সিএজি থামলো একটা চা দোকানের সামনে। একটাই চায়ের দোকান। লোকজন নেই। একমাত্র খদ্দের যে ছিল সেও বিড়ির বাটটা ছুড়ে ফেলে সাইকেলের প্যাডেলে পা রাখলো। আমার সঙ্গে কাটা রাইফেল।
দু’কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। কি যে চমৎকার সময়! অগ্রাহায়ণ মাস। চলছে হেমন্ত কাল। হিম থেকে হেমন্ত। মানে সামনে শীত আসছে।
মাঠে পাকা ধান। বেশির ভাগ েেতরই ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। নবান্ন। নতুন ধান কৃষকের ঘরে। আসার সময় সিএনজি মাড়িয়ে এসেছে গ্রামের বধুদের রাস্তার উপর শুকাতে দেওয়া নাড়া।
মানুষের মেজাজ মর্জিতে এক ধরনের শীথিলতা, কোন চরম পন্থা নেই। প্রকৃতিই যেন মানুষকে এমন করে দিয়েছে। নেই প্রচন্ড গরম বা হাড় কাঁপানো শীত। শীতের সোয়েটার গায়ে দেয়ার ঝামেলানা ্েনই আবার ঘাম ঝরানোর মতো গরমও নেই। কেন যে মানুষ শীতে বেড়াতে বের হয।
এর চেয়ে ভাল সময় কী আর আছে? দিন ছোট হয়ে আসছে। সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা জমে পাড়াগুলোকে ঘিরে। তাই তো লোকে বলে-
অগ্রানের বেলা শুধু হেলা ফেলা
যদি হয় কাত এসে যায় রাত।
শীতে ধুলোবালি নাকাল করে ফেলে। ধুলোর দৌরাত্ম এখনো তেমন বাড়ে নি।
জলাভুমি তে কিছু শাপলা ফুটে আছে। পাশের ক্ষেতে পায়ের পাতা ভেজানো পানিতে আটকে গেছে কচুরিপানা। তাতেই ফুল ফুঠিয়েছে কুচুরিপানাগুলো। সিএনজিতে বসে দেখা চলমান দৃশ্যগুলো এখনো চোখে ভাসছে; ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করছে কৃষক। কিছু কিছু ক্ষেতে কদু গাছ, টমেটো, শিমের চারা গজিয়েছে।
লাল শাক আর কদু গাছের অদ্ভুত সন্দুর লালসবুজ রং আচ্ছন্ন করেছে প্রকৃতিকে। যেসব জমি থেকে এখনো পানি নেমে যায় নি সেই হাটু পানিতে মাছ ধরতে নেমেছে দুরন্ত ছেলেরা। ঘরের একেবারে ছোটটিও বাদ যায় নি এই বিশাল কর্মযজ্ঞ থেকে। পাছে বড় ভাইকে হারিয়ে ফেলে তাই তার সারাদিনের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পোশাক হাফ প্যান্টটিও আনার ফুসরত পায় নি। বড় ভাইয়ের খুইয়ার পাশে পাশে সেও খালু ধরছে মাছ রাখার জন্য।
আর তার ক্ষুদে রিভলবারটা অচেতনভাবেই তাক করা আছে ভূমির দিকে।
নদীর ধারে কাশফুল রয়ে গেছে এখনো কিছু কিছু। সিএনজিতে চড়ার আগে নদীতে কাটাতে হয়েছে দু’ঘন্টা। দেখলাম পানকৌড়িগুলো স্টাচ্যুর মতো দাঁড়িয়ে আছে নদীর মাঝখানে পোতা বাঁশের ডগায়। এরা মাছ খেয়ে বাঁচে।
কাটা রাইফেল নড়েচড়ে উঠলো। হাত নেড়ে সিগারেট নিয়ে দোকানদারকে বলল, হাইয়া লই। মানে ম্যাচ একটু পরে দাও। আগে চা শেষ করি। নিজ গ্রামে এসে কাটা রাইফেল, আমার বন্ধু, কথাবার্তায়ও পরিবর্তন এনেছে।
খাইয়া হয়েছে হাইয়া। হ ধ্বনির প্রতি মানুষের যে কেন এতো টান। বোধ হয় এটা সবচেয়ে সহজে উচ্চারণ করা যায়। দুই ঠোঁট চেপে ধরার প্রয়োজন হয় না। জিহ্বা তালুতে ঠেকাতে হয় না।
তাই নোয়াখালী তে মেয়ে বলে, ‘বাবা হানি (পানি) আইনচি। ’ প্রাইভেট মাস্টার বলে, ‘কিরে সবুইজ্জা তুই হরচ্চা (পড়ছ না)’। চট্টগ্রামে বাবা বলে, ‘কিরে অডা তোর হাম হাইজ নাই, বাইরে বাইরে গুরদ্দে’।
কাটা রাইফেল আয়েস করের সিগারেট ধরিয়েছে--নামটা ওর কাটা রাইফেলই এ নাম ছাড়া তাকে অন্য কোন নামে খুঁজে বার করা সহজ নয়। ওর পীঠে থাবড়া দিয়ে বললাম, কী দারুন প্রকৃতি।
হেমন্ত যে এতো সুন্দর না আসলে জানতাম না।
কাটা রাইফেল একমুখ ধোঁযা ছেড়ে বলল, সিজ ফায়ার চলছে।
কাটা রাইফেল একটু ্যাপা আছে। তার শব্দভান্ডারে যুদ্ধ ভিত্তিক শব্দের আগ্রাসন রয়েছে। তার কথার প্রথমে কিছু বোঝা য়ায় না।
অন্তুত পাঁচ-সাতটা বাক্য শেষ না হলে। তাই বললাম,
বলিস কী? তবে যুদ্ধ-টুদ্ধ হচিছলো নাকি। কে কোন পক্ষে?
মানুষ বনাম প্রকৃতি
কিসের সাথে কি। তোর মাথাটা আউলা।
গরম কালে প্রকৃতি ভারী মেশিন গান নিয়ে নামে।
কী রকম? সে গুলিতে মানুষ মরে?
মেশিন গানের গুলি রেনজ সল্প। তারপরও দু-একজন মরে।
কীভাবে?
হিট স্ট্রোকে।
অ আচ্ছা। আমি দীর্ঘ নিঃস্বাস নিলাম।
প্রকৃতির আর কী অস্ত্র আছে?
জলকামান। বর্ষাকালে ওই দিয়ে আক্রমণ চালায়।
আর শীতকালে?
স্নাইপার রাইফেল। অনেকদূর যায় নিঁখুত নিশানা। সেইজন্যই উত্তরাঞ্চলে এ সময় এতোলোক মরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।