(c) নাসিফ চৌধুরী
অনেকদিন আগে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক একটা ঘটনা । প্রাইভেট প্লেনে করে যাচ্ছিলাম অস্ট্রেলিয়া । বিশেষ কোন কাজ না । ইচ্ছা হল ক্যাঙ্গারুর সাথে কয়েকটা ছবি তুলে ফেসবুকে আপ করব ।
যাই হোক, আমার প্লেনের পাইলট আবার মহা গাধা প্রকৃতির ।
ক্লাস ফাইভ পাশ করেই সে প্লেন চালানোর লাইসেন্স পেয়ে গেছে । এখন নাকি একটু আকার ইঙ্গিত বুঝলেই লাইসেন্স পাওয়া যায় । যাই হোক গাধাটা জানেনা অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে কোন দিকে যেতে হয় । আফ্রিকা মহাদেশে প্রবেশ করার পর সে আবিস্কার করল আমরা উল্টো চলে এসেছি । গাধাটাকে আমার প্লেনের পাইলট করাটাই মস্ত ভুল হয়েছে !
আমার সময় ও তেল নষ্ট করার জন্য আমি গাধাটার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকালাম ।
গাধাটা ভয় পেয়ে প্লেন ঘোরাতে লাগল , কিন্তু বাঁধল বিপত্তি । ইউটারন নিতে গিয়ে প্লেনটা একটা উচু গাছের সাথে ধাক্কা খেল । অবশ্য গাছ উচুতে ছিল, না আমরা নিচে ছিলাম সেইটা একটা তদন্তের বিষয় ।
গাছের সাথে ধাক্কা খেলে যাই হয় , তাই হল । ডিগবাজি খেয়ে আমাদের প্লেনটা মাটিতে আছড়ে পড়তে লাগল ।
সাহায্যের আশায় আমি পাশে তাকিয়ে দেখি এক্সিডেন্ট টের পেয়ে গাধাটা অনেক আগেই লাফ দিয়েছে । একেই বলে বিপদে পাইলটের পরিচয় ! আমিও দেরী না করে লাফ দিলাম । সাধারনত সিনেমার নায়করা অনেক উচু থেকে লাফ দিলে তাদের কিছু হয়না । আমি সিনেমার নায়ক না হলেও দেখতে অনেক সুন্দর (!!) সম্ভবত সে কারনে খুব একটা ব্যাথা পেলাম না । (??!!)
কতক্ষন জ্ঞ্যান ছিলোনা জানিনা ।
জ্ঞ্যান ফিরল হিপ হপ মিউজিকের চোটে । তবে চোখ মেলে আমার ভুল ভাংলো, সেটা হিপ হপ মিউজিক না । অনেকগুলো আফ্রিকান জংলী আমাকে ঘিরে অদ্ভুত সুরে বাদ্য-বাজনা বাজাচ্ছে । তাদের মুখে রঙ করা । মাথায় পালক ।
পড়নে ...সবকিছু কি আমার বলে দেওয়া লাগে নাকি ? সিনেমায় দেখেন না জংলীরা কি রকম থাকে ??
ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম এদের মধ্যে সর্দারনী টাইপের একজন মহিলাও আছেন । উনাকে দেখে অবশ্য আমার বাংলাদেশের একজনের কথা মনে হল । তবে কার কথা মনে হল সেটা আমি বলতে পারবনা । বললে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে !!
যাই হোক , আমি বুঝতে পারলাম , আমার সামনে অনেক বড় বিপদ । আফ্রিকান জংলীরা আমাকে ঘিরে ধরে আছে ।
আমার এখন কি করা উচিত আমি জানিনা । মেয়ে মানুষ হলে ‘বাচাও বাচাও’ বলে চিৎকার করতাম । কিন্তু পুরুষ মানুষ বলে পারছিনা ।
জংলীদের একজন এসে আমার কাধে ধরে বলল ‘হুরুচ্চাতি, উলা কুবুরা মিকুচিরি হুলা’ । আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
বাংলা মেটাল ব্যান্ডের লিরিক্সই আমি বুঝিনা আর এই ভাষা কি করে বুঝব ? অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এত তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আমি সাথে থাকা ল্যাপটপটা বের করে গুগল অনুবাদে ঢুকলাম (বিঃদ্র – সেই জঙ্গল আবার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ভেতরেই ছিল) । আমি অনুবাদ দেখে ঘাবড়ে গেলাম । আফ্রিকান ভাইয়েরা আমাকে বলেছেন ‘ভ্রাতা, আমরা আপনাকে ভক্ষন করিতে ইচ্ছুক’!
তারা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তুলে নিয়ে গেল । আমার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিলনা ।
তবে আফ্রিকান জংলী হলেও তাদের চলার পথ অনেক ভাল । আমাদের ঢাকা- ময়মনসিংহ সড়কের মত না !
