতিতে একটি দেশের সরকার কর্তৃক জনস্বার্থে ঐ এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়োগ নিয়ে বিরোধ থাকার কোনো অবকাশ আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না।

সংবিধানের ৬২ অনুচ্ছেদ এবং আর্মড ফোর্সেস ইন্সারজেন্সি এ্যাক্ট ১৯৪৭ অনুযায়ী সরকার যে কোনো উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে পারে। এতে সাংবিধানিক কোন বিরোধ নেই। ১৯৭২ সালের ২২শে আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে অপারেশনাল বা আভিযানিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং ৯ই আগস্ট আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় নিয়োগ করে। ১৯৭৬ সালের ৭ই অক্টোবর সরকার কর্তৃক সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি ঘোষণাপূর্বক একটিভ সার্ভিস হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। জনাব হাসান ফেরদৌস অবশ্য লিখেছেন ‘৭৫ পরবর্তীকালে সেখানে সেনা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

তিন পা এগুলেই সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, সামরিক কর্তাব্যক্তিরা ভাবলেন বন্দুকের নলেই পাওয়া যাবে সমাধান। পার্বত্য এলাকায় রীতিমত সামরিক অবরোধ চলছে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন সরকার আগে সেনাবাহিনী নামিয়ে সেখানে অত্যাচার করে শান্তিবাহিনীকে অস্ত্র ধরতে বাধ্য করছেন। প্রকৃতপক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তিবাহিনীর জন্ম হয় ১৯৭৩ সালের ৭ই জানুয়ারী আর সেখানে সেনাবাহিনীর কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশনের সরকারী অনুমোদন হয় ১৯৭৬ সালের ৭ই অক্টোবর। পরবর্তীতে রণকৌশলগত কারণেই সেনাবাহিনীর অপারেশনাল ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা শুরু হয় ১৯৭৯ সাল থেকে।

তাই লেখক হাসান ফেরদৌস এর সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মূল্যায়ন সময়ের মাপকাঠিতে ভুল। এখানে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হওয়া দরকার যে একটি দেশের সেনাবাহিনী কোনো এলাকায় যেয়ে নিজের ইচ্ছে মত স্থায়ী বা অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তুলতে পারেনা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী নিয়োজিত হয়েছে সরকারের আদেশের প্রেক্ষিতে। সেনাবাহিনীর দায়িত্বই হচ্ছে দেশের জনগণের নিরাপত্তা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা।

এর প্রতিটি সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামে এরূপ দায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরে গর্বিত কারণ সেনাবাহিনীর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে এর সদস্যদের কোনো সন্দেহ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর শত্রু কোনো সাধারণ পাহাড়ী নয়, সেনাবাহিনীর শত্রু সেই সমস্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে আমাদের দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী সেই সকল সন্ত্রাসীকে রুখতে যেয়ে আমাদের সেনাবাহিনীর ১৭৬ জন সদস্য এ পর্যন্ত জীবন দিয়েছেন এবং ২০৮ জন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। প্রয়োজনে সরকারের নির্দেশে এর শেষ সদস্য পর্যন্ত জীবন দিয়ে যাবে তবুও আমাদের পাহাড়কে আমাদের ভূ-খন্ড থেকে আলাদা হতে দিবে না। লেখক ফেরদৌস হাসান পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নিয়োগ নিয়ে বক্রোক্তি করে শুধু নিজেকেই ছোট করেননি, এদেশের ১৭৬ জন অকুতোভয় সন্তান যারা দেশের জন্য, দেশের অখণ্ডতার জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের অবদানকে অসম্মানিত করেছেন।

লেখকের পক্ষ হয়ে আমি নিজেই তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। লেখক আরো বলেছেন-সামরিক কর্তাব্যক্তিরা ভাবলেন বন্দুকের নলেই পাওয়া যাবে সমাধান। এ কথাটি লেখার আগে লেখকের উচিত ছিল কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশনের রণকৌশল সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা অর্জন করা। এ প্রসঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা মাও সেতুং-এর বিখ্যাত উক্তির উদাহরণ টানছি: 'Guerrillas live among the population as fish lives in the water'. পানি থেকে আলাদা করলে মাছ যেমন মারা যায় গেরিলাদেরও তেমনি সাধারণ জনগণ থেকে আলাদা করতে পারলে তাদের বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী। তাই কাউন্টার ইন্সারজেন্সী বা গেরিলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পূর্বশর্ত হচ্ছে জনগণ থেকে গেরিলাদের বিচ্ছিন্নকরণ।

