আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চু কাকা বললেন, লোকমানকে ফেলে আস, দায়িত্ব আমার *অস্ত্রের জোগানদাতা বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম - কিলারদের আগাম দুই লাখ?টাকা দেন এপিএস মাসুদ

'মন্ত্রীর ভাই বাচ্চুসহ আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা লোকমান খুনের মূল পরিকল্পনা করেন, অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেন শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম আর মিশন সাকসেস করতে কিলার ভাড়া করা হয় টেন্ডারবাজ সন্ত্রাসী মোবারক হোসেন মোবার টাকায়। কিলার বাছাই, ভাড়া করা ও খুনের মিশন সরাসরি তদারকির দায়িত্ব পালন করেন নরসিংদীর সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সরকারের ছোট ভাই শহর যুবলীগ সভাপতি আশরাফ সরকার। কিলারদের প্রণোদনা হিসেবে দুই লাখ টাকা আগাম উপহার দেন মন্ত্রীর এপিএস মাসুদ। ' বহুল আলোচিত লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেফতার টিপন কাজী, সেলিম হাজী ও আশরাফ সরকার রিমান্ডে থাকা অবস্থায় এসব তথ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বুধবার রাত থেকে তিনজনকে কয়েক দফা মুখোমুখি ও পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ সময় খুনের পরিকল্পনা, অস্ত্র ও অর্থ প্রাপ্তির ব্যাপারে তিনজন একই কথা বলেন। তবে কিলিং মিশনে সরাসরি গুলি চালানো এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো পরে কোথায় কার কাছে রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে তারা একেকজন একেক ধরনের কথা বলে চলছেন। নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে লোকমান হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা সেলিম হাজী, টিপন কাজী ও আশরাফ সরকারকে এসপি দফতরের নিচতলার একটি কক্ষে নিয়ে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের তিনজনের কাছ থেকেই হত্যাকাণ্ডের অভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পাঁচ কিলার অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে থাকলেও তাদের ব্যাকআপ দিতে ২০-৩০ গজের মধ্যেই আরও সাত-আটজন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত ছিলেন।

খুনিদের আশঙ্কা ছিল, লোকমানকে গুলি করার সঙ্গে সঙ্গে তার বডিগার্ডরা পাল্টা আক্রমণ করবে এবং তাতে ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ হতে পারে। এ জন্য তারা পাল্টা হামলা রুখে দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করতে তিন স্তরে কিলিং প্ল্যান সাজান। রেগে গেলেন বাচ্চু কাকা : 'বাচ্চু কাকা (মন্ত্রী রাজুর ভাই) আমাদের সামনেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে লোকমানের বিষয়ে চার-পাঁচ মিনিট কথা বলেন। এরপর ফোনটি পাশের টি-টেবিলে রেখেই তিনি রাগত স্বরে বলতে থাকেন, তোমরা কোনো কাজের না... আজ না কাল করে করে দুই মাস পার করে দিলে... যা বলেছি তা করো, লোকমানকে ফেলে দিয়ে আসো। বাকি সব দায়িত্ব আমার...।

' এজাহারভুক্ত আসামি আশরাফ সরকার গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এসব কথা জানান। গতকাল দিনভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আশরাফ অকপটে লোকমান হত্যার আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। এ সময় নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দীন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদকালে উপস্থিত জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র আশরাফের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২০-২২ দিন আগে ঢাকার বনানীর ২ নম্বর রোডে জাকের পার্টির অফিস-সংলগ্ন উল্টো পাশের একটি বাসায় খুনের ব্যাপারে চূড়ান্ত বৈঠক হয়। সেখানে কিলিং মিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় সদস্য উপস্থিত ছিল।

আশরাফ জানান, ওই বৈঠকে খুনের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সালাহউদ্দিন বাচ্চু, এপিএস মাসুদ, আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। ঢাকার বাসায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সালাহউদ্দিন বাচ্চু বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন বলেও জানিয়েছেন আশরাফ। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তিনি জানান, তার নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ আগস্ট ও ৭ সেপ্টেম্বর দুই দফা প্রস্তুতি নিয়েও লোকমানকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। মেয়র লোকমান বরাবরই বডিগার্ড-বেষ্টিত থাকায় প্রথম দুই দফা হত্যার মিশন ব্যর্থ হয়। এ জন্য আশরাফদের সঙ্গে বেশ রাগারাগিও করেন বাচ্চু।

গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফ আরও জানান, চূড়ান্ত বৈঠকের শেষ দিকে এপিএস মাসুদ হাতের ইশারায় আশরাফ সরকারকে ভেতরের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে তার হাতে এক হাজার টাকা নোটের দুটি বান্ডিল তুলে দেন। তখন এপিএস মাসুদ বলেন, 'মিশন সাকসেস করতে না পারলে বাচ্চু ভাইয়ের কাছে আর কারও মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। ' মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার আশরাফকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য ও নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফ সরকার ও বড় ভাই মতিন সরকারের সঙ্গে মেয়র লোকমানের চরম বিরোধ বাধে। এ ছাড়া পৌরসভার উন্নয়ন কাজে তাদের বহুমূল্যের তিন বিঘা জমি ব্যবহারের কারণেও লোকমানের ওপর আক্রোশ তৈরি হয়।

হত্যা মামলার তদন্তকারী গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আশরাফ এরই মধ্যে লোকমান হত্যায় সশরীরে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। নেতৃত্বের কারণে সবার কাছে পরিচিত মুখ হওয়ায় আশরাফ গুলি চালানোর সময় নিজের নাক-মুখ বড় রুমাল দিয়ে বেঁধে নিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।