রংপুর আমাদের মহাবিশ্বের উদ্ভব হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি বছর আগে আর পৃথিবী সহ আমাদের সৌর জগতের উদ্ভব হয়েছিল প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে । পরবর্তী ১০০ কোটি বছরে আমাদের গ্রহটি প্রাণের উৎপত্তির মত অবস্থায় এসেছে । এখন পর্যন্ত পাওয়া সাক্ষ্য প্রমাণ অনু্যায়ী প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছরের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক কোষী আদিম প্রাণ থেকে উদ্ভব হয়েছে বর্তমানের মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীর । মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে বিরোধ চিরকাল বিদ্যমান। সৃষ্টি রহস্য নিয়ে আদিকালের মানুষ ভেবেছে,বর্তমানের মানুষও ভেবে চলেছে।
বস্তুত উদ্দেশ্য এক তবে পদ্ধতি ভিন্ন,একটি চিন্তা অপরটি গবেষণা। পৌরাণিক কাহিণী সৃষ্টি তত্ত্ব সর্ম্পকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করে। বেশির ভাগ পৌরানিক কাহিণীর মতে মানুষ কে প্রভু মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে এই মতে পৌছেছেন যে জীব সৃষ্টি হতে হলে অত্যাবশকীয় পুর্বশর্ত থাকতে হবে । এগুলা হল ১)প্রয়োজনীয় পানীয় জল ২)উপযোগী জলবায়ু ৩)প্রয়োজনীয় খাদ্য ।
তারা বলেন কার্বন, হাইড্রোজেন,সালফার,অক্সিজেন,নাইট্রোজেন,ফসফরাস ও আরও ডজন খানেক উপাদান জীব সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন। প্রচলিত বিজ্ঞান মতে বদ্ধ জলাশয়ে আঠালো দ্রব্যের ন্যয় এক কোষ জাতীয় প্রানীর প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল। এগুলা কে মানুষের আদি পুর্ব পুরুষ বলা হয়। এ জীবন্ত কোষ গুলোর কিছু সমুদ্রের তলদেশে আশ্রয় গ্রহন করে, ফলে সেখানে শেওলা জাতীয় জিনিসের সৃষ্টি হয়। আবার কিছু পানির উপর ভাসতে লাগে,আর এ থেকেই মাছ ও মাছ জাতীয় প্রানীর উদ্ভব ।
হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে জীবন্ত প্রানীর মধ্যে সামুদ্রিক শেওলা ,মাছ জাতীয় প্রানী দেখতে পাওয়া যায়। ক্রম বিকাশের সুত্র ধরে একদিন উভচর প্রানী ও উভজ গাছপালার জন্ম হয়। আর এই উভচর প্রানী থেকে একদিন সরীসৃপ জাতীয় যেমন সাপ,টিকটিকি ইত্যাদি প্রানীর সৃষ্টি হয়। সরীসৃপ থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রানীর উৎপত্তি হয়েছে। মোটামুটি ভাবে কিছু পাখী ও কিছু স্তন্যপায়ীর বিবর্তন জীব জগতে ক্রম বিকাশের ধারায় একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাড়ায়।
মনে রাখা প্রয়োজন যে এ সব বিকাশ ও পরির্বতন রাতারাতি ঘটে নি । এগুলা লক্ষ্য লক্ষ্য কোটি কোটি বছরে অলক্ষ্যে ঘটে যাওয়া ক্রম বিকাশের ফলশ্রুতি। প্রকৃতির এক মাত্র কাজ পরিবর্তন বা রুপান্তর। একেই বিবর্তন বলে।
বিভিন্ন বিষয়ে প্রাকৃতিক পরির্বতনে সময়ের ব্যাবধান যথেষ্ট ।
