অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই আমাদের কত দুঃখ, কত কষ্ট!
যদি কোথাও আন্তর্জাতিক দেশভিত্তিক কোন কিছুর জরিপ পাই, যে কোন সেক্টরেরই হোক না কেন, প্রথম ন্যানো সেকেন্ডেই মাথায় প্রশ্ন চলে আসে, আমার মান আমার দেশের নাম উল্লেখ আছে কি? যদি থাকে তাহলে কোন অবস্থানে?
তার পর প্রথমেই পড়ে দেখি ওটার থিম কি?
যদি ইতিবাচক কোন কিছুর জরিপ চলে তাহলে লিস্টের নিচ থেকে পড়া শুরু করি। আর নেতিবাচক কিছু দেখলে উপর থেকে।
এই পদ্ধতিতে দেখি ফলাফল জানার উৎসাহ থেকে এবং উৎকন্ঠায় থাকার সময় কমানোর জন্য।
এবং দুঃখজনকভাবে এটাই কার্যকরী পদ্ধতি। আমরা খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড।
সাধারনত আমাদের অবস্থান, হয় উপরে নাইলে নিচে, মাঝামাঝি থাকার জন্য বাংলাদেশ না!
দেশের বাইরে থাকি বলে, দেশের অস্তিত্ব নিজের মাঝে বড় বেশী করে টের পাই।
আমাদের দুঃখের কথা তো সবাই জানি। কত কত দুঃখ।
কিন্তু বিদেশীদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাঝে যখন দেশের কথা বলি, তখন বলতে বলতে চোখের সামনে কিছু বিষয় পরিষ্কার হতে থাকে। আর একাধিক বৎসর ধরে এসব বলতে বলতে আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম যে, আমি আসলে প্রচন্ড গর্বিত বাংলাদেশী।
আমার গর্বের অংশ মোটেই নজর এড়িয়ে যাবার মত নয়!
কিছুটা অহংকারও কাজ করে ইদানিং যদিও এটা কাটিয়ে উঠতে হবে, তবে সত্যি বলতে কি মাঝে মাঝে উপভোগও করি!
সবচেয়ে বেশী অহংকার কখন কাজ করে জানেন?
যখন নিজের দেশের নাম বলি, বাংলাদেশ। সাথে সাথেই জানিয়ে দেই, আমার দেশের নাম করন হইছে আমাদের ভাষার নামে। কারন ভাষাকে আমরা অনেক বেশী ভালবাসি তো। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির কিছু মানুষ ব্যাতীত আমাদের দেশের সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে প্রতিটা মানুষ বাংলায় কথা বলে! অনেকে আবার আমার গর্ব দেখে একটু খোচা দেয়ার জন্য জিজ্ঞেস করে তোমরা লেখো কোন বর্ণে? আমার গর্ব কমবে কি! উল্টা হাসি কান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়। সগর্বে জানাই আমাদের নিজস্ব বর্ণমালা আছে, নাম, ঐটাই "বাংলা"! হাতে সময় আর কাগজ-কলম থাকলে বাংলায় ওদের নাম সহ লিখে দেই, বাংলা ভাষায় তোমার নাম লেখা হলো, শুভেচ্ছা!
এটুকুতে যখন ওদের চোখে সমীহ দেখি , কি যে ভাল লাগে!!!
কারন নিজস্ব ভাষা অনেকের থাকলেও নিজস্ব বর্ণমালা কয়জনের আছে?
এরপর, আসি দেশের বিষয়ে আরেকটু গভীরে, তখনই জানায় দেই, যে আমাদের স্বাধীনতা কিন্তু শত্রুর সাথে চুক্তি করে পাওয়া না!
আমরা রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধে করে, পুরা জাতি বিলীন হয়ে যাবার শপথ নিয়ে রণক্ষেত্রে মাত্র ৯ মাসের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জিতে ১৯৭১ সালে দেশ অর্জন করছি, হুহ ।
আমার ভাবটা অনেকের কাছে একটু বেশী মনে হইলেও আমি জানি মোটেও বেশী না। কারন এই দুনিয়ায় বিজয়ী জাতি কয়টা আছে একটু হিসাব করে দেখেন
জার্মানী-রাশিয়া-জাপান-যুক্তরাষ্ট্র এমন আরো কত কত দেশের রিসেন্ট যুদ্ধের ইতিহাস পরাজয়ের ।
পরাজিত ২-১টা জাতি এবং ওদের জনগণের সাইকোলজি একটু গভীরভাবে দেখলে টের পাওয়া যায় বিজয়ী জাতি'র ভাবটাই আলাদা।
এরপর প্রাক্তন জমিদার ভাব গলায় এনে আসি আবহাওয়ার কথায়, বলি আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই খালি গায়ে থাকা যায়, যেইখানে মন্চায় সেইখানে ঘুমান যায়, পানি যেই জিনিস সভ্যতার সূচনা করছে সেইটা তো আমাদের দেশে ফ্রি! যোগাযোগ ব্যাবস্থা সেই প্রাচীন যুগ থেকেই চমৎকার! নদী কেন্দ্রিক, স্মুদ এবং সংগঠিত!
