36. দ্য ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক:
কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা ভারতের জন্য অদূরদর্শিতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ওই সময়ে তাকে ব্যাপক অর্থেই সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে একদিন এসব অর্জন নস্যাৎ হতে পারে। গতকাল অনলাইন ইকোনমিস্ট-এ এক প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করা হয়।
এর শিরোনাম ছিল- ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ : এমব্রেসঅ্যাবল ইউ’। এতে আরও বলা হয়েছে, বাইরের কারও চোখে তেমন পড়েনি বিষয়টি। দীর্ঘ সীমান্ত সংবলিত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন চলছে। সেই সম্পর্ক উন্নত করার যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা দিয়েছে সমপ্রতি।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে উঠছে।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভারত অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছিল। ভারতকে খুশি করতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কট্টরপন্থি বা ভারতের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো- ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন এবং হট্টগোল সৃষ্টিকারী ইসলামপন্থি এবং ভারতবিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দমন-পীড়ন শুরু করে। এতে ভারত নিজেকে কিছুটা নিরাপদ মনে করতে থাকে। দুই দেশেই এখন বংশানুক্রমিক শাসনযন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। তাদের মধ্যে এখন রাজনৈতিক বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে।
গত ২৫শে জুলাই প্রথমবারের মতো সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সফর করেন। এ সময় ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস পার্টির প্রধান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একই সোফায় বসে তিনি যে গরিবদের সাহায্য করছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা তাদের পুরনো পারিবারিক বন্ধুও। সোনিয়া গান্ধীর প্রয়াত শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রতিদান হিসেবে মরণোত্তর একটি স্বর্ণপদক উপহার দেয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেন শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।
এ যুদ্ধে বাংলাদেশীদের ভারতীয় সেনা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাকে সম্মানিত করায় এই সপ্তাহে কর্মকর্তাদের মুখে মুখে একটি কথাই ফিরেছে- এখন সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এই সম্পর্ককে আরও ভাল করে তোলা উচিত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এসময় স্পর্শকাতর কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি সই হবে।
এর মধ্যে রয়েছে পানি বণ্টন, সীমান্তের এপাড়ে বিদ্যুৎ দেয়া, ৪০৯৫ কিলোমিটার সীমান্তে বিতর্কিত ছিটমহল সমস্যা, অভিবাসীদের ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের হাতে প্রাণ হারানো এবং গরু চোরাচালানি বন্ধ করা। চোরাচালান বাদ দিয়ে বাণিজ্যে ভারত সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, বাংলাদেশ তার থেকে পিছিয়ে আছে- এ বিষয়টি নিয়েও একটি বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারেন মনমোহন সিং। ভারতের উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুর্গম রাজ্যগুলোতে যেতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বেশ কিছু ট্রানজিট পাওয়া নিয়ে চুক্তি হবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজ্যগুলো সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত। এ রাজ্যগুলো ভারতকে চীন থেকে আলাদা করেছে।
ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি থেকে কেটে নেয়া ১০০ কোটি ডলারের প্রকল্পে দরিদ্র এলাকাগুলোর উন্নয়ন করা হবে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যরা দেখছে বাংলাদেশ উন্নত সড়ক থেকে শুরু করে বন্দর, রেললাইন এমনকি অধিক দরকারি বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শতকরা প্রায় ৭ ভাগ। ভারতের সঙ্গে অধিকতর সম্পৃক্ততায় সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শতকরা কয়েক পয়েন্ট বেড়ে যেতে পারে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প সুদের অর্ধেক অর্থ হস্তান্তর করেছে ভারত।
