কিছুটা আমার কিছুটা তোমার.. মেলেনা তো কিছু এখন আর! প্রায়ই সবার মুখে শুনে থাকি কথাটা,''মানুষের জীবন অনেক ছোট,কিন্তু ছোট্ট এই জীবনে অনেক অনেক কাজ''।
কথাটা চিরন্তন সত্য,এটাও শুনে আসছি এমনকি কখনো কখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখেছিও,কিন্তু তারপরেও...তারপরেও কখনো কখনো কথাটাকে ভিত্তিহীন মনে হয়। যেমন এই ক'দিন ধরে মনে হচ্ছে...
অনেক কাজ একটা মানুষের জীবনে,অনেক...অনেক...আসলেই কি অনেক?তাই যদি হবে তাহলে এত সীমাবদ্ধতা কেন আমাদের জীবনে?এত এত দেয়ালের মাঝে কেন আটকে থাকি আমরা? যেন বিশাল একটা খোলা মাঠে কিছু বৃত্ত তৈ্রী করে রাখা...
আমি জানি,আমার অনেক কাজ,অনেক কিছু করার আছে আমার তাহলে কেন আমি নিজেকে দায়িত্বহীন ভাবি?কেন কিছু অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখি?কিভাবে পারি,এত এত কিছু চারপাশে ঘটে যাওয়া সত্বেও তা না দেখার ভান করতে?...
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত,আল্লাহ তাকে এমনি এমনি পৃথিবীতে পাঠাননি,তাকে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন।
আর প্রতিনিধির কাজ হলো,সে যার প্রতিনিধি শুধু মাত্র তারই কাজ করা,তাকে সন্তুষ্ট করা,তার পূর্ণ আনুগত্য করা।
এ কথাগুলো আমরা সবাই জানি,অনেক বার বলিও।
কিন্তু নিজের তৈ্রী কিছু বাস্তবতার মাঝে এ কথাগুলো কে মূল্যহীন ভাবি নিজেই...কি অবাক ব্যাপার!তাহলে কি আমার জানা আমার জন্য মূল্যহীন?সে জন্যই কি আমি এই সত্যগুলো কে এড়িয়ে চলি?
আমি জানি,সত্যকে মিথ্যার সাথে মিলিয়ে মেনে চলা হয় আমাদের সমাজে,সঠিক নিয়ম জানা সত্বেও তাকে কাটছাঁট করে মানা হয় আমাদের সমাজে,আমি এটাও জানি এভাবে চলতে থাকলে আমরা কখনোই ভালো থাকতে পারব না,আমাদের ভবিষৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে,তার পরেও আমি সমাজের সব অনিয়ম মেনে চলছি খুব অনুগত হয়ে...!কোন কিছু বলার নেই আমার,কোন কিছু করার নেই আমার,এমনকি যখন আমার নিজের জন্য কিছু করার সুযোগ আসছে তখনোও আমি সমাজের সেই ভুল নিয়ম গুলো মেনেই কাজ করে যাচ্ছি,কোন বিকার নেই আমার...তাহলে কেন আমি সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য করতে শিখলাম?কি দরকার তাহলে সত্য-মিথ্যার উপরে মাঝে মাঝে ছোট-খাটো লেকচার দেবার?...
আমি কিছু করতে চাই সমাজের জন্য...খুব ভালো কথা,সবাই সাপোর্ট দিচ্ছে,করো...করতে গেলাম,কিন্তু করতে যেয়ে দেখি,আমার কোন কিছু করার স্বাধীনতা নেই,হাজারো বাধা আমার সামনে...!এত এত সীমাবদ্ধতা...তাহলে কি করব আমি?
আমি অবশ্যই কিছু করব,তবে তা সমাজের প্রচলিত নিয়মে,কিছু দায় সারা দায়িত্ব পালন করে...আমার কাজ ভবিষতের জন্য হতাশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারল না।
আমাকে আল্লাহ চিন্তাশক্তি দিয়েছেন,সুপার পাওয়ারের ব্রেন দিয়েছেন,কিন্তু আমার চিন্তার দৌড় খুব বড় জোর আমার পরিবার পর্যন্ত...আর একটু বেশি হলে আমার বন্ধু-বান্ধব। তাহলে কেন আল্লাহ আমাকে এত চিন্তা করার পাওয়ার দিলেন?শুধু মাত্র নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য?নিজের বর্তমান,নিজের অতীত,নিজের ভবিষৎ সব জায়গায় শুধু আমি আর আমি...আমার দুনিয়ার শুরু আমাকে দিয়ে শেষ ও আমাকে দিয়েই...তাহলে কিভাবে আমি সুপার পাওয়ার ব্রেনের অধিকারী হলাম?একটা সিম্পল ডেস্কটপ কম্পিউটার দিয়ে হাজারো কাজ করা যায় আর আমার সুপার পাওয়ার ব্রেন দিয়ে স্রেফ আমাকে নিয়েই ভাবা যায়...
