নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে। এই অতিগুরুত্বপূর্ণ লেখাটা বাম তাত্ত্বিক কমরেড ফিরোজ আহমেদের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)
রানা প্লাজার ধসে পড়া ভবনের জায়গাটাকে ঘিরে দেয়া হয়েছে কাটাতারে। স্বজনেরা সেই কাটাতারে গেঁথে দিচ্ছেন গোলাপ। শোকাতুর কোন পরিজন জ্ঞান হারাচ্ছেন, কেউ অঝোরে কাঁদছেন, অনিশ্চয়তার উদ্বেগে ভাষাহারা অনেকেই।
এসেছেন 'নিখোঁজ' সুরুজের ভাই সুজন।
ভবনের ধসে পড়া কড়িবর্গার নিচে মাজা আটকা পরেছিলো সুরুজের। চারদিন পর আমাদের ছেলেরা তাকে খুঁজে পায়। তখনও জীবিত এবং তৃষ্ণার্ত সুরুজকে পানি খাওয়ানো হয়, তারপর সে খেতে চায় সিগারেট। বাংলাভিশনে তার কথা সম্প্রচারও হয়েছিলো। তার ভাই সুজনও ছিলো উদ্ধারকর্মীদের সাথে।
বর্গা না সরাতে পারার কারণে কততম দিনে যেন সে মারা যায়। উদ্ধার করে নিয়ে আসা লাশটা তার ভাইকে দেয়া হয়নি বিদ্যালয় মাঠে, তা পাঠিয়ে দেয়া হয় মেডিকেল কলেজে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য। তারপর থেকে সুরুজ নিখোঁজ।
এমন অজস্র 'নিখোঁজ'দের তালিকা আর তথ্য জোগাড় করা নিয়ে ব্যতিবস্ত রাখতে হয়েছে পুনর্বাসন কর্মীদের; রাষ্ট্র আর বিজেএমইএ'র ভাবখানা অজস্র জালিয়াত শ্রমিকদের ভীড়ে তারা দিশেহারা, কিন্তু এই যে কারখানা শ্রমিকদের কোন তথ্যভাণ্ডার না থাকা; খুঁজে পাওয়া, টিভির সাথে কথা বলা, উদ্ধারকর্মিদের কাছ থেকে সিগারেট খাওয়া শ্রমিকটাও 'নাই' হয়ে যাওয়া-- এই্ সবের দায় তো তাদেরই হবার কথা ছিলো। হতে পারে তার লাশ আর কারও সাথে বদলে গিয়েছে, হতে পারে পুরো প্রক্রিয়ায় কোন খানে হিসেবের ভুল হয়ে অন্য কোথায় দাফন হয়ে গিয়েছে--- কিন্তু জলজ্যান্ত সুরুজের অস্তিত্ব তো মিথ্যে না।
যন্ত্রের চেয়ে বেশি মূল্য সুরুজদের নেই; যন্ত্রের বীমা থাকে, মানবসন্তান অজস্র জন্মায় বলে তারা হিসেবের খাতায়ও থাকে না।
রানাপ্লাজায় ভবনধসে শ্রমিকহত্যার এক মাস পূর্ণ হলো আজ। উদ্ধার-ত্রাণ-পুনর্বাসনের কাজে যারা যুক্ত ছিলেন, তারা আজ নিহত-আহত-নিখোঁজ শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন ধসে পড়া ভবনটির স্থানে।
ছিলেন@Taslima Taslima Akhter, Julhasnayeen Babu, Dipak Kumar Roy, Samia Rahman, Al Zahid,@ Kakon Biswas, গার্মেন্ট সংহতির আমিনুল ইসলাম শামাসহ শ্রমিক-শিক্ষার্থী-নেতা-কর্মীরা।
শোক বদলে যাক শক্তিতে।
মৃত্যুতে শুধু নয়, জীবনের সংগ্রামেও শ্রমিকের চেতনা আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠুক। তাদের সংগঠিত হয়ে ওঠার মাঝেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।
দুনিয়ার মজদুর এক হও। জয় জনতা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।