মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত। তখন খুব ছোট। প্যাংট পরি। ন্যাংটা হয়ে গোসল করি। পড়াশুনার চেয়ে দুষ্টুমি বেশী পছন্দ করি।
সারাদিন শুধু খেলা-ধুলা এবং ছোটাছুটি। মা-বাবার বকাবকি আর স্কুল মাস্টারের শাসানী খেয়েও সেই দিনগুলো বেশ চলছিল। যা আজো আমাকে দোলা দিয়ে যায়। নিয়ে যাই সেই মজার দিনগুলোতে। যেখানে রয়েছে স্মৃতির হাজারো পাতা।
কি মধুর সেই সব স্মৃতি! স্মৃতির পাতা থেকে উদ্ধার করা ২টি স্মৃতিঃ
ছোইলা ফুলের মধু খাওয়াঃ
স্বরূপকাঠীর বুক চিড়ে বয়ে গেছে বিখ্যাত সন্ধ্যা নদী। নদীর দুই কূল ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য গ্রাম। বিষ্ণুকাঠী তার মধ্যে একটি। স্বরূপকাঠী থানা সদর থেকে ৩ কি.মি. দক্ষিণে সন্ধা নদীর পশ্চিমে এর অবস্থান। গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় অনেকগুলে খাল।
খালের দুই পপড় জুড়ে রয়েছে মাঠ, মাঝে মধ্যে দু-একখানা বাড়ি। আর বাড়ী ঘিরে রয়েছে নারিকেল, সুপারী ও আম গাছসহ নানাধরনের গাছের সারি। এই গ্রমের একেবারে পশ্চিম দিকে আমার বাড়ী, যেখানে আমি জন্মেছি।
এই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। যেটি বিষ্ণুকাঠীর ভারানী নামে পরিচিত।
বলতে গেলে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেছে। আমাদের খালপাড়ের ঘাটলার কাছে একটি ছোইলা গাছ ছিল। শুধু আমাদেরি নয়, অনেকেরই খালপাড়ে এই ছোইলা গাছ ছিল।
আমাদের গ্রামের প্যাংট পরা ছেলেরা হেমন্তের শেষে প্রতি দিন সন্ধাবেলা, ছোইলা গাছ থেকে ছোইলা ফুল পেরে ফুলের নিচ অংশ একটু সমান করে কেটে (যাতে থালায় ফুলটি বসতো) থালায় সাজিয়ে ঢেকে রাখতো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সবাই ঢাকনা সরিয়ে ফুলগুলোর পাপড়ী ফেলে (পাপড়ীগুলো এতো আলগা থাকতো যে একটু সামান্য টান দিলেই সমূলে উঠে যেত) দিয়ে মধু সংগ্রহ করে গ্লাসে করে খেত।
২০ টা ফুলে প্রায় অর্ধেক গ্লাস মধু হতো। সেই মধুই আমার কাছে আজো পৃথিবীর শ্রেষ্ট মধু।
ঐ ছোইলা গাছ নিয়ে সে সময় নানান কিংবদন্তী ছিল। তার মধ্যে একটি হলোঃ ছোইলা গাছে উড়ুন্না সাপ থাকে। এই সাপের রং না কি ছোইলা পাতার মতো।
এতে কামড় দিলে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা যায়। শুনেছি অনেক ছেলে ঐ সাপের কামড়ে মারা গেছে।
আমি ছোইলা ফুল পারতাম খুব সাবধানে। গাছের ডাল থেকে ফুল সংগ্রহ করার সময় ঐ ডাল ভাল করে দেখে নিতাম। তারপর ফুল পাড়তাম।
