গাড়ি থেকে নেমে মূল ভবনের দিকে হাটতে লাগলাম আমি, গাজ্জালী ও ডঃ বাদায়ুনী। বাগানের বা দিক থেকে একটা ডাক আসল (গাজ্জালীকে ডাকা হল)। তাকিয়ে দেখি পাইপ দিয়ে গাছে পানি দিচ্ছেন আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, বিনয়ী সেই মহামানব। হ্যাঁ, ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ ... শখের বশেই নানা প্রজাতির কবুতর সংগ্রহ করতো দুই বন্ধু। আজ অনেকেই মুগ্ধ হন তাদের সংগ্রহ দেখে।
আর এই কবুতরই এখন অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখাচ্ছে দুই বন্ধুকে।
মাত্র নয় বছর আগের সেই শখই তাদের আজ স্বাবলম্বী করেছে। এ গল্প খুলনার সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্র সাঈদুর রহমান শাওন ও রিফাত মাহমুদের। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে এস.আর.এস পিজিওন নামে একটি কবুতর ফার্ম। এখান থেকে প্রতিমাসে তাদের আয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
ভবিষ্যতে আরও বড় কবুতর ফার্ম করতে চান তারা।
সাঈদুর রহমান শাওনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার পুরাতন সড়ক রোডে। তার ব্যবসায়ী বাবা ওয়ারেশ সরকারের ছোটবেলা থেকেই কবুতর পালনের শখ। সেখানে দেখেছেন দেশী প্রজাতির নানা কবুতর। ২০০৫ সালে শাওন ভর্তি হন সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগে।
সেখানেই বন্ধুত্ব হয় সহপাঠী খুলনা নগরীর নবীনগর এলাকার মদিনা কুটিরের বাসিন্দা মাহমুদুল ইসলামের ছেলে রিফাত মাহমুদের সাথে। এ সময় বন্ধুর সংগ্রহে বিদেশী কবুতর দেখে আকৃষ্ট হন শাওন। বন্ধু রিফাতের বাসায় থাকার সূত্রে শাওনও সম্পৃক্ত হন বন্ধুর সাথে। রিফাতের বাসার ছাদেই গড়ে তোলেন কবুতরের ফার্ম।
রিফাতের প্রতিবেশী ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ জানান, প্রথমদিকে জানতাম ছেলে দু’টো শখ করে কবুতর পুষছে।
পরে দেখি তারা এ থেকে আয়ও করছে। রাজধানীর অনেক কবুতর ব্যবসায়ী এদের কাছে এসে প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকার কবুতর কিনে নিয়ে যায়।
সাঈদুর রহমান ও রিফাত মাহমুদ বলেন, ২০০৬ সালে নব্বই হাজার টাকা নিয়ে কবুতর লালন-পালন শুরু করি। প্রথম দিকে কবুতরের অধিকাংশই মারা যায়। সবমিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মতো কবুতর ছিল।
ওটাই শেষ পর্যন্ত পুঁজি দাঁড়িয়ে যায়। তারা জানান, খুলনায় বর্তমানে ৫’শর মত ব্যবসায়ী কবুতরের ফার্ম করেছেন। তার মধ্যে আমাদের ফার্মটি অন্যতম। এ ফার্মে রয়েছে বিরল প্রজাতির কবুতর এল-স্টার, বোখারা, নরেশ কোকার, স্টেচার, ফিলিগেচার ব্লু, ও হেনা পোর্টার। প্রথম অবস্থায় বিদেশী কবুতর ছিল ৩০-৩৫টি।
দুই বন্ধুর প্রায় ৪ শতাধিক কবুতরের এই ফার্মে সাতজন কর্মচারী কাজ করছেন।
দুই বন্ধু জানান, তাদের সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে পুরানো আমলের চিঠি আদান প্রদানের বিউটি হোমার থেকে শুরু করে ব্লু-ম্যাকপাই, ভিয়েল সর্টফেস টামলার, স্যালো, শিল্ড ফিল্ডব্যাক, হলুদ দোভাস, হাইফিলার টামলার, ম্যাকপাই পোটার, পেমোরিয়ান পোটার, র্যান্ড কিং, দোভাস হাইফিলার, কমন্ন্যার, নান, ফিলিগিচার, জার্মান পোর্টার, ফিলব্যাক, সার্টিং, মুক্ষী, ন্যাকেট নিক, ডাউন ফেস, হোমার, বাগদাদ হোমার, মডেনা, লক্ষ্যাসহ নানা প্রজাতির কবুতর। এসব কবুতর সর্বনিু দু’শ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে ম্যাগপাই পোর্টার প্রতি জোড়া ৩৫-৪৫ হাজার টাকা, দোভাস হাই হিলার ২০-৩০ হাজার টাকা ও স্যালো ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
সাঈদুর রহমান ও রিফাত মাহমুদ আরো জানান, কবুতর পালনের জন্য তাদের রয়েছে দুইটি বড় আকারের ঘর।
একটিতে ডিম উৎপাদন ও অন্যটিতে দেশী কবুতর দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। এতে করে বিদেশী কবুতর থেকে প্রতি দু’মাসে তিন জোড়া বাচ্চা পাওয়া সম্ভব হয়।
তারা জানান, প্রতিমাসে কয়েক প্যাকেট গ্লে¬াব, ধুপ, কবুতরের খাবার, কর্মচারির বেতন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিপরীতে গড়ে প্রতিমাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার কবুতর বিক্রি করা সম্ভব হয়। সাধারণত: রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেটসহ অন্যান্য জেলার ক্রেতারা সৌখিন কবুতর ক্রয় করেন।
তবে এটিকে পোল্ট্রি ব্যবসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাংকঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিলে কবুতর পালনকে যে কেউই পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে বলে জানান শাওন ও রিফাত।
খুলনা বিভাগীয় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব আলী জানান, হাঁস-মুরগি পালনের পাশাপাশি কবুতর পালন এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর ফলে বেকার যুবকরা আয় করে যেমন স্বাবলম্বি হচ্ছে তেমনি কবুতরের মাংস প্রোটিনের চাহিদাও মেটাচ্ছে। । . ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।