আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের চলচিত্রের চালচিত্র।

A successful man is one who can lay a firm foundation with the bricks others have thrown at him. আমাদের দেশের চলচিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমার মনে আছে, আমি সর্বশেষ পরিবারের সাথে হলে যেয়ে সিনেমা দেখেছি যখন আমার বয়স ৫ অথবা ৬ বছর। এরপরে পেরিয়ে গেছে অনেক বছর, পরিবারসহ আর হলে যাওয়া হয়নি, বলা যায় যেতে চেয়েও পারিনি। এদেশে চলচিত্রের অনেকগুলো যুগ এসেছে। ওরা এগারো জন, লাঠিয়াল, কোথাও কেউ নেই, ভাত দে, সারেং বউ, ইত্যাদি চলচিত্রের সময় কালকে বাংলাদেশী চলচিত্রের রেনেসাঁর যুগ বলা যায়।

তখন হলগুলোতে মানুষ ঠিক সেভাবেই টিকেটের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো, যেভাবে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের খেলার টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ায়। এর পরবর্তী সময় এদেশি চলচিত্র একই রকম কাহিনীর রোমান্টিক অ্যাকশন ধারায় রূপান্তরিত হয় যা থেকে আজও চলচিত্র নির্মাতারা বেরিয়ে আসতে পারেন নি। এরপর মাঝে মাঝে দু-চারটি বাদে এদেশে তেমন কোন ভিন্নধারার চলচিত্র দেখা যায়নি। এরমধ্যে হঠাৎ করে শুরু হল অশ্লীলতার যুগ। এদেশি ফিল্মমেকাররা কেন যেন হঠাৎ করেই এক্স রেভুলেশন ঘটালেন সম্মিলিতভাবে।

ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এর প্রকোপ কিছুটা স্তিমিত হল। এসব অশ্লীল চলচিত্রনির্মাতারাই কি মনে করে যেন শুরু করলেন আশ্লীলতাবিরোধী আন্দোলন, কিন্তু ততদিনে জনগণ হলবিমুখ। হয়ত এই অভিমানী দর্শকদের ফিরিয়ে আনা যেত বিরতির সময় অশ্লীল মিউজিক ভিডিও প্রদর্শন বন্ধ করে, ভালো মানের, ভিন্নধারার চলচিত্র উপহার দিয়ে। কিন্তু কে চিন্তা করে দর্শকের কথা! কোন সরকার যেমন বক্তৃতা ছাড়া জনগণের কথা চিন্তা করেননি, পরিচালকরাও ভাবেন নি দর্শকদের ফিরিয়ে আনার কথা। এখনো সেই একই কাহিনী [ প্রথমে নায়কের বাবা খুন, এরপর নায়কের প্রতিশোধ, ভিলেনের মেয়ের সাথে প্রেম ] , শ্রেণীবিহীন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও আজেবাজে গান।

দর্শকের তো আর খেয়ে কাজ নেই যে পকেটের টাকা খরচ করে বস্তাপচা সিনেমা নিয়ে তিন ঘণ্টা মেজাজ খারাপ করে হলে বসে থাকবে। এর চেয়ে বরং ঘরে বসে বিনা খরচে টেলিভিশনে ভালো মানের হিন্দি বা ইংলিশ ফিল্ম দেখা আরামদায়ক। এখনো নির্মাতারা ফিরিয়ে আনতে পারেননি চলচিত্রের সোনালি যুগ। অনেকেই প্রযোজকদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন যে বাজেট কম। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, “ইরান, ফিলিপাইন, ইত্যাদি দেশগুলো এত কম বাজেট দিয়ে কিভাবে ভালো ফিল্ম বানায়? সারেং বউ বা ছুটির ঘণ্টার বাজেটই বা কত ছিল?” ভালো চলচিত্র বানাতে ক্যামেরার রেজুলেশনের প্রয়োজন হয়না, কালার কারেকশন করলে আর ভিজুয়াল এফেক্ট দিলেই ফিল্ম ভালো হয়না।

ভালো চলচিত্রের জন্য দরকার ভালো কাহিনী, ভালো মেকিং জ্ঞান, ভালো শট। এগুলোর জন্য প্রয়োজন মাথার, কোটি কোটি টাকার বাজেট না। ইদানিং, দেশে কিছু নতুন তরুন নির্মাতারা ভালো ভালো কিছু চলচিত্র বানাচ্ছেন বা বানাতে চাচ্ছেন যা আশার সম্ভাবনা জাগায়। এঁদের জন্য আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। যদিও এঁদের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, তবুও এঁদের প্রচেষ্টা নতুন কোন ভবিষ্যতের আলো দেখায়।

আমি চাই, নবীনরা চলচিত্র নির্মাণে আসুক। তারা আবার ফিরিয়ে আনুক সেই সোনালী দিনগুলো। এদেশের চলচিত্রের অনেক ফাঁকফোকর আছে, চলচিত্রের তৃণমূল পর্যায়ের কলাকুশলী ও শিল্পীরা [ যাদের উন্নয়ন না হলে চলচিত্রের উন্নয়ন আসম্ভব ] আজও অবহেলিত। সবাই মিলে একসাথে কাজ করে চলচিত্রের উন্নয়ন করতে হবে। এ লক্ষে আমি ও আরও কয়েকজন নবীন নির্মাতা মিলে শুরু করতে যাচ্ছি “Youth : Change The Film” নামে একটি চলচিত্র উন্নয়নকারী সংস্থা।

সকলের সহযোগিতা ও শুভকামনা নিয়ে বদলে দিতে চাই এদেশের চলচিত্রের ধারা, তুলে ধরতে চাই এদেশের চলচিত্র ও এর পেছনে থাকা অবহেলিত তৃণমূল পর্যায়ের কলাকুশলী ও শিল্পীদের দাবীগুলো। আমাদের এই কার্যক্রমে যেকোনো নবীন চলচিত্রনির্মাতা, কলাকুশলী, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ী ও দর্শকদের অংশগ্রহণ সর্বদা সাদরে আমন্ত্রিত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.