আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাত্রীবাহী ট্রেনে ‘আম্মাজান’ আতঙ্ক!

আমি আছি সেইখানে............যেখানে নই তোমরা...তাই বলে নই আমি একা যাত্রীবাহী ট্রেনে মূর্তিমান আতঙ্ক আম্মাজান। এ নাম অত্যন্ত ধারালো ছোরার। সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার পর ওই ছোরা দিয়ে গলা কেটে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয় যাত্রীদের। ছোরার নাম অনুসারে এ দুর্বৃত্ত চক্রের নাম হয়েছে আম্মাজান গ্রুপ। সমপ্রতি এ গ্রুপের প্রধান জীবন ওরফে অসহায় জীবন গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেরিয়ে এসে তাদের নৃশংসতার নানা তথ্য।

পুলিশ বলছে, এ চক্রের হাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে শতাধিক যাত্রী। গন্তব্যে পৌঁছার আগেই ঘাতক চক্রের হাতে নিহত হওয়ায় এসব যাত্রীর লাশও পাচ্ছেন না স্বজনরা। গত ৭ই সেপ্টেম্বর জামালপুর রেল স্টেশনের অদূরে গলা কাটা ৬ যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে অপমৃত্যুর মামলা হয়। পরে নিহতদের মধ্যে দু’জনকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

অপমৃত্যুটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করে তদন্ত শুরু করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। তদন্ত চলাকালে ৯ই সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল স্টেশনের কাছে পাওয়া যায় আরও দু’জনের গলা কাটা লাশ। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দ্রুতযান ট্রেনের ৬ যাত্রীর কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে গলায় ছোরা চালিয়ে তাদের ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়। ঘটনাক্রমে বেঁচে যান ৪ যাত্রী। তারা ঘাতকদের সম্পর্কে পুলিশের কাছে নানা তথ্য দেন।

তদন্তের এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার করা হয় দুর্ধর্ষ কিশোর সন্ত্রাসী বিল্লাল ওরফে বিলাইকে। তার তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের ৪ সদস্যকে। এরা হলো রকি ওরফে বড় রকি, রনি ওরফে বড় রনি, ছোট রনি ও সোহেলকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি ধারালো আম্মাজান ছোরা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঢাকায় মোশারফ নামের এক ব্যক্তির কাছে তারা লুটে নেয়া টাকা-পয়সা জমা রাখে।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে ওই মোশারফই তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে। পুলিশ গ্রেপ্তার করে মোশারফকে। গ্রেপ্তারের পর মোশারফ পুলিশকে জানায়, সে একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সেটি তার মূল পেশা নয়। সে পত্রিকায় বিদেশে অবস্থানরত লোভনীয় পাত্র-পাত্রীর বিয়ের বিজ্ঞাপন দেয়।

লোকজন বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে তার কাছে এলে সে কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলে। সেখানে আসার আগেই আম্মাজান গ্রুপের সদস্যদের দিয়ে তার সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হয়। আম্মাজান চক্রের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যরা জানিয়েছে, এ বছর তারা নগদ অর্থসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট করেছে চলন্ত ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে। তাদের হাতে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩০ জন। জিআরপি পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত উদ্ধারকৃত লাশের বেশির ভাগের গলা কাটা পাওয়া গেছে।

এছাড়া চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়ায় অনেক লাশ ট্রেনের নিচে পড়ে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। ফলে লাশের পরিচয় শনাক্ত করাও যায় না। চক্রের প্রধান গ্রেপ্তারকৃত জীবন ওরফে অসহায় জীবনের বয়স মাত্র ২১ বছর। তার সহযোগীদের বয়সও ২০ বছরের কম। জীবন জানায়, বাস বা অন্যান্য পরিবহনের যাত্রীদের টার্গেট করার চেয়ে ট্রেনের যাত্রীদের টার্গেট করা সহজ।

কারণ ট্রেন যখন তখন থামানো যায় না। এছাড়া ট্রেনে পুলিশও তেমন একটা থাকে না। কোন একজন যাত্রীকে টার্গেট করা হয়। সে যখন সিট ছেড়ে উঠে বাথরুমে যায় বা খোলা দরজার কাছে দাঁড়ায় তখনই তাকে আক্রমণ করা হয়। এছাড়া ট্রেনের ছাদের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে সহজেই তাদের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া যায়।

আবার অনেক সময় একটি পুরো বগির দু’দিকের দরজা লাগিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করা যায়। এরপর যাত্রীদের সব কিছু কেড়ে নেয়া সহজ হয়। আম্মাজান চক্রের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পরও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ফেনীর যাত্রী স্কুলশিক্ষক আমীর হোসেন। তিনি ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে মহানগর গোধূলি ট্রেনে ওঠেন। মাঝপথে রাত নামে।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ট্রেনে বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার গলায় ছোরা চেপে ধরে ৪-৫ জন কিশোর। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমীর হোসেনের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এতে তার একটি হাত ট্রেনের চাকার নিচে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি পুলিশের কাছে ওই চক্রের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য দেন।

আম্মাজান যে কারণে: পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীরা তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছে, প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না ‘আম্মাজান’ ছবিতে একটি বিশেষ ছোরা ব্যবহার করে। ওই ছোরা দেখতে যেমন ছিল সে ধরনের ছোরা ব্যবহার করে এ গ্রুপের সদস্যরা। এ কারণেই তাদের গ্রুপের নাম আম্মাজান। পুলিশ বলছে, বিভিন্ন স্টেশন কেন্দ্রিক আম্মাজান চক্রের ১০-১২টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য থাকে ৫-৬ জন করে।

সব মিলিয়ে ৫০-৬০ জনের দল কাজ করছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘাতকরা বলেছে, এখন পর্যন্ত তারা ঠিক কতজন যাত্রীকে হত্যা করেছে তার সঠিক হিসাব রাখেনি। তবে এ সংখ্যা ২০-৩০ জনের কম হবে না। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, স্টেশন কেন্দ্রিক ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া স্টেশনের আশপাশে অবস্থান করা ভাসমান টোকাইদের পুনর্বাসন করতে হবে।

এছাড়া ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এইখান থেকে নেয়া ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.