আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুনরুদ্ধারের এ অভিযানে আমরাই সত্যিকারের অভিযাত্রী, কারণ আমরা নিরানব্বই ভাগ

আমার খামার নেই নেই কোন শস্যকণা পৃথিবীর এক ভাগ লোক সিংহভাগ সম্পদের মালিক। অথচ যাদের শ্রমে-ঘামে-রক্তে এই সম্পদ তৈরি হয়েছে সেইসব মানুষের বেচে থাকার সামান্য চাহিদাটুকুও পূরণ হয় না। এমনি বাস্তবতায় পুঁজিবাদের সূতিকাগার খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই শুরু হয়েছে উত্তাল প্রতিবাদ। আমরা সে প্রতিবাদে সংহতি জানাই আমরা নিরানব্বই ভাগ মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাই। সেই সঙ্গে মূলত আমাদের নিরানব্বই ভাগের দাবী দাওয়া নিয়ে আমাদের মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

সে সব দাবীর সার কথা যাবতীয় গণ বিরোধী শক্তির কাছ থেকে বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করা। আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমাদের বাংলাদেশ আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের উদ্দেশ্য লক্ষ্য মহিমা আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই '৫২ , ’৬৯ আর প্রিয়তম ‘৭১ আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমাদের জীবন জীবিকা বাঁচার অধিকার আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আত্মসম্মান আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমার নিভৃত আপন গ্রাম, প্রাণের শহর আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই ঢাকা, আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই চট্টগ্রাম নারায়ণগঞ্জ বগুড়া সিলেট সব শহর আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমার দেশ মাটি জলাশয় নদী সাগর উপকূল পাহাড় বনভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমার ইতিহাস সংস্কৃতি আমরা পুনরুদ্ধার করতে চাই আমার স্বাস্থ্য ও স্বপ্ন, শিক্ষা ও স্বত্বা, খাদ্য ও মনন পুনরুদ্ধারের এ অভিযানে আমরাই সত্যিকারের অভিযাত্রী, কারণ আমরা নিরানব্বই ভাগ। কাদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করতে হবে আমার প্রাপ্য? কাদের কাছে জিম্মি আমার দেশ-মাটি-মানুষ? কাদের বিরুদ্ধে আমার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ? সহজভাবে বলতে গেলে, শোষক রাষ্ট্র ব্যবস্থা আর তার পরিপূরক বেনিয়া কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে, সব রকম দালাল-যারা এদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের সুনিয়ন্ত্রিত চক্রান্ত, স্বার্থবুদ্ধি, সম্পদ ও ক্ষমতা লিপ্সাই আমাদের দুর্গতির কারণ। তাদের কারণে বাজারে পরিণত হয়েছে আমাদের প্রিয় দেশ, পণ্যে পরিণত হয়েছে মানুষ।

আড়িয়াল বিলের জলাভূমি তাদের জন্য পতিত, সেখানে তারা গড়ে তুলতে চায় কংক্রিটের জঙ্গল। আর প্রতিনিয়ত 'উন্নয়ন মডেলের' নামে করে চলেছে প্রতারণা; করছে বাজার দখল। বেসরকারিকরণের নাম করে শুরু করেছে লুটপাটের মচ্ছব। অকাতরে তেল-গ্যাস-কয়লা-বিদ্যুৎ ও বন্দরসহ সকল জাতীয় সম্পদ বিকিয়ে দিচ্ছে বিদেশের বেনিয়ার কাছে। যে নদী আমাদের দেশের জীবনী শক্তি সে নদীকে করে তুলছে বিষাক্ত; এমনকি সেই জলের ভাগও তুলে দেওয়া হচ্ছে অন্য কারো হাতে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশেই এখন বিশুদ্ধ পানির সংকট। মরতে বসেছে অনেকগুলো নদী। আগামী বিশ্বে জলের নিরাপত্তা যখন প্রধান নির্ণয়ক হয়ে উঠছে, তখন সেই্ পানি তুলে দিচ্ছে অপরের হাতে, ধ্বংস করছে সুপেয় পানির উৎস। বিকিয়ে দিচ্ছে বনভূমি, ধ্বংস করছে জীবজগৎ, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক প্রতিবেশ। হাইব্রিড বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক সে প্রক্রিয়ার অংশ মাত্র।

