আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হোয়াট অ্যা কাম ব্যাক

লেখা ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ কিছু ভোট এনে দিবে মনে হচ্ছিল, সে গুড়েও বালি। তাঁর ওপর শুরু হয়েছিল ওদের বেয়াড়া সব মন্তব্য, হুমকি আর আল্টিমেটাম। ওদের দেখাদেখি আবার ওদিকে হেফাজতী দের আস্ফালন দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে বলে প্রায়ই জ্বালাও পোড়াও শুরু করছে। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি ও সমাবেশের আকার দেখে বেশ উৎসাহিত বোধ করছে।

কখনও ‘নৈতিক সমর্থন’, কখনও ‘পানি সমর্থন’। কখনও ‘পাশে দাঁড়ানো’ সমর্থন। ঠিক কোন পথে এগোবে এই বিষয়ে সরকারকে বেশ সিদ্ধান্তহীন মনে হচ্ছিল। হেফাজতী দের সন্তুষ্ট করা না হার্ড লাইনে যাওয়া? শুধু তাই না সরকারকে বেশ পর্যুদস্তও মনে হচ্ছিল। এমন সময় ঘটলো সাভার ট্র্যাজেডি।

সঙ্গে মুরাদ জং আর রানার সম্পর্ক এবং যুবলীগ কানেকশান। উপরি পাওনা স্বরাষ্ট্র আর অর্থ মন্ত্রীর এলেবেলে সব মন্তব্য। ‘হাল ছেড়ে দিয়ে ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র’—এমন সব রটনায় আকাশ বাতাস মুখরিত। আল্টিমেটাম ব্যাপারটা কতটা সিরিয়াস তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। জলিল সাহেবের ট্রাম্প কার্ড এর মত দশা হবে কি না? ওদিকে হেফাজতীদের সমাবেশের বহর দেখে সবার একটাই চিন্তা ছিল ‘এদের মোকাবেলা করবে কিভাবে?’ যেভাবে ওরা শহীদ হওয়ার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে তাতে মনে হচ্ছে না ওরা নড়বে।

বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ধরে আনা নিরুপায় সব ছাত্রদের উপায় ও নেই হুজুরের নির্দেশের ব্যত্যয় করার। ফলে কোন অ্যাকশানে গেলে লাশ পরবেই। আর লাশ পড়া মানেই ‘সেন্টিমেন্ট’ তৈরি হওয়া। ‘আহারে, কিভাবে মেরেছে লোক গুলোকে। ’ দিনের বেলায় দারুণ উৎসাহিত হয়ে জ্বালাও পোড়াও শুরু করে দিল।

সঙ্গে চলল জ্বালাময়ী বক্তৃতা। ‘কালকে কোথায় পালাবেন?’ জাতীয় সব সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন। সরকারের ঢিলেঢালা রেসপন্স। নিয়ম মাফিক ‘টিয়ার শেল’ আর ‘রাবার বুলেট’ মনে হচ্ছিল আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে যেন কোন লাশ না পরে। টিয়ার শেলের ঝাঁঝে যদি রণে ভঙ্গ দেয় তবে সবকুল রক্ষা হয়।

হয়তো ভেতরে ভেতরে চলছে নেগোশিয়েশান। ‘আপনাদের আসল দাবী কি সেটা বলেন। ’ অনেকের ধারণা সেই দাবী ছিল ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বিত কিংবা বন্ধ’। এই প্রশ্নে কোন ছাড় দিলে আওয়ামীলীগের নিজের অস্তিত্তেই টান পড়বে। সময়ের সাথে সাথে অনেক আন্দোলনেই ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে।

হয়তো সরকারের একটা স্বপ্নিল প্রত্যাশা ছিল, এমন কিছু হবে। নেতা দের কেনার চেষ্টাও হয়তো হয়েছে। তবে ওদের পেছনের ‘ড্রাইভিং ফোর্স’ যেহেতু জামাত (কারো কারো মতে) ফলে কেনা যে যাবে না তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। ওদিকে বিএনপির ঢালাও সমর্থনের ফলে মনে হচ্ছিল দু একটা লাশ পড়লেই সেটাকে ইস্যু করে বিএনপিও তাঁর পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা দিবে। এমন সময় সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলল হেফাজতীরা।

ছোটখাট ঢিল ছোঁড়াছুড়ি আর টায়ার জ্বালানো থেকে রীতিমত আগুন জ্বালানো শুরু করলো। রাস্তার পাশে জমা করে রাখা গরীব সব কাপড় ব্যবসায়ীর কাপড় গুলোতে আগুন ধরিয়ে দিতে শুরু করলো। বই ব্যবসায়ীরাও বাদ পড়লো না। তাঁদের বিক্রির জন্য কোরআন হাদীসের বই ও থাকে। এগুলোর কারনে হয়তো ভেবেছিল বই এর দোকানে হাত দিবে না।