এসব অর্থ খরচ করা হচ্ছে নতুন নতুন নদী খনন ও ‘বেশি বুদ্ধিমান’! রেলগাড়ি চলাচলের উপযোগী করার কাজে। বাংলাদেশের শাসকরা সেটা ছিল। এর আগে দেশটি একটি অবকাঠামোগত বড় ধরনের সুবিধা হাতছাড়া করেছে অতি বুদ্ধির দোষে। সেটা ছিল মিয়ানমার থেকে ভারতে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনায় অংশ নিতে পারলে বাংলাদেশ খুবই লাভবান হতো।
কিন্তু ওই গ্যাস পাইপলাইনের কাজ পেয়েছে চীন। নতুন যে ট্রানজিট প্রজেক্টের কথা বলা হচ্ছে তা হতে পারে উন্নয়নের চেয়েও বেশি কিছু। ঢাকার অনেকে, বিশেষ করে সামরিক মহলের কিছু লোকজন সন্দেহ করছে, এর অর্থ হবে ভারতের জন্য একটি নিরাপদ করিডোর তৈরি করা। গেরিলা হামলার ভয়ে পাহাড়ি সড়কগুলোর পরিবর্তে সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পরিবহন করা হতে পারে- যাতে ভারত সহজেই নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের বিদ্রোহীদের দমন করতে পারে। সামরিক মহলের আতঙ্ক, বাংলাদেশের একই রকম গ্রুপকে তাতে প্রত্যাঘাতে প্ররোচনা দেবে।
অধিকন্তু চীন সীমান্তের কাছে অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অবস্থানের কাছে অস্ত্র সরবরাহ বাড়াতে পারে। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অধিকারে থাকার বিষয়টিতে আপত্তি রয়েছে চীনের। চীন ওই প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে থাকে। অনেক বাংলাদেশীর ক্ষোভ হলো এখানে যে, ভারত যদি বাংলাদেশকে বিরাট আকারে সামরিক পশ্চাৎভূমি হিসেবে ব্যবহার করে তার নিজস্ব লজিস্টিক সমস্যা মেটানোর জন্য তাহলে তার প্রত্যাঘাত আসবে চীনের কাছ থেকে। তবে এমন আতঙ্ক ব্যাপক নয়।
দীর্ঘদিনের ভারতবিরোধী সন্দেহভাজন ও সাধারণ বাংলাদেশীদের মধ্যে ভারত নিয়ে যে উষ্মা রয়েছে ভারত তা সঠিকভাবেই প্রশমিত করছে।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের ওপর পরিচালিত সামপ্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অল্প সংখ্যক মানুষই ভারতবিদ্বেষী, আর প্রায় অর্ধেকই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে স্বাগত জানায়। ঢাকায় তরুণ গবেষকদের একই ধরনের একটি সেমিনারে এই সপ্তাহে এই রকম মনোভাব দেখা গেছে- যদিও ভারতীয় সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ হয় নি। যাহোক ভারতের সবচেয়ে ঝুঁকি হলো- তারা শেখ হাসিনার ওপর বড় বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর তিনি ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে উঠছেন।
বিরোধীরা জাতীয় সংসদের অধিবেশন বয়কট করছেন। হরতাল-ধর্মঘট মাঝেমধ্যেই হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতি যে মাত্রায় আছে বাংলাদেশে দুর্নীতি তাকে ছাড়িয়ে গেছে। জুন মাসে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে নগ্নভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে তার সরকার দিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটা করা হবে।
শেখ হাসিনা তার প্রয়াত পিতাকে ‘সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ প্রচারণার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিই গড়ে তুলছেন।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দল গড়ার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। একইভাবে, ১৯৭১ সালের ঘটনায় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারকাজ শুরু হচ্ছে। বিচারের চেয়ে এখানে বেশি উদ্দেশ্য বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করা।
এ কথা কেউ বলবে না যে, ভারতের এই মিত্রের হাতে ক্ষমতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৩ সালে যে ভোট হওয়ার কথা আছে তাতে শেখ হাসিনার পতন হতে পারে অথবা তার আগেই রাজপথের আন্দোলনে একই পরিণতি ঘটতে পারে তার। তখন তার স্থানে আসতে পারেন তার ঘোরশত্রু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পরিবারও দুর্নীতিগ্রস্ত এবং শেখ হাসিনা যতটা ভারতপন্থি তারা ততটাই ভারতবিরোধী। কিন্তু খালেদা জিয়া বা তার অনুসারীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না করাটা ভারতের জন্য অবশ্যই একটি অদূরদর্শিতা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন বাংলাদেশ সফরে আসবেন তখন তাকে ব্যাপক অর্থেই সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে না হলে একদিন সবকিছুই নস্যাৎ হয়ে যাবে।