রাতে আমাকে একটা গাছের সাথে বাঁধা হল । সামনে আগুন জালানো । সম্ভবত একটু পরে আমাকে পুড়িয়ে খাওয়া হবে । সারাজিবন বন্ধুদের নিয়ে বার-বি-কিউ পার্টি করেছি ।
প্রকৃতির নির্মম খেয়ালে আজ নিজেই বার-বি-কিউ হতে যাচ্ছি । ভাবতেই খারাপ লাগছে । অতীতে যে সকল মুরগী-ছাগল পুড়িয়ে পার্টি করেছিলাম তাদেরও নিশ্চয়ই আমার মত প্রিয়জনদের কথা খুব মনে পড়ছিল ।
কিছুক্ষন পর এলেন ভুরিয়ালা এক জংলী ভদ্রলোক । আন্দাজ করলাম তিনি জংলীদের খাদ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব টাইপের কেউ ।
তিনি আমাকে ভাল করে দেখতে লাগলেন । আমরা যেমন কোরবানির আগে গরু দেখি ঠিক তেমনি তিনিও আমাকে আঙ্গুল দিয়ে গুতা দিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নিতে লাগলেন। বুঝে নিচ্ছেন রানের মাংস কেমন হবে । সিনার হাড় গুলো কুড়কুড়ে হবে কি না এইগুলো । আমার লেজ থাকলে লেজও তুলা দিয়ে দেখতেন ।
তখন বুঝতে পেড়েছি কোরবানির গরুরা কেন মানুষ কে লাত্থি গুতা দিতে এত পছন্দ করে !
জংলীদের খাদ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব
আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে সচিব সাহেবের চোখে মুখে গভীর হতাশার ছাপ দেখতে পেলাম । এইটুকুন মাংস দিয়ে কয়জনে খাবে ? সম্ভবত সে কারনেই আমাকে ফিটনেস সারটফিকেট দেওয়া গেলনা ।
তবে তাদের হতাশা ধরতে পেরে আমার মাথায় আরেকটা বুদ্ধি খেলে গেল । আমি তৎক্ষণাৎ ইন্টারনেটে ঢুকে বাংলা সিনেমার কিছু নায়িকার ছবি ডাউনলড করে উনাদের দেখালাম । বললাম ‘টু মাচ মাংস , নেভার এন্ড’ ! ওহ তারা তো ইংরেজি বোঝেনা ।
আবারো তাদের ভাষায় অনুবাদ করে বিষয়টা জানিয়ে দিলাম ।
বুদ্ধি কাজে এল । আমাকে মুক্তি দেওয়া হল । সর্দারনী বিপুল উৎসাহে আমার সাথে একটা চুক্তিপত্রে সাক্ষর করলেন । চুক্তির বিষয় হচ্ছে প্রতি মাসে দুইটা সিনেমার নায়িকা তাদের এনে দিতে হবে ।
আর বিয়ে শাদী পড়লে এক্সট্রা পাঠাতে হবে । আমি হাসতে হাসতে রাজি হলাম ।
আমাকে রাষ্ট্রীয় অথিতির মর্যাদা দেওয়া হল । আমি স্থানীয় স্মৃতিসৌধ দেখতে গেলাম । বিরোধী দলীয় সর্দারনীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকার করলাম ।
মুখে গভীর হতাশার ছাপ নিয়ে বিশিষ্ট জংলী ব্যাক্তিত্তদের মাজার ফুল দিয়ে এলাম । স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলে এলাম ‘জংলী সমাজের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে এক নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে । বিশেষ করে জংলী সর্দারনী আমাদের দেশের কয়েকটি ‘পন্যের’ যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ দিয়েছেন এতে উভয় সমাজই উপকৃত হবে। ‘
ভালই কাটল দু তিন দিন । অনেক ছবি-টবি তুললাম ।
আমার আগমন উপলক্ষে মিউজিক পার্টি দেওয়া হল । তাদের গান শুনে আমার আবার দেশের একজন গায়িকার কথা মনে হচ্ছিল ! থাক... এই নামটাও আমি বলবনা , তাকে নিয়ে অনেক মজা হয়েছে , আর না !
পাইলট গাধাকে যত গাধা মনে করেছিলাম সে আসলে তত গাধা না । আমাকে খুজে বের করতে সে আরকেটা প্লেন নিয়ে এসেছে । আমি সব জংলী বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম । কথা দিলাম আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে খুব শিগ্রই বিপুল পরিমান সিনেমার নায়িকা আফ্রিকায় রপ্তানী করা হবে ।
কিছু ছবিঃ
সর্দারনীর পরিবারের সাথে আমার ছবি
আমাকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ রাখছেন একজন অভিনেত্রী
বিরোধীদলিও নেত্রী ( আমি যাওার পর তিনি দাবি করেছেন আমার সাথে নাকি সরকারের গোপন ট্রানজিটের চুক্তি হয়েছে)
সেখানে আমি যে মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।