আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসএম হলের বারান্দায় রাত কাটায় ৩০০ ছাত্র

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায় রাত কাটে কমপক্ষে ৩০০ ছাত্রের। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হলটি বিশ্বঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে, কিন্তু ছাত্রদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। শুক্রবার হলের দোতলার বারান্দার পূর্বপাশে গিয়ে দেখা যায় কাপড়ের পর্দা লাগানো। ভেতরে দেখা যায়, ৭-৮ জন ছাত্র ঘুমিয়ে আছে। কথা হয় উর্দু বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আলমগীর হোসেনের সঙ্গে।

তিনি বর্ণনা করেন তার হল জীবনের অভিজ্ঞতা। গত কয়েক মাসে তার দু’টি মোবাইল খোয়া গেছে। কোন নিরাপত্তা নেই। বৃষ্টি এলে সব ভিজে যায়। বৃষ্টির সময় বিছানা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।

শীতের সময় আরও সমস্যা। কোন লাইট নেই। নেই পড়ার টেবিল। এ অবস্থায় তারা কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্র বসবাস করছেন ১২ নম্বর কক্ষের বারান্দায়। আলমগীর এ সময় বলেন, আমরা তো ভালই আছি।

গিয়ে দেখেন পূর্ব ব্লকে। সেখানে কি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, গেলেই দেখতে পাবেন। দোতলার পূর্ব ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, হৃদয় বিদারক দৃশ্য। কমপক্ষে ২৫০ ছাত্র বসবাস করছেন বারান্দায়। সেখানে থাকার কোন পরিবেশ নেই।

বসবাসরত ছাত্ররা তাদের বাবা-মাকে জানান না তারা কিভাবে আছেন। একজনের জায়গায় থাকেন ৪ জন। যে কাতে ঘুমান সেই কাতেই রাত পার করতে হয়। কোন রকম বৃষ্টি এলেই সব ভিজে যায়। রাতের বেলা কোন আলোর ব্যবস্থা নেই।

নেই পড়ার কোন পরিবেশ। হল কর্তৃপক্ষও তাদের খোঁজখবর নেন না কখনও। কষ্টে দিন-রাত কাটালেও তাদের যেতে হয় নিয়মিত মিছিল সমাবেশে। এছাড়া সপ্তাহে ৪ দিন গেস্টরুমে ছাত্রলীগের স্লোগান প্র্যাকটিস করতে হয়। পরীক্ষা থাকলেও মাপ নেই।

বাংলা বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম বলেন, কি যে কষ্টে আছি তা বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। তিনি বলেন, আমি এখানে ৪ মাস ধরে থাকছি। পড়ার কোন পরিবেশ নেই। রাতে ঘুমাতে পারি না। ছারপোকার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে হয়।

খুব ঘুম পেলে মসজিদে গিয়ে ঘুমাই। আমার মতো অনেকেই মসজিদে স্থায়ীভাবে ঘুমায়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শরীফুল ইসলাম ৪ বছর ধরে বারান্দায় বাস করছেন। তিনি বর্ণনা করেন তার কষ্টের দিনগুলোর কথা। তিনি ১১০০ টাকার সেলফোন সেট ব্যবহার করেন।

প্রায়ই এখানে সেট চুরি হয়। তিনি বলেন, আমি এখনও হলে সিট পাইনি। প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয় না বৈধ ছাত্রদের সিট দিতে। তারা শুধু টাকা আদায়ের জন্য আবাসিকতা দেয়। এরপর তাদের আর খবর থাকে না।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন হল এটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য আলাদা হল রয়েছে। কিন্তু একসময়ে ছাত্রীদের এসএম হলের সঙ্গে সংযুক্তি (অ্যালটমেন্ট) দেয়া হতো। পাকিস্তান আমল থেকে এবং বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশকে বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্বদাতা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই এসএম হলেরই অ্যালামনাই। এ কারণে এসএম হলের সাবেক ছাত্রদের সংগঠন বা ‘অ্যালামনাই এসোসিয়েশন’র যে কোন অনুষ্ঠান মানেই জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের পুনর্মিলনের উৎসবের নামান্তর।

বর্তমানে হলে যে সংস্কার কাজ চলছে, তার অর্থের সংস্থানে এই অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের অবদান রয়েছে বলে জানা গেছে। এসএম হলে বর্তমানে যে কয়টি গণরুম আছে তার মধ্যে পূর্ব ব্লকে কমপক্ষে ২৫০ জন, খেলার রুমে ৭০-৮০ জন, ১১ নম্বর কক্ষে ৩৫-৪০ জন ও ১৫৬ নম্বর কক্ষে ৪০ জন ছাত্র থাকেন। হলে আবাসিক সিটের সংখ্যা মাত্র ৪০৬টি। সেখানে ২৫০০-৩০০০ ছাত্র অবস্থান করছে। হল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ১৩০০ ছাত্রের তালিকা আছে।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন হল প্রভোস্ট। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক গোলাম মোহাম্মদ ভূঞা বলেন, আমরা আছি উভয় সঙ্কটে। যদি হলে থাকতে না দেই তবে তা হয় মানবাধিকার লঙ্ঘন। আর বারান্দা-রিডিং রুমে ঘুমালে তা হয় মানবেতর জীবন-যাপন। তিনি বলেন, এসএম হল এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ, এই হলের কোন ভবন ভাঙা যাবে না।

ছাত্রদেরও বের করে দেয়া যাবে না। সমস্যা সমাধানের আমাদের হাতে কোন পথ নেই। তিনি বলেন, যারা বারান্দায় বসবাস করে তারা হলের বৈধ ছাত্র না। তাদের আমরা বের করে দিতে চাইলে আন্দোলন হবে। ছাত্র সংগঠন তাদের ব্যবহার করে।

ছাত্ররা জানান, রিডিং রুমে চেয়ার-টেবিল সঙ্কট রয়েছে। হল লাইব্রেরিতে পুরনো অনেক বই রয়েছে। তবে আধুনিক এবং সমসাময়িক অনেক বই নেই। বিভাগওয়ারি বই চেয়ে ছাত্রদের হতাশ হতে হয়। লাইব্রেরির সময়সূচি নিয়েও রয়েছে অভিযোগ।

দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে লাইব্রেরি। অথচ ওই সময়ে অনেকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আবার কেউ টিউশনি কিংবা মধুর ক্যান্টিন-টিএসসিতে সময় কাটে। ছাত্রদের দাবি, সন্ধ্যা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত হল লাইব্রেরির সময়সূচি পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। হলে প্রায় ২০টি কক্ষ রয়েছে ছাত্রলীগের দখলে। এছাড়াও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মাস্টার্স ছাত্রদের রুম ও সিট দখল রাখা, ক্যান্টিনে পচা-গলা সবজিসহ নিম্নমানের খাবার প্রদান, দুর্গন্ধ-নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, হলের সামনে বস্তি এবং হল কম্পাউন্ডে ময়লার ভাগার, দেয়াল ঘেঁষে ভাসমান মানুষের মলমূত্র ত্যাগের অসংখ্য খোলা-অস্থায়ী ব্যবস্থা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না হওয়া, ইন্টারনেট সুবিধার অভাব, হাউজ টিউটর ও কর্মচারীদের নিয়মিত ডিউটি না করার মতো সমস্যা রয়েছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন মাহী বলেন, ক্যান্টিনের খাবারের মান এতই খারাপ যে, আমরা পুষ্টি নয়, বেঁচে থাকার জন্য খেয়ে থাকি। এখানে তৃপ্তির কোন বিষয়ও নেই ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.