বিশ্বটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্যই এত কথা বলি.. । নেশা যায় হোক না কেন তা খারাপ। বলা হয়ে থাকে প্রতিটি নেশার ফল হচ্ছে মৃত্যু। বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন আবিস্কারের নেশায় থাকে এটা ইতিবাচক কিন্তু অনেক নেতিবাচক নেশা আছে যা শুধু আপনাকে তলানিতেই নিয়ে যাবে। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে দিবে না।
আপনাকে আঁকড়ে রাখবে, অন্যরকম টান সৃষ্টি করবে। শিকড় গেড়ে দিতে চাইবে আপনার চারপাশে যেন আপনি নেশা থেকে ফিরে আসতে না পারেন।
-দোস্ত চল আজ ড্রিংকস করবো। অনেক মজা হবে।
অনেক শোনা যায় কথাগুলো।
ড্রিংকস করাটাকে স্মার্টনেস হিসেবে দেখি অনেকেই। এতে নাকি খারাপ কিছু নেই!!
একটা গল্প শুনুন-
অ্যালকোহলিক- খেজুর বা আঙ্গুর খাওয়া কি খারাপ?
স্কলারঃ অবশ্যই না। তাতো ভাল।
অ্যালকোহলিক- যদি আমি কিছু ঘাসপাতার সাথে খাই?
স্কলারঃ কোন সমস্যা নাই।
অ্যালকোহলিক- যদি তাতে পানি মিশাই?
স্কলারঃ কোন সমস্যা নাই।
খাও।
অ্যালকোহলিক- যদি এগুলাতে কোন সমস্যাই না থাকে তাহলে তুমি আমাদেরকে অ্যালকোহল খেতে কেন বারন কর যখন অ্যালকোহল এ এইরকম সবগুলা উপাদান ই কোন না কোন ভাবে থাকে?
স্কলারঃ যদি তোমার মাথায় পানি ঢালি ব্যাথা পাবে?
অ্যালকোহলিকঃ নাতো।
স্কলারঃ যদি সাথে সাথে কিছু মাটির ধুলা ছিটাই তাহলে ব্যাথা পাবে?
অ্যালকোহলিকঃ কখনই না।
স্কলারঃ কিন্তু আমি যদি পানি আর মাটির গুড়া একসাথে মিশিয়ে প্রসেস করে ইট বানিয়ে তোমার মাথায় ছেড়ে দেই তখনও কি তুমি ব্যাথা পাবেনা?
অ্যালকোহলিক- তুমি বল কি? আমিতো মরেই যাব।
স্কলারঃ এলকোহল এর জন্যও একই কথা।
বুঝলে?
বাজারের এখন খুব নরমাল ড্রিংকসেও থাকে খুব অল্প পরিমানে এলকোহল। অনেক কোম্পানীকেই চিন্হিত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। না।
কথা না বাড়িয়ে চলুন এলকোহলের খারাপ দিক গুলো জেনে নিই-
অনেক বছরব্যাপী বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং তর্কবিতর্কের পর জানা গেছে অ্যালকোহল কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে।
১. খারাপ কাজের দিকে ঝুঁকে পড়া, হাঁটতে অসুবিধা হওয়া, ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি, বাড়ানো কথা অ্যালকোহলের সাধারণ খারাপ প্রভাব।
২.প্রধান ক্ষতিকর দিক হচ্ছে মস্তিষ্কের কোষগুলো নিস্তেজ করা, কেন্দ্রীয় স্তায়ুতন্ত্রকে হতাশায় ও বিষাদে ডুবানো।
৩.অধিক মাত্রায় এবং নিয়মিত সেবনে এই অ্যালকোহল মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি করে যার মধ্যে একটি হলো জ্ঞানগত এবং স্মরণশক্তি হ্রাসজনিত ক্ষতি করা। যখন এটি রক্তে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কের রক্তের সাথে মিশে যায় তখন এটি মস্তিষ্কের কোষের সাথে দেহের কোষের যোগাযোগ ঘটানোয় বিঘ্ন ঘটায়।
৪.খালি পেটে প্রচুর অ্যালকোহল সেবন করলে এটি চোখে অন্ধকার দেখার কারণ হয়, যা কোনো ঘটনা বিস্তারিতভাবে মনে করতে পারে না, এমনকি পুরো ঘটনাই সে ভুলে যায়।
৫.এটি এক ধরনের বিষ।
মস্তিষ্কের অ্যালকোহলের তাৎক্ষণিক প্রভাব-
১.
