সুতপা ছোটোখাটো শুকনা মেয়ে। উপলের সাথে একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এ পড়েছে। ছেলেটাকে তার ভালই লাগে। বাকি ছেলেদের চেয়ে একটু যেন আলাদা। চুপচাপ থাকে।
দেখতেও সুন্দর। আর সুন্দরের প্রতি সবারই আকর্ষণ থাকে। ছেলেটার সাথে তার হাল্কা কথাবার্তা হত। পরে দেখা গেল তারা দুইজনই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ডিপার্টমেন্টে সুযোগ পেয়েছে পড়াশোনার। তখন উপল সুতপা দুইজনই বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠল।
বন্ধুত্ব থেকে তাদের মাঝে গভীর সম্পর্ক হল।
উপলের ধারণা ছিল তার সাথে সম্পর্ক করার মত মানুষ এই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু সুতপাকে পেয়ে তার মনে হল সে যেন ভুল ছিল। একই সাথে বন্ধু এবং সঙ্গিনী কম মানুষের জীবনেই থাকে। উপলের নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।
উপলের রাগ, অধিকার চর্চা সবকিছুই সুতপার ভালো লাগে। কোন মেয়ের লাগবে না? শুরুতে সব মেয়েরই লাগে। একটা ছেলে যার নিজের কোন দুনিয়া নেই। যার বিশাল কোন ফ্রেন্ড সার্কেল নেই। যে সন্ধ্যা হলেই আড্ডা দিতে বের হয়ে যায় না।
যাকে যখন খুশি তখন পাওয়া যায়। এবং যে ছেলের মত সুন্দর ছেলে আশেপাশে দেখা যায় না। আর যদি দেখাও যায় তাহলে কি একটা যেন থাকে না বাকিদের মধ্যে।
সুতপা কিন্তু উপলের মত নয়। সে বন্ধু বানাতে ভালোবাসে।
বিশাল ফ্রেন্ড সার্কেল হবে তার এরকমই তার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সুতপার মা খুব কড়া। মাকে সে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু তার মা তাকে একটুও মজা করতে দেয় না। ইউনিভার্সিটি তে উঠেও তাকে সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে যেতে হয়।
মায়ের সাথে কত ঝগড়া হয় তার!! সে সব মনের দুঃখ উপলকে বলে। উপল একনিষ্ঠ বন্ধুর মত তাকে আগলে রাখে। কিন্তু বাকি যে সময়টা থাকে সে সময়টা তাকে আবার উপল এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়ে না। সুতপা অন্য কারো সাথে একটু হেসে কথা বললেই উপলের মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। আর যদি ভুলেও সে কোন ছেলে ক্লাসমেট কে খেলার ছলে স্পর্শ করে ফেলে।
তাহলে আর ওইদিন উপল তার সাথে কথাই বলে না। বললেও বিশাল চেঁচামেচি, ঝগড়াঝাঁটি। তবে চেঁচামেচি শেষ হয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে উপল গলে কাঁদা। নিজেই সরি বলবে। সুতপা যে কোন ঝগড়ার পর শুধু উপলের চেঁচামেচি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
কারণ চেঁচামেচি করা উপল আর পাঁচ মিনিট পরের সরি বলা উপল দুজন দুই ভিন্ন মানুষ। সবাই চেঁচামেচি করা উপলকে চেনে। পাঁচ মিনিট পরের সরি বলা উপলকে কেউ কখনো দেখেনি সুতপা ছাড়া। এই রাগী মানুষটাকে তার খুবই ভালো লাগে।
সুতপার সাথে থেকে উপলের অনেক ইতিবাচক প্রাপ্তি ঘটেছে।
তার আত্মবিশ্বাস একটু একটু করে বাড়ছে। আগে তার নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হত। কিন্তু সুতপা তাকে একটু একটু করে নিজের ভালো দিকগুলার সাথেও পরিচয় করে দিয়েছে। সুতপা বলেছে যে উপল মনে যা তাই মুখে বলতে পারে। এটা সবাই পারে না।
এটা অবশ্যই একটা গুণ। সবাই উপলের রাগকেই চেনে। উপলের নরম দিক কেউ দেখেনি। তাই কেউ জানে না উপল বাকিদের চেয়েও আবেগী। তো উপল শুধু ভালো মানুষ না।
উপল নাকি একজন অসাধারণ মানুষ। সেই স্কুল থেকে উপল শুনে আসছে নিজের খারাপের কথা। টাকা চুরি গেলে টিচাররা তাকে জিজ্ঞেস করত। আসামীর মত করে চোখে চোখে রাখত। ক্লাসমেটদের মায়েরা তাকে ছুটির সময় বলত “উপল ভাল হয়ে যাও!! ভালো হয়ে যাও!!” তাকে কখনো কেউ ভালো বলেনি।
তারপরো দুনিয়ার সবচেয়ে খুঁতহীন সম্পর্কের মধ্যেও অনেক খুঁত থাকে। ভালো সময় খারাপ সময় মিলে এক অসাধারণ সময় পাড় করল উপল আর সুতপা। তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা ছিল খুবই মজবুত। উপলের ফাঁকা জীবন সুতপা একলাই ভরিয়ে দিয়েছিল। সুতপার পরাধীন জীবনে উপল ছিল এক বিশাল আশ্রয়।
মায়ের সাথে ঝগড়া। জীবনের পাওয়া না পাওয়া। অপমান দুঃখ। সবকিছুতেই তারা হয়ে উঠেছিল একে অপরের সঙ্গী। তারা এতটাই নিজেদের নিয়ে ছিল যে তাদের ওইভাবে আর কোন বন্ধু গড়ে উঠেনি।
যদিও সুতপা খুবই সামাজিক মানুষ। কিন্তু উপলের আপত্তিতে তারও উপল ছাড়া কোন বন্ধু হয়নি। এভাবেই শেষ হল উপলের জীবনের সবচেয়ে রঙ্গিন সময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।