কৃষিকেও ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে এসেছে। কৃষক আজ ভূমিহীন ও সর্বহারায় পরিণত হয়েছে, কৃষি ব্যবস্থাকে করা হচ্ছে কর্পোরেট মুনাফার উপাচার মাত্র। দেশি শিল্প সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে , সেখানে স্থলাভিষিক্ত হয়েছে বিদেশি পুঁজি। স্বাস্থ্যখাতও রেহাই পায়নি বেসরকারিকরণ ছোবল থেকে। শিক্ষাকে করা হয়েছে কলুষিত।

জীবন-জীবিকা ও উৎপাদন পদ্ধতি ও সম্পর্কের সঙ্গে একেবারেই সম্পর্কহীন একটি পণ্যে পরিণত করা হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে। নারী অধিকার হচ্ছে পদে পদে ভূলুণ্ঠিত। আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতেও চরম অনীহা রাষ্ট্রের। আর গার্মেন্টস শিল্প যেন শ্রম লুণ্ঠনের নয়া হাতিয়ার! সামগ্রিক অর্থব্যবস্থা করা হয়েছে কর্পোরেট বান্ধব। কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্রকে প্রতিদিন ক্ষূণ্ন করছে তার জনগণের অধিকার।

’৫২ থেকে ‘৬৯ এর পরম্পরায় শোষণ মুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন উকিঁ দিয়েছিল, তার হাত ধরেই এসেছিল '৭১। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ জয়ের পরেও হাতছাড়া হয়ে গেছে সেই স্বপ্ন। আর দিন দিন আমাদের রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে শোষক। দিনকে দিন রাষ্ট্র করায়ত্ত হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেটের। ও আই সি, বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ, এডিবি, টি এনসি/এম এন সি'র খেলার পুতুল হয়ে উঠেছে এই রাষ্ট্র।

তাই, এখনই সময় রুখে দাড়াবার, অধিকার আদায়ের। আর এই কর্পোরেট নিপীড়নের কষাঘাতে শুধু আমরাই নয় গোটা বিশ্বের মানুষ জর্জরিত। তাই মার্কিন মুলুকের সাধারণ মানুষ, যারা নিজেদের 'নিরানব্বই ভাগ' আখ্যায়িত করে দখল করেছ পুঁজির সূতিকাগার ওয়াল স্ট্রিট। ঠিক তেমনি আমরাও নিজেদের দখলে নিতে চাই আমাদের দুর্ভোগের সকল সূতিকাগার। মার্কিনিরাও যেমন শত্রু চিহ্নিত করে আন্দোলন বেগবান করে চলেছে, আমরাও শত্রুপক্ষের অশুভ দৌড় থামিয়ে দিতে চাই।

সেখানেই মার্কিনিদের সঙ্গে আমাদের সংহতি। সময়ঃ ২২ অক্টোবর-২০১১, ৭ কার্তিক-১৪১৮, রোজ-শনিবার, বিকাল ৩(তিন) ঘটিকা হইতে সন্ধা ৬(ছয়) ঘটিকা। সংযুক্তিঃ "শতকরা ৯৯" দাবিনামা ওয়ালস্ট্রিট দখল আন্দোলনের সংহতি বক্তব্য Reclaim Bangladesh - ঢাকায় "অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট" সংহতি বিদ্রোহের নতুন পরিচয়: ‘আমরা ৯৯%’- আনু মুহাম্মদ কৃতজ্ঞতাঃ তরুন কবি ও সাংবাদিক তানজির মেহেদী পোস্টার- বাকী বিল্লাহ অরূপ রাহী ফিরোজ আহমেদ পারভেজ আলম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।