ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, ইসলাম মেনে চলতে চেষ্টা করি এবং এই বিষয়ে প্রচারনা চালাতে পছন্দ করি। ধর্ম নিয়ে ব্যবসাকে প্রচন্ড ঘৃনা করি। (লেখাটি গতকাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্ত ইন্টারনেট বিরম্বনায় আজকে দিতে হলো। গতকাল আমাদের শহরে বাংলালিংক নেটওয়ার্ক মিসিং ছিলো রাত দুটো পর্যন্ত।
)
চাঁদ দেখা নিয়ে আবারো আমাদের মধ্যে সেই পুরনো কাসুন্দীর উদ্ভব ঘটেছে। অনেক ভাইরা পেরেশান হয়ে গেছেন কি করে সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে রোজা এবং ঈদ করা যায় তার ব্যবস্থা করতে। ভাবখানা এমন যে, কেবল চাঁদ দেখা আর ঈদ করার জন্যই সৌদি আরবের প্রয়োজন আর বাদবাকি বিষয়ে তাদের থেকে উপদেশ নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং চাঁদ দেখার এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশে যারা বেশি পরিমানে বিতর্কে লিপ্ত তাদের বেশির ভাগই মাজার পুজারী সিন্নি গ্রুপের কতিপয় পীরের অনুশারী। যারা সৌদি আরবের ভালো বাসার চাইতে নিজেদের পীরের উক্তিকে কোরআনের বানীর মতো অলংগনীয় বলে মনে করছেন।
মুরিদ শব্দের অর্থই বোধ হয় চোখ বন্দ করে পথ চলা। তারা যদি সৌদি আরবের অনুকরনে মাজার ব্যবসা থেকে সরে আসতো তাহলে কতই না ভালো হতো। ভাবনার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে অনেক দ্বীনদার ভাইরাও ফেতনায় জড়িয়ে গেছেন। তারাও তাদের লেখা এবং বক্তব্যে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করছেন। এই সকল ভাইদের প্রতি আমাদের নসিহাত হলো- একটু ভাবুন তার পরে লিখুন।
অনেকে দাবি করছেন যে, কোন কোন দেশে চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর পাওয়ার পরে রোজা ছেড়ে দেওয়া কি বৈধ। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে আপনি খবর পেলেন কিভাবে ? তিনশ বছর আগের লোকেরা কিভাবে খবর পেতো ভাবুন তারপরে এই বিষয়ে বিতর্ক করুন। আজকে আপনার হাতে মোবাইল আছে, ইন্টারনেট আছে, টেলিভিশনের মাধ্যমে দুনিয়ার অন্য দেশের খবর জানতে পারছেন। অথচ মাত্র দুশো বছর আগে একই দেশের মানুষ অন্য এলাকার খবর জানতে পারতো না। তখন ফতোয়া একরকম ছিল, আর এখন ফতোয়া আরেক রকম হবে এমটি ভাবার কারণ কি।
মহাকাশে অবস্থানরত মানুষরা চব্বিশ ঘন্টাই চাঁদ দেখতে পায়। তারা রোজা কিভাবে রাখবে শুনি। মহকাশের অভ্যান্তরে যারা আছেন তাদের জন্য কি ফতোয়ায়ে আলমগীরে তে কোন তথ্য আছে ? থাকলে শেয়ার করুন তো। ফতোয়া আলমগীরিতে আছে বলেই কি তা অবশ্যই পালণিয় ?