প্রকৃতি দুধ কে দই ও তালের রস কে তারি করতে কয়েক ঘন্টা সময়ের মধ্যেই পারে । কিন্তু রেডিয়াম কে সীসায় পরিনত করতে প্রকৃতির সময় লাগে লাখ লাখ বছর। এই রকম কার্বনাদি জৈব পদার্থ হতে এক দানা প্রোটোপ্লাজম তৈরি করতে প্রকৃতির সময় লেগেছে প্রায় একশত কোটি বছর । এভাবে ক্রমবিকাশের ধারায় স্ত্রী জাতীয় প্রানীরা প্রানী জগতে প্রথম বারের মত ভ্রুন ও সন্তান ধারন এর ক্ষমতা অর্জন করে । এ জাতীয় স্ত্রী প্রানীরা সন্তানদের স্তন্য পান করাতে এবং সন্তান জন্মাবার পরে বাচ্চাদের যত্ন নিত ,কিন্তু তা ছিল নিতান্তই সাময়িক ব্যাপার।
এভাবে স্তন্যপায়ী প্রানীরা পরিবার জীবন শুরু করে । বিভিন্ন প্রকারের নরবানর এ সব স্তন্যপায়ীদের বংশধর বলে বিজ্ঞানীরা মত দিয়ে থাকেন । ক্রমে ক্রমে পিছনের পায়ে ভর দিয়ে তাদেরই কিছু সংখ্যক সোজা হয়ে দাড়াতে শেখে । অন্যান্য প্রানীর ন্যয় নরবানর গুলো হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করত না, এরা হাটতে ও দাড়াতে পারত । বিজ্ঞানীদের মতে এরাই প্রাথমিক পর্যায়ের আধুনিক মানুষ ।
বিজ্ঞানীরা সাদৃশ্য দেখিয়ে বলতে চান যে আজ ও মানব শিশু জন্মের পর হাটতে পারে না । তাকে হাটা ধীরে ধীরে শিখতে হয়। । এ থেকে বোঝা যায় যে মানুষ নর বানর জাতীয় প্রানী থেকে খুব বেশী আগে পৃথক হয় নি। বিজ্ঞানীদের মতে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছে দেড় থেকে দুই লাখ বছর আগে ।
মানুষ নিজেকে র্সবশ্রেষ্ঠ ভাবতে ভালবাসে । এই র্সবশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ এক সময় নিজেকে প্রশ্ন করে । । কে আমি? কোথা হতে এলাম?আর কেনই বা এলাম? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রচিত হয়েছে নানা ধরনের কল্পকাহিনী । প্রাচীন সব সভ্যতা গুলো তাদের তদানীন্তন সংস্কৃতি এবং জ্ঞান এর স্তর অনুযায়ী বিভিন্ন কাহিনীর জন্ম দিয়েছে ।
হিন্দু পুরান অনুযায়ী মহা প্রলয়ের শেষে এই জগত যখন অন্ধকারময় ছিল তখন বিরাট মহা পুরুষ পরম ব্রক্ষ নিজের তেজে সেই অন্ধকার দূর করে জলের সৃষ্টি করেন , সেই জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষিপ্ত হয় তখন এ বীজ সুর্বণ অন্ডে পরিনত হয়। অন্ডের মধ্যে ওই বিরাট মহা পুরুষ স্বয়ং ব্রক্ষা হয়ে অবস্থান নিতে থাকেন। তারপর ওটিকে বিভক্ত করে আকাশ ও ভূমন্ডল এবং পরর্বতীতে প্রাণ সৃষ্টি করেন । বাইবেল ও কোরান বলেছে যে সৃষ্টি কর্তা ছয় দিনে এই বিশ্ব ব্রক্ষান্ড সৃষ্টি তৈরী করেছিলেন । বাইবেল অনুযায়ী প্রথম দিনেই ঈশ্বর পৃথিবী এবং দিবস রজনী সৃষ্টি করেন আর এসব তিনি সৃষ্টি করেছিলেন ছয় হাজার বছর আগে ।