মাটি তো এতই উর্বর যে, ফল খেয়ে বিচি ফালাইলে গাছ হয়ে যায়। শাক সব্জি এবং মাছের জন্য কোন শ্রমেরই দরকার হয় না।
ঘরে থাকা নারীরাই গৃহস্থালী কাজের ফাঁকে ওগুলা রক্ষানাবেক্ষন ও সংগ্রহ করতে পারে!
ভেবে দেখেন, দুনিয়ার সব দেশেই ঠান্ডা নাইলে গরম! মাঝে কয়েকমাস দিনের বেলা একটু শান্তি। কিন্তু নরমালি দৌড়ের উপরেই থাকতে হয়। আমি ভাবি , টেকনোলজির যুগে আসার আগে কি দৌড়ের উপরেই না ছিল এরা!
এরপর বিদেশী শ্রোতা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে, সাগর আছে?
আমি বলি, সাগর আছে মানে? দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সি-বিচ তো আমার দেশেই! তোমাদের এই সি-বিচ যেটা একটা দৌড় দিলে একটু পরেই শেষ, শুরু হবে পাত্থর-মাত্থর! আর আমার বিচে তুমি ঘোড়া নিয়ে ২ ঘন্টা দৌড়াইতে পারবা! আর মজার কথা হইলো, আমার সাগরের পাড়ে যেই আকাশ এবং বাতাস ঐটা মহাজাগতিক।
বলে , ক্যামনে? ততক্ষনে আমার গলায়, পাড়া-মহল্লার "ভাবে"র টোন!
আমি বলি শুনো, আমার সাগরের দক্ষিন থিকা সরল রেখা বরাবর কোন দেশ তো দুরের কথা তেমন সাইজের কোন দ্বীপও নাই। এক্কেবারে এ্যান্টার্কটিকা! তাইলে বুঝ আমি কোন সাইজের আকাশ দেখি?
সেজন্যই দখিনের খোলা আলো-বাতাসে প্রতিষ্ঠিত আমাদের সাংস্কৃতি হইলো সমাজের আত্মা।
মারামারি-কাটাকাটির ফলাফল হিসেবে পাওয়া কোন ন্যাশনাল কোড না! আমাদের ন্যাশনাল কোড পাইবা আমাদের প্রবাদ বাক্যগুলোতে।
আমাদের নৈতিকতার সুচরিত্রের ছোঁয়া পাইবা আমাদের গানে-নাচে। আমরা বাজনার গান গাই না, আমরা গান গাই সুরের। আমরা চর্চা করি কন্ঠে'র! আমাদের নাচ আনন্দের প্রকাশই নয় শুধু, আমাদের নাচের মুদ্রা আছে! ব্যাপক মেসেজ আছে! আমাদের চিত্রকরেরা বিশ্ববিখ্যাত। আমাদের দেশে ঋতুগুলো এখনো স্বতন্ত্র!
আমাদের গানের লিরিক পূর্ণ হয়ে থাকে গভীর দর্শনে।
আমাদের দেশের খাবার দাবারের দাম দুনিয়ার অন্যতম সস্তা হইলেও আমাদের সংস্কৃতির যেই ওজন, ঐটা বহু ধনী ধনী জাতের কাঁধে উঠাইয়া দিলে নির্ঘাত আহত হইবো। আমাদের গানের এলিমেন্ট হইলো দেহতত্ব, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজব্যাবস্থা! প্রেম প্রীতির আমি-তুমি-আমরা অথবা নাচো আর বাঁচো টাইপের গান শুনলে অতীতে তাদের সমাজচ্যুত করে দিতাম। উল্টা এই গ্লোবাল সস্তা সংস্কৃতি আমাদের ওজন কমাচ্ছে! সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচারের ব্যাপারে আমরা ততটাই কঠোর মাননিয়ন্ত্রন করি যতটা জার্মানরা গাড়ি'র ইঞ্জিনের মান নিয়ন্ত্রন করে! আমাদের সাংস্কৃতিক বাজারে জায়গা দখল করা খুবই কঠিন। আর তেমন কোন প্রচেষ্টা দেখা গেলেই, আমরা হৈ-হৈ করে সাবধান করে দেই।
এত এত ঐশ্বর্যের খবর শুনে, দুয়েকটা হিংসুটে পোলিশ-মোলিশ থাকে যারা প্রশ্ন করে বসে তোমরা এত গরীব কেন?
আমি বলি হ, গরীব, প্রাকৃতিক সম্পদহীন ১৬ কোটি মানুষের দেশে অর্ধেক জনসংখ্যা মানে, নারীদের ঘরে বসাইয়া এবং গড়ে ৫ জনের পরিবারে একজনের ইনকামে ২০ বছর নিচে আর ৬০ বছরের উর্ধ্বের মানুষজন বসাইয়া বসাইয়া খাওয়ানের দায়িত্ব দিলে তোমার আত্মহত্যা করতে কয়দিন লাগে জানাইও!