প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত হচ্ছে চাঁদ দেখে রোজা রাখা অথবা নিকটস্ত কোন ব্যক্তিদের স্বাক্ষের ওপর ভর করা। একবার ভাবুন তো।
আজকে রমজানের রোজা বিষয়ে যেসকল ফতোয়া নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে তার যুক্তিকত কতটুকো। হযরত আবু হানিফা (রহ) যে ফতোয়া দিয়েছেন সেটা তার ছাত্ররা পরিবর্তন করে নিয়েছেন। ইমাম সাহেবের অনেক রায় পরবর্তিতে তার সুযোগ্য ছাত্রদের হাতে পরিবর্তিত হয়েছে। আপনাদের জানা উচিত যে, সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহর স হুকুম বুঝতে এতটুকোও ভুল করেননি। তারা চাদঁ দেখে রোজা রেখেছেন, চাঁদ দেখে রোজা ভেংগেছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস রা কে একজন বললেন যে, সিরিয়াবাসী চাঁদ দেখেছেন এবং অন্যরা রোজা রাখার স্বিদ্ধান্ত নিযেছেন। ইবনে আব্বাস বললেন যে, তাদের চাঁদ দেখায় আমাদের জন্য কোন ফায়দা নেই। আমাদের কে চাঁদ দেখতে হবে। তিনি সেই ফতোয়া অনুযায়ী রোজা রেখেছেন। তাকে নিশ্চিত করা হলো যে, মুয়াবিয়া রা রোজা রাখছেন।
তিনি তার পরেও সেই মতের ওপর রইলেন। এখানে বুঝার বিষয় হলো যে, মুয়াবিয়া রা নিজেও একজন ফকিহ। হুজুর স এর হুকুম বুঝতে আমরা ভুল করতে পারি, কিন্ত সাহাবাদের সম্মলিত জামায়াত কখনো ভুল বুঝতে পারে না।
এই বিষয়ে সৌদি গ্রান্ড মুফতি বলেন- ইবনে আব্বাস -রাদিয়াল্লাহু আনহু- থেকেপ্রমাণিত, কুরাইব তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, শাম দেশের লোকেরা জুমুআর দিন রোযা রেখেছে। ইবনে আব্বাস বললেন : আমরা চাঁদদেখেছি শনিবার, আমরা যতক্ষণ না চাঁদ দেখব রোযা রাখব না, অন্যথায় ত্রিশ দিন পূর্ণ করব।
তিনি শামবাসীদের চাঁদ দেখার উপর আমল করেন নি, যেহেতু উভয় দেশের মাঝে দূরত্ব অনেক বেশী এবং উভয়ের উদয়স্থলও ভিন্ন। তাঁর দৃষ্টিতে এটা ইজতেহাদের বিষয়। ইবনে আব্বাস এবং তার অনুসরণ করে যারা বলেছেন, নিজ দেশের সাথে রোযা এবং নিজ দেশের সাথে ইফতার করার জন্য, তাদের মতই আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
[শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ, মজমু ফাতওয়া ওয়ামাকালাত মুতানাওয়েয়াহ]
যুক্তির খ্যাতিরে ধরে নেওয়া হলো যে, সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে রোজা রাখলে লাইলাতুল কদর ও অন্যান্য আনুসাংগিক বিষয়ে সমষ্যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু আজকে থেকে দুশো বছর আগে যদি এমনটি ভাবা হতো তাহলে কি করে বুঝা যেত যে সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে।
কোন ব্যক্তির পক্ষে চাঁেদর খবর দেওয়াতো সম্ভব ছিল না। তাহলে আমরা কি করতাম। আমরা অবশ্যই সেই ফতোয়ার দিকে ফিরে যেতাম যেটা ইবনু আব্বাস রা দিয়েছিলেন। চাঁদ দেখে রোজা রাখ। হাদিসের এই অর্থটি অনেকে ভুল ভাবে নিয়েছেন যে, চাঁদ দেখার মানে হচ্ছে যে কোন জায়গায় চাঁদ দেখা।
অথচ শরীয়াত প্রত্যেকটি হুকুমকে ইন্ডিভিজুয়ালী যেমন বর্ননা করে ক্ষেত্র বিশেষ সম্মলিত ভাবেও বর্ননা করে। কিন্তু এখানে রোজাকে একটি ব্যক্তিগত ইবাদত হিসেবে উল্লেখ্য করা হচ্ছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে চাঁদ দেখতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তারা কতুগুলো ফতোয়া গ্রন্থের উদ্ধৃুতি দিয়ে বিষয়টি আরো জটিল করে নিয়েছেন।