আবার চীন দেশের কাহিনী থেকে জানা যায় যে বিশ্ব ব্রক্ষান্ড শুরুতে একটা কাল ডিমের মত ছিলো । প্যান গু নামের একজন দেবতা তার কুড়ালের কোপে ডিমটিকে দ্বিখন্ডিত করেন এবং মহা বিশ্বকে সম্প্রসারিত হবার সুযোগ করে দেন । প্যান গু এর শরীরের মাছি ও উকুন থেকে পরে মানব সভ্যতার জন্ম হয়েছে । মানুষের উৎপত্তি নিয়ে এরকম হাজারো গল্প পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় ও র্ধম গ্রন্থে । বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের মনে এই ধারনা গুলা প্রথিত হয়ে আছে ।
এর সর্মথনে র্ধম গ্রন্থ গুলোর পাশাপাশি কয়েক জন দার্শনিক তাদের মতবাদ দিয়ে এইসব ধারনা গুলো কে সর্মথন দিয়ে গেছেন এবং যারা একটু স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতেন তাদেরকে নানাভাবে দমন পীড়ন করে গেছেন । বাইবেল অনুযায়ী ছয় হাজার বছর আগে এই বিশ্ব ব্রক্ষান্ড সৃষ্টি হয়েছে ,তারপর থেকে সব গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদির পাশাপাশি প্রকৃতিতে বিরাজমান সব কিছু ঠিক সেভাবেই আছে যেভাবে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। বদলায়নি একটুও, এভাবেই থেকে যাবে অপরির্বতিতভাবে অনন্তকাল । এই স্থির মহাবিশ্ব বা অপরির্বতনশীলতার দর্শনের নাটের গুরু হচ্ছেন আমাদের বিশ্ব জোড়া পরম পুজনীয় দার্শনিক দ্বয় প্লেটো এবং এরিস্টটল । দু জনেই স্থির মহা বিশ্বে বিশ্বাস করতেন ।
তাদের মতে বিশ্ব জগতের সব কিছুর পেছনে একটা উদ্দেশ্য ঠিক করা আছে এবং এই উদ্দেশ্যের মুলে রয়েছে অপরির্বতনশীলতা । সব কিছুর স্বভাব র্ধম জানাটাই নাকি বিজ্ঞান । মানব সভ্যতা তাদের এই স্থির জাগতিক দর্শনের বোঝা বয়ে বেরিয়েছে প্রায় দুই হাজার বছর । বাট্রান্ড রাসেল এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে এরিস্টটলের এই মতবাদ বিজ্ঞান ও দর্শনের জন্য পরর্বতীতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল । তার পরে যত বড় বড় বৌদ্ধিক এবং বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ঘটেছে তাদের সবাইকে কোন না কোন ভাবে এরিস্টটলের মতবাদ কে উৎখাত করে এগুতে হয়েছে ।
প্রাচীন কালের সাহিত্যেও এই কল্পনার ছড়াছড়ি । গ্রীস এবং তার আশেপাশের এলাকায় প্রাচীন লোক কাহিনীর চরিত্র গ্রিফিনের সাথে অদ্ভুত সাদৃশ্য পাওয়া যায় প্রোটোসেরাটপ নামের প্রাচীন এক ডাইনোসরের ফসিলের । হোমারের গল্পেও এক চোখা দৈত্য সাইক্লপের কথা লেখা আছে । ক্রীট দ্বীপের আশেপাশের এলাকায় অনেক বিশালকৃতির আদিম প্রানীর ফসিল পাওয়া গেছে । তাই অনেক গবেষক মনে করেন এ অঞ্চলের মিথ গুলোর সংগে এদের সর্ম্পক আছে ।
মুখ দিয়ে আগুন ঝরানো ড্রাগনের গল্প দিয়ে চীনা কাহিনী ভরপুর । পাশা পাশি রাখা ডাইনোসরের ফসিল এবং আমাদের র্পূব পুরুষদের কল্পিত ড্রাগনের মধ্যে মিল দেখে এটা মনে হওয়াই স্বভাবিক যে ডাইনোসর থেকেই ড্রাগনের কাহিনীর উৎপত্তি হয়েছে । বিখ্যাত চিত্র শিল্পী ভিঞ্চি ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তি । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ফসিল গুলো আসলে পৃথিবীর আদিম জীব দের নিদর্শন এবং পাহাড়ের গায়ে যে সামুদ্রিক প্রানীর ফসিল দেখা যাচ্ছে তার কারণ আর কিছুই নয় , এক সময় এই পাহাড় গুলো সমুদ্রের নিচে ছিল । তাকেই প্রথম বলতে শুনি যে বিশ্বব্যাপী নুহের মহাপ্লাবনের ঘটনা একটা অসম্ভব ঘটনা ।
