স্কুল জীবন তো এরকম গেল। কলেজ জীবনটা দেখতে দেখতেই কেটে গেল। উপল যেন টেরই পেল না। কলেজ যেত আর বাসায় আসত। তারপরও দুই একজন বন্ধু হয়েছে।
বন্ধু পছন্দের ব্যাপারটা উপলের একটু অন্যরকম। এত বছরের স্কুল এর খারাপ অভিজ্ঞতায় সে যাকে তাকে বন্ধু মানতে পারে না। সে সেইসব মানুষদের বন্ধু বানাতে চায় যারা একটু চুপচাপ। যারা সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারে না। কথা কম বলে।
এদের সাথে মিশলে তার নিজেকে সুপেরিওর মনে হয় আর কি! আর এরা তাকে অনেক পছন্দও করে। আর যাই হোক!! উপল পছন্দের খুব কাঙ্গাল। মানুষ তাকে পছন্দ করবে। সে যেমন তাকে সেইভাবে গ্রহণ করবে। তার কাঠিন্যের মধ্যেও যে অনেক নম্রতা আছে সেটা দেখবে।
তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে চিনবে। মাঝে মাঝে উপলের নিজের কাছেই মনে হয়। এ যেন অসম্ভবের অপেক্ষা।
তাছাড়া কাউকে বন্ধু বানালে তার ব্যাপারে সে খুব অধিকার ফলায়। সেটা সবসময় সহ্যসীমার মধ্যে থাকে না।
মানুষজন ভয় পায়। উপলের বন্ধু শুধু উপলেরই বন্ধু থাকবে। আর কারো বন্ধু হওয়াটা উপল সহ্য করতে পারে না। এরকম লোকের বন্ধু হওয়াটা খুব একটা সুবিধার না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপদজনকও বটে।
আর এরকম মেয়েরা করে। ছেলেরা অনেক ইজিগোয়িং হয়।
বন্ধুহীন উপল সেভাবে বন্ধু খুঁজে পেল না। যাদের পেল তারা বন্ধু কম তাকে ভয়ই পেত বেশী। যাইহোক!! কলেজ জীবনে ছেলেরা মোটামুটি ঘোষণা দিয়েই মেয়ে মহলে পুরুষ হিসেবে প্রবেশ করতে চায়।
মেয়েদের কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। বিশেষ কোন মেয়েকে এক নজর দেখা বা তার সাথে একটু কথা বলার জন্য আকুলি-বিকুলি করা এই বয়সের খুবই চিরাচরিত লক্ষণ। কিন্তু যেহেতু উপল জীবনে খুব আগেই ছোট হয়ে এসেছে। সে আর নারী জাতির কাছেও ছোট হতে রাজি ছিল না। আর সে দেখেছিল যে নারীজাতির মন পেতে ছেলেদের কি পরিশ্রমই না করা লাগে।
পরিশ্রমের চেয়েও বড় কথা যে আত্মসম্মানও বিসর্জন দেয়া লাগে। যেটা কখনোই উপলের দ্বারা সম্ভব ছিল না। অন্তত উপল তাই ভাবত। নইলে আমরা তো সবাই জানি মানুষের পক্ষে অসম্ভব বলে কোন কথা নেই।
যেহেতু উপল মেয়েদের পিছনে ঘুরত না।
মেয়েরাও উপলকে পাত্তা দিত না। কারণ তখন মেয়েদের পিছনে বহু ছেলে না চাইতেই ঘুরে বেড়ায়। সেখানে কোন ছেলে তাদের পাত্তা দিচ্ছে না টা খেয়াল করার মত সময় তাদের কই!!
উপল মেয়েদের পিছনে ঘুরত না ঠিকই। কিন্তু এই বয়সের একটা ছেলে মেয়েদের প্রতি আকর্ষিত হয় না তাতো হতে পারে না। কিন্তু তার পক্ষে বাকিদের মত হওয়া সম্ভব ছিল না।
তাই সে ধরে নিল সে দেখতে তেমন ভাল কিছু নয়। তাই মেয়েরা তাকে পছন্দ করে না। তো না করল!!! সেও মেয়েদের পাত্তা দেয় না।
কিন্তু উপল সুদর্শন ছেলে ছিল। পরবর্তী জীবনে বহুবার শুনেছে সে।
কিন্তু যে সময়ের কথা আমরা বলছি তখন সে তা জানত না। হ্যাঁ!! তার মা তাকে বলতো সুদর্শন। সে তো দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত সন্তানের মাও তার সন্তানকে সুদর্শন বলেন। উপলও সেরকমই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোচিং এর এক মেয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু কিভাবে জানি তা আর ঠিক এগোয়নি। কিন্তু একটু আত্মবিশ্বাস আমাদের উপলের মনে আসল। সেই স্কুল থেকে তার জীবনে ভালো কিছু হয়নি। তার বলার মত কোন বন্ধু নেই। সেই তার জীবনেই বিনা চেষ্টাতেই একটা মেয়ে তাকে প্রস্তাব দিল!!!!
কলেজ জীবন শেষ।
কিভাবে শেষ হল তা উপল নিজেও বলতে পারবে না। তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি এই সময়ে বলার মত। মাধ্যমিকে তার ফলাফল খারাপ ছিল না। কিন্তু কিভাবে যেন উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলটা জুতসই হল না। খারাপই হল বলা যায়।
ভর্তি হল সে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এ। আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে সে সুদর্শন হিসেবে অনেক সুনাম অর্জন করল। মেয়েরা তার সাথে কথা বলে। সেও কথা বলে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি।
কিন্তু সে খেই হারায়নি। উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল তাকে জেদ ধরে পড়তে বসাত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেই হবে। তার জন্য তার মায়ের এত টাকা নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। ও পাঠক!!! আপনাদের বলা হয়নি।
উপল তার মায়ের এক সন্তান। তার বাবা নেই। তার মা চাকুরীজীবী।
শেষমেশ উপল ২ টা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়তে পড়াশোনা করার সুযোগ পেল। ২ টাতে তো আর পড়া যায় না।
একটাতে ভর্তি হল। সেখানে একই ডিপার্টমেন্টে কোচিং এর আরেকটা মেয়েও ভর্তি হল। সেই মেয়ের সাথে জীবনের প্রথম সম্পর্কে জড়াল উপল। শুরু হল উপলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।