১. যে কোন একটি দেশে নতুন চাঁদের উদয় প্রমানিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরন জরুরী হয়ে পড়ে [উৎস: আল মুখতার ১ম খন্ড ১২৯ পৃঃ / ফতহুল কাদীর (শেরহে ফাতহুল কাদীয়সহ) ১ম খন্ডঃ পৃ ২৪৩/মারাকীন ফালাহ পৃঃ ৫৪০-৫৪১/ আল-বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০]
২. আর উদয়ের স্থান ও সময়ের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই । (উৎসঃ কাদী খান ১ম খন্ডঃ পৃঃ ১৯৮/ মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড পৃঃ২৩৯ / আল মুখতার ১ম খন্ড পৃঃ ১২৯ আল-ফাতওয়া আল হিন্দিয়াহ ১ম খন্ড, পৃঃ১৯৮/ আল বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০/ ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড পৃঃ ২৪৩/রদ্দুল মুহতার (শামী) ২য় খন্ড পৃঃ ৩৯৩)
৩. যদি পৃথিবীর পশ্চিমাংশের বাসিন্দারা রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখেন তাহলে তাদের এ দেখাতেই পূর্বাংশের লোকদের উপর (রোজা ও ঈদ) ওয়াজিব হয়ে যাবে (উৎসঃ আল-বাহুরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০ / মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড ২৩৯ পৃঃ আল হিন্দিয়াহ (ফাতোয়ায়ে আলমগীরী) ২য় খন্ড ১৯৮-১৯৯ পৃঃ।
ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড ২৪৩ পৃঃ। বাজাজিয়াহ ৪/৯৫)
অন্যদিকে দেওবন্দ মুরব্বিদের ফতোয়াও সেই সকল কিতাবের হাওলা ব্যতিত আর কিছু নয়। দেখুন-
=>উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও গবেষক আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর ভাষ্যঃ "এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য সকল শহর বাসীদের জন্য গ্রহণীয় হবে। ঐ শহরগুলোর সঙ্গে চাঁদ দেখা শহরের যত দুরত্বই হোকনা কেন। এমনকি সর্ব পশ্চিমের চাঁদ দেখার সংবাদ সর্ব পূর্বের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পৌছলে ঐ দিনই তাদের উপর রোযা রাখা ফরয হবে।
" [বেহেশতী- জেওর, খন্ড-১১, পৃঃ-৫১০]
আল্লামা রশীদ আহমদ গাংগুহী (রহঃ)-এর ভাষ্যঃ "ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মতানুসারে রোযা রাখা ও ঈদ করার ব্যাপারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। প্রাচ্যবাসীর দেখা দ্বারাই পাশ্চ্যাত্যবাসীর উপর আমল জরুরী হবে। " [ফাতওয়া-ই-রশিদিয়া, পৃঃ-৪৩৭]
...
দারুল উলুম দেওবন্দ-এর গ্রান্ড মুফতি আযিযুর রহমান সাহেব ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ-এ লিখেছেনঃ "হানাফী মাযহাব মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহনীয় নয়। যদি কোন স্থানে শা’বান মাসের ২৯ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখা যায় এবং শরয়ীভাবে তা প্রমাণিত হয় তখন ঐ হিসেবেই সকল স্থানে রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে। যে স্থানের লোকেরা সংবাদ পরে পাওয়ার কারণে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রোযা শুরু করেছে তারাও প্রথমদের সঙ্গে ঈদ করবে এবং প্রথমের একটি রোযা কাযা করবে" [ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃঃ-৩৯৮]