এটি মস্তিষ্কে এত দ্রুত প্রভাব ফেলে। আমি জানি এটি মস্তিষ্কের ভয়াবহ ক্ষতি করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে পুরো দেহের নিয়ন্ত্রক। এটা আপনার পেশি, শ্বাসযন্ত্র এবং বিপাকীয় কাজের নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার মস্তিষ্ক একটি শৃঙ্খলের মধ্য দিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশের সংকেত পাঠায়। যখন রক্ত প্রবাহের সাথে এই অ্যালকোহল মেশে তখন সংকেতগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অ্যালকোহল মস্তিষ্কের কর্মক্ষম অংশকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে।
সেরেব্রাল কর্টেক্স এবং অ্যালকোহল
সেরেব্রাল কর্টেক্স তথ্য, চিন্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং দেহের বেশির ভাগ ঐচ্ছিক পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যালকোহল প্রবেশের সাথে সাথে চিন্তাচেতনাকে দুর্বল এবং ঘোরালো করে ও স্মৃতির বিঘ্ন ঘটায়।
এটা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে নষ্ট করে ব্যক্তিকে বাচাল এবং অপ্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, যা ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
২.অ্যালকোহল স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে এবং ব্যক্তিকে আক্রমণাত্মক বা বিধ্বংসী করে তোলে।
৩.অ্যালকোহল পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে অ্যান্টিডিওরেটিক নামক হরমোন ক্ষরণ বন্ধ করে এবং হজমক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়।
৪. বেশি মাত্রায় সেবনকৃত অ্যালকোহল ব্যক্তিকে হঠাৎ অচেতন করে।
ধর্মীয় দৃষ্টিতে ্অ্যালকোহল হারাম।
অ্যালকোহল কেন নিচ্ছে-
১. প্রচন্ড হতাশা থেকে।
২. অনেক মডেল বা শিল্পীরা তাদের ফিটনেস ধরে রাখতে অ্যালকোহল নিচ্ছেন। যদিও এর কোন ডাক্তারী ভিত্তি নেই।
৩. নিজেকে স্মার্ট বলে পরিচয় দেয়ার জন্য পার্টিতে অ্যালকোহল নিচ্ছেন।
৪. কৌতুহলি হয়ে।
৫.জীবন নিয়ে উদাসীন ব্যক্তি।
৬.ভুল ধারণা থাকায়।
৭.সাময়িক উত্তেজক হিসেবে।
৮.সাময়িক আত্ববিশ্বাস আনার জন্য।
৯.টিনেজাররা খারাপ বন্ধুদের ফাদে পরে।
১০. কোন ভাবনা নেই। শুধু মাত্র পান করছে উদ্যেশ্যহীন ভাবে।
এমন আরো অদ্ভুত রকমের কারণ রয়েছে অ্যালকোহল নেয়ার পিছনে। সবচেয়ে অদ্ভুত বা হাসি আসে যখন দেখি একটি ছেলে/মেয়ে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে প্রমাণের জন্য এমন একটি বাজে জিনিস খাচ্ছে! স্মার্টনেস কি আর অ্যালকোহলে বা ড্রিংকস করে আসে? বিভিন্ন পদ্ধতিতে নতুন নতনু উপায়ে অ্যালকোহল নিচ্ছে আজকালকের মানুষ গুলো। যারা মুখে অনেক ভাল কথা বলে পারেন কিন্তু এই বিষয়ে নিজেই মুখ বন্ধ করে রাখছেন।
এটা যে মানুষের শরীরের প্রতিটা অংশের কি রকম ক্ষতি করে তাতো আমরা সবাই জানি। ডাক্তার রাও বলে এটা ক্ষতিকর। শুধু মাত্র কিছু চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তাররা অ্যালকোহল ব্যবহার করে থাকেন। ওষুধের প্রয়োজনে অক্ষতিকর যেটুকু সেটুকু পরিমান ব্যাবহার করা যেতে পারে।
অ্যালকোহল শুধু আপনাকে ধ্বংস করে দিবে আর কিছু নই।
এটা বিষ যা আপনাকে ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে দিবে আপনি টের পাওয়ার আগেই। তাই সিদ্ধান্ত নিন এখনি। মস্তিস্কের কোষ গুলো ধ্বংস হতে হতে একসময় আপনি স্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবেন। যেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ পাবেন না।
সচেতন হোন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।