37. ট্রানজিটের ভারী ট্রেইলর যাতায়াত : ভেঙ্গে গেছে বি.বাড়িয়া আখাউড়ার সড়ক ও ব্রিজ
সরাইল বিশ্বরোড থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার সামনে এগুলেই সুহিলপুর-মিরহাটি ব্রিজ। প্রায় ভেঙেপড়া ব্রিজের দু’পাশে শত শত বাঁশ গেড়ে তার ওপর ফেলা হয়েছে বালির বস্তা। ওইসব বস্তার ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলছে হাজার হাজার গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ভারী সরঞ্জাম নিয়ে ভারতীয় গাড়ি চলায় ভেঙে গেছে ব্রিজটি।
এর পাশে যে বাইপাস করা হয়েছিল, সেটি আগেই ভেঙে গেছে। ফলে ভাঙা ব্রিজটির ওপর দিয়ে এখনও চলছে ভারতীয় ট্রানজিটের গাড়িগুলো। যদিও পণ্য পরিবহনকারী সংস্থা ভারতীয় এবিসি কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, তারা বাংলাদেশের কোনো ব্রিজ-কালভার্ট ব্যবহার করছেন না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।
‘ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো’ বা ওডিসির আওতায় শুল্কমুক্তভাবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী সরঞ্জাম বহন করছে ভারত।
এসব পণ্য পরিবহনের জন্য সরাইল বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সুলতানপুর-আখাউড়া সড়কে থাকা ব্রিজগুলোতে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশক’টি বাইপাস বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রেইলরগুলো এখন চলছে ব্রিজের ওপর দিয়েই। ভারী ট্রেইলর চলার কারণে রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে ট্রেইলরগুলো।
আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে কোনো ব্রিজের পাশেই বাইপাস তৈরি করা হয়নি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কালভার্ট ও ব্রিজগুলোর ওপর দিয়েই চলছে ট্রেইলরগুলো। ফলে যে কোনো সময় ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরাইল বিশ্বরোড থেকে সিলেট-কুমিল্লা মহাসড়কের সুলতানপুর পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। অত্যন্ত ব্যস্ত এই সড়কটি এমনিতেই সরু।
প্রতিদিন এ সড়কে চলে হাজার হাজার যানবাহন। সড়কের পুরো অংশটিই খানাখন্দে ভরা। বেশ কয়েক স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। সুহিলপুর মিরহাটি নামক স্থানে তৈরি করা একটি বাইপাস পানির তোড়ে আগেই ভেঙে গেছে। ফলে ভারতীয় গাড়িগুলো চলছে মিরহাটি কালভার্টের ওপর দিয়ে।
স্থানীয় দোকানদার কামাল হোসেন, আবদুর রউফসহ ক’জন জানান, ভারতীয় গাড়িগুলোর চাপে ব্রিজটির দু’পাশ দেবে গেছে। এটি ঠেকানোর জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন ব্রিজের দু’পাশে বাঁশের খুঁটি গেড়ে বালুর বস্তা ফেলেছে। তার ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
সুহিলপুর থেকে সামনে এগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পরই কুরুলিয়া নদী বা এন্ডারসন খাল। এ খালের ওপর ব্রিজটির অবস্থা খুবই নড়বড়ে।
এর নিচে বাইপাস তৈরি করে তার ওপর ফেরি বসিয়ে ভারতীয় গাড়িগুলো চলছে। এই বর্ষায় পানি বেড়ে যাওয়ায় বাইপাসটিতে গাড়ি চলতে পারছে না। ব্রিজের ওপর ট্রেইলর উঠলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। বাইপাস তৈরির কারণে কুরুলিয়া ব্রিজের দু’পাশের সড়কের মাটি সরে যাচ্ছে। বালির বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে।
কুরুলিয়া ব্রিজ থেকে সামনে এগিয়ে ফাটাপুকুরপাড়, রামরাইল, মাদানীনগর, রাধিকা চৌমুহনী এলাকায় দেখা গেছে ভাঙা সড়কের বেহাল চিত্র।
সিলেট-কুমিল্লা মহাসড়কের সুলতানপুর থেকে আখাউড়া সড়কের শুরু। সুলতানপুর থেকে আখাউড়া বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের পুরোটারই কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও বিটুমিনের স্তর নেই। সব ধরনের যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়েই।
সুলতানপুর থেকে আখাউড়া সড়কে উঠলেই দেখা যায় সড়কের বেহালদশা। চান্দি, বাসুদেব, কোড্ডা, ভাতশালাসহ সব এলাকায়ই সড়কটির বেহালদশা। কোড্ডা রেল ও সড়কব্রিজের নিচে একটি ট্রেইলর আটকা পড়ে আছে। এর থেকে সামনে এগিয়ে তিতাস ব্রিজ। তিতাস রেলব্রিজ ও সড়কব্রিজের মাঝখান দিয়ে ট্রেইলর যাতায়াতের জন্য বাইপাস তৈরি করা হয়েছিল।
