বাংলা আমার দেশ ধর্ম-বর্ণের কুৎসিত রাজনীতির কবর রচনা করতেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, হয় নি শুধুমাত্র একটি লাল সবুজ পতাকা এবং একটি নখদর্পণহীন ভূখণ্ডের জন্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আজ ৪২ বছর পরে এই বাংলায় মাহমুদুর রহমান বা হেফাজতে ইসলামের এটি খেয়াল রাখা উচিত যে এই বঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের যে কোন ধরনের চেষ্টা সাধারন মানুষেরাই ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার রায়ের পরে সৃষ্ট গণজাগরণের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলেন এটার ভুল ব্যাখ্যা করতে, যেটার ফলে সেই পুরানো কাসুন্দির অবতারনা করা হল। ধর্ম গেল, ইসলাম গেল, ঈমান গেল এই বলে।
যেটার সাথে আমরা আগে থেকেই পরিচিত, এই ধর্মের বুলি বলে জামায়াত বিরোধিতা করেছিল স্বাধিকার আন্দোলনের, অস্ত্র ধরেছিল আমাদের বিরুদ্ধে, তখন মুক্তিসেনাদের বলা হত ভারতীয় চর। আজকেও রাজাকার নিধনের চলমান আন্দোলন সংগ্রামকেও একই ভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ঢালাওভাবে সবাইকে নাস্তিক বলা হচ্ছে, আর তথাকথিত বক ধার্মিকদের উসকানি দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগে লক্ষ্য ছিল দেশকে পরাধীন রাখা আর এখন যারা সেই সময়ে বিরোধিতা করেছিল তাদের রক্ষা করার জন্য ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে এনে সুবিধা নেওয়ার অপ খেলা বহু আগে থেকেই প্রোথিত।
তারও আগে ১৯৩০ সালে মুসলিম লীগের এলাহাবাদ সম্মেলনে কবি ইকবাল বলেছিলেন- ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানরা কিভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত থেকেও রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে পারে, কিন্তু জিন্নাহর এক গুয়েমির জন্য দেশ ভাগ হয়ে ভারত-পাকিস্থানে পরিনত হল। পাকিস্থান শুরু থেকেই ভারতকে শত্রু ভেবে এগুতে লাগলো এবং ভারত বিরোধিতাকে দেশপ্রেমের এক নাম্বার শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করল, যা আজ অবধি চলছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের জন্য বা মুসলিমদের জন্য আলাদা ভূখণ্ডের জন্য জিন্নাহ এত দিন নায়কের আসনে থাকলেও এটা ধীরে ধীরে ভুল প্রমানিত হচ্ছে। আজকের পাকিস্থানের অবস্থা দেখে যেটা প্রতীয়মান হচ্ছে অনবরত। আর এ আর্গল ভেঙেছে পাকিস্তানিরা।
পাকিস্তানের প্রতি সদয় হয়ে আমাদের দেশেও চলছে ধর্মীয় উম্মাদনা, যেটা একদিকে যেমন এসেছে পাকিস্তান থেকে আবার অন্যদিকে আফগানিস্তান ফেরত কিছু জঙ্গির খায়েশ থেকে, কিন্তু উদ্দেশ্য একই। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা মানতে গেলে দেশ জঙ্গিবাদে ছেয়ে যাবে তার সাথে প্রগতির পথে পথ চলা বন্ধ হবে, বন্ধ হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, হারাবে ৭১ এর চেতনা। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, কে ধর্ম পালন করবে বা করবে না সেটা নিজের ব্যাপার কিন্তু অন্য ধর্মের প্রতি তির্যক মন্তব্য করা নিঃসন্দেহে ধর্মের মুল চেতনার সাথে বেমানান।
অসম্প্রাদিকতা মানে সকল ধর্মের প্রতি সম্মান দেখানো বা শ্রদ্ধা পোষণ করা। তবে সেটা কোনভাবেই নিজ নিজ ধর্মকে হেয় করে নয়।
আজ যাদের ধর্মীয় চেতনা জেগে উঠেছে তারা এত দিন কোথায় ছিল? এমন সন্ধিক্ষণে কেন তারা দেশকে পশ্চাদপদে নেওয়ার জন্য দাবি পেশ করেছে? যে সময়ে দেশে চলেছে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার, আর যারা অভিযুক্ত তারা ধর্মের নামে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীকে হত্যা করতে সাহায্য করেছে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের নির্মমতা পাক হানাদারদেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে কেন হেফাজত চুপ? তখন কি ধর্মীয় চেতনায় আঘাত হানে নি, না কি তারা দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ না!
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআনে তো অমুসলিমদের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে, বলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। আজ তাদের ভায়াবহতার শিকার যারা অন্য ধর্মের অনুসারী তারা, তাদের ঘর বাড়ি পুড়ানো হল, মন্দিরে আগুন দেওয়া হল, প্রতিমা ভাঙ্গা হল, শুধু তাই-ই নয় তারা মসজিদের ভেতরেও অরাজক পরিস্তিতির অবতারনা করেছে, কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে যার ইচ্ছে সে নিজেই ইসলাম হেফাজতের ভুমিকায় অভিনয় করছে আর যাকে ইচ্ছা তাকে নাস্তিক বলে অপবাদ দিচ্ছে, আমাকে নাস্তিক ট্যাগ দেওয়ার বিএনপি, জামাত, হেফাজত বা জাপার কি অধিকার আছে? কি ধর্মের ভিত্তিতে, কি কাজের ভিত্তিতে? প্রসঙ্গক্রমে চলে আসছে- উপমহাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির কথা। কিন্তু আমাদের দেশে ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে ধর্মীয় কতিপয় দল যে ভাবে দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল, ধর্মকে বিতর্কিত করেছিল অন্য কোন দেশে তা করা হয় নি, যদিওবা দেশে প্রচুর বক ধার্মিক মনোভাবের ধর্মীয় দল আছে।
এভাবে হয় না, হতে দেওয়া যায় না, যদি হয়েও যায় তাহলে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে কিচ্ছু থাকবে না, থাকবে না বাঙালির বীরত্বের ইতিহাস, যে জাতি বিশ্বের কাছে মাথা না নোয়াবার জন্য পরিচিত, যে জাতি পরিচিত সংগ্রামের জন্য, যে জাতি পরিচিত অধিকার আদায়ের শপথে ইস্পাত কঠিন মনোবলের জন্য, বিশ্বের মানচিত্রে আমরা অনন্য জাতি যারা ঘোষণা দিয়েই স্বাধীনতা আদায় করেছিল, যেটার পেছনে দল মত নির্বিশেষে সকলের সমান অবদান ছিল______ কিন্তু আজ কিছু উগ্রপন্থী দলের কারনে এত দিনের অর্জন নিভে যেতে পারে না।
বাংলাদেশ ধর্মান্ধ দেশ হতে পারে না, হতে পারে না পাকিস্তান বা আফগানিস্তান।
আমরা আর আমাদের চেতনার জায়গায় আঘাত হানতে দিতে পারি না, পারি না আর মুখ বুঝে চুপ থেকে তামাশা দেখে যেতে, যেটা আমাদের সাথে যায় না, চিরসংগ্রামী আমরা, ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমরা অবিচল থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। আসুন জোট- মহাজোটের সরকারকে, ধর্মান্ধদের পাহারাদার হওয়া থেকে বিরত রাখি, সম্মুনত রাখি চেতনাকে। যে চেতনায় দেশ স্বাধীন করেছিল জাতির সূর্য সন্তানরা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।