বার্টার ইকোনমি মানে বিনিময় প্রথার অর্থনীতির যুগে আমরাই ছিলাম শ্রেষ্ঠ! আমাদের দেশ খুজে বের করার জন্য পুরা বিশ্ব পাগলা কুকুরের মত হয়ে উঠছিল! পুরা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এলাকায় পণ্য বেচতে বা সাহায্য পাওয়ার আশায় ভীড় জমাতো!
দুনিয়ার অন্যতম দুর্বল অর্থনীতির চাপ স্বত্ত্বেও, কোল্ড ওয়ারের বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশগুলোর অভিশাপ "মিলিটারি শাষন" ধুয়ে মুছে গত ২০ বছর ধইরা নারী নেতৃত্বে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলতেছে বাংলাদেশে, যেই দেশটার সার্ভাইভ করার কোন সম্ভাবনাই ছিল না, সেই দেশ সকল জ্ঞান পাপী ও রাজনৈতিক পাইতালের ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমান করে সার্বভৌম থেকে আজকে ধারাবাহিক উন্নয়ন করতেছে!
এই দুনিয়া কতদিনের? মাত্র ২-১'শ বছরের ইতিহাস দেইখাই বাংলাদেশরে নগণ্য মনে করলে বিরাট ভুল হবে!
এটুকুর পরই মোটামুটি সবাই পলায়।
তবে আগ্রহী দুয়েকজন চোখে যথেষ্ট সন্মান ও সমীহ জ্ঞাপন করে আরো কিছু জানতে চায়।
শিক্ষার অবস্থা জানতে চাইলে বলি, বাংলাদেশীরা আসলে শিক্ষা দিতে যত আগ্রহী বা দক্ষ শিক্ষা নিতে ততটা না!
তবুও বিশ্বের যেকোন দেশের যেকোন ক্লাসে উঁকি দিয়ে দেখো, যদি কোন বাংলাদেশী স্টুডেন্ট পাও তবে দেখো তো টপ ৫ এর নিচে কেউ আছে কি না? স্টুডেন্ট কম থাকতে পারে কিন্তু ১জনও যদি থেকে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই টপ ৫ জনের ১ জন। যেকোন টিচার যিনি বাংলাদেশী ছাত্র দেখছে, জিজ্ঞেস করে জেনে নিও আমাদের মেধা সম্পর্কে তাদের মুল্যায়ন।
আমরা যেই কঠিন প্রতিযোগীতা পেরিয়ে আসি, অন্তত ১০-১২ পৃষ্ঠার রচনা লেখে বড় হই, আমাদের সমবয়সী অন্য কোন দেশের মানুষ ঐ পরিক্ষায় বসারই সাহস পাইতো না!
এটুকু বলেই বলি, শুন , আমাদের পকেট এখনো ফাঁকা তাই সবাই সুযোগ পাইলেই অপমান করে বসে। কিন্তু ঘটনা এমন না, আমরা বড় মাছ।
ফিলিপিন, থাইদের মত বা অন্যান্য এশিয়ান দেশের মত বিদেশী অর্থনীতিতে নির্ভরশীল উন্নয়ন গেম আমরা খেলি না। আমরা জায়গামত মাথা খাটাই।
জানতে চায় কেমন? আমি বলি, ডঃ ইউনুসের নাম শুনছো? ব্যাংকিং নামের একটা সেক্টর যেইটা দুনিয়ার শুরু থিকা শুধুমাত্র বড়লোকদের স্বার্থ দেখে আসছে, আমাদের বাংলাদেশী পোলা ইউনুস এই ব্যাংকিংরে গরীবের উন্নতির কাজে লাগাইয়া দিছে। এখন সামাজিক ব্যাবসা বানাইতেছে। আমরা দুনিয়া শেপ করি।
এর পর খাবার দাবারের এটিকেসি, সমাজিক মুল্যবোধ, নৈতিকতা এবং সাহিত্যর মত অনেক অনেক বিষয় বলা বাকী থাকতে থাকতেই সবাই বলে, ওয়াও, আসলেই তুমি তোমার দেশ'কে ভালবাসো এবং জানো, ইউ আর প্রাউড!
এতক্ষনে ভাবের প্রভাবে প্রভাবিত গলার চলতি টোনটা বদলে যেয়ে আবার সুশীল হয়ে যায়।
আমি কব্জিতে গত ৬ বছর ধরে আটকে থাকা "পজেটিভ বাংলাদেশের" ডিজাইন করা লাল-সবুজ রাবার ব্যান্ডটা তুলে ধরে বলি, ইয়েস, ইনডিড আই এ্যাম এ প্রাউড বাংলাদেশী! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।