কাজটা নিতান্তই খেয়ালের বসে করা।
হাতে আসলেই তখন করার মতো কোন কাজ ছিল না। বসে বসে একটা নতুন পাঁচশ টাকার নোট নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। নতুন কড়কড়ে পাঁচশত টাকার নোট। টাকার কাগজগুলো নাকি খুবই স্পেশাল হয়।
লেদার মিশিয়ে কীভাবে জানি তৈরি করে। টাকাটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকলাম। সত্যিই টাকার নেশা বড় নেশা। জগতে টাকার চাইতে ভালোবাসাই নাকি বড়। কথাটা পুরোপুরি সত্যি।
এইজন্যে মানুষ টাকাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে!
যাই টাকাটা যতই নেড়েচেড়ে দেখছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম। ইশ! একখানা সোয়া পনেরো বাই সাড়ে ছয় সেন্টিমিটারের কাগজের কী ক্ষমতা! এই নোটগুলো সম্মিলিত শক্তি কতটা ভয়ানক হতে পারে আবার কতটা সুন্দর হতে পারে! এরা একত্রিত হয়ে মানুষকে খুনি বানায়! আবার এরায় একত্রিত হয়ে মানুষকে হাজি মোহাম্মদ মহসিনের মতো দানবির বানায়!
টাকার সবচেয়ে মজার দিক হচ্ছে এর কোন স্থায়ী মালিকানা নাই। যখন যার হাতে তখন তার। আমাদের চারপাশে কিছু লোক আছে যারা সবসময় মনে করে তাদের অনেক টাকা, টাকার কোন অভাবই নেই তাদের। শুধু তাদের টাকাগুলো অন্যের পকেটে।
মাঝে মাঝে তাদের সাথে আমাদের দেখাও হয়ে যায় অন্ধকার গলির মাথায়, কিংবা নির্জন কোনখানে! তারা খুব সৌজন্য দেখিয়ে হাত পেতে সে টাকা চেয়ে নেয়। আর আমরাও দিতে বাধ্য থাকি! কারণ টাকার গায়েই লেখা থাকে চাহিবা মাত্র ইহার বাহক কে ডট ডট ডট টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ধনী কারো কাছে গিয়ে বলি ভাই ট্যাকা দেন, না দিলে কিন্তু টাকার উপর লেখা আদেশটি অমান্য করার দায়ে মামলা ঠুকে দিবো। তখন দেখবো উকিলরা কী করেন! এটা টাকা নিয়ে মক্কেলের জন্য সাধারণ মামলা লড়া নয় এটা স্বয়ং টাকা নিয়ে মামলা!
যাইহোক মূল কথায় ফিরে আসি। নতুন পাঁচশত টাকার নোটখানি বড়ই চমৎকার।
ছপাগুলো খুবই নিখুঁত। ঝকঝকে প্রিন্ট। কাগজের গায়ে ছাপ দিয়ে কাগজ পাতলা করে ৫০০ লেখা। এইবার জালনোট যারা বানায় তাদের মনে হলো একহাত দেখে নিয়েছে! এটা অবশ্য শুধু আমার মনে হয়েছে, ওদের হয়েছে কিনা জানি না।
এইবার একটা অপ্রাঙ্গিক প্রসঙ্গ।
সেইদিন আইডিবিতে গিয়েছি একটা প্রিন্টার কিনতে। বিভিন্ন প্রিন্টার দেখছি। কিন্তু কোনটাই পছন্দ হচ্ছিল না। একটা দোকানে যাওয়ার পর দোকানদার তাদের দোকানের প্রিন্টার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন, এটা এতটাই ভালো প্রিন্টার যে এটা নাকি এ পর্যন্ত যত জালনোটকারী ধরা পড়েছে তাদের প্রত্যেকের বাসায় এই প্রিন্টারটি পাওয়া গেছে!!
