হ্যাঁ, আপনাকে বলছি। আপনি যদি বাংলাদেশের কোন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্টানের কৃতী শিক্ষার্থী হোন , তাহলে আপনার প্রস্তুুতির পালা, তবে যদি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কার্ড অর্জন করে থাকেন, নির্ধিধায় চূড়ান্ত পর্বে অবস্থান আপনার। উনিবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে আমরা প্রথম বারের মত বিশ্ববিদ্যালয় নামক মুক্তবুদ্ধি চর্চার (সার্বজনীন!) জায়গাটা পেলাম। ফলাফল আর যাই হোক, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এসে আজ আমরা ভাবছি আমরা নিজেরাই কি মুক্ত হতে পেরেছি? আমাদের পূর্বসরীরা শিখিয়ে গিয়েছেন ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে নিজিকে বিলিয়ে দিতে হয়। আমরা বিলিয়ে দেওয়া শিখছি নিজেকে, পার্থক্য শুধু নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে না পেরে, নিজের তরে।
নিজের স্বাধীনতা, চিন্তার জগৎ নিয়েই আমাদের অনিশ্চয়তা, জাতিতো পরের কথা। গত ১২ই অক্টোবর আজমীর হোসেন নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র ঠিক নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। আরও তিন মাস আগে অত্র বিভাগের তৃতীয় বর্ষের স্বীকৃত সেরা ছাত্র (ফাস্ট বয়) লোকমান হাকিম নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন ভার্সিটির তরে। শুধু আতিয়ার কিংবা লোকমান নয়, প্রতিবছর এই রকম অনেক তরুণ নিজেকে মুক্ত! করে যাচ্ছেন।
এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শিকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিন্তুু কেন? এমন কি পরিস্তিতি তৈরী হলো যার জন্য জগতের সকল মায়া মমতা ছেড়ে, নিজের মেধাকে পদাতলিত করে, নিজেকে বেঁচে নিত হল মুক্তির পথ? আমাদের দন্ডবিধির ৩০৯ ধারায় আতœহত্যার চেষ্ঠাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেহেতু আতœহত্যার পরে আর যাই হোক, পার্থিব জীবনে তাকে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব নয়। তাই আতœহত্যার চেষ্ঠা দন্ডনীয় অপরাধ, মহা আর্শ্চয়ের বিষয় হল, আতœহত্যার পরে বিষরটিকে শুধু আতœহনন কারীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। যার ফলে এর কোন সমাধান আসছেনা। ইহাকে নিয়ে জোরালো কোন উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা হচ্ছে না।
১৯৩৯ সালে স্যার ঊধংহবংঃ ধ ঐড়ড়ঃড়হ তার “ক্রাইম এন্ড দি ম্যান” বইয়ে উল্লেখ করেছেন অপরাধ ও অন্যান্য সমাজ বিরুধী অপরাধ সমূহ মূলত শারীরিক ও সামাজিক উপাদান গুলোর কারণে হয়ে থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আর যাই হোক প্রথম কারণে আতœহত্যার পথ বেঁচে নেয়, তা মেনে নেওয়া দুষ্কর। একই বৎসরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাফ ডজন প্রাণ ঝরে যাবে, তা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক বিষয় নয়। তাও একই বিভাগে তিন মাসের ব্যবধানে দুই দুইটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। আজকে রাজনীতি সমস্যার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে এক অদৃশ্যকায়দায় স্বৈরশাসন।
শিক্ষার্থীরা আজকে মুক্তবুদ্ধির চর্চার সার্বজনীন অধিকার পাচ্ছেনা। তাইতো আজকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আন্দোলন হচ্ছে, বর্ধিত বেতন ফি রোধে, গ্রেডিং বৈষম্য রোধে, আবাসন সংকট নিয়ে, সিলেবাসের অসামঞ্জ্যতা নিয়ে, দ্রুত ফলাফল প্রকাশের তাগিদে কিংবা স্বয়ং প্রশাসনের আপশাসনের বিরুদ্ধে, এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। আজকে নন-কলেজিয়েট বলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ চিত্র ভিন্ন কোন একটা কোর্সে (৪কেডিট) কমপক্ষে একজন শিক্ষকে ৪০ টা ক্লাস নেওয়ার বিধান, কিন্তুু তিনি নেন ৮টা। নন-কলেজিয়েট কে শিক্ষক না ছাত্র? বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আজকে দিশাহারা তাদের নিজের কারণে নয়, একাডেমিক অসামঞ্জস্যতার ফলে।
দিন থেকে দিনান্তে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্রগুলো হয়ে যাচ্ছে জনগণের চিন্তার কারণ। অভিবাবকদের ও নিতে হচ্ছে হাই-ফেসার এর চিকিৎসা। তাই আজকে এই নিয়ে সমন্বিত গবেষণা দরকার। আর কেউ লোকমান, আজমীরদের মত অসংখ্য ছাত্রের ন্যায় নিজেকে মুক্তি দিতে চায় না, করতে চায়।
মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।