বর্ষায় পানির তোড়ে বাইপাসটি ডুবে গেছে। ফলে আটকা পড়েছে ভারতীয় ট্রেইলরগুলো। বাইপাস ডুবে যাওয়ায় এখন কুরুলিয়া খালের ওপর বসানো ফেরি দিয়ে ট্রেইলরগুলো পার করার চেষ্টা করছে এবিসি কর্তৃপক্ষ। প্রায় মাসখানেক আগে তিতাসের মধ্যে একটি ট্রেইলরের ইঞ্জিন ডুবে গিয়েছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। সেটি তুলে মেরামতের জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছে।
এবিসির ভারতীয় প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র চাকু জানান, তিতাস ব্রিজের পাশে তৈরি বাইপাসটি ডুবে যাওয়ায় গত ৭ জুলাই থেকে ট্রেইলরগুলো আটকা পড়ে আছে। এখন তারা জরুরি ভিত্তিতে বাইপাস মেরামত করে কুরুলিয়া খালের ওপর বসানো ফেরিটি সেখানে নিয়ে ট্রেইলরগুলো পার করার চেষ্টা করছেন। চলতি মাসের ৬-৭ তারিখ থেকে তারা পুনরায় ট্রেইলরগুলো পার করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, তারা ৯০টি প্যাকেজে পণ্য পরিবহন করবেন। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক পণ্য পার করা হয়ে গেছে।
অর্থাত্ দুটি বিদ্যুেকন্দ্রের মধ্যে একটির পণ্য পার করা হয়ে গেছে।
এদিকে এবিসি ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বাংলাদেশের কোনো ব্রিজ-কালভার্ট ব্যবহার করছেন না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে অন্তত ২০টির বেশি ব্রিজ-কালভার্ট ব্যবহার করেই ভারতীয় ট্রেইলরগুলো যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এবিসির প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র চাকু বলেন, দু’একটি ব্রিজ তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি নিয়েই ব্যবহার করছেন।
আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান শুল্ক কর্মকর্তা আবুল বাশার চৌধুরী জানান, এবিসি কোম্পানির প্রথম জাহাজটি গত ৯ মার্চ আশুগঞ্জ বন্দরে আসে।
২৭ মার্চ মধ্যরাতে ৩২৬ টন ভারী সরঞ্জাম নিয়ে ৪টি ট্রেইলর একযোগে আখাউড়া স্থলবন্দর পার হয়ে ত্রিপুরার পালাটানায় যায়। ২৭ মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৯টি ট্রেইলর আখাউড়া বন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় গেছে। তারা গাড়ির নম্বর, কখন গেল—তার সময় লিখে রাখছেন। যেহেতু শুল্কমুক্ত চুক্তির আওতায় ট্রেইলরগুলো যাচ্ছে, তাই এগুলো থেকে কোনো শুল্ক আদায় করা হচ্ছে না। আবুল বাশার আরও জানান, তারা পণ্য খুলে পরীক্ষা করছেন না।
যেহেতু বিদ্যুেকন্দ্রের সরঞ্জামগুলো প্রতিটি আলাদাভাবে রাখা, তাই সেগুলো খোলার প্রয়োজন হচ্ছে না।
এদিকে সুলতানপুর-আখাউড়া বন্দর সড়কের বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে আখাউড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সড়কটি মেরামতের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির উন্নয়নে কাজ করছে। বর্ষা আসার পর তারা সড়ক উন্নয়নের কাজ স্থগিত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ মে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে কলকাতা থেকে আগরতলায় পণ্য পরিবহনের চুক্তি করে বাংলাদেশ।
গত বছরের জানুয়ারিতে নয়াদিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশ সরকার গত বছরের মে মাসে আশুগঞ্জকে পঞ্চম বন্দর ঘোষণা করে। আশুগঞ্জে আন্তঃমহাদেশীয় ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্র চালুর ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল। পরে সরকার ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (আইডব্লিউটিটি) চুক্তিতে এক সংযোজনীর মাধ্যমে আশুগঞ্জ দিয়ে ত্রিপুরায় ভারতীয় কার্গো ট্রান্সশিপের অনুমোদন দিয়ে আশুগঞ্জকে দ্বিতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট ঘোষণা করে, যার প্রেক্ষিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানায় বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের জন্য ‘ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো’ বা ওডিসির আওতায় (শুল্ক ছাড়া) কমপক্ষে ৮৬ জাহাজ পণ্য ত্রিপুরায় নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩৯ ট্রেইলর পণ্য পার করা হয়েছে। আশুগঞ্জের সোনারামপুরে দুটি ডিপো, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদানীনগরের একটি ডিপোতে বেশকিছু পণ্য রাখা হয়েছে।
তিতাস নদীর ওপর বসানো বাইপাস ডুবে যাওয়ায় পাঁচটি ট্রেইলর রাস্তায় আটকা পড়ে আছে। এগুলো ত্রিপুরায় পৌঁছানোর পর আবার নতুন করে পণ্য আনা হবে।
38. শেষ কথা:
বহু দ্বিপক্ষীয় সমস্যা অমীমাংসিত রেখে আলোচনার টেবিলে কেবল ‘ট্রানজিট’ কেন?
আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই যে, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট কিংবা করিডর- যে সুবিধাই দেয়া হোক না কেন, তার ভিত্তি হবে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার মনোভাব। ‘ট্রানজিট’রূপী সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশও সমমানের কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে- এমনটিই প্রত্যাশিত। এক্ষেত্রে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বাড়তি প্রবেশের ব্যাপার যেমন আছে তেমনি আছে নেপাল, ভূটান, পাকিস্থান ইত্যাদি দেশে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের সুবিধাপ্রাপ্তির প্রশ্ন।
ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা অন্যান্য সমস্যা যেমন-
১. সমুদ্রসীমা নির্দিষ্টকরণ,
২. স্থল সীমানা চিহ্নিতকরণ,
৩.সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা,
৪. আন্ত:দেশীয় নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া,
৫. ফারাক্কা ও টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিক্রিয়াও বাংলাদেশের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যিক ব্যবধানের বিষয়টি উল্লেখ্য করা বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বাংলাদেশের মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০ সালে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা প্রায় ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০০৭-০৮ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দ্রুত বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে।
এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্রেডিং পার্টনার ভারত। আমাদের দেশে তাদের ব্যবসার পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ আমরা পাঠাতে পারছি মাত্র ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাজারে ভারতের প্রায় দুই হাজার ৮৬টি পণ্য রফতানি হয়। বিপরীতে ভারতের বাজারে ঢুকতে পারছে বাংলাদেশের মাত্র ১৬৮টি পণ্য।
(‘কালের কণ্ঠ, ০১.১২.২০১০) নন-ট্যারিফ বাধার কারণেই মূলত বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বাজারে ঢুকতে পারছে না। এ বিষয়ে আট বছর ধরে আলাপ-আলোচনা চলছে, অথচ পরিস্থিতি বাংলাদেশের স্বপক্ষে এক বিন্দুও এগোয়নি। বাংলাদেশি একটি পণ্য ভারতের বাজারে ঢুকতে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষার ফল পেতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ দিন। বাংলাদেশের ল্যাবরেটরির পরীক্ষার ফলকে ভারত এক্ষেত্রে স্বীকৃতি দিতে দিচ্ছে না।
আমাদের নীতি-নির্ধারকরা যখন আলোচনার টেবিলে বসেন তখন আমাদের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব কোন বিষয় মুখ্যভাবে উঠে আসছে না। প্রধান বিষয় হয়ে উঠছে ভারতের ট্রানজিট পাওয়া, না পাওয়ার বিষয়। কিন্তু ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশ ঠিক কী কী সুবিধা পেতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে জাতীয়ভাবে অবহিত করা প্রয়োজন।
অনেকেই বলে থাকেন, ট্রানজিট স্রেফ একটি অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ। এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনাগুলো যুক্ত করা অনুচিত হবে।
কিন্তু বিশ্ব পরিসরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, আন্তরাষ্ট্রীয় বন্ধুত্বের বাস্তব পটভূমি ছাড়া এবং দেয়া-নেয়ার মনোভাব ছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতাও খুব বেশি এগোয় না। ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে উপরোক্ত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে সরে যাওয়ার আদৌ কোনো সুযোগ রয়েছে কি না? দীর্ঘদিনের পুরানো দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোর মীমাংসা স্থগিত রেখে এবং আড়ালে রেখে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার বিষয়টি পৃথকভাবে বিবেচনা বাংলাদেশের দিক থেকে কতটা জাতীয় স্বার্থসম্মত হবে?
ট্রানসিট সম্মন্ধে জানতে আরো পড়ুন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ--
১। ভারতকে ট্রানসীট ও চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার করতে দেওয়ার পেছনে কিছু কথা--http://www.facebook.com/note.php?note_id=250433964969880
২। দ্য ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক--http://www.somewhereinblog.net/blog/shopnochari/29422999
৩। ভারতের ট্রানজিট এবং আত্মঘাতের পথে বাংলাদেশ--http://drfirozmahboobkamal.com/2010-03-24-10-21-22/644-transit-for-india-and-bangladesh-on-suicidal-path.html
৪।
ভারতের ট্রানজিটে বাংলাদেশের ফায়দা নাই--http://www.somewhereinblog.net/blog/nabokobi/29425107
৫। Click This Link
৬। Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।