তা করতে হলে প্রথমেই সেনাবাহিনীকে ঐ এলাকার সাধারণ জনগণের আস্থা এবং সমর্থন অর্জন করতে হয়। কেননা জনসমর্থন ছাড়া কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশন পরিচালনা করা অসম্ভব। জনসমর্থন ছাড়া শক্তিশালী সেনাবাহিনীও গেরিলাদের বিরুদ্ধে কি পরিমাণ নাস্তানাবুদ হতে পারে তার বড় উদাহরণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাকবাহিনীর করুণ অবস্থা কিংবা ভিয়েতনামী গেরিলাদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সেনাবাহিনীর বিপর্যস্ত দশা। তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রণকৌশল বইয়ে কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশনের একটি মূলনীতি হচ্ছে: 'Win the hearts and minds of the people.'। এটা মুখের কথা নয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের অংশ যাতে এর প্রতিটি সদস্য প্রশিক্ষিত। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাম্পসমূহ থেকে ইন্সারজেন্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পাশাপাশি সেনাবাহিনী সাধারণ জনগণের জন্য পরিচালনা করে কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। ফলশ্রুতিতে পাহাড়ের সাধারণ জনগণ শান্তিবাহিনীর মত তথাকথিত স্বঘোষিত গেরিলা দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সামরিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সেনাবাহিনী এভাবে শান্তিবাহিনীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে শান্তিচুক্তিতে বসতে বাধ্য করে। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপের অবদান আরও ব্যাপক।

আর কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশন কখনই বিচ্ছিন্ন সামরিক পদক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের সমন্বিত পদক্ষেপ। এ সমন্বিত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রথমে পাহাড়ের দুর্গম এলাকাসমূহ যা ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য সে সমস্ত এলাকায় সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। এসব ক্যাম্প থেকে জীবন বাজি রেখে দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা টহল প্রেরণের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় শান্তিবাহিনীর অবাধ কার্যক্রমকে প্রতিহত করা হয়। সাধারণ মানুষ মুক্তি পায় শান্তিবাহিনীর অত্যাচার আর চাঁদাবাজি থেকে। দুর্গম এলাকা নিরাপদ করার পাশাপাশি শুরু হয় ঐ সমস্ত এলাকায় যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ।

সেনাবাহিনী রাস্তার দু’পাশে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে ঐ সমস্ত এলাকায় পৌঁছার রাস্তাকে নিরাপদ করে। নিরাপত্তা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে সরকারের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডসমূহ সহজেই পৌঁছে যার দুর্গম এলাকার সাধারণ লোকজনের মাঝে। সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে চলতে থাকে সরকারের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। শান্তিবাহিনীর অত্যাচার আর চাঁদাবাজির বিপরীতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ শান্তিবাহিনীর অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই ইন্সারজেন্টদের ধ্বংস অনিবার্য একথা তথাকথিত শান্তিবাহিনী জানে বলেই এ যুদ্ধবিরতি এবং পরবর্তীতে অস্ত্র সমর্পণ।

এটা আমাদের সেনাবাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের এক বিরল সফলতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণের সমর্থন ছাড়া এটা কোনদিনও সম্ভব হত না। বিশ্বের সকল সার্থক কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশন এই একই সমন্বিত পদ্ধতিতে পরিচালিত। কাউন্টার ইন্সারজেন্সী অপারেশনের সফলতা কখনও বন্দুকের নল দিয়ে আসে না, আসে জনগণের মন জয়ের ভিতর দিয়ে। লেখক ফেরদৌস হাসান মনগড়া কথা লিখলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের কিন্তু এ বিষয়ে জ্ঞানের কোনো কমতি নেই।

আর তাই এ সেনাবাহিনী শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামেই নয় বিশ্বের যে কোনো দেশের গৃহযুদ্ধ সমাধানে অত্যন্ত সফল ভূমিকা পালন করে বিশ্বে সর্বোচ্চসংখ্যক এবং সর্বাধিক স্বীকৃত শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সমাদৃত। ৩ সবশেষে আসছি মানবাধিকার প্রসঙ্গে। একটি পেশাদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে না পেরে তার বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ কৌশলের ব্যবহার ইতিহাসে নতুন নয়। শান্তিবাহিনী কিংবা চক্রান্তকারীরা তা করতেই পারে। তবে তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের শিক্ষিত সমাজের একটি অংশ প্রকৃত তথ্য যাচাই না করে যখন একই সুরে কথা বলেন তখন দুঃখ হয়।

জাতিসংঘের অঙ্গিভূত প্রতিষ্ঠান UNHCR ২০০৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর উপর তদন্তের প্রেক্ষিতে ‘Assessment for Chittagong Hill Tribes in Bangladesh’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর উপর এরূপ Risk Assessment সংস্থাটির নিয়মিত কর্মকাণ্ডেরই অংশ। এ প্রতিবেদনের কোথাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নেই। (সূত্র:http://www.unhcr.org/refworld/docid/469f3a59c.html) তারপরও প্রায়ই শুনে কিংবা পড়ে থাকি, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ, লুটতরাজ কিংবা সাধারণ উপজাতিদের হত্যা করছে। সেনাবাহিনী সম্পর্কে এরূপ ধারণা মূলতঃ '71 syndrome' থেকেই উদ্ভূত।

