আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসএম সুলতান : আমাদের শিল্পচিত্রের মুখ



আজ ১০ আগষ্ট । বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানে ৮৪তম জন্মদিন। তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা । ---------------------------------------------------------------------------------- এসএম সুলতান : আমাদের শিল্পচিত্রের মুখ -------------------------------------------------- বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের (১৯২৩-১৯৯৪) প্রকৃত নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। কিন্তু এসএম সুলতান নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেন।

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল জেলার মাসিমদিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রী। নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে পাঁচ বছর পড়াশোনার পর সুলতান বাবার সঙ্গে কাজে যোগ দেন। তার বাবা যেসব ভবনের কাজ করতেন, সুলতান সেসব ভবনের নকশা আঁকতে শুরু করেন। এর ফলে চিত্রশিল্পের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে।

১৯৩৮ সালে স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের আর্থিক সহযোগিতায় সুলতান কলকাতায় পৌঁছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহযোগিতায় সুলতান আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সুলতান অবশ্য পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তিন বছর অধ্যয়নের পর তিনি স্কুল ছেড়ে দেন এবং একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সুলতান ছিলেন চিরকালের এক বাউন্ডুলে বোহেমিয়ান।

জীবন শুরুর সে সময় তিনি নেমে আসেন রাস্তায়, ঘুরতে থাকেন ভারতের নানাপ্রান্তে জীবন ধারণের জন্য তিনি এসময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প গড়ে তোলা সম্মিলিত বাহিনীর সৈন্যদের ছবি আঁকেন। সুলতানের আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয় ১৯৪৬ সালে সিমলায়। কিন্তু এসময়কালে তার আঁকা একটি ছবিও আজ আর নেই। এমনকি নেই একটি ফটোগ্রাফও; কেননা সুলতান সবসময়ই নিজের কাজ সংরক্ষণের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। কিছুদিনের জন্য সুলতান কাশ্মিরে বাস করেন।

এ সময় তিনি মূলত ল্যান্ডস্কেপ ও পোট্রেট আঁকেন। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর তিনি নড়াইলে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৫১ সালে তিনি করাচি যান। সেখানকার একটি স্কুলে তিনি আর্ট শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পঞ্চাশ দশকে সুলতান আমেরিকা যান।

আমেরিকার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো ও বোস্টনে তার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়। এরপর তিনি আসেন লন্ডন। সেখানকার প্রদর্শনীতে সে সময়ের বিশ্বের সেরা চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে সুলতানের আঁকা ছবি স্থান পায়। ১৯৫৩ সালে তিনি আবারো ফিরে আসেন জন্মস্থান নড়াইলে। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এসএম সুলতান পেয়েছেন একুশে পদক (শিল্পকলায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক-১৯৮২) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৯৩।

অতি অল্পসংখ্যক ব্যক্তিত্বই একাধারে এদেশের সর্বোচ্চ দুটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এসএম সুলতানের আঁকা ছবিতে ক্যানভাস অনেক বড়; যেন বিরাট একটি মঞ্চ, যেখানে জীবন নাটক মঞ্চস্থ হয় নানা রঙে। সুলতান বিশ্বাস করতেন প্রান্তিক মানুষ তাদের যাবতীয় অপ্রাপ্তি, ত্রাস, না পাওয়ার পরও জীবনযুদ্ধে নিয়তই সংগ্রামশীল। গ্রামবাংলার এসব জীবনজয়ী ও সংগ্রামমুখর মানুষই হাস্যমুখর ও মাংসল অবয়ব নিয়ে স্থান পেয়েছে সুলতানের ছবিতে। এই বরেণ্য শিল্পী ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর নড়াইলে মৃত্যুবরণ করেন।

নড়াইলের চিত্রানদীর পাড়ে সুলতানের নিজ হাতে গড়ে তোলা ব্যতিক্রমী আর্ট স্কুল ‘শিশু স্বর্গ’ সারাবিশ্বের সামনে এই ঋষি শিল্পীর স্মৃতি তুলে ধরছে। তার জন্মস্থান নড়াইলের এই শিশু স্বর্র্গে সুলতানের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলালিংকের পৃষ্টপোষকতায় ৯ আগস্ট প্রথমবারের মতো সুলতান জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি আয়োজন করেতে যাচ্ছে পাঁচদিনব্যাপী সুলতান উৎসব-২০০৮। পাঁচদিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে সুলতানের কর্ম ও তার আঁকা ছবির প্রদর্শনীসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকছে। উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী একক : সিমলা-ভারত, ১৯৪৬। পাকিস্তান-করাচি ১৯৪৮, ১৯৪৯ , যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য - নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, শিকাগো ইন্টারন্যাশনাল হাউজ, মিসিগান ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন ১৯৫৯।

বাংলাদেশ - শিল্পকলা একাডেমী গ্যালারি ১৯৭৬, জার্মান কালচারাল সেন্টার, ঢাকা- ১৯৮৭ । বাংলাদেশের নয়জন সিনিয়র শিল্পীর গ্রুপ প্রদর্শনী, ১৯৯৩। তিনি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডের ভিক্টোরিয়া এমবাঙ্কমেন্টে আয়োজিত প্রদর্শনীতে অংশ নেন। প্রদর্শনীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, জর্জ ব্রাক, পল লিসহ আরো অনেক বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে এক সারিতে সুলতানের ছবির প্রদর্শনী হয়। --------------------------------------------------------------------------------- যায়যায়দিন -থেকে সংকলিত


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.