সমস্ত পৃথিবী যদি পানির নিচে ডুবে যায় তাহলে এই বিপুল পরিমান পানি সরে গেল কোথায় । আর পৃথিবীর কোন এক স্থানে মহা প্লাবন হলে সেখান থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে ৮০ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশে প্লাবন ঘটা অসম্ভব । আর এই ফসিল গুলো কোনভাবেই বন্যায় ভেসে যাওয়া প্রানীদের দেহাবশেষ হতে পারে না ,কারণ সব কিছু বানের পানিতে ভেসে গেলে তাদের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এলমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কথা ,তারা সুগঠিত ভাবে মাটির স্তরে স্তরে সাজানো থাকতে পারত না । এখন আমরা আধুনিক ভুত্বাত্তিক গবেষণা থেকে জানতে পারছি যে বিভিন্ন সময়ে জলবায়ু পরির্বতনের কারণে সমুদ্রের পানির লেভেল ওঠা নামা করলেও এ ধরনের পৃথিবী ব্যাপী মহা প্লাবন আসলে কখনই হয় নি । ফেরাউনের কবর খুড়ে বিচিত্র সব জিনিস পাওয়া গেছে ।
নরবলি দেওয়া কঙ্কাল থেকে শুরু করে ৭০ ফুট লম্বা ১৪টি নৌকা পর্যন্ত । পরজন্মে রাজাদের দাসদাসী লাগবে তাই নরবলি,ধন দৌলত এবং আরও অনেক কিছু । এখনকার কাহিনীতে এ ধরনের কথা কেউ লেখে না । কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে পৃথিবীর আনাচে কানাচে সব জাতি গোষ্ঠীর মধ্যেই বহু রকমের সৃষ্টি তত্ব । এই তত্ব নির্ভর লোক কাহিণী এবং ধর্মীয় রীতিনীতির অস্তিত্ব দেখা যায় ।
দীর্ঘ কাল ধরে সঞ্চিত সামাজিক অভিজ্ঞতার সাথে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে আমরা তৈরী করেছি এই কাহিনীগুলো । আর তদানীন্তন সামাজিক নিয়ম কানুন গুলোকে তার সাথে বেধে দিয়ে বলা হয়েছে এতাই নিয়ম এতাই র্ধম এবং এক মাত্র জীবন বিধান । র্ধমের গুরুত্বপূর্ণ সংগা দিয়েছেন ডুরখীম, তিনি লক্ষ্য করেন যে র্ধমীয় বিশ্বাস ও আচার অনুষ্টানাদি বস্তুগত ও ভাবগত দুটি জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট । তিনি সেগুলোকে পবিত্র জগত ও অপবিত্র জগত এ দু ভাগে ভাগ করেছেন । পবিত্র জগত রহস্যে ঘেরা , তা অস্বাভাবিক ও ভাবাবেগ প্রবণ উপকথা ,পুরা কাহিনী ,রুপকথা ও কাল্পনিক জগত রুপে তা পরিচিতি লাভ করে ।
ঈশ্বর দেব দেবী সবই এই পবিত্র জগতের কাল্পনিক ছবি । অপর পক্ষে অপবিত্র জগত হচ্ছে প্রত্যাহিক জীবনের কর্মসুচী । পার্থিব জীবনের ব্যস্ততা এবং দৈনন্দিন জীবনের র্কম তৎপরতা । তার মতে, র্ধম হল পবিত্র জগত সম্পর্কিত বিশ্বাস ও তৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আচার অনুষ্টানাদি । তার মতে সমাজ ছাড়া র্ধম কল্পনা করা যায় না ।
