মুসলিম দেশে মহিলাদের অধিকার সর্ম্পকে কত লেখা লেখি হয়েছে এমন কি নারী মুক্তির জন্য পশ্চিমা শক্তি মুসলিম দেশে সামরিক আগ্রাসন চালানেরও নজির আছে। কিন্তু পশ্চিমা নারীবাদী মহলে মিশরের গনতান্ত্রিক জাগরনের ব্যপারে তেমন কোন সাড়াশব্দ করতে দেখা যায় নাই। সে জন্য মিডিয়াতে এ বিষয়ে তেমন কাভারেইজ না থাকায় অনেকেই হয়ত জানেন না মিশরের গনতান্ত্রিক অন্দোলনে ২৬ বছর বয়সি, মিশরীয় মহিলা আসমা মাহফুজ সহ অন্যান্য মহলিাদের এর অবদান কি ছিল ?
এপ্রিল ৬ মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে আসমা মাহফুজের ভুমিকা ছিল অনেক বেশী।
২০০৮ সালের বসন্তে একটি মিশরীয় ফেইসবুক গ্রুপ তৈরী করে শুরু করেন আন্দোলন যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল কায়রো শহরের উত্তরে অবস্থিত আল মাহাল্লাহ আল কোবরা শিল্প নগরের শ্রমিকদের সাহায্য করা যারা সেখানে ৬ই এপ্রিল শ্রমিক ধর্মঘটের আয়োজন করে।
আসমা বিজনেস এডমিনেষ্ট্রনে উপর কায়রো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৮ সালে।
ডিগ্রি প্রাপ্তির সাথে সাথে সামাজিক ওয়েবসাইট গুলাতে (social media pages) মিশর জোড়ে সক্রিয় একজন একটভিষ্ট হিসাবে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলতে সক্ষম হন এবং সে জন্য আসমা ও তার পরিবারকে মিশরীয় নিরাপত্তাবাহিনীর বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।
আশেষে রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও শ্রমিক বিক্ষোভে অংশগ্রহনের কারনে তার কর্মস্থল আল সাইমা এক্সপোর্ট কোম্পানী থেকে আসমা বরখাস্ত হন।
তাকে জানুয়ারি, ২০১১ সালের মিশরের সৈরাচারী শাসন বিরোধী গনতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের অন্দোলনের উল্লেখযোগ্য প্রতীক হিসাবে গন্য করা হয়।
ফেইস বুক, টুইটার ও তার জানুয়ারী ১৮ তারিখের সে বিখ্যাত ইউটিওবের ভিডিও হাজার হাজার মানুষকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগদানে মানুষকে উৎসাহিত করে। তিনি শুরু করেন একথা বলে যে, চারজন মিশরীয় নিজেদেরকে আগুনে আত্মহূতি দিয়ে প্রতিবাদ জানালো ক্ষুদা, দারিদ্র, অধঃপতন, অবিচার ও অবমাননার বিরোদ্ধে এ আশায় যে তাদের এ আত্মত্যগ তিউনেশীয়ার মত মিশরীরেও ন্যায় বিচার, নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা, মুক্তি ও মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে গনআন্দোলন শুরু হবে।
ইন্টারনেটে এই ভিডিও পোষ্ট করার পর একদিন তিনি পোষ্টার হাতে তাহরীর স্কয়ারে গিয়ে দাড়িয়ে মানুষকে তার সঙ্গে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিতে আহ্বান করতে থাকেন এবং এমন কি পোষ্টারে নিজের ফোন নং টা লিখে রাখেন। অনেক সময় সেখানে দাড়িয়ে থাকার পর মাত্র তিনজন ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগ দেন কিন্তু তাদের সবাইকে শীঘ্রই নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করে ফেলে।
ভিডিওতে আসমা আরো বলেন, "ওদের এই আত্মত্যাগে তারা মৃত্যুকে ভয় করেননি আর আমরা নিরাপত্তাবাহীনির ভয়ে কাতর! কল্পনা করতে পারেন? আপনি কি সে রকম?
হাঁ, আমি আমার নিজের গায়ে আগুন দিয়ে পুড়াবো না । যদি নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা আমাকে আগুনে পুড়াতে চায় তাদেরকে তা করতে দেন। আপনারা নিজেদেরকে যদি পুরুষ হিসাবে দাবী করেন তাহলে আমার সঙ্গে আসুন জানুয়ারীর ২৫ তারিখ।
যারা বলেন মেয়েদেরকে বিক্ষাভ করতে যাওয়া উচিত নয় কেননা পুলিশ প্রহার করতে পারে তাহলে আমাকে ও অন্যান্য মেয়েদেরকে সেখানে পুলিশের প্রহার থেকে রক্ষা করতে আপনি এগিয়ে আসুন যদি আপনার আত্মনম্মান ও মর্যাদাবোধ থেকে থাকে এবং আপনার উচিৎ আমার সঙ্গে ২৫ জানুয়ারী তাহরীর স্কয়ারের বিক্ষোভে যোগ দেয়া।
আর যারা মনে করেন এসবের কোন গুরুত্ব নাই কেননা সামান্য কিছু লোকের সমাগম হবে মাত্র, তারাই আসলে সমস্যার কারন। আমি তাদেরকে বলতে চাই আপনারাও প্রেসিডেন্টের মত বিশ্বাসঘাতক হিসাবে পরিচিত হবেন। আমাদের সঙ্গে আপনার উপস্থিতি অবশ্যই পার্থক্য বয়ে আনবে।
আপনার প্রতিবেশী,বন্ধুবান্ধব,সহকর্মী,অত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে আলাপ করুন এবং তাদেরকে নিয়ে সে দিন তাহরির স্কয়ারে আসুন।
ঘরে বসে থাকলে আমাদের অবমাননা চলতে থাকবে। আপনার সম্মান ও মর্যাদা থাকলে আসুন বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্য মেয়েদের সহ আমাকে রক্ষা করতে । ঘরে বসে থাকলে আজ যা কিছু অন্যায় অবিচার চলে আসছে তা আপনার উপর চালু রাখতে আপনি সাহায্য করছেন। জাতির ও জনতার কাছে অপনাকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নত করবেন। "
বিশ্বের মানুষ যখন ভাবছিল ৩০ বছরের স্বৈরাচারী কঠোর হস্তের দমন নিপীড়নের শাসন ব্যবস্থার বিরোদ্ধে ভয় ভীতির অবসান করে কি ভাবে মিশরীয় জনগনের মাঝে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সাহস জাগলো?
আসলে এর পিছনে আসমা মাহফুজের মত মহিলাদের ভুমিকা যে যতেষ্ট গুরুত্ব রেখেছিল তা অস্বীকার করা যায় না।
আসমা মাহফুজের ভিডিও শুনতে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন:
Click This Link
সুত্র: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।