বাঁচতে চাই! কারন বাঁচাতে চাই বিকালে মোবাইলটা বেজে উঠতেই তাকিয়ে দেখি ইস্ক্রা রহমান ফোন করেছে। 'অমর্ত্য আজকে তোমাকে সাইক এর সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাবো আর আমাদের গ্রুপ এর ব্যাপারে কথা বলবো'! ফোন পেয়ে আমি সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম! ইস্ক্রা আমার বন্ধু আর অসম্ভব ভালো গীটার বাজায়, ভালো মিউজিক কম্পোজ করে। ওর সাথে আমি মিউজিকের কাজ করি। সাইক এর নাম অনেক আগেই শুনেছিলাম। আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও অসম্ভব ভালো নির্মাতা।
এক সাথে কাজ করার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন থেকে। সুযোগ পেয়ে গেলাম। কিছুদিন আগে ফেসবুক এ আমি আর ইস্ক্রা একটি গ্রুপ খুলেছিলাম, যেখানে শুধু মাত্র সৃজনশীল মানুষেরা থাকবে এবং সক্রিয় থেকে নিজের কাজ সবার সাথে শেয়ার করবে। সেই গ্রুপ এর জন্য আমি আর ইস্ক্রা নাগালের রাজশাহীর চেনা পরিচিত সৃজনশীল দের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা শুরু করেছিলাম। যার মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল সাইক।
বাড়ি খুঁজতে একটু ঝামেলা হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম সাইক এর বাসাতে। পরিচয় হল ওর পুরো ইউনিট এর সাথে, পরিচয় হল দুর্দান্ত লেখক দিগন্ত এর সাথেও। গ্রুপ নিয়ে আলোচনা হল। সবাই খুব ইচ্ছুক।
আমার মাথায় হঠাৎ করে কি যে হল! আমি বলে ফেললাম যে, এই দুই গ্রুপ এক হয়ে আমাদের কিছু করা প্রয়োজন। সাইক আমাকে খুলে বলতে বলাতে আমি প্রস্তাব দিলাম একটি শর্টফিল্ম করার কথা। সাথে সাথে সবাই নড়ে চড়ে বসলো। আমার মাথাতে একটি আইডিয়া ছিল, সবাই কে বললাম। সবাই রাজি হল।
অবাক হলাম এত দ্রুত কিভাবে সম্ভব! তারপর দু এক সপ্তাহ আলোচনার পর ঢাকা পরে গেল ব্যাপার টা। আমিও আর বলিনি এই ব্যাপারে।
তারপর বিভিন্ন কারণে সাইক এর সাথে আমাদের যোগাযোগ শুরু হল। এর মাঝে আমি ওদের ইউনিট এর একজন হয়ে গিয়েছি। ঠিক দুই মাস পর সাইক একটি মিটিং ডাকলো।
সবাই উপস্থিত হওয়ার পর জানতে পারলাম শর্ট ফিল্ম এর ব্যাপারটা সাইক এর মাথাতে ছিলই। সে একটি সুসংবাদ দিলো যে আমরা একটি FILM FESTIVAL এ অংশগ্রহন করার সুযোগ পেয়েছি এবং প্রথম দিন আমাদের যে প্ল্যান হয়েছিল আমরা সেটি বাস্তব করছি। অনেক টাকার ব্যাপার যার কারণে এর মধ্যে আমাদের ইউনিট দিন রাত খাটুনি করে ২ টা সরকারী ডকুমেন্টারি বানিয়েছে। তখন বুঝতে পারলাম সাইক ইউনিটকে এত দৌড়ের উপরে কেন রেখেছিলো।
তারপর অনেক আলোচনা করে সব ঠিক করা হল।
৪৫ মিনিটের শর্ট ফিল্মটির নাম হবে THE UNIT. কাহিনী খুব সংক্ষেপে দেওয়া হল,
৫ জন বন্ধু হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে তারা একটা ফিল্ম বানাবে এবং সেটি হবে পথশিশুদের নিয়ে। একজন পথশিশু অনেকটা কাক এর মত। কাক যেমন পাখিকুলের হয়েও অবহেলিত এবং সবার চেয়ে আলাদা ঠিক তেমনি পথশিশুরা মানুষ হলেও তারা অন্য ধরনের জীবন পেয়েছে। এই ফিল্ম এর নাম হবে 'কঙ্কপুরাণ'! যেখানে একটি পথশিশুর অদ্ভুত কিছু কাজ আর তার জীবন দেখানো হবে। প্রথম সমস্যা হয় অর্থের।
অনেক কৌশল করে ৫ বন্ধু টাকা যোগাড় করে! তারপর তারা একটি ক্যামেরা পায়, দৌড়া দৌড়ি করে সব ব্যবস্থা করে। কিন্তু শুটিং এর জন্য একটি মরা কাক দরকার। যে দুইজনের উপরে কাক মারার দায়িত্ব ছিল তারা খুঁজে পায়না কোনও কাক। এইটা নিয়ে হয় বিপত্তি। অনেক হয়রানি করে শুরু হয় শুটিং এবং তার মাঝেও অনেক মজার মজার ঘটনা।
তারপরেও একসময় শেষ হয় শুটিং এবং তৈরি হয় 'কঙ্কপুরাণ'!