র্ধম সমাজের সৃষ্টি ,এমনকি সমাজই র্ধম বা প্রভু । র্ধম প্রসংগে ম্যারেট বলছেন,অনুস্টান ও ক্রিয়া কলাপের মাধ্যমে র্ধম এসেছে,চিন্তার ফলে নয় । সমাজ জীবনে বিধি বিধান পালন,অনুশাসন, জীবন ব্যাবস্থা ,আর্থ সামাজিক ,রাজনীতিক এবং সাংস্ক্রিতিক বিষয়াদির পথ র্নিদেশ দেয়াই র্ধমের একটি সামজিক কর্তব্য । সব ক্ষেত্রে র্ধম মানব জীবনের সব সমস্যার সমধান দেয় না । র্ধম এমন কতগুলো বিশ্বাস ও আচার পদ্ধতি যা মানব জীবনের কিছু সমস্যা সমাধানে প্রয়াস পায় ।
র্ধম অসহায় জীবনের ফলশ্রুতি, র্ধম ব্যর্থতার গ্লানি বহন করে । ঈশ্বরে সে স্বান্ত্বনা খুজে পায় । ভাবাবেগ বা পক্ষপাত মুলক দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে র্ধমের বিজ্ঞান ভিত্তিক সংগা দেয়া যায় না । বিজ্ঞান বাস্তব যুক্তি র্নিভর এবং পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ফল । আর র্ধম হচ্ছে ব্যক্তিগত আচার
অনুভুতি,বিশ্বাস ,এবং সন্ন্যাস জীবন,আবার কখন ও বা সামাজিক অনুষ্টানাদি ।
প্রায়ই
দেখা যায় অনেকে নিজ র্ধম ছাড়া অন্য র্ধমকে সহ্য করতে পারে না । তারা র্ধমের
প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং স্বীয় র্ধমের শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করে । সমাজ পতিরা তাদের শোষণকে বৈধতা দেবার জন্য ভর করেছে র্ধমের উপর। একে পুজি করে সামাজিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শোষণকে বৈধতা দিয়েছে । আর সত্যিকারের জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা যেন সাধারণ মানুষ র্প্যন্ত না পৌছায় তার জন্য তৈরী করে রেখেছে বিভিন্ন নিয়ম ।
আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীসে বিজ্ঞান তার সঠিক গতিতেই এগুতে শুরু করেছিল কিন্তু প্লেটো এবং বিশেষ করে এরিস্টোটল সেই সময়ের দাস প্রথা ভিত্তিক নির্বতন মূলক সমাজ ব্যবস্থা কে গ্রহণ যোগ্যতা দেয়ার জন্য শক্তিশালী একটা ভাববাদী র্দশনের জন্ম দিলেন যার মুলে ছিল অপরির্বতনশীলতা এবং জীবের স্থায়ীত্ত্বের তত্ত্ব । আর এই স্থবির ধারনার উপর ভর করেই রোমান সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠল খ্রিস্ট র্ধম । কালের প্রবাহে মানুষের সৃজন শক্তি অজানাকে জানার কৌতুহল এবং বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন তাকে কল্পনা করতে শিখিয়েছে তেমনি আবার নতুন চিন্তা এবং আবিষ্কারের খোরাক ও যুগিয়েছে । ষোড়শ শতাব্দীতে কোর্পানিকাসের র্সূয কেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারনাটা হাজার হাজার ধরে টিকে থাকা টলেমীর পৃথিবী কেন্দ্রিক জগতের ধারণা এবং মধ্যযুগীয় র্ধমীয় এবং সামজিক স্থবিরতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিল । চার্চ ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারলেও র্সূয কেন্দ্রিক জগতের ধারনা কে মারতে পারলো না ।
