বিচার এর বানী নীরবে কাঁদে...
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার হয় দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে অপহরণচেষ্টার অভিযোগে মামলা নেয় পুলিশ। এতে মেয়েটিকে আবার গণধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয় ধর্ষকেরা।
বিচার না পেয়ে সেঁজুতি ওরফে কমলা (১৬) নামের ওই ছাত্রী গত শুক্রবার রাতে বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের বড় রঘুনাথপুর গ্রামে ঘরের চৌকাঠের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
কমলা রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী সাদেক মৃধার মেয়ে।
পড়ত চৈতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
গতকাল শনিবার সকালে কমলার আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠী এবং পাশের চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী কাঁঠালতলী পুলিশ ফাঁড়ি ও বাকেরগঞ্জ-বরগুনা সড়ক অবরোধ করে। তারা বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ রবিউল হককে প্রত্যাহার ও ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
ওসি রবিউল গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে পড়েন। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে ঘেরাও করলে তিনি ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
রঘুনাথপুর গ্রামবাসী ও কমলার পরিবারের ভাষ্যমতে, ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে সাতটার দিকে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে কমলার চাচাতো ভাই মো. নয়ন মৃধা কমলাকে তার ঘর থেকে ডেকে নেয়। এ সময় ঘরের বাইরে থাকা গ্রামের মো. নাসির আকন, মো. শামীম আকন, মো. রাজীব, মো. সবুজ ও মো. সাইফুল ইসলাম কমলাকে জোর করে বাড়ির পাশের বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এতে চাচাতো ভাই নয়নও যোগ দেয়। কমলার চিৎকারে তার মা ও অন্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় কমলার মা হাফিজা বেগম ওই ছয়জনকে আসামি করে পরের দিন বাকেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
কিন্তু পুলিশ কমলার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেনি।
হাফিজা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণধর্ষণের পর আসামিরা নানাভাবে আমার অন্য দুই মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। কিন্তু বাকেরগঞ্জ থানার ওসি রবিউল ধর্ষকদের গ্রেপ্তার না করে আমাকে মীমাংসা করতে বলেন। মীমাংসায় রাজি না হলে ওসি অপহরণচেষ্টার অভিযোগে মামলা নেন। এ ঘটনার পর থেকে ধর্ষকেরা কমলাকে আবার গণধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিতে থাকে।
বিচার না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে কমলা। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সবার অজান্তে ঘরের চৌকাঠের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। ’
রঘুনাথপুর গ্রামবাসীর অভিযোগ, ওসি রবিউল ধর্ষকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ধর্ষণের মামলা না নিয়ে অপহরণচেষ্টার মামলা নেন। তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে ধর্ষকেরা কমলা ও তার পরিবারকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখে। বিচার না পেয়ে লজ্জায়-ঘৃণায় আত্মহননের পথ বেছে নেয় কমলা।
চৈতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, কমলার আত্মহত্যার খবর জানার পর তাঁর বিদ্যালয়সহ পাশের আরও চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সড়ক ও কাঁঠালতলী পুলিশ ফাঁড়ি অবরোধ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের শান্ত করলে আধঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে ওসি রবিউল হক বলেন, ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়া ও মীমাংসা করার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। সব আসামি পলাতক। তাদের আমি চিনিও না।
তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ’
গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পরও কমলার ডাক্তারি পরীক্ষা না করার কারণ জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি ওসি রবিউল।
তথ্য সূত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।