যারা এ ধরনের মন্তব্য করেন তারা ভুলে যান এটা পাকিস্তান সেনাবাহিনী নয়, এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর প্রতিটি সদস্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিয়ে এ দেশ ও দেশের জনগণের স্বাধীনতা, সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষায় জীবন উত্সর্গ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতিতেও নৈতিক মূল্যবোধের অবস্থান অনেক উপরে এবং নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ। ড. জাফর ইকবাল তাঁর লেখার মাঝ পর্যায়ে বলেছেন, সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবতা বিরোধী আচরণ বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে না নেয়ার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘে আলোচনা চলছে। তাই সরকার এ সময়ে হঠাত্ করে বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন যাতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আদিবাসী সংক্রান্ত অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগটি ভিত্তিহীন হয়ে যায়।

তিনি অবশ্য বলেছেন এটা তার অনুমান। সেনা আইন অনুসারে যে কোনো ধরনের নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের জন্য শাস্তির তারিখ থেকে কোনো সেনাসদস্য ৫ বছরের মধ্যে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নির্বাচিত হবে না। আর এ ধরনের অপরাধ যদি কেউ তিন বা চার বার করে থাকে তবে সে আজীবনের জন্য যথাক্রমে পদোন্নতি এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে নিয়মে তিন বা চার বারের কথা থাকলেও, অনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে মাত্রানুযায়ী সাধারণতঃ প্রথমবারেই চাকুরীচ্যুতি হয়। সেনাসদর থেকে যে কেউ এ বিষয়ে তথ্য যাচাই করে নিতে পারেন।

আইনগত দিক থেকেও সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অবাস্তব। কেননা সেনাবাহিনী সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রচলিত আইনের অধীনে কোনো বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় নয়। তবে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনে সেনাবাহিনীকে সাধারণত বিশেষ কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়। তা না হলে সংগঠিত সশস্ত্র ইন্সারজেন্টদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান বিপজ্জনক হয়। ভারতের টাডা আইন কিংবা আইরিশ গেরিলাদের বিরুদ্ধে বৃটিশ সেনাবাহিনীর জন্য প্রণীত বিশেষ আইন এদেরই উদাহরণ।

তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবি রাখে, কেননা সমূহ ঝুঁকি মেনে নিয়েই তারা প্রচলিত আইনের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন পরিচালনা করছে, কখনো সরকারের কাছে বিশেষ ক্ষমতা বা আইনের জন্য দাবী তুলেনি কিংবা এরূপ আইনের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনেও পিছপা হননি। আরেকটি মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন না তুলে পারছি না। সরকারী গেজেট অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে যার সদস্য আর্মি, পুলিশ, বিডিআর, আনসার, ভিডিপি সবাই, শুধু সেনাবাহিনীই নয়। এরা যেখানে একইসাথে একই নিয়মের অধীনে অপারেশন পরিচালনা করে সেখানে শুধু সেনাবাহিনীর অপসারণ কেন দাবি করা হয়? এর কারণ হলো প্রথমত: সেনাবাহিনী যতদিন পার্বত্য অঞ্চলে থাকবে ততদিন সন্ত্রাসীরা অবাধে তাদের চাঁদাবাজি, লুটতরাজ কিংবা সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত: সেনাবাহিনী চলে গেলে স্থানীয় প্রশাসনকে অস্ত্রের মুখে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য করা যাবে।

তৃতীয়ত: সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে সন্ত্রাসী ও চক্রান্তকারীরা অস্ত্রের মুখে সেখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিবে। চতুর্থত: সেনাবাহিনী চলে গেলে অবাধে দেশের বনজ সম্পদ বিদেশে পাচার করা যাবে। সর্বোপরি, সেনাবাহিনী যতদিন থাকবে চক্রান্তকারীদের আলাদা জুম্মরাষ্ট্র গঠনের হীন প্রচেষ্টা কখনই বাস্তবায়ন হবে না। এটা পার্বত্য সন্ত্রাসীরাও যেমন বিগত ৪০ বছর ধরে যুদ্ধ করে বুঝেছে তেমনি বুঝেছে চক্রান্তকারীরা এবং তাদের দোসররা। সবশেষে বলতে চাই, পাহাড়ের জনগোষ্ঠীসমূহের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অধিকারকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।

এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কালক্রমে ঐ এলাকায় যে সকল নতুন বসতি গড়ে উঠেছে তাদের অধিকারও অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা এখন বাস্তবতা। শান্তিবাহিনীর মত কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন যাতে ঐ এলাকায় আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে সে জন্য সেনাবাহিনীকেও ঐ এলাকায় থাকতে হবে। এটা প্রয়োজনীয়তা।

দায়িত্ব, বাস্তবতা আর প্রয়োজনীয়তার যথাযথ সমন্বয়ের মধ্যেই এর সমাধান নিহিত অন্য কোন কিছুতেই নয়। এটা বুঝতে আমরা যেন ভুল না করি। [লেখক :গবেষক] সূত্র: ইত্তেফাক, শুক্র, ২ ডিসেম্বর ২০১১, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪১৮ Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.