হাট হাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান সাহেব তার রচিত মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ তানযীমুল আশ্তাতে।
যার ভাষ্য নিম্নে উদ্ধৃত হলঃ "চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গ্রহণীয় নয়। শামী কিতাবে এমনটাই রয়েছে। এটাই আমাদের (হানাফীদের) রায়। মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা। অতএব, কোন স্থানে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সর্বত্রই আমল অত্যাবশ্যকীয় হবে।
" [তানযীমুল আশ্তাত, খন্ড-১, পৃঃ-৪১]
এসব ফতোয়া ছাড়াও অধুনা দেওবন্দের কয়েকজন মুরব্বির উদ্ধৃুতি দিয়ে সেই বিয়টিকে আরো প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেওবন্দের মুরব্বিরা ফতোয়া প্রদানের সময় প্রাচিন কোন কিতাবকে ফলো করতেন। তাদের কাছে ইজতেহাদের দরজা প্রায় বন্দ রয়েছে। ফতোয়া প্রদানের সময় তারা সমষ্যাকে গভির ভাবে চিন্তা করার চাইতে প্রাচিন কোন কিতাবের হাওলা দিয়ে দেওয়াকে জরুরী মনে করেন। এ গুলো ফেতনা থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক হয়।
কিন্ত এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গবেষনার দরকার হয়ে পড়ে। চাঁদ দেখার সম্পর্কে কয়েকটি প্রাচিন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়েছি যাতে পাঠকরা বুঝতে পারেন যে, তারা কি উদ্ধেশ্যে এই ফতোয়া দিয়েছেন।
এসব ফতোয়ার ভাষা এবং উদ্ধেশ্য নিয়ে আপনি হাজারো প্রশ্ন তুলতে পারবেন কিন্তু উত্তর খুজে পাবেন না। যে সময় ফতোয়া গ্রন্থগুলো রচিত হয়েছে তখন সারা বিশ্বের খবর এক জায়গায় থেকে জানার নুন্যতম কোন সুযোগ ছিলো না। তাহলে তারা কিভাবে এমন ফতোয়া দিতে পারেন যে, প্রাচ্যের চাঁদ দেখা পুর্বের লোকদের জন্যও জরুরী।
প্রাশ্চ্যের লোকদের চাঁদ দেখার খবর জানার কোন সুযোগ তখন কি ছিল। অতএব তারা পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত বলে গোটা পৃথিবীকে বুঝাননি। তাদের উদ্ধেশ্য ছিলো যে জনপদে লোকেরা বসবাস করবে সেখানের কেউ যদি চাঁদ দেখে এবং তার স্বপক্ষে স্বাক্ষী পাওয়া যায় তাহলে গোটা জনপদের সবার জন্য রোজা রাখা ফরজ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে এত বিতর্ক করার কোন সুযোগ তৈরি হতো না যদি বর্তমান দুনিয়ায় যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এতটা আপডেট না হতো। আজকে যেসব ব্যক্তিবর্গরা সৌদি আরবের চাঁদ দেখার খবরের ওপর ভর করে মুসলিম উম্মাকে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে রোজা রাখার উপদেশ দিচ্ছেন তাদের কে জিঞ্জেস করুন যে, সৌদি আরবের চাঁদ দেখার খবরের সততা তুমি কিভাবে নিলে।
কোন গায়ের ব্যক্তির যান্ত্রিক কথা বা অদৃশ্য কোন বস্তুর বক্তব্য স্বাক্ষ্য হিসেবে ইসলামী শরীয়াতে গ্রহণ যোগ্য নয়। যারা টেলিফোনে বিবাহ করেন তাদের বিবাহকে যে কারনে নাজায়েজ বলা হয়, সেই একই স্বাক্ষ্য আইন এই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আশা করছি বিষয়টি আমাদের বুঝে আসছে।
কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে, ইমাম আবু হানিফা র তাহলে এমন ফতোয়া কেন দিলেন। এর দুটি উত্তর হতে পারে।
