আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাত্রীবাহী দোতলা ট্রাক ও স্মার্ট যোগাযোগমন্ত্রী

খবরে ধান্দাবাজি এবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় নতুন দুইটা যাত্রীবাহী যান দেখলাম। একটা হলো যাত্রীবাহী দোতলা ট্রাক। আরেকটা কাভার্ড ভ্যানে যাত্রী বহন। ট্রাকের রেলিংয়ের উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে পাটাতন করা। তারওপর ত্রিপল বিছানো।

ব্যস হয়ে গেল দোতলা ট্রাক। ট্রাকের পাটাতনের ওপর (নিচ তলায়) কিছু যাত্রী শুয়ে, বসে আরাম করে যাবে। আবার ওপর তলায় আরো বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে। প্রায় ৪-৫টি ট্রাক দেখলাম, যারা দোতলা পদ্ধতি ব্যবহার করে যাত্রী বহন করেছে। মিনি বা বড় দুই ধরনের ট্রাকেই এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।

এছাড়া খালি বা ভর্তি সব ট্রাকেই যাত্রী দেখেছি। ঢাকা থেকে ঈদের একদিন আগে যেসব ট্রাক উত্তরবঙ্গ যাচ্ছিল এসব ট্রাকের কথাই আমি বলছি। তবে ঢাকামুখি কোনো ট্রাকে যাত্রী দেখিনি। তবে বেশি আশ্চর্য হয়েছি কাভার্ড ভ্যানে যাত্রী পরিবহনের দৃশ্য দেখে। সাভারের বাইপাইল মোড়ে গাড়ি ঘুরানোর সময় দেখলাম, একদল মানুষ হইহই করে কাভার্ড ভ্যানের মধ্যে ঢুকছে।

আমি রীতিমত আতঙ্কিত। বাস আগে চলে যাওয়ায় বুঝতে পারছিলাম না, ভ্যানের পাল্লা লাগানো হবে কিনা। যদি লাগানো হয়, তাহলে মানুষগুলোর কি অবস্থা হবে? এ নিয়ে অনেকক্ষণ ভাবছি। মনটা ধুকধুক করছে। এরইমধ্যে দেখলাম আরেকটা কাভার্ড ভ্যান পাল্লা খুলে কিছু যাত্রী নিয়ে শা শা করে পাশ দিয়ে চলে গেল।

ভিতরে বেশ কিছু যাত্রী আরামে বসে ধুমপান করছেন। রাস্তায় যেসব কাভার্ড ভ্যান দেখা যায়, এগুলোতে সাধারণত বিভিন্ন কোম্পানির লোগো থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, কাভার্ড ভ্যানগুলো কোনো না কোনো কোম্পানির। তাহলে প্রশ্ন, কোম্পানির বেতনভুক্ত ড্রাইভার কি করে এমন কাজ করে? ৩-৪ ঘন্টার রাস্তা যেতে এবার ঈদে লেগেছে ১১ ঘন্টা। রাস্তায় প্রচুর বিআরটিসি’র ভলভো দেখলাম।

কিন্তু আমাদের রাস্তা এবং গাড়ি মানুষের তুলনায় এতো অপ্রতুল যে, তা ঈদ এলে ভালো করে বোঝা যায়। এরাবিয়ান হর্স যোগাযোগমন্ত্রী সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলে লাভ নাই। দেশের অন্য সব মন্ত্রলায়ের মতোও এখানকার অবস্থাও তথৈবচ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। কাজ হচ্ছে তো হচ্ছেই।

শেষ হচ্ছে না। ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার দিন অফিস থেকে বেরোয়ছি বিকেল সাড়ে চারটায়। বাড্ডা এলাকায় হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল। বসুন্ধরা থেকে উইনারে চড়ে যাচ্ছিলাম নাবিস্কো। গাড়ি থেমেছে তো থেমেছে।

কোনো নড়ন চড়ন নাই। প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি থেকে নেমে সামনে গিয়ে দেখি, গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। ঈদের আগে তাদের বোনাস দেওয়া হয়নি। বোনাস না দিলে তারা রাস্তা ছাড়বে না। শ্রমিকদের দেখলাম বেশ শান্ত।

কোনো গাড়ি বা বিল্ডিং ভাংচুর করছে না। কেবল রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই তাদের ফ্যাক্টরি। তারা ইচ্ছে করলে অন্তত ফ্যাক্টরিতে ভাংচুর চালাতে পারতো। তাও করছে না।

এতেই বোঝা গেল, টাকাটা তাদের কতো দরকার। ভাবছিলাম, গার্মেন্টস মালিকদের চরিত্র বদলাবে কবে? শ্রমিকদের প্রতি ন্যুনতম দায়িত্ববোধ থাকলে কি এমনটা করা যায়? শেষে বাড্ডা থেকে হেঁটে হেঁটে গেলাম মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে আরেক যুদ্ধ। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। কি করি, কি করি, করতে করতে ২০০ টাকার টিকিট ৪০০ টাকায় মিললো।

তারপর বাড়ি পৌঁছলাম ভোর সাড়ে তিনটায়। তিন থেকে চার ঘন্টার পথ পেরোলাম এগার ঘন্টায়! এবার ঢাকায় আসার কথা বলি। সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় থেকে বাসে উঠলাম মহাখালী আসার জন্য। বাস সাভারের চন্দ্রা (লোকজন বলে চান্দুরা) আসার পর আর এগোবে না। ভাড়াও ফেরত দিবে না।

তার দাবি, অল্প একটু রাস্তা। আপনাদের অন্য একটা বাসে তুলে দিচ্ছি। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাসের হেলপার-সুপারভাইজারের প্রায় মারামারি অবস্থা। পরে অন্য একটা বাসে ঢাকায় এলাম। এই হলো পরিবহন শ্রমিকদের (খান সেনা) আচরণ।

টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে চোখ তুলতে চাওয়া নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান এদের নেতা। আমি প্রথম দিকে বেশ চোটপাট দেখিয়েছিলাম। পরে দেখলাম, স্থানীয় কিছু খান সেনা এসে পরিস্থিতি গরম করার চেষ্টা করছে। তখন লোকজনকে বললাম, হয় মারামারি করতে হবে নয়তো তাদের কথা মেনে নিতে হবে। মারামারি করা ঠিক হবে না।

আমি খান সাহেবের কথা ভেবে সেখান থেকে সটকে পড়লাম। অন্যদের খান সেনারা আরেক গাড়িতে তুলে দিল। আমি নিজের চেষ্টায় অন্য গাড়িতে উঠে ঢাকায় এলাম। যাত্রীরা বলছিল, প্রায় বাসই কড্ডার মোড় থেকে মহাখালীর কথা বলে যাত্রী তুলে চান্দুরা পর্যন্ত আসে। এখানেই যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়।

সড়কে সাধারণ মানুষ স্মার্টলি চলাচল করতে না পারলে স্মার্ট যোগাযোগ মন্ত্রী কি দায়িত্ব এড়াতে পারেন? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.