চলে গেলেন সাবেক মন্ত্রী, মেজর জেনারেল মজিদ উল হক। দশ দিন আগে যান তার স্ত্রী। ১৯৭৭ ও ১৯৯১ সালে জিয়া ও খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় সংস্থাপন, শিল্প, রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রী এবং কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকার পর ১৯৯৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কম সংখ্যক ভালো মানুষের মধ্যে সম্বভত তিনি ছিলেন একজন।
১৯৯০ সালে একান্ত অনিচ্ছাসত্বেও জনগনের প্রচন্ড চাপে মহান আল্লাহ-তায়ালার অনুগ্রহে পাচ বছরের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকেই প্রতিটি দিন এবং ক্ষণ কাটছিল কিভাবে সম্পুর্ণ দুর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি মুক্ত থেকে আবার একই সাথে সরকারী দৈনন্দিন লাল ফিতার গতানুগতিক কাজের বাইরে গিয়েও উপজেলার উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু মাত্র দুবছরের মাথায় তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার সম্পুর্ণ প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এক কলমের খোচায় জনগনের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করে উন্নয়নের মডেল উপজেলা ব্যবস্হাকে অচল করে দেয়। ফলে জনগনকে দেয়া অনেক ওয়াদা পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার মধ্যে একটা বড় ওয়াদা ছিল গোয়ালন্দে মরা পদ্মার উপর দিয়ে রাস্তা ও ব্রীজ করে মুল শহরের সাথে চরান্চলের মানুষের, ছাত্র, ছাত্রীদের দ্রুত যোগাযোগের একটা ব্যবস্হা করে দেয়া। ১৯৯২ সাল, সদ্য ক্ষমতচ্যুত চেয়ারম্যান।
তাতে কি, মানুষতো আমাকে চিনে, পদ কে নয়। সামান্য পরিচয়ের সুবাদে সচিবালয়ে গেলাম মাননীয় মন্ত্রী মাজেদুল হকের সাথে দেখা করতে। ভৌগলিক কারনে আমার একটা সুবিধাজনক অবস্হান ছিল তা হলো যে দলেরই সরকার হোক না কেন, দক্ষিন বংগের কোথাও যেতে হলে দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়ে যেতে হবে। সে সুত্রেও অনেক মান্যবরেরা একটু সমীহ করে চলতেন। কারনে অকারনে ঐ পথ দিয়ে যাতায়াত করার সময় ওসি সাহেবকে দিয়ে সালাম পাঠাতেন।
উপজেলা পরিষদের অফিসে যাত্রা বিরতি করতেন। সেই সময়ের সম্পর্কে এখনো দু'একজন এমপি মন্ত্রী কানাডা, আমেরিকা এলে হঠাত করে ফোন দেন, খোজ খবর নেন। যাহোক, মন্ত্রী মাজেদুল হক সাহেবকে বললাম আমার ওয়াদা পুরন হবার আগেই আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন আপনারা, এখন আপনি আমার রাস্তার ব্যাপারে সাহায্য করুন। তিনি খুব আন্তরিকভাবে সমস্যা শুনলেন। সাথে সাথে ততকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী টাংগাইলের লুতফুর রহমান আযাদের কাছে ফোন করে আমাকে পাঠিয়ে দিলেন।
উঠতে যাব, এমন সময় সম্ভবত কুষ্টিয়া জেলা থেকে কিছু ছাত্রদল নেতা হুরমুর করে ঢুকে পড়লেন উনার রুমে। এসেই বলতে লাগলো, আমরা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে এই করেছি সেই করেছি, এখন কেউ আমাদের মুল্যায়ন করছেন না, আমাদের দেখছেন না। সুনির্দিষ্ট কোন কাজ বা দাবী নেই, কিন্তু অনেক কিছুই দাবী। মন্ত্রী পরিস্কার বলে দিলেন, তিনি কোন অনৈতিক কাজ করবেন না, অনৈতিক দাবীর কাছে মাথা নোয়াবেন না, সে যেই হোক। মনটা শ্রদ্ধায় ভরে উঠলো।
চলে গেলাম ত্রান মন্ত্রী আযাদ সাহেবের অফিসে। ভিতরে ঢুকতেই তার প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, আপনি কি বিএনপি করেন? বললাম না, তবে বিএনপির অনেকেই আমার সমর্থক হিসেবে আছে, তারাও আমাকে নির্বাচিত করতে যথেষ্ট কষ্ট করেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি রাস্তা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা করে দিলেন। ফিরে এলাম উপজেলায়। আমার সময়ের ইউএনও জনাব ফরহাদ রহমান তখনো স্বীয়পদে বহাল ছিলেন।
তিনি জানতেন আমি ঐ প্রজেক্টের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিলাম। যদিও আমি আর দায়িত্বে ছিলাম না, তাও তিনি আমাকে যথাযথ সম্মান দিলেন, আমাকে দিয়েই কাজটার উদ্বোধন করালেন। আমি সে কাজটা এ্যাট লিষ্ট এভাবে শুরু করতে পেরেছিলাম, শেষ করতে পারিনি। তবে আমি জানতাম যেখানে সরকারের এক কোদাল মাটিও পড়ে, সেখানে পরবর্তী যে সরকারই আসুক না কেন, সাধারনত ওটার কন্টিনিউইশন হয় যদি তার ফিজিবিলিটি এবং এলিজিবিলিটি জনস্বার্থে করা হয়ে থাকে। আজ গোয়ালন্দের সে জায়গাটা দেখলে অনেকেরই মনটা ভরে উঠে, সেখানে কোটি টাকার ব্রীজসহ পাকা রাস্তা, রাস্তার দুপাশে টলটলে পানির এক অনুপম সৌন্দর্য বিরাজ করছে।
যার পিছনে অবদান ছিল আমার প্রিয় মানুষ মেজর জেনারেল (অবঃ) মাজেদুল হকের। পরবর্তিতে আরো অনকে স্মতি তার সাথে, বাসায় গেলে নিজে হাতে মিষ্টি তুলে খাওয়াতেন। তার এ মহাপ্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি তাকে। প্রাণ খুলে দোয়া করি পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাকে এবং তার সহধর্মীনিকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, আমিন! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।