১. ইমাম আবু হানিফা র সমগ্র দুনিয়ার কোথাও শব্দটিকে রূপক অর্থে নেওয়া যেতে পারে যে, এতে তিনি সমগ্র এলাকা বুঝিয়ে থাকবেন। কারণ ইমাম আবু হানিফার উক্তি অনুযায়ী দুনিয়ার পশ্চিম অংশে কেউ চাঁদ দেখলে পুর্বাংশের লোকদের কেও রোজা রাখতে হবে। এখানে আবারও সেই প্রশ্ন এসে হাজির হলো যে, গোটা দুনিয়াতে পশ্চিম অংশের চাঁদ দেখার খবর পৌছবে কিভাবে আর পৌছেও যদি ততক্ষনে পুর্বাংশের লোকজনের ঈদ হয়ে যাবে। এই হিসেবেও আমরা ইমাম আবু হানিফার বক্তব্যের অর্থ কোন দেশ ভিত্তিক ভৌগোলিক সিমানা ধরতে পারি।
২।
অসম্ভব কিছু নয় যে, যে অবস্থায় ইমাম সাহেব ফতোয়া দিয়েছেন তখন তার সমানে চাঁদ দেখা সম্পর্কিত ইবনু আব্বাসের হাদিস মজুদ ছিলনা। হাদিসের হাফেজরা যখন বিভিন্ন দেশে দেশে ঘুরে হাদিসগুলো কে একত্রিত করেন তখন পর্যন্ত ইমাম আবু হানিফা বেচেঁ ছিলেন না। আমাদের বুঝে নিতে হবে যে, পর্যাপ্ত হাদিস সামনে না থাকাতে তিনি ইজতেহাদ করেছেন। অথচ ইবনু আব্বাসের সহিহ হাদিসটি আসার পরে এই বিষয়ে ইজতেহাদ করার চিন্তাও করা যায় না। যে কোন ব্যক্তি মাত্র চিন্তা করতে বাধ্য হবেন যে, রোজার হুকুম বিষয়ে মহান আল্লাহ মানুষকে পেরেশানীতে ফেলতে চাননি।
তাই তার হাবিবকে দিয়ে তিনি অত্যান্ত সহজ ও সরল পথ দেখিয়েছেন। আমাদের কাছে অবাক লাগে যে, অনেকে দাবি করছেন যে, তাহলে লাইলাতুল কদর তো ভিন্ন ভিন্ন দিনে হয়ে যাবে যেটা সহিহ হাদিসের বিপরিত।
আসলে এই সকল ভাইরা প্রযুক্তির ছোয়া নিয়ে সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে রোজা তো রাখতে চান কিন্তু প্রযুক্তির কল্যানে যে সকল সত্য মানুষের সামনে হাজির হয়েছে সেগুলো কে এক প্রকার অস্বিকার করে বসেন। মহাকাশের বাসিন্দাদের কাছে দিন রাত বলে যদি কোন শব্দ না থাকে তাহলে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে আপনি সময়ের আবদ্ধে কিভাবে আটকাতে চাইছেন। তিনি যখন চাইবেন বান্দাকে তার প্রাপ্য হক দিয়ে দিবেন।
কোন অঞ্চলে ফজরের আযান হলে অন্য অঞ্ছলে হয়তো মাগরিবের আযান হবে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক প্রত্যেকের অবস্থান বুঝে তাদের জন্য প্রতিদান নির্ধারন করবেন। আল্লাাহ যদি চান তাহলে দশটি রাতকে কদর বানিয়ে নিতে পারেন। বান্দার প্রচেষ্টাকে আল্লাহ পাক মুল্যায়ন করেন তাদের ভৌগোলিক সিমানাকে না।
আরো একটি বিষয় ভাবুন।
সৌদি আরবে যখন ফজরের নামাজ হয, তখন আমাদের জন্য কি ফজরের নামাজ পড়ার সুযোগ থাকবে। আমরা যখন তাহাজ্জুত নামাজে কন্দনরত থাকি, আমেরিকার মুসলামনরা তখন দিনের আলোতে কাজে কর্মে ব্যস্ত সময় কাটায়। তখন কি কেউ ভাবেন যে, মধ্যরাতে আমাদের ওপর কৃত ওয়াদা আল্লাহ পাক কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন। সাবইতো আর তাহাজ্জুতে নেই। আমরা যখন ইফতার করি সৌদিরা তখনও রোজা মুখে।
তাহলে আমরা কেন সৌদি আরবের সাথে তালি মলিয়ে নামাজ এবং ইফতার করতে পারিছিনা ? সময়ের ব্যবধান কে যদি অস্বিকার করা না হয়ে তাহলে কেবল চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে এই সময়ের এই ব্যবধান কে কোন যুক্তিতে অস্বিকার করা হচ্ছে ? মুসলিম উম্মার ঐক্য এভাবে হয় না। উম্মার ঐক্য হয় একজনের ব্যাথায় অনের অন্তুরে আঘাত লাগার মধ্য দিয়ে। আকিদা বিশ্বাসের ঐক্য হচ্ছে জরুরী। অন্যগুলো নয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।