বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমান অধিকার বাস্তবায়ন এবং নারীর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু সেই কাজটি করতে গিয়ে আমরা কি বারবার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলবো? স্পিকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। যিনি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন, তাঁকে সংবিধান, পার্লামেন্ট, সংসদীয় রীতি-নীতি, সংসদের যাবতীয় কার্যক্রম, সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলী এবং সাংসদদের সকল নোটিশ সম্পর্কে দক্ষ ও অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সাধারণত একজন দক্ষ পার্লামেন্ট সদস্য বারবার সংসদে নির্বাচিত হয়ে নানা প্রতিকূলতা থেকে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ধীরে ধীরে এটি অর্জন করতে পারে। ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী একজন নবীন সাংসদ।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনে তিনি আওয়ামী লীগের ৩১ তম সংসদ সদস্য। পার্লামেন্টে যার সিরিয়াল নাম্বার ৩৩১। মানে নবীনদেরও নবীন। এতোদিন ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
একজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে তিনি কি কি অবদান রেখেছেন তা আমাদের জানা নেই। এমনকি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি বাংলাদেশে কি কি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন, তাও আমাদের জানা নেই। বলা যায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবেই তিনি ছিলেন একজন আনাঢ়ি প্রতিমন্ত্রী। তেমন একজন আনাঢ়ি ব্যক্তিকে স্পিকারের মত একটি সাংবিধানিক পদে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাঁকে স্পিকার নির্বাচন করাটা একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। স্পিকারের মত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকেও আমরা খেলনা বানিয়ে ফেলতে চাই।
একজন পুতুল স্পিকার দিয়ে কখনোই সংসদীয় গণতন্ত্রে তুমুল শক্তিশালী কার্যকর বিরোধীদল নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যদিও আমাদের দেশে সংসদে বিরোধী দল অকার্যকর। কিন্তু ভবিষ্যতে সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে স্পিকার হওয়া উচিত একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান দিয়ে। যিনি সংসদকে তাঁর বলিষ্ঠ নের্তৃত্ব দিয়ে কার্যকর করে তুলতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী'র প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, স্পিকার পদ পাওয়ায় জন্যে আপনার বিবেচনায় ওনার দুটো যোগ্যতা সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
প্রথমটি হল ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী হল জনাব রফিকুল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে। রফিকুল্লাহ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের (প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন) একান্ত সচিব ছিলেন। আর দ্বিতীয় যোগ্যতা হল, ২০০৮-০৯ সালে আপনি যখন মঈন-ফকরুলদের প্রিজনে ছিলেন, তখন ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী আপনার পক্ষে একজন প্যানেল অ্যাডভোকেট ছিলেন। আদালতে আপনাকে জেল থেকে ছাড়ানোতে অভূতপূর্ণ সাফল্য হয়তো দেখিয়েছিলেন। আমরা জানি না, আপনি হয়তো জানেন।
স্পিকার হবার মত বাকী সকল যোগ্যতা ওনার আছে। কিন্তু সেই যোগ্যতা দিয়ে তাঁকে পাশ করে আসতে হবে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। ঝানু পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নিজেক পরিচয় করানোর পর কেবল সেই বিবেচনা আসতে পারে। কিন্তু তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য নয়।
তাই তাঁর সেই সুযোগ কোনো দিন আসবে কিনা আমরা জানি না। ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার হিসেবে পেলে বাংলাদেশ নতুন সংকট আমদানি করবে বলে আমার ধারণা। স্পিকারের মত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও পুতুল আর আনুগত্যের দাসত্বে নিমজ্জিত হবে। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদটি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রী'র পর তৃতীয় সর্য়োচ্চ পদমর্যদা। সেই স্পিকার পদটিকে এভাবে মর্যাদাহানী কোনো শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না বলে মনে করি।
ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী-এর যথার্থ সম্মান রেখেই বলতে চাই, ভবিষ্যতে তিনি সংসদে নিজের দক্ষতা এবং কারিশমা দেখিয়ে স্পিকার হবার মত যোগ্যতা প্রদর্শন করে স্পিকার হলেই কেবল ওনাকে অন্তর থেকে স্বাগত জানাতে পারতাম। কারো দাক্ষিণ্য নিয়ে কিংম্বা আনুগত্য নিয়ে রাষ্ট্রীয় পদে শপথ পালন করার বিষয়টি শপথ না মেনে চলার মত অপরাধের সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে যুক্ত।
সংসদীয় গণতন্ত্রে বাংলাদেশ আরেকটি ভুল পথে হাঁটার রাস্তায় রওনা করল। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।