বিজ্ঞান এগিয়ে গেলো । ১৮৫৯ সালে ডারউইন এবং ওয়ালেস যখন বির্বতনের তত্ত্বটি প্রস্তাব করলেন তখন চার্চ এর বিশপের স্ত্রীর মুখ থেকে যে আতংক বাণী বেরিয়ে এসেছিলো তা যেন আজও প্রাসংগিক । তিনি আর্তনাদ করে বলে ছিলেন বন মানুষ থেকে আমাদের বির্বতন ঘটেছে । আশা করি এটা যেন সত্যি না হয় । আর যদি তা একান্তই সত্যি হয় তবে চলো আমরা সবাই মিলে র্প্রাথনা করি সাধারণ মানুষ যেন এটা কখনই জানতে না পারে ।
আর ১৯০৫ সালে আইন্সটাইন তার সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রকাশ করলেন ,তখন যেন মানুষের বৌদ্ধিক বিকাশের চরম্ প্রকাশ ঘটল । প্রাচীন র্দশন এবং র্ধম তত্ত্ব গুলোর উপর যেন আকাশ ভেংগে পড়লো । যদিও পুরানো ধারণা সমূহের কোন ভিত্তি নাই । তবুও আমরা সেই পুরানো ধারনা ভিত্তিক সমাজেই বসবাস করছি । অনেক প্রাচীন প্রথাকেই জানছি এবং মানছি ।
আমরা এখনো বলি র্সূয উঠছে বা ডুবছে , পৃথিবী কেন্দ্রিকতার লেশ রয়ে গেছে সব খানে ,ভাষায় ,সাহিত্যে,রাজনীতিতে ,এবং সামাজিক রীতিনীতিতে ,অলৌকিকে বিশ্বাস রাখে এবং রাখে না এমন মানুষ সেকালেও ছিল এবং একালেও আছে । কিন্তু লৌকিকে বিশ্বাস রাখেনা এমন মানুষ সব যুগেই বিরল । কেননা বাস্তবতাকে অবিশ্বাস করার মানে নিজেকে অবিশ্বাস করা । র্বতমান যুগটি বিজ্ঞানের যুগ এবং যুক্তিবাদেরও । বিজ্ঞান পৃথিবীর বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ।
কারও অনুকম্পায় নয় । মানুষ বিজ্ঞানের কাছে ঋণী । কিন্তু সমাজে এমন এক শ্রেনীর লোক দেখতে পাওয়া যায় ,যারা হাতে ঘড়ি ,চোখে চশমা ,পকেটে মোবাইল নিয়ে মাইকে ,টিভিতে বক্তৃ্তা করেন আর বস্তুবাদ বলে বিজ্ঞান কে ঘৃণা এবং বস্তুবাদী বলে বিজ্ঞানীদের অবজ্ঞা করেন । অথচ তারা ভেবে দেখেন না যে ভাববাদীরা বস্তুবাদীদের পোষ্য । বিজ্ঞান মানুষ কে পালন করে ,কিন্তু র্ধম মানুষ কে পালন করে না বরং মানুষ র্ধমকে পালন করে এবং প্রতিপালনও ।
বিজ্ঞান কে কখনই র্ধমের মুখাপেক্ষী হতে হয় না । কিন্তু ইদানীং সব র্ধমকে বিজ্ঞানের ছায়াতলে আসতে দেখা যায় । কার র্ধম কতটা বিজ্ঞান সম্মত । কার র্ধমে কতটা বিজ্ঞান রয়েছে । কার র্ধমের উপর ভিত্তি কি কি আবিস্কার হয়েছে ।
এই নিয়ে চলছে প্রতিযোগীতা । র্বতমান যুগে বিজ্ঞান বিরোধী কোন শিক্ষাই গ্রহণীয় নয় । তবুও র্সবোচ্চ ডিগ্রী ধারী ব্যক্তিটিও বির্বতনকে মানেন না বা মানতে চান না । বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা বিজ্ঞান মনস্ক হচ্ছিনা বা মুক্ত মনের অধিকারী হতে পারছি না । তবে বাস্তবতা হলো সমাজ পরির্বতনশীল,কিছু কায়েমী স্বার্থবাদী লো্কের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও কালের প্রবাহে সমাজ পরির্বতিত হয়ে চলেছে,।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে কেউ থামাতে পারে নি এবং পারবে না । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।