যাইহোক, মূল বিষয়ে আসি। আসলে এতক্ষণ যা বললাম এটা হচ্ছে ভূমিকা।
আসল কথাটি খুবই ছোট। এটা আমাদের জাতিগত অভ্যাস। আসল কথা খুব বেশি না, কুশল বিনিময়টাই যত বড় হয়। এইজন্যইতো ফেইসবুক এতটা জনপ্রিয় এদেশে।
নতুন পাঁচশত টাকার নোটটা দেখে আমার মনে হলো এটাকে নিখুঁতভাবে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক দলের ছাপ রাখা হয়েছে।
অবশ্যই সেটা বঙ্গবন্ধুর জন্য নয়। বঙ্গবন্ধু নিয়ে কোন আপত্তি করার মতো স্পর্ধা আমার হয়নি, কখনো হবেও না। আমি এই মহামানবকে অন্ধের মতো ভালোবাসি। যাই হোক, এই টাকাতে যেখানে লেখা 'চাহিবামাত্র ইহার বাহককে' এখানে দুই শব্দের মাঝখানের স্পেস এ গড়মিল আছে। চাহিবামাত্র ও ইহার মাঝখানে যে দূরত্ব ইহার ও বাহককে এর মাঝের দূরত্ব তারচেয়ে বেশি।
একটু খেয়াল করলে বুঝা যায়। একটু অসুন্দর। এটাও আসলে আমার মূল বক্তব্য ছিল না। আসল বক্তব্য টাকার অপরপৃষ্ঠায় যেখানে আছে বাংলাদেশের কৃষি নামে একটা ছবি। শিল্পির কল্পনায় উঠে এসেছে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ ও নদীমাতৃক বাংলাদেশের একটি কল্পিত সুন্দর ছবি! এই ছবিটিকে হয়তো আদর্শ ছবি বলা যেত।
কিন্তু একটু সমস্যা আছে তাতে। সেটা হলো, ছবিটি ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে নদীতে তিনটা নৌকা আছে। সেটাও কোন সমস্যা না। আরেকটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে অনেকগুলো গরু নিয়ে কৃষক জমি চাষ দিচ্ছে। গরুগুলো সামনে থেকে ছবিটি আঁকাতো তাই কৃষকের হাতের লাঙ্গল ঢাকা পড়েছে।
আসলে এটাও কোন ব্যাপার নয়। এরপর আরেকটু সামনের দিকে একটা ওয়াটার পাম্পকে ঘিরে আছে অনেকগুলো মানুষ-কাঁধে বিশেষ ধরণের ঝাঁপি নিয়ে। এই ঝাঁপিগুলো সাধারণত অল্পপানিতে মাছ ধরার জন্য। অথবা শিল্পী যদি অন্যকিছু আঁকেন তাতে অবশ্য আমার বুঝতে না পারার অক্ষমতাটাই দায়ী। আসলে এটাও সমস্যা নয়।
সেঁচ যেখানে দেয়া হচ্ছে সেটা কিন্তু কোন ফসলের জমি বুঝা যাচ্ছে না। পরিস্কার না। ধানগাছ তো মনেই হয় না। পাটও মনে হয় না। আমি গ্রামে বড় হয়েছি, এটাকে আমার কাছে কলমি শাক মনে হয়েছে।
অথচ কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষির ছবি আঁকা হয় সেখানে নিশ্চয় তিনটা নৌকার আগে কিছু ধানগাছ আসা উচিত ছিল। ধানগাছ না দেয়ার পিছনে কারণ হিসেবে যদি বিরোধীদলের প্রতিক হয়ে থাকে তাহলে খুবই সংকীর্ণমনার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ধান বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি না। এদেশের ষোলকোটি মানুষের খাদ্যতালিকার প্রধান খাবার আসে ধান থেকে যা আমাদের কাছে চাল তথা ভাত হিসেবে পরিচিত। এখানেই আসলে আমার আপত্তি।
সামান্য একটা দলীয় প্রতিকের কারণে এতবড় সত্যটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া কতটা ঠিক হলো জানি না। বাংলাদেশের কৃষি নামক কোন ছবিতে তিনটা নৌকার বদলে একগোছা ধানগাছ অথবা একটা পাটগাছ অথবা এক টুকরো চা-বাগান অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক দৃশ্য। যাইহোক, সবকিছু যদি শেষমেষ কুমিরের লেজের মতো খাঁজকাটা খাঁজকাটাতে গিয়ে শেষ হয় তখন অবাক না হয়ে পারি না। ২০১১ সালে এসে এখনো এইটুকু সংকীর্ণমনার উর্ধ্বে আমরা উঠতে পারলাম না! আফসোস! টাকার মতো একটা জাতীয় সস্পদও দলীয়করণের অসুস্থ সংস্কৃতির বাইরে গেল না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।