এতো চিন্তা করার প্রয়োজন কেউই বোধ করলো না। গণহারে চলল আগুন দেয়া আরে ভাংচুর। জুয়েলারী থেকে এটিএম মেশিন, ইসলামের দহাই দিয়ে সব কিছুতেই চলল আক্রমণ। এতে কার ক্ষতি হল আর ‘ইসলামে’র কতটা হেফাজত হল তা নিয়ে চিন্তার কোন প্রয়োজন তাঁরা বোধ করলেন না। ‘আমরা যা ই করি তা ধর্মের কোন না কোন ব্যাখ্যায় পরে যাবে।

’ ‘অতি আত্মবিশ্বাস’ আর ‘অতি স্বেচ্ছাচারিতা’ যে কাজটা করলো তা হচ্ছে জনগণের ‘সফট কর্নার’ কে সরিয়ে দিল। ‘ইসলামী পোশাক’ পরিহিত মানুষের প্রতি জনগণের যে একটা নরম অনুভুতি আছে, তাঁদেরকে নিরীহ ভাববার একটা যে প্রবণতা আছে—সেই অনুভুতিতেও আগুন জ্বালিয়ে দিল। এরপরে বই এর দোকান পোড়ানো, যেখানে কোরআন আর হাদিসের বই ও ছিল। অনুভুতির অবশিষ্ট অংশ ও হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে সময় নিল না। হাতে পাওয়া এই মোক্ষম সুযোগটা সরকার হারাতে চাইলো না।

রাতের ‘ক্র্যাক ডাউন’ এর সিদ্ধান্ত ঠিক কখন নেয়া হয়েছে জানি না। তবে এমন তাণ্ডব এর সময় হাত গুটিয়ে বসে থাকলে সরকারের প্রতি জনগণও বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু ‘পাবলিক সেন্টিমেন্ট’ ঘুরে যেতে শুরু করলো, সরকারও সাহসী হয়ে উঠলো। ‘যদি কিছু লাশ পরেও, জনগণ মেনে নেবে’ এই ধারণা যখন বদ্ধমূল হল, এরপরে আর অ্যাকশানে যেতে সরকারের কোন বাঁধা ছিল না। ‘আর্মি ক্যু’ জাতীয় কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে কি না, বিদেশী প্রভুদের অনুমুতি নেয়া—এসব ঘটনা হয়তো যাচাই বাছাই করা হয়েছে।

এই মুহূর্তের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সকলের প্রতিক্রিয়া। বিএনপি প্রথমটায় হতভম্ভ হয়ে গেলেও ধীরে ধীরে জামাতের শেখানো বুলি আওড়াতে শুরু করলো। তিন হাজার লাশে তাঁরা এখনও অটল আছে। আওয়ামী লীগ বেশ সংযত বিবৃতি দিচ্ছে। হেফাজতি দের অবস্থা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

সফি সাহেব কেন গেলেন না, কোন বাণী কেন পাঠালেন না কিংবা ‘অ্যারেস্ট’ হয়ে থাকলে সেই তথ্য কেন সমাবেশে দেয়া হল না—অনেক প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের আস্ফালন কি শুধুই আস্ফালন নাকি সত্যিই তাঁরা কিছু করতে চায়—এই অপেক্ষা আরও কিছুদিন হয়তো চলবে। সোমবার মধ্যরাতের ‘ক্র্যাক ডাউন’ একটা কাজ করেছে তা হচ্ছে সরকারকে একটা ‘গ্রেট কাম ব্যাক’ দিয়েছে। সাভার ট্র্যাজেডি থেকে মানুষের মন সরিয়ে এনেছে, বিএনপি যে নিজে আন্দোলনে না যেয়ে হেফাজতীদের ঘাড়ে চেপে আন্দোলন করতে চেয়েছিল, সেই আশা ধুলিস্যাত করে দিয়েছে। জাতীয় পার্টির কথা নাই বা বললাম।

‘গণজাগরণ মঞ্চ’ কে এই সুযোগে সরিয়ে ফেলা গেল, ওদের আর দরকার নাই ‘লীগপন্থী’ আর ‘বামপন্থী’ ব্লগারদের ঝগড়ায় ওদের অবস্থা এখন কাগুজে বাঘ। কোন ভোট তো এনে দেবেই না বরং ‘নাস্তিক’ রটনায় কিছু ভোট নষ্ট হবে। ভবিষ্যতের কথা বলতে পারবো না, তবে আপাত দৃষ্টিতে সরকারকে সফল বলেই মনে হচ্ছে। বেশ কিছুদিন এখন চলবে হেফাজতীদের ব্যঙ্গ করা, তাঁদের জ্বালাও পোড়াও এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ছবি সহ সাক্ষাৎকার। লাশ নিয়ে রাজনীতি তো চলবেই।

তবে কিছু টিভি চ্যানেল বন্ধ হওয়ায়, ফলে লাশ দেখিয়ে সেন্টিমেন্ট তৈরির চেষ্টাও সেইভাবে করা যাবে না। এরপর হয়তো শুরু হবে ‘সংলাপ’ খেলা, সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখার চেষ্টা। যেমনটা সরকার চাইছে ‘এভ্রিথিং ইজ আন্ডার কন্ট্রোল’। নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘হোয়াট অ্যা কাম ব্যাক’। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।