এতো সতর্ক থাকা সত্ব্যেও একদিন, ছোইলা গাছের মাথার ডাল থেকে ২ টি ফুল পাড়তে যাই। একদিকে ছোইলা ডাল ভেংগে পড়ে যাওয়ার ভয় আর অন্যদিকে সেই সাপের ভয়, এমন অবস্থায় ছোইলা গাছের মাথার ডালটি ধরার সাথে সাথে কি যেন হাতের মধ্যে মোড় দিয়ে উঠে_ততক্ষণে হাতের তাকিয়ে দেখি সেই সবুজ রংয়ের উড়ুন্না সাপ মাথ ঘুরিয়ে আমাকে কামড় দিতে যাচ্ছে......আমি মুহূর্তের মধ্যে ডাল ভেঙ্গে খালের মধ্যে পড়ে যাই। পানির নিচে পড়েও আমার সাপভীতি যাচ্ছিল না, তখনও আমি পানির নিচে সাপের তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছি এবং বাঁচার জন্য চেষ্টা করছি। হাত-পায়ে মাটি খুচে দ্রুত খালের কিনারে চলে যাই। সেখান থেকে এক দৌড়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে।
সেদিনকার মতো বেঁচে যাই। এরপর আর কোনো দিন ছোইলা গাছে উঠে ফুল পারিনি তবে কুট্টা দিয়ে (লম্বা ছিপ দিয়ে) ফুল পেরেছি এবং মধু খেয়েছি।
মাছ ধরাঃ
গ্রামের মধ্যে বসবাস করে মাছ ধরেনি এমন ছেলের সংখ্যা খুবই নগন্য। হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া সবাই কম-বেশী মাছ ধরেছে। তার মধ্যে অনেকেই মাছ ধরতে পটু।
আমিও মাছ ধরতে পটু ছিলাম। মাছ ধরা নিয়ে আমার জীবনে অনেক গল্প আছে। মাছ ধরার আনেক পদ্ধতিও আছে। চাই পেতে মাছ ধরা, বর্সী দিয়ে মাছ ধরা, বর্সা দিয়ে মাছ ধরা, জাল পেতে মাছ ধরা, খুচোইন দিয়ে মাছ ধরা, গরা দিয়ে মাছ ধরা, ছাপি পেতে মাছ ধরা, দা দিয়ে কুপিয়ে মাছ ধরা, চুংগা দিয়ে মাছ ধরা, জুহি দিয়ে মাছ ধরা, পানি গোলা করে মাছ ধরা, ব্যার-পাইয়া, পুস্কুনি, ডোবা-ডাবা সেচে মাছ ধরা। আরো নানাভাবে মাছ ধরার কৌশল ছিল।
আমি প্রায় সবভাবে মাছ ধরতে ওস্তাদ ছিলাম। তার মধ্যে দু’একটি বলছি।
আমি খুচোইন দিয়ে আমাদের খালে মাছ বহুবার মাছ ধরেছি। একবার মাছ ধরার সময় একটি মজার ঘটনা ঘটে। তখন কার্তিক মাস।
খালে মাছ পরেছে। সবাই মাছ ধরতে নেমেছে। মাছও বেশ পাচ্ছে। আমিও খুচোইন আর পাতিল নিয়ে মাছ ধরতে আমাদের খালে নেমে পড়ি। খুচোইন খেওয়াচ্ছি মাছও পাচ্ছি।
চিংড়ি মাছ, বাইলা মাছ, নুংদি মাছ, ভেদা মাছ, পুটি মাছ, টেংরা মাছ ইত্যাদি। মাছে পাতিল প্রায় ডুবু ডুবু। খাল থেকে উঠে যাব। চিন্তা করলাম আর দু’টা খেও দিয়ে নিই। এমন সময় আমার নুনুর মধ্যে কামড় মেরেছে।
মনে মনে ভাবলাম হয়তো চিংড়ি মাছের নাকে গুতা লেগেছে। এরেকটা খেও দিব এমন আবার কামড়। ঐ সময় মনে এলো জোকের কথা। তাড়াতাড়ি খালের চরে ঊঠে কাছা খুলে কাপড় জাগিয়ে দেখলাম একটি মাজারী সাইজের জোক আমার নুনুর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী ডুকে গেছে। দৌড়............
এক দৌড়ে বাড়ি, দাদু ভাইর কাছে চলে গেলাম।
দাদু ভাই জোকটিকে গরুর দুধ দোয়ানোর মতো জোরে টান মেরে বের করে দিল। তারপর থেকে মাছ ধরতে নামলে সারা গায়ে কেরোসিন মেখে নিতাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।