একজন নির্বোধের বয়ান শিরোনাম দেখে ছিঃ ছিঃ করবেন না প্লিজ এটা বাংলা সিনেমার কোনো নাম নয়। হলফনামায় সহি সম্পাদন করে ঘোষণা করছি যে, এখানে আমার নিজের কথাই বলা হয়েছে, অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়।
প্রায় এক যুগ আগে এক সুন্দরী ললনাকে চোখের নজরে ভালো লেগে গেল। লাজ-শরমের মাথা খেয়ে সুন্দরীর সামনে গিয়ে প্রেম নয়নে তাকিয়ে বললাম, হেই সুন্দরী, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। সুন্দরী কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে বলল, ‘তাই, না? দাঁড়া ভিলেনের বাচ্চা।
তোর মতো বোগাস প্রেমিক জীবনে কতো শায়েস্তা করলাম আর তুই তো কোন চুঁনোপুটি। তোকে যেনো আর কোনো দিন আমার চোখের সামনে না দেখি যা ফোট রাবিশ কোথাকার!’
ভুল ক্রমে পিচ্চিকালের ঘটনা না বলে প্রেমবেলার ঘটনা আগে বলে ফেলেছি। এখন তবে ফ্ল্যাশব্যাকে যাই-
একদিন গৃহপালিত শিক্ষক আমাকে পাঠদানের সময় অতিমাত্রায় বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আমি আমার জীবনে এমন রাবিশমার্কা ছাত্র একটিও দেখিনি। ’ তখন আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বলেছিলাম, স্যার আমারও অনেক ভালো লাগছে, আপনাকে শ্রেষ্ঠ রাবিশ দেখাতে পেরে। ’ স্যার আমার কথা শুনে ছোট্ট করে বললেন, ‘ত্যাদড়।
’
২.
যুবক বয়সে পর্দাপন করলাম।
পিতাজি সবসময় আমাকে বোগাসমার্কা ছেলে হিসেবেই গণনা করে আসছেন। আমাকে শুনিয়ে আম্মাজানকে বলতেন, ‘তোমার ছেলে একটা বোগাস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসারে তাকে কোন কাজে লাগে শুনি। কোনোদিন কোনো কাজেকর্মে ঢুকতে পারবে বলে মনে হয় না।
’ আব্বাজানের কথা পুরোপুরি সত্য হয়নি বটে শেষ পর্যন্ত একটা চাকরী ঠিকই জুটিয়ে নিলাম। তবুও আব্বাজান বলেন, দেখো এই চাকরী কতদিন করতে পারে। বোগাসগিরি করে তো আর চাকরী করা যায় না। ’
আব্বাজানের আশংকা পুরোপুরি সত্যি হয়নি এখনো বহাল তবিলতে চাকরীতে টিকে আছি। তবে অফিসের বস একদিন হাসতে হাসতে বললেন, ‘তুমি মিয়া একটা বোগাস।
তোমার মাথায় কিচ্ছু নাই। চাকরীটা পেলে কিভাবে?’
মনে মনে উত্তর দিয়েছিলাম ‘স্যার চাকরীটা তো আপনিই দিয়েছিলেন। ’
হায়, এক জীবনে বোগাস ও রাবিশ থেকে আমার বুঝি আর বের হওয়া হলো না!
৩.
বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।
একদিন হুট করে কাউকে কিছু না বলে ঘরে বউ নিয়ে আসলাম। ভাবনা ছিল বউ বুঝি আমাকে একটু হলেও বুঝবে।
অন্তত রাবিশ, বোগাস টাইপ কিছূ বলবে না। কিন্তু কিসের কি! বউ হাসিরছলে উপহাস করে বলল, ‘তুমি এমন বোগাসগিরি করে পরীক্ষায় পাশ করলে কিভাবে?’
অপমানে লাল হয়ে বলি, ‘বউ, হইাই তো বোগাসগিরির কেরামতি। ’
কিন্তু ইদানিং আমার আসন নড়বড়ে হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দেশের মালমন্ত্রী অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী আমার উপর হিংসার বশবর্তী হয়ে দেশের আরো কয়েকজনকে বোগাস ও রাবিশ বলে ঘোষণা করেছেন। এতোদিন যে পদবী একান্ত আমার বলে দাবী করে আসছিলাম, এখন এতে অন্যরা ভাগ বসাবেন।
আফসোস!
হলমার্ক নামক একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋন নিয়ে, এখন তা ফেরত দিচ্ছে না। উল্টো অর্থমন্ত্রী বলেছেন, হলমার্ককে আরো ঋন দেয়া যেতে পারে, যাতে তারা পূর্বের ঋন শোধ করতে পারে। বিষয়টি সুশীলসমাজ মেনে নিতে পারছেন না। তারা অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন। সেকারণে অর্থমন্ত্রী তাদেরকে বোগাস ও রাবিশ বলেছেন।
আমার মতে অর্থমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। কেননা অর্থমন্ত্রীর চেয়ে কি তারা বেশি বোঝে? তারা কি অর্থমন্ত্রী না রাজনীতিবিদ? সুতরাং অর্থমন্ত্রীর চেয়ে বেশি বোঝা ঠিক না।
৪.
কিছুদিন আগে গ্রাম থেকে আমার এক চাচা বেড়াতে এসেছেন।
তাকে বললাম, ‘চাচা, হলমার্কের নাম শুনেছেন?’
তিনি এক বাক্যে ‘না’ বললেন।
আবারো বললাম, ‘চাচা, হলমার্ক যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে, তাও শোনেননি?’
এবারো চাচা জোরে জারে মাথা নেড়ে ‘না’ বললেন।
মৃদু হেসে বলি, ‘এবারও তাহলে ভোট জায়গামত দেবেন?’
চাচা বললেন, ‘ভোট তো আমি এই এক জায়গা ছাড়া দেই না বাবাজি। ’
বুঝলাম শহরবাসী ছাড়া হলমার্কের দুর্নীতির খবর খুব বেশি দূর পৌঁছায়নি। মনে মনেও চাচাকে রাবিশ বলা থেকে বিরত থাকলাম, কারণ অর্থমন্ত্রী শুনলে আমার খবর আছে।
তবে এখন শহরবাসীকে চিৎকার করে হলেও রাবিশ, বোগাস বলবো। কেননা, আমরা বারবার কেন রাজার সব অপকর্ম মুখ বুজে সহ্য করে যাই? একসময় সব আবার ভুলে যাই চিরদিনের মতো।
হয়তো আমরা ভুলে যেতে পছন্দ করি বলে।
আমারও এতো দিনের বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন দেখছি শুধু আমি না, দেশ ভর্তি বোগাস ও রাবিশমার্কা লোকজন।
আমি রাবিশ, আমি বোগাস। তুমি বোগাস, তুমি রাবিশ।
সে বোগাস, সে রাবিশ। আমরা সবাই বোগাস, রাবিশ।
সুতরাং অর্থমন্ত্রী সাহেব আপনি আপনার কথাটি ফিরিয়ে নিয়ে নতুন করে বলুন-
‘আমি ছাড়া বাকি সবাই বোগাস, রাবিশ। ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।