আমার চারপাশ,আমার পরিবারের মানুষের জীবন,তাদের সুখ-দুঃখ,আমার সমাজ,আমার দেশ...এগুলো নিয়ে আমার ভাবনা কেবল সীমাবদ্ধ। আমি করব সবার জন্য তবে অনেক ভেবে চিন্তে...
তাহলে আমার এই ছোট্ট জীবনে অনেক কাজ কিভাবে হলো?...
আমি কারো প্রতিনিধি কিভাবে হলাম?...আমি তো অনেক সীমাবদ্ধ চিন্তার মানুষ,আমার কিভাবে সুপার পাওয়ারের ব্রেন আছে?
কথাগুলো হয়তো অনেক জটিল মনে হবে,অনেক বিরক্তিকর ও মনে হবে...কিন্তু আমার কাছে খুব সোজা-সাপ্টা ভাবনা এগুলো...
এক সময় ভাবতাম,বিপ্লবী হবো...ছেলে বিপ্লবী তো অনেক আছে আমি এবার মেয়ে হয়ে কিছু করব...কিন্তু এখন?সীমাবদ্ধ ভাবনা ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত...মাঝে মাঝে ফারজানা আপুর সাথে স্বপ্ন নিয়ে করা গল্প গুলো খুব মনে পড়ে...তবে আবছা ভাবে...কিছু দিন আগেও ভাবতাম আমি একজন চেঞ্জমেকার হবো। সোসাইটি অব চেঞ্জমেকার কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ও দেখতাম,কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন মুখ থুবরে পরে গেছে,কারন,
আমি মানুষ হিসেবে কিছু করতে পারব না,মেয়ে হিসেবে করতে পারব...আমি মানুষ হিসেবে ভাবতে পারব না,মেয়ে হিসেবে ভাবতে পারব...আমার দৌড়,খুব বড় জোর অন্য একটা বাড়ি...সমাজের হাজারো ঘর নিয়ে ভাবা আমার কাজ না...আর তাইতো বেগম রোকেয়া একজন মেয়েই হতে পেরেছিলেন আর কেউ হতে পারেন নি,মাদার তেরেসা হিসেবে একজনকেই পেয়েছিলাম।
বাইরে না গেলাম আমি ঘরে বসেই কিছু করতে চাই সেখানেও আমার জন্য অপেক্ষা করছে সীমাবদ্ধতা...হতে পারে সেটা চিন্তার,হতে পারে ইচ্ছার। আমি ভালো লিখতে পারি,লেখার মাঝে অনেক কিছু ফুটিয়ে তুলতে পারি...কিন্তু এখানেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। আর সে জন্যেই হয়তো সুফিয়া কামাল,কিংবা জুবাইদা গুলশান আরার মতো লেখিকা আমরা দেখতে পাই না। ভবিষতে দেখব কি না তাও জানিনা। সিমপ্লি ব্লগেই একটা মেয়ে স্বাধীনভাবে লিখতে পারেনা,কয়েকদিন লেখার পর পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে ব্লগে আসা কমিয়ে দিতে,লেখার ইচ্ছা কমিয়ে দিতে আর সেখানে জুবাইদা গুলশান আরাদের মতো সাহিত্যিক আশা করা অনেক পরের ব্যাপার।
কিছু করার মন-মানসিকতা আমাদের সবারই আছে কিন্তু দেবার যোগ্যতা আমাদের নেই,আর তাই তো একটা মেয়ে সমাজকে,দেশকে কিছু দিতে চাইলেও আমরা তা নিতে পারিনা। আমরা দেয়াল দাড় করিয়ে দেই তার চারপাশে,ডিরেক্টলি অথবা ইনডাইরেক্টলি।
তবে এখন দেবার মন-মানসিকতা ছেলেদের ও নেই,নেই এই জেনারেশনের,নেই ভবিষতের। সেদিন এফবি তে এক বন্ধুর স্ট্যাটাস দেখলাম,''আমাদের নিয়ে জাফর ইকবাল,আবু সাইদ স্যাররা শুধু শুধু স্বপ্ন দেখেন,আমরা ভবিষতে কিছুই করতে পারব না,আমরা সিগারেট খাই,সিসা খাই,ড্রিংকস করি,আমাদের নিজেদের জীবনই অন্ধকার...''আর এই অন্ধকার জীবন গুলোকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের সীমাবদ্ধ চিন্তাগুলো।
আমি এখনো হিসেব মেলাতে পারিনা...তাহলে ছোট্ট জীবনে অনেক কাজ কেমন করে হলো...?!!!!শুধু আমার নিজের জন্য তৈ্রী কিছু কাজই কি অনেক কাজ?আমাকে কি আল্লাহ তাহলে শুধু আমাকে নিয়ে ভাবার জন্যই পাঠালেন?আমার চারপাশ আমার জন্য কোন মুল্য রাখেনা?...জানিনা...
কেউ হয়তো এই লেখা পড়ে ভাববে আমি জটিল করে ভাবছি,কেউ বলবে শুধু শুধু ভাবছি...তবে অর্থহীন ভাবছিনা এটা বলতে পারি...
চেঞ্জমেকার হবার স্বপ্নটা আবারো জেগে উঠছে মনে হয়...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।