অনেক খরচ। যার মধ্যে কিছু আসলো আমাদের প্রোডাক্টশান এর জমানো টাকা থেকে। কপাল গুণে পাওয়া গেলো কিছু ডোনার। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করা হল আর্টিস্ট, আমিও একটি ছোট রোল পেয়ে গেলাম। মিউজিক এর দায়িত্ব পড়ল ইস্ক্রা আর আমার ঘাড়ে।
মিউজিক ডিরেক্টর হল ইস্ক্রা, ইমন ভাই করে দিলেন দুটি গান। দৌড়াদৌড়ি করে শুটিং স্পট ঠিক করা হল, বিভিন্ন রকম অনুমতি নিতে হল। বাড়িতে সামলাতে হল ধকল, যেহেতু আমাদের কে মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করতে হত। অক্টোবর এর ২৪-৩০ তারিখে চলে THE UNIT এর শুটিং। তারপর গান নিয়ে দৌড়াদৌড়ি।
সারাদিন শিল্পীদের পিছনে ছুটাছুটি, সবশেষে সারারাত ধরে চলল স্টুডিওতে কাজ। সাইক ছুটে গেল ঢাকাতে এডিটিং এর কাজ করানোর জন্য। শুটিং এর সময়ে আমাদের অনেক মজা হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্পটে যাওয়া। নাশতা হতে হতে ১১ টা বেজে যেত।
দুপুরে খেতাম সীমা খালার রান্না করা খাবার। খাবার স্পটে নিয়ে আসা হত। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতে চাপাচাপি করে যেতাম সবাই ৭ দিনের জন্য ভাড়া করা ব্যাটারি অটোতে। দুইদিন শুটিং এর ফাঁকে নেমে পড়েছি পুকুর আর লেকে। আমাদের সবাইকে রাত ২টায় এসএমএস করে জানিয়ে দিত নাব্বি যে পরদিন সকালে কখন কোথায় আসতে হবে।
আমার বন্ধু হাসিব, যে এই ফিল্মে অভিনয় করছে ওর একদিন মোবাইল নষ্ট হয়ে যায় আর বুঝতে পারেনা কখন কোথায় যেতে হবে। সেদিন আমাদের যাবার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ৮ টায়। কিন্তু বেচারা হাসিব ভোর ৬টায় বাহির হয়ে আমার বাড়িতে হাজির। আবার একদিন মুখ ধোয়ার একটি শটের জন্য আমাকে কমপক্ষে ২০০ বার মুখ ধুইয়ে নিয়েছে সাইক। যিনি আমার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি ২০ বার চেষ্টা করেও কড়া গলায় কথা বলতে পারছিলেন না।
কিন্তু শেষবার যখন কড়া গলায় কথা বলে উঠলেন তখন আর আমি হাসি আটকাতে পারিনাই। কি অবস্থা! আবার কাট। কাক নিয়ে শুটিং করা হল আরো মুশকিল। তবুও সাজিদ আর আবির দুইবার কাক ধরলেও, ধরে রাখতে পারেনি। যার কারনে একটা কবুতর কে কাল রঙ করে কাজ চালাতে হয়েছে।
THE UNIT একটি উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে সিনেমার জগতে নতুন মুখের খুব প্রয়োজন। নতুন নির্মাতা, নতুন আর্টিস্ট এর প্রয়োজন। আমাদের আশেপাশে অনেক প্রতিভাবান নির্মাতা আছে যারা সুযোগের অভাবে, অর্থের অভাবে এবং আমাদের সমাজে চিরায়িত প্রথা 'ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার' বলয়ের জন্য নিজেদের প্রকাশ করতে পারছে না। আমাদের ফিল্ম এ খুব বাস্তবভাবে দেখানো হয়েছে কিভাবে ৫ জন বন্ধু সব রকম প্রতিকূলতা পেরিয়ে ‘কঙ্কপুরান’ তৈরি করে।
এর ফলে তরুন সমাজ ফিল্ম নির্মাণ এর পথে আসার জন্য মনোবল পাবে এবং তারা নতুন উদ্যোম পাবে, আমরা পাবো নতুন মুখ, নতুন কাজ। রেহাই মিলবে 'বাংলা সিনেমা কেউ দেখে নাকি' টাইপ দুর্নামের হাত থেকে।
৪৫ মিনিটের শর্ট ফিল্মটির পরিচালক সাইক। এখানে থাকছে ৪ টি ভিন্ন ধাঁচের গান। মুভিটিও এডিটিং করা হচ্ছে।
এডিট করছেন "মনপুরা" সিনেমার স্বনামধন্য এডিটর লিংকন ভাই। আশা করা যাচ্ছে আর দুই-তিন দিনের মধ্যেই হাতে পাব এর নি:শব্দ কপি। এরপর সেখানে বসানো হবে সাউন্ড। আশা করা যায় সবার এই শর্ট ফিল্মটি ভালো লাগবে।
কয়েকদিনের মধ্যে ট্রেইলার পেয়ে যাবেন আশা করি.।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।